বদলে যাচ্ছে আমাদের যৌন জীবন: পর্ব-২

গত পর্বে যৌন সমস্যার সামাজিক চিত্রটা তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। পাশাপাশি প্রশ্ন তুলেছি, আমরা যারা মূল ধারার চিকিৎসক তারা কতটুকু প্রস্তুত এ ধরনের সমস্যা মোকাবেলায়। আর এ লেখার মধ্যদিয়ে সে প্রশ্নের উত্তর দেয়ারই চেষ্টা করব। উত্তরটা বোঝার জন্য সবার আগে প্রয়োজন সমস্যার স্বাস্থ্যগত চিত্রটা দেখা।

Our sex life is going to change_19-2-2015

ঠিক কত সংখ্যক মানুষ যৌন সমস্যায় ভুগছেন তা নির্দিষ্ট করে বলা না গেলেও বলা যায়, তারা কী কী সমস্যায় ভুগছেন। মোটা দাগে, যদি ভাগ করি তবে, সাধারণত চার ধরনের সমস্যায় তারা ভুগছে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। সেগুলো হলো-

• যৌনাঙ্গের রোগ
• যৌন রোগ
• যৌনবাহিত রোগ
• প্রজনন স্বাস্থ্যগত রোগ

যদিও প্রজনন স্বাস্থ্য সমস্যা সরাসরি যৌন সমস্যার মধ্যে পড়ে না, তথাপি যৌন জীবনের সাথে সম্পর্ক থাকার কারণে প্রসঙ্গটি আনা হল। দেখা গেছে, বন্ধ্যাত্ব, অপরিকল্পিত গর্ভধারণ, পুরুষের স্থায়ী বন্ধ্যাকরণ প্রভৃতি প্রজনন স্বাস্থ্য সমস্যার জন্য মানুষ যাদের কাছে যায়, অনেক সময় যৌন সমস্যার জন্যও আবার তাদের কাছেই যায়। কারণ, সাধারণ মানুষ যৌন স্বাস্থ্য ও প্রজনন স্বাস্থ্যকে সেভাবে দেখে না। তাই অনেক ক্ষেত্রে স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞদের মানসিক বিশেষজ্ঞদের সাথে একযোগে কাজ করতে হয়।

উন্নত বিশ্বের দেশগুলোতে সাইকোসেক্সুয়াল ক্লিনিকে এ ধরনের রেফারেল সিস্টেম প্রচলিত আছে। আমাদের দেশেও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে এ ধরনের ব্যবস্থা চালু আছে। সেখানে মনোরোগ বিদ্যা বিভাগের উদ্যোগে পরিচালিত সাইকিয়াট্রি সেক্স ক্লিনিকে আন্তঃবিভাগীয় রেফারেলের মাধ্যমে সেবা প্রদান করা হয়।

শুধু আমাদের দেশে নয়, উন্নত বিশ্বেও গাইনোকোলজিস্ট বা স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞরা ফার্স্ট লাইন থেরাপিস্ট হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। ফার্স্ট লাইন থেরাপিস্ট বলা হয়, এই কারণে যে, সব ধরনের যৌন সমস্যা তারা এককভাবে সমাধান করেন না বা করা যায়ও না। তাই পেশাগত দিক থেকে যৌন স্বাস্থ্য ও প্রজনন স্বাস্থ্যকে আলাদা করে দেখা হয়।

যৌন স্বাস্থ্য ও প্রজনন স্বাস্থ্য এক নয়। তাহলে প্রশ্ন দাঁড়ায়, যৌন সমস্যা কী? আর যৌন স্বাস্থ্য বলতে আমরা কী বুঝি? সংক্ষেপে বলা যায়, যেসব সমস্যা আমাদের যৌন জীবন ব্যাহত করছে সেগুলোই যৌন সমস্যা। যৌনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা ওই সব সমস্যাকে রোগ হিসেবে চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দিয়ে সুস্থ সুন্দর স্বাভাবিক যৌন জীবনের নিশ্চয়তা দেয়ার চেষ্টা করছেন। এটা একক কোনো বিশেষজ্ঞের কাজ নয়। কাজটি বহুপক্ষীয় (মাল্টি ডিসিপ্লিনারি টিমের)। অর্থাৎ একাধিক বিশেষজ্ঞ এক্ষেত্রে কাজ করেন।

যৌন সমস্যার ধরন ও প্রকৃতির ওপর নির্ভর করে, কোন বিশেষজ্ঞ কোন কোন সমস্যা দেখবেন। আরেকটু সহজ করে বলি, যেমন ধরা যাক, একজন পুরষের লিঙ্গ এমনভাবে বাঁকা যে যৌনকাজে মিলিত হওয়া তার জন্য কষ্টকর হয়ে পড়ে অথবা অনেক সময় সম্ভবই হয় না। আবার দেখা গেল, অন্য একজন পুরুষের লিঙ্গ থেকে পুঁজ পড়ছে অথবা লিঙ্গের উত্থান যৌন মিলনের জন্য যথেষ্ট সন্তোষজনক নয়। এখানে প্রত্যেকটি ভিন্ন ভিন্ন যৌন সমস্যা। আর এর বিশেষজ্ঞও আলাদা আলাদা। যার লিঙ্গ বাঁকা তাকে যেতে হবে একজন ইউরোলজিস্টের কাছে। যার লিঙ্গ থেকে পুঁজ ঝরছে তাকে যেতে হবে চর্ম ও যৌন বিশেষজ্ঞের কাছে। আর যার লিঙ্গের উত্থান সন্তোষজনক নয় তাকে যেতে হবে সেক্সুয়াল মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অথবা মনোরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে। প্রশ্ন আসা স্বাভাবিক ইরেকটাইল ডিসফাংশন বা লিঙ্গ উত্থান জনিত সমস্যার জন্য মানসিক বিশেষজ্ঞের কাছে কেন যাব? আগামী পর্বে সে উত্তরই দেয়ার চেষ্টা করব।

লেখক
ডা. এসএম আতিকুর রহমান
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, মনোরোগবিদ্যা বিভাগ
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়।

বদলে যাচ্ছে আমাদের যৌন জীবন ধারাবাহিক প্রতিবেদনের অন্যান্য পর্ব গুল পরতে পারেন এখান থেকে

বদলে যাচ্ছে আমাদের যৌনজীবন-পর্ব ১

 বদলে যাচ্ছে আমাদের যৌন জীবন-পর্ব ৪

বদলে যাচ্ছে আমাদের যৌনজীবন-পর্ব ৩


প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব। মনেরখবর-এর সম্পাদকীয় নীতি/মতের সঙ্গে লেখকের মতামতের অমিল থাকতেই পারে। তাই এখানে প্রকাশিত লেখার জন্য মনেরখবর কর্তৃপক্ষ লেখকের কলামের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের দায় নেবে না।

Previous articleপ্যানিক ডিজঅর্ডারের মনস্তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ
Next articleডা. রেজওয়ানা কাদেরীর অকাল প্রয়াণে শোক সভা
ডা. এস এম আতিকুর রহমান
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, মনোরোগবিদ্যা বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here