কোভিড ১৯: ডায়াবেটিস ও মানসিক স্বাস্থ্য

ডায়াবেটিস ও মানসিক স্বাস্থ্য
ডায়াবেটিস ও মানসিক স্বাস্থ্য

 ডায়াবেটিস রোগীরা বাসায় বসে যেভাবে তাদের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে সচেতন থাকবেন:
ডায়াবেটিস রোগী হলে যেকোনো ধরনের সমস্যার ঝুঁকি বেশি থাকে। যেকোন রোগের রোগীর জন্য মানসিক স্বাস্থ্যের ব্যাপারটা ঝুঁকি হতে পারে। ডায়াবেটিস রোগীদের প্রথমেই যেটা শিখানো হয় বা বুঝানো হয় সেটা হলো ডিসিপ্লিন লাইফ, নিয়ম মেনে সেটাকে অনুধাবন করা। নিয়ম মেনে সকালে উঠা, নিজেকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা, সময়মত নাস্তা করা,নিজের যত্ন নেয়া। ডায়াবেটিস রোগীদের অনেক ওষুধ থাকে, খাবারের আগে বা পরে,ঐসব ওষুধ একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত কাজ করে, কোনটা ১২ ঘন্টা, ৮ ঘন্টা সময়সীমা পর্যন্ত কাজ করে। এই যে সময়টাকে মেইনটেন করে চলতে হলে, ওষুধটাকে মেইনটেইন করে চলতে হলে একজন ডায়বেটিস রোগীকে সারাদিনের রুটিনটাকেও মেইনটেন করে চলতে হবে। কিন্তু এখন যেহেতু আমরা সবাই বাসায় থাকছি বাহিরে যেতে হচ্ছে না, সেক্ষেএেরেও নিয়মমত মেডিসিন নেয়া, সময়মত নাস্তা, গোসল, খাওয়া দাওয়া করা, বিকালে সম্ভব হলে বাসার ভিতরে বা বাড়ির আঙ্গিনায় হাটাহাটি ব্যায়াম করা, আমাদের যে ধর্মীয় এক্টিভিটিস আছে ওগুলো করা এসব কিছুর মাধ্যমে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ রেখে সুস্থ থাকা যায়। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে, নিজেকে মানসিকভাবে শান্তিতে রাখা, প্রশান্তিতে রাখা, রিলেক্স এ রাখা। নিয়মতান্ত্রিক জীবন চলানোর মাধ্যমেই সচেতন ও সুস্থ থাকা।
 ঘরে বসে থেকে যেভাবে ডায়বেটিস রোগীরা মানসিকভাবে প্রস্তুতি নিতে পারে:
এখন ডায়াবেটিস রোগীদের বা অন্যান্য রোগীদের ক্ষেত্রেও ঘরে বসে টেলিসেবা নিতে হচ্ছে। সামনাসামনি বসে যেভাবে চিকিৎসাসেবা দেয়া যায়, টেলিসেবায় তো ঐভাবে ১০০% দেয়া যায় না। ডায়াবেটিস রোগটা এমন যে সারাজীবন ই এটা বয়ে চলতে হয়। সেক্ষেত্রে এখন যেহেতু বাহিরে যাওয়াটা ঝুঁকি, তাই ডায়াবেটিস রোগী তার চিকিৎসকের সাথে সব সময় যোগাযোগ রাখতে পারে। নিয়মমত ব্লাডসুগার মেইনটেইন করে চলা,ওষুধ নেয়া, বাসায় বসে খাওয়া দাওয়া মেইনটেইন করে খাওয়া, সবচেয়ে জরুরি হচ্ছে রিলাক্স থাকা। কি হবে, কি করবো না, এসব না ভেবে রিলাক্স থাকা। ডায়াবেটিসের সাথে মানসিক সুস্থতাও যে জরুরি। দীর্ঘমেয়াদি যেকোন রোগেরই ক্ষানিকটা মানসিক সমস্যা হতে পারে। ডায়াবেটিসে ব্লাডসুগার সব সময় বেশি থাকলে অনেক সময় ব্রেইন এনজাইটি, প্যানিক ডিসওর্ডার, ওসিডি, ঘুম না আসা, অনেকে ভাবে ডায়াবেটিস মানে সারাজীবনের জন্য অসুস্থ থাকা, এসব ভেবে ভেবে হতাশা বাড়তে পারে, কিন্তু মানসিকভাবে নিজেকে স্টাবল রাখতে হবে।
প্রেগন্যান্সি ডায়াবেটিস রোগীর করণীয়:
প্রেগন্যান্সির সময় নরমালি অস্থিরতা কাজ করে। যেহেতু তার ডায়াবেটিস আছে তাই এধরনের সমস্যা এবং হরমোনাল সমস্যাগুলো একটু দেখা দিতে পারে। প্রেগন্যান্সির সময়ও ডায়বেটিস রোগীকে নিয়ম কানুন, খাবার দাবার মেইনটেইন করে চলতে হবে। অযথা দুশ্চিন্তা করা যাবে না, চাপ নেয়া যাবে না, পরিবারের লোকেরা ঐসময় সাহস আর পাশে থেকে সাহায্যে করবে। অনেক ক্ষেত্রে ঘুম হচ্ছে না, প্রেগন্যান্সির সময় ঘুমের কিছুটা ব্যাঘাত ঘটে, শারীরিক পরিবর্তনের সাথে দুঃশ্চিন্তা বাড়ে, সেক্ষেত্রে কোনভাবেই দুশ্চিন্তা করা যাবে না, সেক্ষেত্রে রিলাক্স ফিল করাটা জরুরি। ঘুমানোর আগে মোবাইল, টিভি দেখা, করোনার খবর দেখে আতংক হওয়া, এসব থেকে দূরে থাকতে হবে। প্রেগন্যান্সির সময় নিজের বাড়তি যত্ন নিতে হবে। একেবারে প্রয়োজন না হলে ঘুমের ওষুধ এসময়ে না খাওয়াই ভালো। খেলেও অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী খেতে হবে। আবার রিলেক্সেশনের মাধ্যমেও ঘুমানোর চেষ্টা করা যেতে পারে।
