চল্লিশ বয়সের একজন ভদ্রলোক বিগত সাত দিন ধরে কাশি এবং জ্বরে ভুগছিলেন। সামান্য সমস্যা মনে করে তিনি প্রথমের দিকে চিকিৎসকের নিকটে যাননি। প্রথমের দিকে সমস্যা সামান্যই ছিলো। এর মাঝে তিনি এন্টিবায়োটিকসহ কিছু মেডিসিনও খেয়েছেন।কিন্তু কাশিটা ভালো হচ্ছিলো না। তাই তিনি হাসপাতালে গেলেন। চিকিৎসক কিছু পরীক্ষা দিলেন। এতে দেখা গেলো বুকের এক্সরে তে দুই দিকে নিউমোনিয়া। তার কভিড ১৯ টেস্টও পজিটিভ।
চিকিৎসক তার অক্সিজেন স্যাচুরেশন মেপে দেখলেন ৮৬% যা কিনা স্বাভাবিক থেকে অনেকটাই কম। ভদ্রলোককে চিকিৎসক ভর্তি হওয়ার পরামর্শ দিলেন। কিন্তু ভদ্রলোক ভর্তি থাকতে রাজী নন। তার বক্তব্য হলো তার শ্বাসকষ্ট ভর্তি হওয়ায় মতো বেশী না । তার কাশিটা কমিয়ে দিলেই হলো ব্যাস। চিকিৎসক ভদ্রলোকটকে বোঝালেন রক্তে অক্সিজেনের পরিমাণ কমে গেলে তা ঝুঁকিপূর্ণ।
কভিড-১৯ রোগীদের শ্বাসকষ্ট অতিমাত্রায় না হয়েও অক্সিজেন কমে যেতে পারে তাকে বলে সাইলেন্ট হাইপোক্সিয়া (Silent Hypoxia)। রক্তে অক্সিজেনের পরিমাণ কমে যাওয়াকে আমরা হাইপোক্সিয়া (Hypoxia)বলে থাকি। স্বাভাবিক ভাবে রক্তে অক্সিজেনের স্যাচুরেশন ৯৫% এর বেশী থাকে। এই লেভেলের থেকে কমতে থাকলে আমরা এটাকে হাইপোক্সিয়া (Hypoxia) বলে থাকি।
রোগীদের রক্তের অক্সিজেন স্যাচুরেশন ৯০% এর নীচে আসলে সাধারণত বিভিন্নধরনের লক্ষন শুরু হয়, যার মধ্যে অন্যতম হলো শ্বাসকষ্ট। তাছাড়া রোগীদের কাশি, মাথা ব্যাথা, কনফিউশান, এমন কি অজ্ঞান হয়ে যেতেও দেখা যায়। আমরা চিকিৎসকেরা জিহবা এবং হাত-পায়ের আংগুল নীল হয়ে গেলে বুঝতে পারি রোগীটি Hypoxic।
অক্সিজেন স্যাচুরেশন মাপার জন্য আমরা একটি ছোট মেশিন ব্যাবহার করি যার নাম পালস অক্সিমিটার। ফুসফুসের বিভিন্ন রোগে রক্তে অক্সিজেনের পরিমাণ কমে যেতে পারে। রক্তে অক্সিজেনের পরিমান কমে যাওয়াকে আমরা সব সময়ই গুরুত্ব দিয়ে থাকি। কারণ হলো সময়মতো অক্সিজেন থেরাপি না দিতে পারলে এসব রোগীদের মৃত্যু ঝুঁকি থাকে।
কভিড ১৯ রোগেও হাইপোক্সিয়া (Hypoxia) একটি জটিলতা। কভিড-১৯ রোগী যারা নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত তাদের অধিকাংশ রোগীই বিভিন্ন মাত্রায় হাইপোক্সিয়া (Hypoxia) থাকে। কিছু কিছু রোগীর অক্সিজেন স্যাচুরেশন যে পরিমাণ কমে থাকে সেই পরমাণে উপস্বর্গ দেখা যাচ্ছে না। এই এই অবস্থাকে বলা হয় সাইলেন্ট হাইপোক্সিয়া (Silent Hypoxia)।
অতিমাত্রায় অক্সিজেনের পরিমাণ কমে যাওয়া ভালো লক্ষণ নয়। কারণ অক্সিজেনের পরিমাণ বেশি কমে গেলে শরীরের অংগগুলো কাজ করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। বিশেষ করে কিডনি, হার্ট এবং ব্রেনের উপর প্রভাব ফেলে হাইপোক্সিয়া (Hypoxia)। তাই কভিড-১৯ রোগীদের অক্সিজেন স্যাচুরেশন দেখার গুরুত্ব অনেক বেশী।
কভিড-১৯ রোগীদের সাইলেন্ট হাইপোক্সিয়া (Silent Hypoxia) কেন হয় তা নিয়ে গবেষণা হচ্ছে। কিছু গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যাও পাওয়া গেছে। আমি আজকে এই আলোচনায় যাবো না। আমি বরং বলতে চাই কভিড-১৯ রোগীদের যারা নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত তাদের আমরা অন্যান্য নিউমোনিয়া রোগীদের থেকে বেশী গুরুত্ব দিবো। অক্সিজেন স্যাচুরেশন দেখে আমরা রোগীদের অবস্থা সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নিবো। অক্সিজেনের পরিমাণ কমে গেলে রোগীর লক্ষন কম হলেও অক্সিজেন দেওয়াটা জরুরী। আমরা যদি আগে থেকেই অক্সিজেনের পরিমাণ দেখে অক্সিজেন থেরাপি দিতে পারি তবে আমরা হঠাৎ খারাপ হয়ে যাওয়া অনেক রোগীর জীবন বাঁচাতে পারবো।
সবশেষে বলতে চাই, কভিড-১৯ একটি নতুন রোগ। অনেক কিছুই আমরা নতুন নতুন শিখছি। আমরা যত তাড়াতাড়ি এই নতুন বিষয়গুলো জানতে পারবো ততো বেশী আমরা মানুষের জীবন বাঁচাতে পারবো। সচেতন হোন। ভালো থাকুন।
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে চিকিৎসকের সরাসরি পরামর্শ পেতে দেখুন: মনের খবর ব্লগ
করোনায় মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক টেলিসেবা পেতে দেখুন: সার্বক্ষণিক যোগাযোগ
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
করোনায় সচেতনতা বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও বার্তা দেখুন: সুস্থ থাকুন সর্তক থাকুন
প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব। মনের খবরের সম্পাদকীয় নীতি বা মতের সঙ্গে লেখকের মতামতের অমিল থাকতেই পারে। তাই মনের খবরে প্রকাশিত কলামের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা বা অন্য যেকোন ধরনের দায় সর্ম্পূণই লেখকের।