অনেকেই অনিচ্ছা সত্ত্বেও সঙ্গীর অমর্যাদাপূর্ণ আচরণ মেনে নিয়ে বার বার সেই সম্পর্কে ফিরে যায়। তবে একজনের স্বদিচ্ছা থাকলে এমন অমর্যাদাকর সম্পর্ক থেকে চিরতরে বেরিয়ে আসা সম্ভব।
যদি আপনার মনে হয় যে, সম্পর্কে সঙ্গীর কাছ থেকে অকারণে অপমান অমর্যাদা সহ্য করে যাচ্ছেন, তাহলে এমনটি শুধু আপনার সাথেই ঘটছে তা নয়। আপনি একা নন, ভুক্তভোগী এমন অনেকেই রয়েছে এবং এটি আপনার কোন দোষ নয়। সম্পর্কের প্রথমে কখনোই এটা অনুধাবন করা সম্ভব নয় যে আপনার সঙ্গী আপানার সাথে ঠিক কেমন আচরণ করবে। তাই সম্পর্ক ধীরে ধীরে পুরনো হওয়ার সাথে সাথে সঙ্গী যখন অমর্যাদাকর, অতি অধিকার সূচক এবং অতি নিয়ন্ত্রণ সূচক আচরণ করে তখন তার বাস্তবিক পরিচয় পাওয়া যায়। অনেক সময়ই দেখা যায় সঙ্গী আপনাকে আপনার পরিবার ও বন্ধুদের থেকে আলাদা করে রাখার প্রয়াস করছে, সব সময় আপনি কোথায় আছেন, কি করছেন সেগুলির প্রতি নজরদারি করছে, আপনার অর্থনৈতিক ও ব্যক্তিগত জীবনে সর্বদা আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা করছে, কখনোই কোন দায়িত্ব নেওয়া বা দায় স্বীকার করছেনা, সব সময় আপনাকে প্রভাবিত করার প্রয়াস করছে এবং শারীরিক, মানসিক ও যৌন নির্যাতন করছে। এরকম আরও বিভিন্ন ভাবে আপনার মর্যাদার অবমাননা করলে বুঝে নেবেন আপনার সম্পর্কটি একটি অমর্যাদাকর সম্পর্ক এবং এ ধরণের সম্পর্ক থেকে অবশ্যই একজন আত্মমর্যাদাশীল ব্যক্তি বেরিয়ে আসতে চাইবে।
অনেকেই অনেক চেষ্টা করার পরেও এমন অমর্যাদাকর সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসতে পারেনা। বিশেষজ্ঞরা এর কিছু সাধারণ কারণ উল্লেখ করেছেন। যেমন, সম্পর্ক অনেকের কাছে একটি মনস্তাত্ত্বিক বন্ধনে পরিণত হয়, অনেকের সঙ্গী তাকে সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে যেতে দেয়না, অনেকের মাঝে নিরাপত্তাজনিত ভয় কাজ করে, অন্য কোথাও যাবার সুযোগ থাকেনা, মনোবল ও আত্মবিশ্বাসের অভাব থাকে, অনেকেই সেরকম সামাজিক সাপোর্ট পান না, আবার অনেকে শারীরিক ও মানসিক কষ্ট সহ্য করেও পরিবার ও সম্পর্ককে জুড়ে রাখতে চান। এমন মানসিক উৎকণ্ঠা এবং অনিশ্চয়তা যাদের মাঝে থাকে তাদের জন্য মনস্তাত্ত্বিকগণ কিছু সাধারণ বিষয় তুলে ধরেছেন যেগুলো তাদের সঠিক সিদ্ধান্তটি নিতে সহায়তা করবে। নিচে সেগুলি তুলে ধরা হল-
১। একটি নিরাপদ ও সহায়ক পরিকল্পনা তৈরি
নিরাপদ ও সহায়ক পরিকল্পনা আপনাকে বিচ্ছেদের মানসিক পীড়া ও অন্যান্য নেতিবাচক দিক থেকে সুরক্ষিত রাখবে। এটি একটি অমর্যাদাকর সম্পর্ক থেকে সফল ভাবে আপনাকে বেরিয়ে আসতে সহায়তা করবে।
২। এমন সম্পর্ক ত্যাগের কারণগুলি সব সময় স্মরণে রাখা
আপনার সঙ্গীর করা সব ধরণের অনৈতিক ও অমর্যাদাকর আচরণ গুলি সব সময় স্মরণে রাখবেন। এটি আপনাকে আপনার আত্মমর্যাদা স্মরণ করাবে এবং বিচ্ছেদ সহজ করবে।
৩। সবার আগে নিজেকে গুরুত্ব দেওয়া
শুধু পরিবার, সঙ্গী কিংবা সমাজের কথা ভেবে নিজেকে কষ্ট দেবার কোন প্রকার যুক্তি সঙ্গত কারণ নেই। সব সময় মনে রাখবেন, সবার আগে আপনার সম্মান, আপনার ইচ্ছা ও স্বাধীনতা। তাই অন্যদের কথা ভাবার আগে নিজের কথা ভাবতে হবে।
৪। আত্মবিশ্বাস ও মনোবল রাখা
একটি অসম্মানজনক সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসতে সব থেকে বেশি প্রয়োজন হয় আত্মবিশ্বাস ও মনোবলের। অনেকেই মায়া কাটিয়ে উঠতে পারেনা আবার নিজের অসম্মান মেনে নিয়ে সম্পর্কে টিকে থাকাও কষ্টসাধ্য হয়ে যায়। এ সময় সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সব থেকে বেশি সহায়তা করে আপনার মনোবল এবং আত্মবিশ্বাস।
৫। নিজের স্বাধীনতাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া
সব সময় মনে রাখবেন অন্য সবার মতো আপনার ও সম্মানের সাথে নিজের মতো করে বাঁচার অধিকার ও স্বাধীনতা রয়েছে। তাই নেতিবাচক সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসার সব সিদ্ধান্ত নেবার আপনার পূর্ণ স্বাধীনতা ও অধিকার রয়েছে। নিজের সেই স্বাধীন সত্ত্বাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিন।
উপরের বিষয় গুলি মনোযোগের সাথে খেয়াল করলে এটা অবশ্যই আপনি অনুধাবন করতে পারবেন যে, আপনার ভালো থাকা সব থেকে আগে। আর একজন মানুষ আত্মসম্মান বিসর্জন দিয়ে কখনোই ভালো থাকতে পারেনা। তাই অমর্যাদাকর সম্পর্ক থেকে নির্দ্বিধায় বেরিয়ে আসুন এবং স্বাধীনভাবে, সম্মানের সাথে, মানসিক প্রশান্তি নিয়ে, বাঁচার মতো বাঁচুন।
সাইক-সেন্ট্রাল থেকে অনুবাদ করেছেনঃ প্রত্যাশা বিশ্বাস প্রজ্ঞা
স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে প্রাণে