ঈদ ও মানসিক স্বাস্থ্য

কর্মব্যস্ত ঢাকা এখন অনেকটাই ফাঁকা। নিজের সারা বছরের ক্লান্তি দূর করতে এবং প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতে মানুষ শহর ছেড়ে ছুটছে শিকড়ের টানে।
এক মাস সিয়াম সাধনার পরে ঈদের এই দিনটি নিয়ে আসে অনাবিল খুশির বার্তা। আবার ঈদের উপলক্ষে অহেতুক বাড়তি চাপ আমাদের মানসিকতায় প্রভাব ফেলে। ঘরে ফেরা, ঈদের অনাবিল আনন্দ  এই চিত্রগুলোর সঙ্গে আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যের সম্পর্ক রয়েছে।
ঈদের দিনটিকে কেন্দ্র করে কতনা প্রস্তুতি চলছে। বিশেষ করে শিশুদের মনে এখন নানারকম জল্পনা- কল্পনার জটলা। তাদের ছোট্ট মনে অনেক রঙের আনাগোনা এই দিনটাকে কেন্দ্র করে। স্কুল পড়ুয়াদের ছুটি, না পড়ুয়াদেরও অবসরের একটা উপলক্ষ, সব মিলিয়ে শিশুদের জন্য দিনটির আলাদা স্বাদ।
শুধু কি তাই! বড়দের রোজকার এক ঘেয়ে জীবনে ছুটির আমেজ, পরিবারের সবাইকে কাছে পাওয়ার আনন্দ  কিন্তু কম নয়। শহরের একঘেয়ে যান্ত্রিক জীবনটাকে পেছনে ফেলে শিকড়ের টানে গ্রামের বাড়ি বেড়াতে যাওয়া– এর মাধ্যমে আমাদের শরীর এবং মনোজগতে ঘটে অনেক ইতিবাচক পরিবর্তন।
ঈদ এবং অন্যান্য সামাজিক উৎসবগুলো মনোজগতে আনতে পারে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন। কর্মব্যস্ততা হতে কিছুদিনের অবসর চিন্তাভাবনাকে গুছিয়ে আনতে সাহায্য করে। ফলস্বরূপ কমতে পারে মানসিক চাপ।
পরিবারের এবং  সমাজের নিকটজনদের সাথে যোগাযোগের সুযোগ ঘটে, যা বাড়াতে পারে পারস্প‍ারিক সৌহার্দ্য। লম্বা ছুটিতে বেড়াতে যাওয়াও মানসিক চাপ কমাতে পারে বলে গবেষণার মাধ্যমে পাওয়া গেছে।
গবেষণায় আরও পাওয়া গেছে যে সুন্দর ভাবে কাটানো ছুটির দিনগুলোর মধুর স্মৃতি পরবর্তী যে কোনো সময় একজন মনমরা মানুষকে চাঙ্গা করে তুলতে পারে।
দুর্যোগের ফলে যেমন নেতিবাচক অনেক পরিবর্তন আসে মানসিক এবং শারীরিক স্বাস্থ্যে, ঠিক তার বিপরীতটি দেখা যায় সুন্দর ভাবে কাটানো একটি ছুটির তথা উৎসবের দিনের ক্ষেত্রে।
ঈদে এবং অন্যান্য উৎসবে পারিবারিক সাক্ষাৎ শুধু নয়, উৎসব পালনে এক সাথে কাজ করার মাধ্যমে সবার মধ্যে দায়িত্ব বোধেরও সৃষ্টি হয়। পরিবারে ছেলে মেয়ে সবাই মিলেমিশে কাজ করে উৎসব উপলক্ষকে। আবার সামাজিক অনেক বিষয় ও পরিবারের শিশু-কিশোর বয়স্করা বুঝতে শেখা শুরু করে এর মাধ্যমে।
তবে মনোজগতে এই ইতিবাচক পরিবর্তনের উল্টোটাও ঘটতে পারে যদি উৎসব পালন করা নিয়ে বাড়তি চাপের মুখোমুখি হতে হয়। যেমন অর্থনৈতিক সংকট তীব্র থাকলে, ছুটি পরবর্তী বিভিন্ন দায়িত্বের চিন্তা ছুটির মেয়াদের ভেতর করতে হলে ছুটির পর আরো ক্লান্ত বোধ করেছেন গবেষনায় অংশগ্রহণকারীরা।
আমাদের দেশের বাস্তবতাও কিছুটা এমনই। শিশুদের কাছে ঈদটাকে যতটা আনন্দকর লাগে পরবর্তিতে বিভিন্ন রকম চিন্তায় বড়রা যেন ঠিক উপভোগ করতে পারেনা  ঈদসহ অন্য উৎসবগুলোকে।
আর্থ সামাজিক অবস্থান অনুযায়ী তীব্র বৈষম্যের শিকার হয়ে অনেকে এই দিনটিকে কোনমতে পার করেন, তাদের ওপর যেন বাড়তি চাপ হয়ে দাঁড়ায় ঈদকে কেন্দ্র করে সব আয়োজন।
তবে আমাদের কাম্য সমাজে সবার জন্য দিনগুলো মধুর হয়েই আসুক। নিরাপদে স্বজনদের সঙ্গে মিলে ঈদ পালন করার মাধ্যমে নতুন জীবনস্পৃহা জেগে উঠুক।

Previous articleরাজধানীর প্রাথমিক স্কুলে পড়ুয়াদের ৯৫ শতাংশের দেহে নিকোটিন!
Next articleবিশ্বকাপ আমাদের!
ডা. সৃজনী আহমেদ
মনোরোগ বিশেষজ্ঞ, সহকারী অধ্যাপক, ঢাকা কমিউনিটি হাসপাতাল, মগবাজার

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here