ডায়াবেটিস রোগীর বেশি ওষুধ খাওয়া বা ইনসুলিন নেয়া ঝুঁকিপূর্ণ কিনা!
একজন ডাক্তার মনোযোগ দিয়েই রোগীর অবস্থা বুঝেই কিন্তু ওষুধ দেয়, সেগুলো অবশ্যই ভালোর জন্যই দেয়। কিন্তু কিছু কিছু ক্ষেত্রে নিয়ম মেনে যদি ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রণ করা যায়, সেক্ষেত্রে ওষুধের প্রয়োজন পড়ে না। ডায়বেটিস রোগীকে তার সুগার এর পরিমান বুঝেই তাকে ওষুধ দেয়া হয়। সেক্ষেত্রে রোগী যদি মনে করে রোগ ভালো করার সব দায়িত্বই ডাক্তারের, সেটা কিন্তু ভুল ধারনা। ভালো মনে করেই ডাক্তার ওষুধ দিয়ে থাকে, খাবারের জন্য নয়।
ডায়াবেটিস রোগীদের করোনার ঝুঁকি: আতংক ও মানসিক প্রস্তুতি:
করোনার এই সংকটকালীন সময় অবশ্যই আতংকের বিষয়। তবে আতংকিত হওয়া যাবে না, হতে হবে সর্তক। করোনার জন্য যেসব নির্দেশনা দেয়া হয়েছে, সেসব ঠিকমত মানতে হবে। শুধু ডায়াবেটিস রোগীদেরই না অন্যান্য রোগের রোগীদের ও সর্তক থাকতে হবে। যারা একেবারেই স্ট্রেস ফ্রী থাকতে পারছে না, তাদের কাউন্সিলিং, সাইকোথেরাপি, মেডিটেশনও প্রয়োজন মত দেয়া যেতে পারে।
ডায়াবেটিস রোগীর স্বাস্থ্য সচেতনতা:
ডায়াবেটিস একটি ক্রনিক লং টাইম ডিজিস। এর জন্য চোখের, কিডনির, হার্টের, গ্যাসটিকের, রক্ত জমাট বাধা ইত্যাদির সমস্যা হতে পারে। কিন্তু সঠিক চিকিৎসা যদি সব সময় নেয়া হয়, নিয়ম কানুন মেনে চলতে পারে, তাহলে যাদের ডায়াবেটিস নেই তাদের মতই সুস্থ বোধ করবে। অনেক সময় ডায়াবেটিসের জন্য এনজাইটি, প্যানিক ডিজঅর্ডার, ডিপ্রেশন, ম্যানিয়া, বিভিন্ন ধরনের সাইকোটিক ডিজঅর্ডার ইত্যাদি ডায়বেটিস যেমন অন্য অঙ্গকে অচল করে তেমনি ব্রেইনকেও করে। এক্ষেত্রে তার আচরণেও পরিবর্তন আসে।সেক্ষেত্রে নিয়ম মেনে, ডাক্তারের পরামর্শ মতো ওষুধ নিতে হবে। আরেকটি ব্যাপার অবশ্যই স্ট্রেস ফ্রী থাকতে হবে। স্ট্রেস ফ্রী থাকতে পারলেই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়বে। এজন্য নিজেকে রিলাক্স রাখতে হবে। সময় মতো খাওয়া দাওয়া করা, পর্যাপ্ত বিশাম ও ঘুম নিশ্চিত করা, বিভিন্ন ব্যায়াম ও কার্যকলাপের মাধ্যমে স্টেস ফ্রী থাকা যায়। আসলে নিয়মতান্ত্রিক জীবনই সুস্হ থাকার চাবিকাঠি।
সর্বোপরি, যদি প্রয়োজন পড়ে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে চিকিৎসকের সরাসরি পরামর্শ পেতে দেখুন: মনের খবর ব্লগ
করোনায় মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক টেলিসেবা পেতে দেখুন: সার্বক্ষণিক যোগাযোগ
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
করোনায় সচেতনতা বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও বার্তা দেখুন: সুস্থ থাকুন সর্তক থাকুন

 


প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব। মনের খবরের সম্পাদকীয় নীতি বা মতের সঙ্গে লেখকের মতামতের অমিল থাকতেই পারে। তাই মনের খবরে প্রকাশিত কলামের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা বা অন্য যেকোন ধরনের দায়  সর্ম্পূণই লেখকের।

Previous articleকোভিড ১৯: চূড়ান্ত সংক্রমণ এর পূর্বাভাস এবং লকডাউন বিষয়ক ভাবনা
Next articleকোভিড ১৯: আতঙ্ক নিয়েই চলছে কর্মস্থলে যাতায়াত
প্রফেসর ডা. নাহিদ মাহজাবিন মোরশেদ
চাইল্ড অ্যান্ড অ্যাডোলেসেন্ট সাইকিয়াট্রিস্ট। অধ্যাপক, মনোরোগবিদ্যা বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here