“কর্মক্ষেত্রে মানসিক স্বাস্থ্য” এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে বিভিন্ন স্থানে উদযাপিত হলো বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস-২০১৭। দিবসটি উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় মনোরোগবিদ্যা বিভাগ র্যালি, ইনোগরাল ও আলোচনার আয়োজন করে। সকালে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে র্যালিটি শুরু হয়ে শাহবাগ হয়ে পুনরায় কলেজ ক্যাম্পাসে এসে শেষ হয়। র্যালি চলাকালীন সাধারণের মধ্যে মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে সচেতনতা তৈরির উদ্দেশ্যে লিফলেট বিতরণ করা হয়। এরপর উক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় উপাচার্য প্রফেসর ডাঃ কামরুল হাসান খান বেলুন উড়িয়ে দিবসটির উদ্বোধন করেন। র্যালি শেষে ডাঃ মিলন হলে এক ইনোগরাল অনুষ্ঠিত হয়। বিশ্ববিদ্যালয় মনোরোগবিদ্যা বিভাগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি প্রফেসর ডাঃ সালাহ্উদ্দিন কাউসার বিপ্লব-এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানটির প্রধান অতিথি ছিলেন উপাচার্য অধ্যাপক ডাঃ কামরুল হাসান খান। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপ-উপাচার্য প্রফেসর ডাঃ শহীদুল্লাহ শিকদার ও প্রফেসর ডাঃ জাকারিয়া স্বপন, হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আব্দুল্লাহ-আল-হারুন, বিএসএমএমইউ মনোরোগবিদ্যা বিভাগের প্রাক্তন সভাপতি প্রফেসর ডাঃ এম এ সোবহান।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রফেসর ডাঃ কামরুল হাসান খান বলেন, ‘কর্মক্ষেত্রে মানসিক স্বাস্থ্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। বিএসএমএমইউ শিক্ষকদের কর্মক্ষমতা বোঝার জন্য এবং বিভিন্ন বিভাগে কোন সমস্যা আছে কিনা সে বিষয়ে গবেষণার প্রয়োজন।‘ মনোরোগবিদ্যা বিভাগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি প্রফেসর ডাঃ সালাহ্উদ্দিন কাউসার বিপ্লব এর সমাপনী বক্তব্যের মাধ্যমে অনুষ্ঠানটি সমাপ্ত হয়।
তৃতীয় পর্বে উক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক, ছাত্র/ছাত্রী ও নার্সদের সমন্বয়ে এক উন্মুক্ত আলোচনা অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।
এদিকে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইন্সটিটিউটে বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস উপলক্ষে এক র্যালি ও আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানটিতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইন্সটিটিউটের প্রাক্তন পরিচালক প্রফেসর ডাঃ হেদায়েতুল ইসলাম। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব সাইকিয়াট্রিস্টস এর সভাপতি প্রফেসর ডাঃ ওয়াজিউল আলম চৌধুরী, বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব সাইকিয়াট্রিস্টস এর সাধারণ সম্পাদক প্রফেসর ডাঃ মোহিত কামাল, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ন্যাশনাল প্রফেশনাল অফিসার ডাঃ সৈয়দ মাহফুজুল হক। এছাড়া মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ইন্সটিটিউটের সহকারী অধ্যাপক ডাঃ ফারজানা রহমান দিনা।
জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইন্সটিটিউটের পরিচালক প্রফেসর ডাঃ ফারুক আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানটিতে বক্তাগণ কর্মক্ষেত্রে মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা ও তার সমাধানের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন। বক্তাগণ বলে সারা বিশ্বে প্রতি ৫ জন কর্মজীবীর মধ্যে ১ জনই কোন না কোন মানসিক সমস্যায় ভুগছেন। মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা কর্মক্ষেত্রে একটি কঠিন বাঁধা যা কর্মীদের কাজের পরিমাণ ও মাত্রা কমিয়ে দেয়। শুধু মানসিক সমস্যার কারণে ৩০ কোটি কর্মঘন্টা নষ্ট হয় যার আর্থিক পরিমাণ এক ট্রিলিয়ন ডলার।
