পরার্থপরতার সাথে সম্পর্কিত মানসিক রোগের চিকিৎসা

0
20
পরার্থপরতায় সমাজের উন্নতি

ডা. রেদওয়ানা হোসেন
সহকারী অধ্যাপক, মনোরোগবিদ্যা বিভাগ
শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, ঢাকা।

পরার্থপরতা (Altruism) মানুষের এমন একটি বৈশিষ্ট্য যা তাকে কোন প্রত্যাশা ছাড়াই অন্যের জন্য ভাল কাজ করতে উদ্বুদ্ধ করে। আপনি কোন লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন দীর্ঘক্ষণ ধরে, কিন্তু আপনার জায়গা ছেড়ে দিলেন পরবর্তী একজনের জন্য যার হয়তো তাড়া আছে অথবা পথে পরে থাকা একটা ময়লা কুড়িয়ে নিয়ে ডাস্টবিনে ফেললেন- এই আচরণগুলো কিন্তু বাহ্যিক কোন প্রতিদানের আশা ছাড়াই করে থাকেন। এইরকম পরার্থপর আচরণ আমরা সবাই কমবেশি করে থাকি।

সচেতনভাবে হোক অথবা অবচেতনভাবে, পরার্থপর আচরণগুলো আমাদের জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। পরার্থপর ব্যক্তিরা তুলনামূলকভাবে কম একাকীত্বে ভোগেন, তারা নিজেদের জীবনের ইতিবাচক দিকগুলোতে বেশি মনোযোগী হতে পারেন। ব্যক্তিগত বিষণ্ণতা বা দুশ্চিন্তা তাদেরকে কম প্রভাবিত করে। পরার্থপরতা সামাজিক বন্ধন দৃঢ় করে এবং মহানুভবতার বিকাশ ঘটায়।

Magazine site ads

পরার্থপরতার সাথে সম্পর্কিত মানসিক রোগ

১. অ্যান্টিসোশিয়াল পার্সোনালিটি ডিসঅর্ডার (ASPD)

এ ধরনের রোগীরা অন্যের অধিকার এবং সামাজিক রীতিনীতির বিষয়ে অত্যন্ত অশ্রদ্ধাশীল থাকে। তাদের আচরণ উদ্ধত এবং সমাজের নীতির প্রতি সহানুভূতির অভাব দেখা যায়। অন্যদের ক্ষতির প্রতি এদের কোনো উদ্বেগ থাকেনা।

২. নার্সিসিস্টিক পার্সোনালিটি ডিসঅর্ডার (NPD)

এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা নিজেদেরকে অত্যন্ত বড় মনে করে এবং অন্যদের থেকে গুরুত্বপূর্ণ ভাবে। তারা সাধারণত অন্যদের অধিকারের প্রতি উদাসীন এবং তাদের অনুভূতির প্রতি অসম্মানজনক আচরণ করে।

৩. বর্ডারলাইন পার্সোনালিটি ডিসঅর্ডার (BPD)

বর্ডারলাইন পার্সোনালিটি তে আক্রান্ত ব্যক্তিরা পারস্পরিক সম্পর্ক ধরে রাখতে পারেনা। তারা প্রায়শই অন্যদের অনুভূতির প্রতি অমনোযোগী হয়ে পড়ে যার কারণে সম্পর্ক ধরে রাখতে অসুবিধা হয়। এছাড়াও তারা হুট করে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে যা সম্পর্কগুলোতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।

৪. ডিপ্রেশন ও অ্যাংজাইটি

গবেষণায় দেখা গেছে যে পরার্থপরতা দুশ্চিন্তা রোগ কমায়। তবে ডিপ্রেশন বা বিষণ্ণতার হার তাদের মধ্যে সামান্য বেশি থাকে। অন্যের জন্য স্বার্থহীনভাবে করে যাওয়ার পর উত্তম প্রতিদান না পেলে বিষণ্ণতার ঝুঁকি তৈরি হয়।

উল্লেখিত মানসিক সমস্যাগুলোর কোন নির্দিষ্ট কারণ খুজে পাওয়া যায়না। জেনেটিক বা বংশগত কারণে, পরিবেশগত কারণে, পারিপার্শ্বিক চাপ, মনস্ত্বাত্তিক বিষয় অথবা ব্যাক্তিত্ত্বের গঠনের কারণে মানুষের আচরণ পরার্থপর অথবা স্বার্থপর হয়ে উঠে।

মানসিক রোগ দেখা দিলে তার লক্ষণ ব্যক্তি এবং রোগ ভেদে বিভিন্ন হতে পারে। তবে কিছু লক্ষণ সবার ক্ষেত্রেই পাওয়া যায়। যেমন- অন্যের অনুভূতির প্রতি সহনশীলতার অভাব, আত্মকেন্দ্রিক আচরণ, হুট করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রবণতা, মুড সুইং, সামজিক বিচ্ছিন্নতা ইত্যাদি। এধরণের লক্ষণ দেখা গেলে দ্রুত বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে।

মনোরোগ বিশেষজ্ঞগণ সাধারণত দুটি পদ্ধতিতে চিকিৎসা প্রদান করে থাকেন- চিকিৎসা এবং সাইকোথেরাপি।

মনের খবর ম্যগাজিনে

সাইকোথেরাপিঃ

১। কগনিটিভে বিহেভিয়ার থেরাপিঃ এখানে ব্যক্তির নেতিবাচক চিন্তাগুলোকে চিহ্নিত করার মাধ্যমে তার আচরণগত পরিবর্তন করতে সাহায্য করা হয়।ডিপ্রেশিন এবং এংজাইটির রোগীদের মূলত এই সাইকোথেরাপি দেওয়া হয়।

২। ডায়ালেকটিক বিহেভিয়ার থেরাপিঃ ব্যক্তিত্ত্বের সমস্যা যাদের থাকে (পার্সোনালিটি ডিজ অর্ডার বিশেষত বর্ডারলাইন) তাদের জন্য এই চিকিতসাপদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। এই পদ্ধতিতে মূলত অন্যের জন্য কাজ করাকে ডিস্ট্রেস টলারেন্স এর অন্যতম দক্ষতা হিসেবে শেখানো হয়।

৩। সাইকোএনালাইটিক সাইকোথেরাপিঃ এখানে রোগীর শৈশব থেকে তার বেড়ে ওঠা পর্যন্ত তার মানসিক অবস্থা শোনার মাধ্যমে তার বর্তমান অবস্থা শোনা হয়।

ঔষধের মাধ্যমে চিকিতসাঃ

সাধারণত SSRI গ্রুপের ওষুধের মাধ্যমে মাঝারি থেকে তীব্রমাত্রার রোগীদের চিকিৎসা করা হয়।

অতিমাত্রায় স্বার্থপরতা কিংবা পরার্থপরতা দুটোই মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। মানসিক সুস্থতার জন্য পরার্থপর হওয়া প্রয়োজন তবে তা যেন অবশ্যই ভারসাম্যের মধ্যে থাকে সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে।

আরও দেখুন- 
Previous articleরাজশাহী মেডিকেলে মানসিক স্বাস্থ্যসেবায় নতুন দিগন্ত
Next articleআড্ডা নিয়ে মনের খবর মাসিক ম্যাগাজিনের মার্চ সংখ্যা ২০২৫

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here