সমস্যা:
আমার মেয়ের বয়স ১৭ বছর। এবার এইচএসসি পরীক্ষা দেয়ার কথা ছিল। পড়ালেখায় মোটামুটি ভাল। কিন্তু পরীক্ষা শুরু হওয়ার মাসখানেক আগে হঠাৎ একদিন তার খিঁচুনি শুরু হয় এবং অজ্ঞান হয়ে পড়ে। মাথায় পানি দেয়ার কিছুক্ষণ পর তার জ্ঞান ফিরে আসে। তখন আমরা মনে করেছিলাম অতিরিক্ত পড়াশুনার চাপে সে অসুস্থ হয়ে পড়েছে। এরপর আরও কয়েকবার সে অসুস্থ হয়ে পড়ে। এজন্য পরীক্ষা দিতে পারেনি। আমরা তাকে নিউরোলজিস্ট দেখাই এবং উনার পরামর্শমত টেস্ট করাই।কিন্তু তেমন কোনো রোগ ধরা পড়েনি। পরবর্তীতে তাকে মেডিসিন ডাক্তারসহ অনেক ডাক্তার দেখিয়েছি। তবুও কোনো লাভ হয়নি। একপর্যায়ে তাকে হুজুরের কাছে নিয়ে যাই এবং পানি পড়া, তেল পড়া সবই দেই। এতকিছুর পরও আমার মেয়ে সুস্থ হচ্ছে না। বর্তমানে আমরা মেয়েকে নিয়ে খুবই দুঃশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়েছি। কিছুদিন আগে আমার এক আত্মীয় আমার মেয়েকে মানসিক ডাক্তার দেখানোর পরামর্শ দিয়েছে। আমি এখন কি করব বুঝতে পারছি না।আমার মেয়ে কি মানসিক রোগী হয়ে গেছে? সে কি আর কখনও ভাল হবে না? (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক)।
পরামর্শ:
ধন্যবাদ পাঠক আপনার প্রশ্নের জন্য। আপনার প্রশ্নের বর্ণনা পড়ে মনে হচ্ছে যে, এই রোগীর অজ্ঞান হওয়ার পিছনে দুটো কারণ থাকতে পারে। একটি হচ্ছে এপিলেপ্সি বা মৃগীরোগ এবং অন্যটি হচ্ছে কনভার্সন ডিজঅর্ডার। এটি যদি এপিলেপ্সি বা মৃগীরোগ হয় তাহলে আরোও কিছু লক্ষণ থেকে সেটা বুঝা যাবে। যেমন- ১) সাধারনতঃ অজ্ঞান অবস্থা ৫/৭ মিনিট পর্যন্ত থাকবে, ২) অজ্ঞান বা খিঁচনি হওয়ার সময় ঠোঁট বা জিহবা কেটে রক্ত বের হতে পারে, ৩) অজ্ঞান হয়ে যেখানে সেখানে পড়ে গিয়ে শরীরে জখম হতে পারে, ৪) মানুষের সামনেও অজ্ঞান হতে পারে আবার মানুষ কাছে না থাকা অবস্থায়ও অজ্ঞান হয়ে পড়তে পারে। ৫) অজ্ঞান হয়ে গিয়ে অটোমেটিক পায়খানা প্রস্রাব হয়ে যেতে পারে, ৬) অনেক সময় ঘুমের মধ্যেও অজ্ঞান হতে পারে, ৭) জ্ঞান ফিরে আসার পর অজ্ঞান হওয়া অবস্থায় কি কি হয়েছিল সেটা মনে করতে পারে না। যদি উপরের এই লক্ষণগুলো থেকে থাকে তাহলে এটা মৃগীরোগ।
আর যদি এগুলো কোনোটাই না থাকে তাহলে ধরে নিতে হবে এটা কনভার্সন ডিজঅর্ডার। এটি এক ধরনের মানসিক রোগ এবং চিকিৎস্যা করলে এই রোগ ভাল হয়। সাধারণত যেকোনো ধরনের মানসিক চাপ, স্ট্রেস বা দ্বন্দ্ব থেকে এই রোগ হয়ে থাকে। আর যে কারণে এই মানসিক চাপ, স্ট্রেস বা দ্বন্দ্ব তৈরি হয় সেই কারণগুলো সাইকোথেরাপিতে আলোচনার মাধ্যমে একটা সমাধানের পথ বের করা যায় এবং এতে রোগী ভাল হয়।এই রোগের প্রধান চিকিৎস্যাই হল সাইকোথেরাপি। তাই আপনি কোনো মনোরোগ বিশেষজ্ঞ বা সাইকোলজিস্ট এর সাথে যোগাযোগ করে সাইকোথেরাপির চিকিৎস্যা নিলে আপনার মেয়ে সুস্থ হয়ে যাবে আশা করা যায়।
পরামর্শ দিচ্ছেন,
ডা. মহসিন আলী শাহ্
দৃষ্টি আকর্ষণ- মনেরখবর.কম এর প্রশ্ন-উত্তর বিভাগে, মানসিক স্বাস্থ্য, যৌন স্বাস্থ্য, মাদকাসক্তি সহ মন সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ে আপনার কোনো জানার থাকলে বা প্রশ্ন থাকলে বা বিশেষজ্ঞ পরামর্শ দরকার হলে question@www.monerkhabor.com এই ইমেলের মাধ্যমে প্রশ্ন পাঠাতে পারেন।