[int-intro]হতে চেয়েছিলেন বৈমানিক কিন্তু হয়েছেন ফটো সাংবাদিক। একজন খ্যাতিমান প্রেস ফটোগ্রাফার। প্রাকৃতিক বিপর্যয় থেকে রাজনৈতিক আন্দোলন এদেশের অনেক ঘটনার একজন প্রত্যক্ষদর্শী। ফটোগ্রাফার হিসেবে এসেছেন বঙ্গবন্ধু, মাদার তেরেসা, নেলসন ম্যান্ডেলা, রাণি এলিজাবেথ, বেনজির ভুট্টোসহ অনেক খ্যাতিমানদের সান্নিধ্যে। সূদীর্ঘ তিন দশক কাজ করেছেন মার্কিন বার্তা সংস্থা এসোসিয়েট প্রেস (এপি)-তে। তিনি পাভেল রহমান। মনেরখবর পাঠকদের মুখোমুখি হয়ে এবার তিনি জানাচ্ছেন তাঁর মনের কথা, ভালো লাগার কথা, খারাপ লাগার কথা, স্মৃতির কথা, ইচ্ছের কথা। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মুহাম্মদ মামুন। [/int-intro]
[int-qs]কেমন আছেন?[/int-qs]
[int-ans name=”পাভেল রহমান”]ভালো আছি।[/int-ans]
[int-qs]কীভাবে ভালো থাকেন?[/int-qs]
[int-ans name=”পাভেল রহমান”]জীবনে চলতে গেলে ভালো থাকতে হয় বা ভালো থাকতে চেষ্টা করতে হয়।[/int-ans]
[int-qs]কোন জিনিষটা আপনাকে বেশি ভালো রাখে?[/int-qs]
[int-ans name=”পাভেল রহমান”]আমাকে সবচাইতে বেশি ভালো রাখে মানুষের ব্যবহার। মানুষের সুন্দর ব্যবহারে আমি মুগ্ধ হই।[/int-ans]
[int-quote]পুরষ্কারের জন্য আমি কখনও ছবি তুলিনি। এপি’তে যখন কাজ করতাম তখন তারা বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে সেরা ছবিগুলো প্রতিযোগিতায় পাঠাতো। আর আমার সেরা পুরষ্কার যদি বলা হয় তাহলে বলবো, আমার ছবির কারণে চিকিৎসাহীনতায় থাকা মানুষ চিকিৎসা পেয়েছে, দীর্ঘদিনের ভাঙ্গা চলাচলের অনুপযোগী রাস্তায় রাতারাতি কাজ শুরু হয়েছে। দূর্যোগ কবলিত অঞ্চলের ছবি প্রকাশ হওয়ার পর সেখানে ত্রাণ নিয়ে হেলিকপ্টার ছুটে গেছে। এমন অনেক অনেক পুরষ্কার রয়েছে যেগুলোকে আমি আমার জীবনের সেরা পুরষ্কার মনে করি। এরপর প্রাতিষ্ঠানিক পুরষ্কারের কথা যদি বলা হয় তাহলে বলবো, এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের সময় তোলা নূর হোসেনের পিঠে ‘গণতন্ত্র মুক্তি পাক’ লেখা সম্বলিত ছবিটির জন্য আমি পুরষ্কার আশা করেছিলাম। সে হিসবে বলবো আমি আমার প্রত্যাশিত পুরষ্কারটি এখনও পাইনি।[/int-quote]
[int-qs]মন খারাপ হয়?[/int-qs]
[int-ans name=”পাভেল রহমান”]হ্যাঁ তা তো হয়ই।[/int-ans]
[int-qs]কী কারণে মন বেশি খারাপ হয়?[/int-qs]
[int-ans name=”পাভেল রহমান”]সেটিও মানুষের ব্যবহার।আগে এদেশের মানুষকে আমার কাছে দুমুখো সাপ মনে হতো, কিন্তু এখন একশ মুখো সাপ মনে হয়।[/int-ans]
[int-qs]কেন?[/int-qs]
[int-ans name=”পাভেল রহমান”]আমাদের দেশের মানুষ একেক জনের সাথে একেক ধরণের ব্যবহার করে। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত বিশটা লোকের সাথে মিশলে আমি বিশ রকম ব্যবহার করবো। রিক্সাওয়ালার সাথে এক রকম, আমার বউয়ের সাথে এক রকম, বসের সাথে এক রকম, কাজের লোকের সাথে এক রকম, দোকানদারের সাথে এক রকম। এর মানে হলো আমরা এতো বেশি অভিনয় জানি যে আমাদের ভেতরে এক রকম আবার বাইরে আরেক রকম।[/int-ans]
[int-qs]মন খারাপ হলে কী করেন?[/int-qs]
[int-ans name=”পাভেল রহমান”]মন খারাপ হলে চেষ্টা করি এড়িয়ে যেতে, মন খারাপ থাকুক সেটি আমি চাই না।[/int-ans]
[int-qs]আপনার ফ্যামিলি আমেরিকায় থাকার পরও আপনি দেশে একাকী থেকে যাচ্ছেন কেন?[/int-qs]