এছাড়া সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সাইকিয়াট্রিস্ট সিলেট শাখা ও মনোরোগবিদ্যা বিভাগ, সিওমেক-এর যৌথ উদ্যোগে বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস পালিত হয়। উক্ত দিবস উপলক্ষে মেডিকেল কলেজের সভাকক্ষে এক আলোচনা সভা ও বৈজ্ঞানিক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয় । ডাঃ সুস্মিতা রায়ের সঞ্চালনায় উক্ত অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন স্বনামধন্য মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব সাইকিয়াট্রিস্ট এর সহ-সভাপতি অধ্যাপক ডাঃ গোপাল শংকর দে । প্রধান অতিথি ছিলেন সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডাঃ মোর্শেদ আহমেদ চৌধুরী । এছাড়া বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন হাসপাতালের পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল ডাঃ এ কে মাহবুবুল হক, মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডাঃ অছুল আহমেদ চৌধুরী এবং অন্যান্য সিনিয়র চিকিৎসকবৃন্দ । অনুষ্ঠানের শুরুতে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন ডাঃ দীপেন্দ্র নারায়ণ দাস । সভায় মূল আলোচক হিসাবে উপস্থিত ছিলেন মনোরোগবিদ্যা বিভাগ, সিওমেক-এর বিভাগীয় প্রধান ও বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সাইকিয়াট্রিস্ট সিলেট শাখার সাধারণ সম্পাদক ডা. আর.কে.এস. রয়েল। । তিনি বিষণ্ণতা ও উদ্বেগের উপর একটি বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধ পেশ করেন । । প্রতিবেদনে বলা হয়, সারা পৃথিবীতে প্রায় ৩০ কোটি লোক বিষন্নতা এবং প্রায় ২৬ কোটি লোক উদ্বিগ্নতা রোগে আক্রান্ত। এক একবার বিষণ্নতায় আক্রান্ত হলে মানুষ গড়ে ৩৬ দিন কর্মক্ষেত্রে অনুপস্থিত থাকে। শতকরা ৫০ জন ব্যক্তি বিষণ্নতায় ভুগলেও তার চিকিৎসা নেয়না। বিষণ্নতায় আক্রান্ত শতকরা ৯৪ জন ব্যক্তির মনোযোগ জনিত সমস্যা হয়। এখনো ৭০% মানুষ নিজের মানসিক দুর্বলতার কথা লুকিয়ে রাখে, কারও কাছে প্রকাশ করেনা। আরও উল্লেখ করা হয়, গবেষণায় ইদানীং প্রমাণিত হয়েছে কর্মক্ষেত্রে মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক চিকিৎসার মাধ্যমে মানুষের উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি ও এক্ষেত্রে নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি কমানো সম্ভব। সেজন্য প্রাতিষ্ঠানিক, সাংগঠনিক পর্যায়ে যেসব উদ্যোগ নিতে হবে- কর্মচারীর কাজের স্বীকৃতি দেয়া ,সহযোগিতামূলক পরিবেশ তৈরি করা, কাজের চাপ মাত্রাতিরিক্ত হচ্ছে কিনা সে খেয়াল রাখা, সাংগঠনিক সংস্কৃতি তৈরি করা যেখানে নিজের বিশ্বাস, মূল্যবোধ আদান প্রদান করা যায়, কোন ধরনের বৈষম্য যাতে না থাকে সেদিকে খেয়াল রাখা, মানসিক স্বাস্থ্য নিয়মিত তত্ত্বাবধান করা, প্রয়োজনে চিকিৎসা করানো ইত্যাদি । এছাড়া ব্যক্তি পর্যায়ে নিজের যত্ন নেয়া, নিজের ব্যাপারে সচেতন থাকা ,অবসর/ বিনোদনের ব্যবস্থা রাখা, পরিবার, সমাজ ও কর্মক্ষেত্রের মধ্যে সমন্বয় সাধন ইত্যাদির কথা বলা হয় ।
পরবর্তীতে এর উপর অন্যান্য অতিথিগণ আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন।এর মধ্যে ডাঃ অছুল আহমেদ চৌধুরী কর্মক্ষেত্রে নারীদের মানসিক স্বাস্থ্যের উপর বিশেষ গুরুত্ব দেয়ার কথা বলেন । বিগ্রেডিয়ার ডাঃ এ কে মাহবুবুল হক অত্র হাসপাতালের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য যথাযথ পরিবেশ সৃষ্টির কথা বলেন । অধ্যক্ষ ডাঃ মোর্শেদ আহমেদ চৌধুরী বলেন, জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে কোন না কোন সময় মানুষ বিষণ্ণতায় ভুগে । সে বিষণ্ণতা কাটিয়ে উঠার সব চেয়ে ভালো উপায় হচ্ছে, নিজেকে বলা যে আমি ভাল আছি । এছাড়া অন্যান্য অতিথিরাও মূল্যবান বক্তব্য পেশ করেন । অনুষ্ঠান শেষে ধন্যবাদ বক্তব্য দেন ডাঃ মোঃ শফিকুর রহমান ।
উক্ত অনুষ্ঠানের পূর্বে সকাল ১১ ঘটিকায় বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস উপলক্ষে এক বর্ণাঢ্য র্যালি অনুষ্ঠিত হয় ।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের মনোরোগবিদ্যা বিভাগ দিবসটি উপলক্ষে আলোচনা অনুষ্ঠানের পাশাপাশি মানসিক স্বাস্থ্য সচেতনতা তৈরির উদ্দেশ্যে চিকিৎসা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও হাসপাতালে পোষ্টার, স্টিকার ও লিফলেট বিতরণ করা হয়।
প্রতিবেদক, মনেরখবর.কম
লক্ষ্য করুন- মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক খবর বা প্রেস রিলিজও আমাদের পাঠাতে পারেন। বৈজ্ঞানিক সেমিনার, বিশেষ ওয়ার্কশপ, সাংগঠনিক কার্যক্রমসহ মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক যে কোনো খবর পাঠাতে news@www.monerkhabor.com এই ইমেইলটি ব্যবহার করতে পারেন আপনারা।