নারীর যৌনরোগ- ৩য় পর্ব

সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ও ঔষধ  প্রশাসন U.S Food and Drug Administration -FDA নারীদের  ভায়াগ্রা বাজারজাতকরণের অনুমোদন দিয়েছে। স্প্রাউট ঔষধ কোম্পানির ‘ফিমেল ভায়াগ্রা’ হিসেবে পরিচিত ফ্লিবানসেরিন ((Flibanserin) নামের ঔষধটির অনুমোদন দিয়েছে FDA । তবে, কোম্পানির  দাবি  ফ্লিবানসেরিন (Flibanserin) ঔষধটির  মূল  উদ্দেশ্য শারীরিক নয়  মানসিক।
।।
।।
যেসব নারী মানসিকভাবে যৌন অনীহায় ভোগেন তাদের  জন্য এই পিল। গত ২০ শে  আগস্ট  দৈনিক আমাদের সময় পত্রিকায় খবরটি প্রকাশ করা হয়েছে। নি:সন্দেহে এটি একটি ভালো খবর সেসব রোগীদের জন্য, যারা এধরণের সমস্যায় ভুগছেন। আশা করা যায় বাজার অর্থনীতির কল্যাণে আমাদের দেশেও শিগগিরই ঔষধটি পাওয়া  যাবে।
।।
নারীর যৌন  রোগ শিরোনামে গত দুই পর্বের লেখায় নারীর যৌন অনীহা নিয়ে লিখেছিলাম। বলেছিলাম, ফিমেল হাইপো অ্যাকটিভ সেক্সুয়াল ডিজায়ার ডিজঅর্ডারে ভালো কোন ঔষধ না থাকাতে সেক্স থেরাপী বা সাইকোলজিক্যাল ইন্টারভেনশনই  মোটামুটি  নির্ভরযোগ্য  উপায়।  এখন  চিকিৎসার  ক্ষেত্রে  মেডিকেল মডেল এবং সাইকোলজিক্যাল মডেল দুটি উপায়েই চিকিৎসা করা সম্ভব  হবে, ফলে সময় এবং খরচ দুটোই বাঁচবে।
।।
এ পর্বে নারীর অন্য একটি যৌন রোগের ব্যাপারে লিখতে যাচ্ছি। আর তা হল অর্গাজমিক  ডিসওয়ার্ডার। যারা  অর্গাজমিক  ডিসঅর্ডারে ভোগেন তাদের  ক্ষেত্রে  সমস্যাটা  দেখা  যায়  চরম  পুলকে। তাদের  যৌন উত্তেজনা , যৌন মিলনের প্রতি আগ্রহ সব ঠিকই থাকে। কিন্তু উত্তেজিত হওয়ার পর চরম পুলক লাভে তারা ব্যর্থ হন। অথবা কখনো কখনো চরম পুলক লাভ করলেও তার তীব্রতা আগের তুলনায় কম হয়। সমস্যাটা নারী নিজেই অনুভব করেন, তাই চিকিৎসা নিতে নারী নিজে থেকেই এগিয়ে আসেন। জীবনে কোন সময়ই চরম পুলক লাভ করেননি এমন নারীর সংখ্যাও একেবারে কম নয়। তারা আসলে জানেনই না চরম পুলক কি? যৌন কর্মকান্ডে তারা যথেষ্ট আনন্দ  পান। তাই অনেকেই চরম পুলকের প্রয়োজন আছে বলে মনে করেন না।
।।
নারীর চরম পুলকের ব্যর্থতাকে রোগ বা অর্গাজমিক ডিসঅর্ডার আমরা তখন বলব যখন ৬ মাস বা তারও অধিক সময় ধরে প্রায় ৭৫% থেকে ১০০% যৌন ক্রিয়ার ক্ষেত্রে চরম পুলক লাভে উল্লেখযোগ্যভাবে দেরী হয়, চরম পুলক প্রাপ্তি উল্লেখযোগ্য মাত্রায় কমে যায়, চরম পুলক একদম হয় না, চরম পুলকের তীব্রতা কমে যায়।
।।
তবে  সম্পর্কের  জটিলতার  কারণে  চরম  পুলক  লাভে  ব্যর্থ  হলে  তাকে অর্গাজমিক ডিসঅর্ডার  বলা  যাবে  না।  এখানে  যৌন ক্রিয়া বলতে ভ্যাজাইনাল  স্টিমুলেশন  এবং  ক্লাইটোরাল  স্টিমুলেশন  দুটোকেই বোঝানো হয়েছে। সঙ্গীর সাথে যৌন মিলনের সময় ভ্যাজাইনাল স্টিমুলেশন বা যোনী উত্তেজিতকরণ সাধারনত যোনীতে সঙ্গীর লিঙ্গ গ্রহণের মধ্য দিয়ে  হয়।  আর  ক্লাইটোরাল  স্টিমুলেশন  হয়  হাত  দিয়ে  ক্লাইটোরি স্পর্শ করার মাধ্যমে।
।।
কোন নারী যদি এই দুটি উপায়ের যে কোন একটিতে চরম পুলক লাভে সমর্থ হয় তবে তাকে অর্গাজমিক ডিসঅর্ডারে ভুগছে বলা যাবে না। কোন কোন নারীর মধ্যে সক্রিয় যৌন জীবনের ( আ্যাকটিভ সেক্সুয়াল লাইফ) শুরু থেকেই এ ধরণের সমস্যা দেখা যায়। কারো কারো ক্ষেত্রে স্বাভাবিক যৌন জীবনের পরেও এরকম দেখা দেয়। প্রথমটাকে বলা হয় লাইফ লং বা আজীবন আর দ্বিতীয়টাকে বলা হয় আ্যাকোয়ার্ড বা অর্জিত।
চলবে…
।।
Previous articleহস্তমৈথুন নয়, পারফরম্যান্স এংজাইটিই সেক্সের জন্য ক্ষতিকর
Next articleকারও মৃত্যুর কথা শুনলে আমি নিঃশ্বাস নিতে পারি না
ডা. এস এম আতিকুর রহমান
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, মনোরোগবিদ্যা বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here