সমস্যা:
আমি আল আমিন, বয়স ১৭ বছর। আমি ৫ বছর ধরে মানসিক রোগে আক্রান্ত। কিন্তু ২ বছর আগে পিজি হাসপাতালের ডাক্তার আমাকে মানসিক রোগী বলে চিহ্নিত করেছেন। হ্যাঁ, আমি তা আগে থেকেই জানি। ডাক্তার প্রথমে প্রদেপ খেতে বললেন এক সপ্তাহ, তারপর মিট্রাজিন, তারপর নেক্সসিটাল। আমি প্রায় টানা ৩ মাসের মতো নেক্সসিটাল খেয়েছি, কিন্তু কোনো উপকার পাইনি। রাগ করে খাওয়া বন্ধ করে দিয়েছি। বাদ দেওয়ার পর কিছুদিন ভালোলাগলেও পরে অনেক খারাপ লাগতে শুরু করে। হতাশা কাজ করে প্রচুর, সপ্তাহে অন্তত পক্ষে ১/২ দিন ঘুম হয় না। ঘাড়ের পিছনে সবসময় প্রচুর ব্যথা করে, মাথা ভারি, বমি বমি ভাব ও আতঙ্ক কাজ করে। যদি আমাকে সুন্দর পরামর্শ দেন খুশি হব এবং চির কৃতজ্ঞ থাকব।
পরামর্শ:
আল আমিন তোমার প্রশ্নের জন্য ধন্যবাদ। তুমি তোমার পেশা উল্লেখ করনি অর্থাৎ তুমি কি ছাত্র নাকি চাকরি কর না ব্যবসা কর নাকি কিছু কর না। তুমি বললে যে পাঁচ বছর ধরে তোমার মানসিক রোগ। মানসিক রোগ তো নির্দিষ্ট একটা রোগ না, মানসিক রোগ অনেক প্রকারের আছে। কোনো কোনোটাকে আমরা নিউরোসিস এবং কোনো কোনোটা সাইকোসিস এই দুইভাগে ভাগ করি। তোমার সমস্যাগুলো নিয়ে পরিষ্কারভাবে কিছু বলনি। তবে তুমি পিজি হাসপাতালের ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে যে ঔষধগুলো খাচ্ছ তাতে মনে হচ্ছে তোমার রোগটা নিউরোসিসের মধ্যে পড়ে। নিউরোসিসের যে সমস্যাগুলো তোমার মধ্যে আছে সেটাও ক্লিয়ার না, কিন্তু তোমার কথায় বুঝা যাচ্ছে যে ঔষধ খাওয়ার পর কিছুদিন ভাল ছিলে তারপর তোমার মধ্যে হতাশা দেখা দিয়েছে। তোমার হতাশা আছে মানে তোমার মন খারাপ থাকে, কিছু ভাল লাগে না, কাজ-কর্মে মন বসে না, কোনো কিছু করতে ইচ্ছা করে না। অর্থাৎ তোমার ডিপ্রেশন বা বিষণ্নতা আছে। তুমি বলেছ পাঁচ বছর আগে অর্থাৎ ১২ বছর বয়স থেকে তুমি মানসিক সমস্যায় আক্রান্ত। যদিও এই বয়সটা ডিপ্রেশনের জন্য ক্রিটিক্যাল এইজ না, তবে এ বয়সেও ডিপ্রেশন হতে পারে। তুমি প্রদেপ, নেক্সিটাল ঔষধ খাওয়ার পরও কোনো উপকার হয়নি। আমার মনে হয় এক্ষেত্রে ঔষধের ডোজ হয়তোবা ঠিক হয়নি বা তোমার ডায়াগনোসিস সঠিকভাবে করা যায়নি। আর তুমি যে ঘাড়ে ব্যথার কথা বলেছ সেটা টেনশনের কারণে হতে পারে। এজন্য টেনশন কমানোর ঔষধ খেলেই ঠিক হয়ে যাবে। অনেক সময় শুধু ঔষধে কাজ না হলে সাইকোথেরাপীর প্রয়োজন হয়।
সবচেয়ে ভাল হতো তোমার সব সমস্যা সঠিকভাবে জানতে পারলে, কারণ সমস্যা ঠিকমত জানতে না পারলে মানসিক রোগ সম্পর্কে ধারণা করাটা মুশকিল হয়ে যায়। যেকোনো রোগ ভালোভাবে ডায়াগনোসিসের জন্য সঠিক ইতিহাস জানা প্রয়োজন। তোমার অনেক তথ্যই অজানা রয়ে গেল। যেমন- তুমি কি কর, তোমার পড়াশুনার চাপ বা ব্যক্তিগত কোনো সমস্যা আছে কিনা, তোমার বাবা-মা কি করেন, পরিবারে অন্য কারো কোনো মানসিক সমস্যা আছে কিনা, পারিবারিক বা পারিপার্শ্বিক অবস্থা ইত্যাদি। সবকিছু জানার পরই কোনো সমস্যার সঠিক সমাধান দেয়া সম্ভব।
অতএব আমার পরামর্শ হলো তুমি ধৈর্য্য না হারিয়ে অনতিবিলম্বে আবার বিএসএমএমইউ-এর সেই ডাক্তারের কাছে যাও এবং ঔষধ খাওয়ার পর তোমার যে সমস্যাগুলো হচ্ছে তা খুলে বল। তিনি নিশ্চয়ই তোমার কথা যত্ন সহকারে শুনবেন এবং তোমাকে সঠিক চিকিৎসা দিবেন। আশা করি তুমি সুস্থ হবে।
পরামর্শ দিচ্ছেন,
প্রফেসর ডা: এ এইচ এম মোস্তাফিজুর রহমান
দৃষ্টি আকর্ষণ- মনেরখবর.কম এর প্রশ্ন-উত্তর বিভাগে, মানসিক স্বাস্থ্য, যৌন স্বাস্থ্য, মাদকাসক্তি সহ মন সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ে আপনার কোনো জানার থাকলে বা প্রশ্ন থাকলে বা বিশেষজ্ঞ পরামর্শ দরকার হলে question@www.monerkhabor.com এই ইমেলের মাধ্যমে প্রশ্ন পাঠাতে পারেন।