করোনা নিয়ে ভ্রান্ত ধারণা এবং গুজবের যেন শেষ নেই! আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ার পাশাপাশি প্রতিদিনই বিভিন্ন এলাকায় বাড়ছে আক্রান্ত পরিবারের উপর হামলা কিংবা তাদেরকে হেয় করার ঘটনা। শিক্ষিত, অর্ধ শিক্ষত কিংবা অশিক্ষিত সকল শ্রেনীর মধ্যেই দেখা গেছে করোনা আক্রান্তের পরিবারের উপর অমানবিক আচরণের প্রবণতা।
তবে আছে এর ব্যতিক্রম ঘটনাও। করোনা আক্রান্তরা অপরাধী নয়, অবহেলার পরির্বতে তাদের প্রয়োজন সহমর্মিতা; এই বার্তা পৌঁছে দিতে এবার করোনা আক্রান্ত শিশুর পাশে দাঁড়ালেন মোশাররফ হোসেন নামের বাগেরহাট এর একজন চিকিৎসক।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কিছুদিন আগে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট থেকে করোনা আক্রান্ত এক শিশু চিকিৎসা না নিয়ে বাগেরহাটে ফিরে গেছেন এমন খবর মিডিয়াতে প্রচারের পর ব্যাপক আতংকগ্রস্থ হয়ে পড়ে এলাকার লোকজন।
এই আতঙ্ক যেন পরিবারটির প্রতি অমানবিক আচরণকে উস্কে না দেয়, পরিবারটি যেন মানসিকভাবে ভেঙে না পড়ে এবং একইসাথে এলকাবাসীর মধ্যে যেন সচেতনতা বৃদ্ধি পায়, সেজন্য গতকাল আক্রান্ত শিশুটির বাড়িতে যান ডা. মোশাররফ হোসেন। এসময় তিনি পরিবারটির খোঁজ নেওয়ার পাশাপাশি জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট থেকে ছাড়পত্র নিয়ে বাড়িতে যাওয়া শিশুটির চিকিৎসা সংক্রান্ত কাগজপত্র দেখেন এবং করোনা পজেটিভ শিশুটির কাঁধে হাত রেখে তাকে সাহস দেন।
এমন উদ্যোগের কারণ জানতে চাইলে ডা. মোশাররফ হোসেন মনের খবর‘কে বলেন, “আইসোলেশন বা লকডাউনের প্রতি জোর দেওয়া হচ্ছে স্বাস্থ্যগত কারণে, যাতে করে রোগটি একজন থেকে আরেকজনে সংক্রমিত না হয়ে পড়ে। কিন্তু আমাদের সমাজে মানুষজন অতি আতংকিত হয়ে এটাকে অচ্ছুৎ পর্যায়ে নিয়ে যাচ্ছে।”
রোগটি সম্পর্কে গুজব এবং সঠিক তথ্য না জানার কারণে এমনটি বেশি হচ্ছে। যার মধ্যে উপসর্গ নেই, অর্থাৎ হাচি কাঁশি নেই এরকম করোনা পজেটিভের মাধ্যমে রোগটি ছড়ানোর ঝুঁকি তুলনামূলক কম জানিয়ে চিকিৎসক বলেন, “একই ঘরে থেকে, পরিবারের অন্য কেউ মাস্ক ব্যবহার না করেও এই শিশুটির বাবা-মা কিংবা বোন কেউ করোনা আক্রান্ত হয়নি। তারা শুধু ২ মিটারের যে দূরত্ব সেটি বজায় রেখেছে।”
এই ঘটনাটিই করোনায় আতংকিত না হয়ে শুধুমাত্র সামাজিক অর্থাৎ শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখেই করোনা থেকে নিরাপদ থাকার উদাহরণ হতে পারে বলে যোগ করেন তিনি।
“আমি এই পরিবারটিতে গিয়েছি, শিশুটির গায়ে হাত দিয়েছি যাতে তারা নিজেদেরকে অচ্ছুৎ মনে না করে, তারা যেনে মানসিক ভাবে ভেঙে না পড়ে এবং এলাকাবাসীর মধ্যেও যেন করোনা আক্রান্তদের নিয়ে আতংকের পরির্বতে সচেতনতা এবং সর্তকতা তৈরি হয়”, বলেন ডা. মোশাররফ হোসেন।
করোনা আক্রান্তদের প্রতি বিরুপ আচরণের প্রভাব কি হতে পারে সে বিষয়ে জানতে চাইলে ডা. মোশাররফ হোসেন বলেন, “এই যে আক্রান্ত পরিবারটিকে একঘরে করে রাখা হয়েছে, তারা নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস কিনতে যেতে পারছে না, গরুর জন্য ঘাস কাটতে যেতে পারছে না, এতে সমাজের প্রতি তাদের মনে এক ধরনের ঘৃণা জন্ম নিচ্ছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে বিপদের দিনে অসহযোগীতার কথা মনে করে এসব পরিবারের সদস্যদের মধ্যে প্রতিবেশীর বিপদে এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রেও দ্বিধা কাজ করবে। এই বঞ্ছনা তাদের ভিতের পুঞ্জীভূত হয়ে ক্ষোভ আকারে প্রকাশ পেতে পারে। যা, আমাদের সামাজিক সম্প্রীতি নষ্ট করবে। তাই, করোনা আক্রান্তদেরকে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখার বিকল্প কিছু নেই।”
এজন্য মিডিয়াতে করোনা রোগীদেরকে দোষী না ভাবতে বা ভয় না পেতে বেশি বেশি প্রচারণার আহ্বান জানান তিনি। এক্ষেত্রে রাজনীতিবীদেরকেও এগিয়ে আসার আহ্বান জানান বাগেরহাটের জনপ্রিয় এই চিকিৎসক।
উল্লেখ্য, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ এর বাগেরহাট শাখার ও বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশন এর বাগেরহাট শাখার সাধারণ সম্পাদক ডা. মোশাররফ হোসেন করোনা রোগীদের পাশে দাঁড়াতে প্রায় ১০০ সদস্যের স্বেচ্ছাসেবক টীম গঠনে অন্যতম ভূমিকা পালন করেছেন।