১০ অক্টোবর (মঙ্গলবার) পালিত হলো “বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস”। এবারের প্রতিপাদ্য ছিল “কর্মক্ষেত্রে মানসিক স্বাস্থ্য”। কর্মস্থলে মানসিক সুস্বাস্থ্য সুনিশ্চিত করা এবং সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে সর্বোপরি একটি সুন্দর, সৃজনশীল, এবং বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশ সৃষ্টির লক্ষ্যেই এবারের আয়োজন।
আমাদের জীবনের একটি দীর্ঘ সময় কাটে কর্মস্থলে কাজ করে করে। কর্মস্থলে কাজ করতে গিয়ে এখানকার বহুমুখী কাজের চাপ ও অভ্যন্তরীণ পরিবেশগত ত্রুটি-বিচ্যুতি আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যকে প্রভাবিত করে। অথচ কর্মস্থলে মানসিক স্বাস্থ্যহানি বিষয়টি অধিকাংশ ক্ষেত্রেই উপেক্ষিত এবং নিষ্প্রয়োজন হিসাবে ধরা হয়। কর্মস্থলের সাথে আমাদের সামাজিক ও পারিবারিক জীবন নিশ্চিতভাবেই জড়িত। সুতরাং কর্মস্থলে মানসিক স্বাস্থ্যহানি ঘটলে, তা সামগ্রিকভাবে আমাদের বৃহত্তর জীবনে প্রভাব ফেলে। জীবন নানাভাবে সমস্যাগ্রস্ত হয়ে দাঁড়ায়। সামাজিক ও পারিবারিক জীবনের চাপ আবার চক্রাকারে আমাদের কর্মক্ষেত্রের উপর প্রভাব ফেলে।
প্রতি বছরের মতো এবারো খুব জাঁকজমকের মধ্য দিয়ে দিনটি পালিত হয়েছে। দিনের শুরুতে, সকল আটটায় জাতীয় প্রেসক্লাব সম্মুখে মানসিক সেবাপ্রদানের সাথে জড়িত বিভিন্ন সংগঠন, পেশাদারী মানসিক স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীগণ, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের সংশ্লিষ্ট শিক্ষক ও শিক্ষার্থীগণ এবং দেশের সচেতন নাগরিকগণ মানব বন্ধনে অংশগ্রহণের জন্য সম্মিলিত হন।
এছাড়া দিবসটিকে সামনে রেখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় জুড়ে আয়োজিত হয় নানান আয়োজন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের ইন্ডাস্ট্রিয়াল-অর্গানাইজেশনাল সাইকোলজি একটি র্যালির আয়োজন করে, যা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন এলাকা প্রদক্ষিণ করে। একই বিভাগের স্কুল সাইকোলজি সোসাইটি প্রেসক্লাবের সম্মুখের উক্ত মানব বন্ধনে অংশগ্রহণ করে র্যালি করতে করতে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ফিরে আসে।
ওদিকে ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগ দিনব্যাপী নানামুখী আয়োজনের ব্যবস্থা নেয়। র্যালি ছাড়াও ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগ, নাসিরুল্লাহ সাইকোথেরাপি ইউনিট, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি সোসাইটি এর যৌথ উদ্যোগে সকাল ১১.০০ টা থেকে দুপুর ১.০০ টা পর্যন্ত একইসাথে তিনটি ওয়ার্কশপ এবং বিকাল ৩.০০টা থেকে বিকাল ৫.৩০টা পর্যন্ত ‘‘বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে মানসিক স্বাস্থ্য’’ শীর্ষক একটি বিশেষ উন্মুক্ত সেমিনারের আয়োজন করা হয়। ওয়ার্কশপগুলোর বিষয়বস্তু ছিল: “মানসিকভাবে সুখী ও সমৃদ্ধ থাকার উপায়”, “কর্মস্থলে মানসিক চাপ ও নিয়ন্ত্রণ” এবং “ক্লিনিক্যাল নিউরোসাইকোলজি ইন মেন্টাল হেলথ”।
এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নির্দেশনা ও পরামর্শ দপ্তরের সাথে যৌথ উদ্যোগে এডুকেশনাল ও কাউন্সেলিং সাইকোলজি বিভাগ দিনব্যাপী মানসিক স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করার লক্ষ্যে টিএসসি প্রাঙ্গণে একটি অস্থায়ী কেন্দ্র স্থাপন করে। সেবার মধ্যে ছিল রাগ ব্যবস্থাপনা, মানসিক চাপ ব্যবস্থাপনা, যোগাযোগের দক্ষতা বৃদ্ধি, সমস্যা সমাধানের দক্ষতা বৃদ্ধি, ঘুমের সমস্যা মোকাবেলা ও ব্যক্তিত্ব পর্যালোচনা। এছাড়াও মানসিক স্বাস্থ্য নির্ণয়ের জন্য ছিল বিষণ্নতা, উদ্বেগ ও ইন্টারনেট আসক্তি পরিমাপক। আগ্রহী ব্যক্তিরা এই পরিমাপকের মাধ্যমে নিজেদের বিষণ্নতা, উদ্বেগ অথবা ইন্টারনেট আসক্তির মাত্রা সম্পর্কে ধারণা লাভ করেন। সারাদিন ব্যাপী এই আয়োজনটির উদ্বোধন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় ভিসি প্রফেসর আখতারুজ্জামান।
ইসরাত জাহান ও মুবাশ্বিরা জামান, প্রতিবেদক
মনেরখবর.কম
লক্ষ্য করুন- মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক খবর বা প্রেস রিলিজও আমাদের পাঠাতে পারেন। বৈজ্ঞানিক সেমিনার, বিশেষ ওয়ার্কশপ, সাংগঠনিক কার্যক্রমসহ মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক যে কোনো খবর পাঠাতে news@www.monerkhabor.com এই ইমেইলটি ব্যবহার করতে পারেন আপনারা।