জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটে পালিত হলো বিশ্ব সিজোফ্রেনিয়া দিবস ২০২৫। “Rethink the Label: Reclaim the Story” প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে শনিবার (২৪ মে) আয়োজিত হয় একটি সচেতনতামূলক আলোচনা সভা ও তথ্য উপস্থাপন পর্ব। অনুষ্ঠানের শুরুতেই উপস্থাপন করা হয় সিজোফ্রেনিয়া বিষয়ে প্রেজেন্টেশন, যেখানে এই মানসিক রোগের উপসর্গ, সামাজিক প্রতিক্রিয়া, চিকিৎসা ও পুনর্বাসন কৌশল তুলে ধরা হয়। পরবর্তীতে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে সরাসরি প্রশ্নোত্তর পর্ব অনুষ্ঠিত হয়, যা অনুষ্ঠানে প্রাণবন্ততা যোগ করে।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মাহবুবুর রহমান, বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সাইকিয়াট্রিস্ট (বিএপি)-এর সদস্য সচিব অধ্যাপক ডা. মো. নিজাম উদ্দিন, বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোরোগবিদ্যা বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সালাহ্উদ্দিন কাউসার বিপ্লব, বিশিষ্ট মনোরোগ চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. মহাদেব চন্দ্র মন্ডল, অধ্যাপক ডা. ফারুক আলমসহ অন্যান্য মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ও শিক্ষার্থীরা।জনসাধারণের মাঝে এই সচেতনতার বার্তা পৌছে দেয়ার আহ্বান জানিয়ে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মাহবুবুর রহমান বলেন, সিজোফ্রেনিয়া শুধুমাত্র নিজেদের মধ্য আলোচোনা করার বিষয় না এটা আমরা সকলেই জানি, এটা নিয়ে জনসাধারনের মাঝে সচেতনতা বাড়াতে হবে। মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে জনসচেতনতা বাড়ানোর উপর গুরুত্বারোপ করে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সাইকিয়াট্রিস্ট (বিএপি)-এর সদস্য সচিব অধ্যাপক ডা. মো. নিজাম উদ্দিন বলেন, অন্যান্য ডিসিপ্লিনের চিকিৎসকরা সিজোফ্রেনিয়া নিয়ে কি ভাবে এটাও আমাদের জানা জরুরি, সকলের মতামতই গুরুত্বপূর্ন। মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি প্রয়োজন।
মানসিক স্বাস্থ্য চিকিৎসার ক্ষেত্রে এখনো অনেক প্রতিবন্ধকতা কাজ করে, এই সকল প্রতিবন্ধকতা দূর করার কথা উল্লেখ করে বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোরোগবিদ্যা বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সালাহ্উদ্দিন কাউসার বিপ্লব বলেন, সিজোফ্রেনিয়া আমরা কিভাবে কাটিয়ে উঠতে পারি, কিভাবে এর জনসচেতনতা গড়ে তুলতে পারি এই সকল বিষয় নিয়ে আমাদের চিন্তা করা জরুরি। তিনি আরও বলেন, সাইকোথেরাপী কারা দিচ্ছে এই বিষয়টিতেও বিশেষ নজর দেয়া প্রয়োজন। বর্তমানে আমাদের আশেপাশে অনেক নামে বেনামে সাইকোথেরাপি সেন্টার গড়ে উঠছে। যেখানে খুব অল্প সময়ে সাইকোথেরাপি কোর্স করেই অনেকে থেরাপি দেয়া শুরু করছে, যার ফলে এই চিকিৎসা খাত প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। তাই প্রয়োজনে এদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে।

বক্তারা আরও বলেন, সিজোফ্রেনিয়ার রোগীরা আজও সমাজে নানা ভ্রান্ত ধারণা ও অবজ্ঞার শিকার। এই রোগ একটি জৈবিক মানসিক সমস্যা, যা সঠিক চিকিৎসায় নিয়ন্ত্রণযোগ্য। রোগীদের প্রতি সহমর্মিতা এবং সামাজিক গ্রহণযোগ্যতা বাড়াতে হবে।
অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারীরা সিজোফ্রেনিয়া সম্পর্কে বাস্তব ও বৈজ্ঞানিক জ্ঞান অর্জনের সুযোগ পান। শিক্ষার্থীরা মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে আরও খোলামেলা আলোচনা করতে উৎসাহিত হন। সমাজে মানসিক রোগ ও বিশেষ করে সিজোফ্রেনিয়া বিষয়ে দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনে এ আয়োজন গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এ ধরনের উদ্যোগকে আরও ব্যাপকতা দেওয়া এবং মিডিয়া ও কমিউনিটির মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার তাগিদ রাখেন বিশেষজ্ঞরা।
আরও পড়ুন-