মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা দূর করতে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি!

ইতিমধ্যে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি মানসিক সমস্যা চিকিৎসা এবং এ বিষয়টির প্রতি মানুষের সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে গত কয়েক দশক ধরে স্নায়ুজনিত সমস্যায় জড়িত মানুষের সংখ্যা ভয়ানক ভাবে বেড়েছে। উদাহরণস্বরুপ বলা যায়, যেখানে ১৯৯০ সালের দিকে ৪১৬ মিলিয়ন মানুষ বিষন্নতা কিংবা উদ্বিগ্নতায় ভুগত সে সংখ্যা ২০১৩ সাল নাগাদ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬১৫ মিলিয়নে।
প্রত্যেক বছর এত মানুষ মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা নিয়ে চিকিৎসার জন্য আসে যে কারণে বিশ্বের প্রায় সব স্বাস্থ্য সংস্থায় এই সমস্যা টিকে ইতিবাচক ভাবে আলিঙ্গন করার প্রবণতা দেখা যায়। যেকোন দেশে এই সমস্যার চিকিৎসায় বিলিয়ন বিলিয়ন অর্থ খরচ হতে পারে। অর্থনৈতিক অবস্থার কথা বিবেচনা করে এই চিকিৎসার খরচ কমানোর চেষ্টা করা খুবই সাধারণ। সেইসাথে খরচের কথা বিবেচনা করে এবং সমাজের প্রতিক্রিয়ার কথা বিবেচনা করে মানুষ এ ধরণের সমস্যার কথা জানাতে অথবা প্রকাশ করতে চায় না। কাউন্সেলিং নির্দেশিকা থেকে বুঝা যায় যে, প্রত্যেক ৩০০ জন মানসিক সমস্যায় আক্রান্ত মানুষের মধ্যে ২৩০ জন মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে থাকেন। বাকিরা প্রকাশ করে না।
যেখানে সাধারণ সম্পদের মাধ্যমে এই চিকিৎসা বিরল সেখানে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান এসব উত্তর খোঁজার জন্য প্রযুক্তির সাহায্য নিচ্ছে। ইতিমধ্যে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি কে মানসিক স্বাস্থ্যজনিত সমস্যার চিকিৎসায় এবং সচেতনতা বৃদ্ধিতে ব্যবহার করা হচ্ছে।
নতুন চিকিৎসা
ভার্চুয়াল রিয়েলিটি নামক চিকিৎসাটি এখনও বিশ্বের স্বাস্থ্যসেবা জগতে সম্পুর্ণ নতুন ঘটনা এ বিষয়ক অনেক ধারণা বিভিন্ন দেশে প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিয়েটিভ টেকনোলজি একটি প্রতিষ্ঠান যেখানে মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যার চিকিৎসায় ভার্চুয়াল রিয়েলিটি ব্যবহার করা হচ্ছে। ‘ব্রেভমাইন্ড’ বিশ্ববিদ্যালয়টির একটি অন্যতম আবিষ্কার। এটি ভার্চুয়াল রিয়েলিটি ভিত্তিক রোগশয্যা বিষয়ক এক্সপোজার থেরাপি যা ‘পোস্ট ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিসঅর্ডার’ এবং অন্যান্য স্নায়ুজনিত সমস্যার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
এক্সপোজার থেরাপি ‘পোস্ট ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিসঅর্ডার’ এর চিকিৎসা হিসেবে এবং মানসিক চাপ সংক্রান্ত জটিলতায় মানুষকে সাহায্য করার জন্য অনেক বছর ধরে ব্যবহার হয়ে আসছে। কিন্তু তাদের এই আঘাতমূলক অভিজ্ঞতার উপর ভরসা করে চিকিৎসা করা কষ্টকর। মাঝে মাঝে রোগীরা তাদের অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিতে চায় না, জড়তা অনুভব করে। কিন্তু ভার্চুয়াল রিয়েলিটি এই জড়তা ভাঙতে সাহায্য করে। ব্রেভমাইন্ড এর সাহায্য নিয়ে চিকিৎসকেরা তাদের রোগীদের অতীতের পরিবেশে ধীরে ধীরে মগ্ন করে তোলে। চিকিৎসকেরা ভার্চুয়াল রিয়েলিটিটা নিয়ন্ত্রণ করে, ছবির মাধ্যমে রোগীর আবেগপ্রবণ অংশটিকে নিয়ন্ত্রণ করে।
