একটা সময় ছিল যখন পত্রিকায় ধর্ষণের খবর ছাপা হতো এইভাবে যে অমুক গ্রাম বা মহল্লার অমুকে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে যেয়ে ধর্ষিত হয়েছে। সেখান থেকে আমরা কয়েকটি জিনিস স্পষ্ট বুঝতাম। যে পুরুষ লোকটি ধর্ষণ করেছে তার জৈবিক তাড়না অনেক। সে সেই তাড়নার চোটে রাত বিরেতে মেয়েটির চলার পথে ওৎ পেতে বসে ছিল। আর ধর্ষিতা মেয়েটি এ বিষয়ে কিছুই জানত না। সে একটি দুর্ঘটনার শিকার মাত্র। এ ধরনের ঘটনা এখনো ঘটে এবং সেভাবেই খবরটি পরিবেশিত হয়। তবে ইদানীং অন্য ধরনের ধর্ষণের খবরও মিডিয়াতে আসছে। আর তা হল ‘ডেইট রেইপ’। সহজ বাংলায় বললে বলতে হয় অভিসার ধর্ষণ। ঢাকার একটি অভিজাত এলাকায় এমন দুটি ঘটনা পরপর ঘটলো। বিস্মিত হতে হয় উভয় ঘটনার মিল দেখে। সারসংক্ষেপে, দুই ক্ষেত্রেই ধর্ষক ভিকটিমের পূর্ব পরিচিত। সাধারণ পরিচয় নয়। কম হোক বেশি হোক এক ধরনের ইনটিমেসি তাদের মধ্যে ছিল। সম্পর্কের ডাকে সাড়া দিতে যেয়ে দুর্ঘটনাটি ঘটেছে। পাশ্চাত্যে এধরনের ধর্ষণকে ‘ডেইট রেইপ’ বলে।
যারা রক্ষণশীল তারা শাসন বারণের প্রশ্ন তুলছেন। সামাজিক শিথিলতাকে দুষছেন। রসালো আলাপে যারা উৎসাহী তারা মেয়েদের পোশাক পরিচ্ছদ থেকে শুরু করে চলন বলন চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের দিকে আঙুল তুলছেন। কেউবা সরাসরি বলছেন মেয়েগুলো দুশ্চরিত্রা। আবার আরেক পক্ষ তো খুবই সেনসিটিভ। ভিকটিম নিয়ে কোনো কথাই বলা যাবে না। তাতে নাকি ধর্ষকের দোষ কমে যায়। কেস হালকা হয়ে যায়। যদিও একজন ধর্ষক নিজ দায়িত্বেই ধর্ষণ করে। ধর্ষণ তো সবাই করে না।
যে করে তার কিছু বৈশিষ্ট্য আছে। তাকে চেনার উপায় আছে। সঙ্গী নির্বাচনের ক্ষেত্রে সেটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। সঙ্গীর সামাজিক অবস্থানের মতই তার মনুষ্যত্বের দিকটা দেখা প্রয়োজন। কোনো মানুষই তার চিন্তা ভাবনা লুকাতে পারে না। কথা বার্তায় তার শব্দ চয়ন এবং আচার ব্যবহারে তা প্রকাশ পায়। সে সব থেকে ঐ মানুষটা সম্পর্কে একটা ধারণা পাওয়া যায়। আমাদের সমাজ ভিক্টোরিয়ান সময় থেকে বের হয়ে এসেছে। ছেলে মেয়েতে সম্পর্ক হবে এটাই স্বাভাবিক। সবাই এখন সবার সাথে কানেক্টেড। মোবাইল ফেইসবুক হোয়াটসআপের যুগে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থেকে চিঠি দেয়ারও প্রয়োজন হয় না। মেয়েরা যত বেশি স্বাবলম্বী হবে সঙ্গী নির্বাচনে তত বেশি তৎপর হবে। এটা আমার কথা নয়। পাশ্চাত্যে ভিক্টোরিয়ান এজ শেষ হয়েছে অনেক আগে। আমাদের দেশে তার ক্রান্তিকাল চলছে। ডেইট রেইপ মোকাবেলায় ওদের কিছু কার্যক্রম আছে। তেমনি একটি কার্যক্রমের কিছু অংশ তুলে ধরছি এই লেখায়। বেবেল ডট কমে মি রা খ এর সচেতনতামুলক একটি পোস্ট থেকে তুলে ধরছি। সেক্সুয়াল এ্যসল্ট নিয়ে তিনি কিছু কাজ করেছেন । বিউটি রেস্টোরড; ফাইন্ডিং লাইফ এন্ড হোপ আফটার ডেইট রেইপ বইটি লিখেছেন তিনি। সেটা থেকেই তুলে ধরছি ধর্ষকামী প্রেমিককে চেনার তেরোটি বৈশিষ্ট্য।
যে তেরোটি বৈশিষ্ট্য ধর্ষকামী প্রেমিকের মধ্যে খুঁজবেন
– রাগী এবং আগ্রাসী মনোভাব।
– বদরাগী মেজাজ অর্থাৎ যে অল্পতেই রেগে যায়।
– অতিমাত্রায় জেলাস বা ঈর্ষাকাতর এবং দখলি মনোভাব।
– ঘন ঘন ব্যক্তিগত সীমা অতিক্রম করা যেমন কল লিস্ট চেক করা, মেসেজ চেক করা।
– সঙ্গিনীর প্রত্যাশাকে অবজ্ঞা করা।
– সঙ্গিনীকে বার বার অপরাধ বোধে ফেলা/দোষারোপের প্রবণতা।
– সঙ্গিনীর না সহ্য করতে না পারার অক্ষমতা, না বললে ক্ষেপে যাওয়া।
– বিশেষ করে পার্টিতে ঘনিষ্ঠ হতে চাওয়ার প্রবণতা এবং পরিচিত বন্ধুবান্ধবদের কাছ থেকে আলাদা করতে চাওয়ার প্রবণতা।
– প্রথম দেখা সাক্ষাতের সময়ই একা থাকতে চাওয়া।
– অসময়ে দেখা করার জন্য দাবী করা।
– অপরিণত আচরণ করা, অন্যের প্রতি সহানুভূতি এবং সামাজিক দায়িত্ব কম অনুভব করা।
– নিজের সম্পর্কে কম বলা, সঙ্গিনীর ব্যক্তিগত বিষয়ে অধিক জানতে চাওয়া।
– অধিক মাত্রায় তথাকথিত পুরুষতান্ত্রিক ও রক্ষণশীল।
মি রা খ বিভিন্ন সময় এই বৈশিষ্ট্যগুলো নিয়ে টিন এজারদের সামনে তুলে ধরেছেন। ভিকটিমদের অনেকেই স্বীকার করেছে এই বৈশিষ্ট্যগুলো জানা থাকলে তাদেরকে ডেইট রেইপের শিকার হতে হত না। ভালবাসায় মানুষের মুক্তি বলে বিশ্বাস করি। মেয়েরা যাতে নির্ভয়ে ভালবাসতে পারে সে জন্যই আমাদের এই প্রয়াস।
প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব। মনের খবরের সম্পাদকীয় নীতি বা মতের সঙ্গে লেখকের মতামতের অমিল থাকতেই পারে। তাই মনের খবরে প্রকাশিত কলামের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় নেবে না কর্তৃপক্ষ।