হস্থমৈথুনের প্রতি যৌনবিজ্ঞানীদের দৃষ্টিভঙ্গি ইতিবাচক। এক সময় প্রিম্যাচিউর ইজাকুলেশনের (আগাম বীর্যপাত) চিকিৎসায় মিউচুয়াল মাস্টারবেশনের কথা বলা হত। অর্থাৎ স্বামী স্ত্রীর এবং স্ত্রী স্বামীর যৌনাঙ্গ স্পর্শ করে হস্থমৈথুন করে দেবে। ফলে স্বামী জানবে তার স্ত্রীর চরম পুলক আসতে কতটুকু সময় লাগে আর স্ত্রী জানবে তার স্বামীর বীর্যপাত হতে কতক্ষণ সময় লাগে। যদিও এই পদ্ধতিতে পরস্পরের মধ্যে জানাজানিটা ভালো হয় এবং পারফরমেন্স অ্যাংজাইটিতে ভোগা স্বামীর ভয় কাটাতে বেশ কার্যকরী কিন্তু অনেকের কাছে দৃষ্টিকটু হওয়ায় এ পদ্ধতি অনেকেই অনুসরণ করেন না। আর বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বলা যায় একদম সম্ভব নয়।
এ প্রসঙ্গে একটু বলে রাখি, সেক্স থেরাপি সম্পর্কে অনেকের মধ্যে অনেক ভুল ধারণা আছে। তার মধ্যে একটি হল থেরাপিস্টরা বোধ হয় সেক্স করে দেখায় অথবা থেরাপিস্টের সামনে সেক্স করতে হয়। এ দুটি ধারণার কোনটিই সত্যি নয়। সত্যি হল থেরাপিস্ট স্বামী-স্ত্রী দুজনকে পথ বাতলে দেয় আর সেক্স তারা তাদের বেড রুমে করে। সেখানে আর সবার মত থেরাপিস্টের ও প্রবেশ নিষেধ। সেক্সথেরাপির ক্ষেত্রে থেরাপিস্টকে একটা বস্তুনিষ্ঠতা বজায় রাখতে হয় এমনভাবে যেন সেটা তার এবং তার রোগীদের কাছে আলোচনার বিষয় হয়, আনন্দের বিষয় নয়।
বর্তমানে হস্থমৈথুনের বিষয়টি অন্যভাবে আসে প্রিম্যাচিউর ইজাকুলেশনের চিকিৎসায়। আর তা হল বিয়ের পূর্বে হস্থমৈথুনের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগানো। যাদের এ ধরনের অভ্যাস থাকে তাদের নিজেদের লিঙ্গের অনুভূতির সাথে তাদের একটা ভালো পরিচয় থাকে। বীর্যপাতের আগাম মূহুর্তটা তারা বুঝতে পারে। ওই মুহুর্তটাই হল পয়েন্ট অব নো রিটার্ন। ওই সময়ে করার মত অনেক কিছুই থাকে যেমন ডিপ ব্রিদিং বা লম্বা করে শ্বাস নেয়া অথবা একটু থামা। কোনো কোনো ক্ষেত্রে চিন্তা বা মনোযোগ সরিয়ে অন্যকিছু ভাবলেও বাড়তি সময় পাওয়া যায়।
সেক্স করার সময় স্বামী স্ত্রীর অবস্থান বদল করেও মিলনের সময় বাড়ানো যেতে পারে। সাধারণত মিলনের সময় স্ত্রী নীচে ও স্বামী উপরে থাকে। সেক্স করার এই পজিশনকে বলা হয় মিশনারি পজিশন। আর যখন এর উল্টোটা হয় অর্থাৎ স্বামী নীচে থাকে এবং স্ত্রী উপরে থাকে তখন তাকে বলে ওমেন অন টপ পজিশন। এই ওমেন অন টপ পজিশনে বেশি সময় পাওয়া যায়।
লিঙ্গ থেকে বীর্য নিক্ষিপ্ত হলে আমরা তখন তাকে বীর্যপাত বলি। বীর্যপাতের পর লিঙ্গ নিস্তেজ হয়ে নরম হয়ে যায়। বীর্যপাত হয় যৌন উত্তেজনা বাড়তে বাড়তে চরম পর্যায়ে যেয়ে। বীর্যপাত এবং চরম পুলক প্রায় এক সাথেই ঘটে। যৌনাকাঙ্ক্ষার পরম তৃপ্তি ঘটে চরম পুলক বা অরগাজমের মধ্য দিয়ে। কখনো কখনো এই চরম পুলক ছাড়াও বীর্যপাত হতে পারে তখন তাকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় বলা হয় অ্যানরগাজমিক ইজাকুলেশন। আবার বীর্যপাত ছাড়াও চরম পুলক হতে পারে। তেমন হলে বলা হয়, ড্রাই অরগাজম। যদিও আমরা সাধারণ দৃষ্টিতে লিঙ্গ থেকে বীর্য নিক্ষিপ্ত হওয়াকেই বীর্যপাত তথা চরম পুলক ভাবি। আসলে চরম পুলক এবং বীর্যপাত দুটি ভিন্ন বিষয়। যা হোক বীর্যপাত দুটি ধাপে হয়।
প্রথম ধাপ যৌন উত্তেজনার শুরুতে হয়। এই পর্বে লিঙ্গের পিছন দিকে মূত্রনালীর মধ্যে বীর্য এসে জমা হয়। এই পর্বকে ইমিশন ফেজ বলে। এই পুরো প্রক্রিয়া স্বয়ংক্রিয়ভাবে হয় যেখানে কোনো নিয়ন্ত্রণ থাকে না। কিন্ত দ্বিতীয় পর্ব চাইলে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। এই পর্বকে বলে এক্সপালশন ফেজ- লিঙ্গ দিয়ে বীর্য সজোড়ে নিক্ষিপ্ত হওয়ার পর্ব এটা। আর তা নিয়ন্ত্রণের উপায় হল কেজেল এক্সারসাইজ। এক ধরনের ব্যায়াম। মূত্রনালীর চারপাশে ঘিরে থাকা মাংস পেশীকে সংকোচনের মাধ্যমে আমরা এটা করতে পারি।
যদিও সহজ কথায় প্রিম্যাচিউর ইজাকুলেশন মানে সঙ্গীনির চরম পুলকের আগে বীর্যপাত হয়ে যাওয়া বা সময়ের হিসেব করলে এক মিনিটের মধ্যে বীর্যপাত হয়ে যাওয়া। তবে রোগ হিসেবে বিবেচনা করতে গেলে এর অনেক রকম ভেদ আছে। যেমন-লাইফ লং, অ্যাকোয়ার্ড, জেনারালাইজড, সিচুয়েশনাল ইত্যাদি। এই রকমভেদের কারণ হল চিকিৎসা। সব প্রিম্যাচিউর ইজাকুলেশনের চিকিৎসা পদ্ধতি এক নয়। তাই চিকিৎসার শুরুতে সঠিক রোগ নির্ণয় গুরুত্বপূর্ণ। রোগের ধরণ বুঝে চিকিৎক সিদ্ধান্ত নেবেন কার জন্য কোন পদ্ধতি উপযোগী হবে।
প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব। মনের খবরের সম্পাদকীয় নীতি বা মতের সঙ্গে লেখকের মতামতের অমিল থাকতেই পারে। তাই মনের খবরে প্রকাশিত কলামের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় নেবে না কর্তৃপক্ষ।