প্রতিষ্ঠানটির ভার্চুয়াল রিয়েলিটি বিভাগের পরিচালক ডঃ স্কিপ রিযযো ব্রেভমাইন্ড অ্যাপলিকেশনটিকে উন্নতির দিকে পরিচালনা করেছেন। ভার্চুয়াল রিয়েলিটি বিভিন্ন গেইম এবং আনন্দদায়ক তরঙ্গ তৈরী করছে, তিনি বিশ্বাস করেন প্রযুক্তি খুব শীঘ্রই আরো উন্নত হবে এবং মানসিক স্বাস্থ্যসেবায় ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। তিনি মনে করেন ভার্চুয়াল রিয়েলিটি ফোবিয়া, ‘পোস্ট ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিসঅর্ডার’, বিষন্নতা এই ধরণের মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যায় উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলতে পারে।
তিনি বলেন, “গেমিং ও বিনোদনে ভার্চুয়াল রিয়েলিটির ব্যাপক প্রভাব, মানসিক ও শারীরিক সমস্যার চিকিৎসায় ভার্চুয়াল রিয়েলিটির ব্যবহার একটি বিস্তৃত এলাকা জুড়ে রয়েছে এখানে প্রযুক্তি বড় ভুমিকা পালন করছে। ভার্চুয়াল রিয়েলিটির অভিজ্ঞতা বিভিন্ন চিকিৎসার সাথে ভালভাবে মিলে যায় এবং ফোবিয়া, ‘পোস্ট ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিসঅর্ডার’, বিষন্নতা, অতিরিক্ত খাওয়া জনিত সমস্যা, মস্তিষ্কের আঘাত জনিত সমস্যা এ ধরণের রোগ নির্ণয়ের গবেষণায় ব্যবহার করা হয়”।  
যেখানে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি মানসিক স্বাস্থ্যসেবায় দীর্ঘপথ এগিয়ে যাবে সেখানে বাস্তব জীবনের পরিস্থিতিতে প্রযুক্তির ব্যবহার হচ্ছে না বলা যায় না। নিউ ইয়র্ক এর বিহেভিয়ারাল এসোসিয়েটস বহির্বিভাগের যেসব রোগী মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগছে যেমন বিষন্নতা, ফোবিয়া, উদ্বিগ্নতা তাদের চিকিৎসায় ভার্চুয়াল রিয়েলিটি ব্যবহার করছে। সাম্প্রতিক কালে ভার্চুয়াল রিয়েলিটির অভিজ্ঞতা আরো ভালভাবে বুঝার জন্য এবং অনুশীলন করার জন্য স্যামসাং ৩৬০ গিয়ার ক্যামেরা ব্যবহার করছে।
ভার্চুয়াল রিয়েলিটি এমন একটি এলাকা যেখানে বছরের পর বছর যুক্ত হচ্ছে হাজার হাজার মানুষের স্বার্থ। প্রায়ই ধারণা করা হয় এটি শুধুমাত্র গেমিং এবং বিনোদনের ক্ষেত্রে প্রাসঙ্গিক। এই ধারণাটিকে সম্পুর্ণ মিথ্যা বলা যায় না। স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান, চিকিৎসক এবং শিক্ষাবিদেরা ভার্চুয়াল রিয়েলিটিকে মানসিক স্বাস্থ্যজনিত সমস্যার চিকিৎসায় ব্যবহার করতে আগ্রহী এবং ব্যবহার করছে বলা যায়। যদিও ফলাফল প্রাথমিক পর্যায়ে আছে, কিন্তু তারা প্রতিনিয়ত উন্নতি করছে, এ ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই যে সুদূর ভবিষ্যতে আরো নতুন নতুন অ্যাপলিকেশন আসবে যা মানসিক স্বাস্থ্যের চিকিৎসায় নতুন মাত্রা যোগ করবে।
তথ্যসূত্র-
(http://www.alphr.com/virtual-reality/1005294/can-vr-help-cure-the-mental-health-epidemic)
রুবাইয়াত মুরসালিন, আন্তর্জাতিক ডেস্ক
মনেরখবর.কম

Previous articleমস্তিষ্কের বিকাশমূলক বৈকল্য ও ভাষা
Next articleমানসিক স্বাস্থ্যে সচেতনতা বৃদ্ধিতে ভিডিও প্রতিযোগিতা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here