[int-ans name=”পাভেল রহমান”]এর দুটো কারণ। প্রথমত আমার মা এখনও বেঁচে আছেন, আমি তাঁকে ছাড়তে চাই না। আর দ্বিতীয় কারণ হলো, আমার যে পেশা ফটোগ্রাফি, সেটির জন্য আমাদের এদেশে যত উপকরণ আছে বিদেশের চাকচিক্যময় জগতে সেটি নেই।[/int-ans]
[int-qs]ফটোগ্রাফিতে আসলেন কীভাবে?[/int-qs]
[int-ans name=”পাভেল রহমান”]আমার বাবার ফটোগ্রফির শখ ছিলো, সম্ভবত সেখান থেকেই ছবি তোলার নেশাটি আমাকে পায়। বাবার ক্যামেরা নিয়ে প্রায়ই ছবি তুলতে চলে যেতাম। সংবাদপত্রের ছবিগুলো খুব টানতো আমাকে। বিশেষ করে ৭০’এর জলোচ্ছ্বাস আমাকে ভীষণভাবে টেনেছিলো। তখন আমার বয়স ছিলো মাত্র বারো, সেই বয়সেই ক্যামেরা নিয়ে হাতিয়া চলে যাই, কিন্তু হাতিয়া যাওয়ার প্রথম দিনই আমার ক্যামেরাটি হারিয়ে গিয়েছিলো।[/int-ans]
[int-qs]ফটো সাংবাদিকতাকে পেশা হিসেবে নেয়ার পরিকল্পনা করলেন কখন?[/int-qs]
[int-ans name=”পাভেল রহমান”]স্বাধীনতার পরে ফটোগ্রাফার হিসেবে আমি একেবারে রাস্তায় নেমে আসলাম। আমার ছবিগুলো ছাত্র ইউনিয়ন ব্যবহার করতে লাগলো। ছাত্র ইউনিয়নের এক কনফারেন্সে বঙ্গবন্ধু আসলেন, আমি বঙ্গবন্ধুর চমৎকার একটি ছবি তুলে ফেললাম। তারপর কামাল ভাইয়ের (শেখ কামাল) ভাইয়ের সাথে পরিচয় হলো। কামাল ভাই রাতারাতি আমাকে আবাহনীর ফটোগ্রাফার বানিয়ে দিলেন। এরমধ্যে বঙ্গবন্ধুর ঐ ছবিটা দেখে বর্তমান প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমানের সেই সময়ের পত্রিকা একতাতে ১০০টাকা বেতনের একটা চাকুরি দিয়ে দেন। এভাবেই ফটোসাংবাদিকতার মাঝে আমি চলে আসি।[/int-ans]
[int-qs]স্মৃতি কাতরতা আছে?[/int-qs]
[int-ans name=”পাভেল রহমান”]আছে।[/int-ans]
[int-qs]কেমন সে স্মৃতিগুলো?[/int-qs]
[int-ans name=”পাভেল রহমান”]বেশিরভাগই আমার ছবি তোলা নিয়ে।[/int-ans]
[int-qs]একটি দুঃখের এবং একটি সুখের স্মৃতি আমাদের বলবেন কি?[/int-qs]
[int-ans name=”পাভেল রহমান”]ফটোগ্রাফি নিয়ে দুঃখের স্মৃতি বলতে ছয়বারের মতো আমি মৃত্যুর প্রায় কাছে চলে গিয়েছিলাম।[/int-ans]
[int-qs]আর সুখের কোন স্মৃতি?[/int-qs]
[int-ans name=”পাভেল রহমান”]আমার সুখস্মৃতির পাল্লা এত ভারী যে আলাদা করে একটি স্মৃতি বলা সম্ভব হবে না। বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি, নেলসন ম্যান্ডেলার স্মৃতি, রাণি এলিজাবেথের স্মৃতি, মাদার তেরেসার স্মৃতি, বেনজির ভুট্টোর স্মৃতি আরো অনেক অনেক সুখস্মৃতি রয়েছে আমার।[/int-ans]
[int-qs]রাগ হয়?[/int-qs]
[int-ans name=”পাভেল রহমান”]হ্যাঁ, বদরাগী হিসবে আমার বেশ দুর্নাম আছে।[/int-ans]
[int-qs]কী কারণে বেশি রাগ হয়?[/int-qs]
[int-ans name=”পাভেল রহমান”]এখানেও মানুষের ব্যবহার। মানুষের ব্যবহারকে আমি অনেক গুরুত্ত্ব দেই। একজনের ব্যবহারের কারণে দিনটি নষ্ট হয়ে যেতে পারে আবার এক ব্যবহারের কারণেই একটি দিন সুন্দর হতে পারে।[/int-ans]
[int-qs]রাগ নিয়ন্ত্রণ করেন কীভাবে?[/int-qs]
[int-ans name=”পাভেল রহমান”]সেভাবে নিয়ন্ত্রণ করি না, সময়ের সাথে সাথে রাগ কমে যায়।[/int-ans]
[int-qs]হিংসা হয়?[/int-qs]
[int-ans name=”পাভেল রহমান”]না, আমার হিংসা নেই। কোন ব্যাপারেই নেই।[/int-ans]
[int-img name=””]https://monerkhabor.com/wp-content/uploads/2017/01/pavel-rahman-2.jpg[/int-img]
[int-qs]ফটোসাংবাদিক না হলে কি হতেন?[/int-qs]
[int-ans name=”পাভেল রহমান”]পরিবার থেকে চাইতো আমি ইঞ্জিনিয়ার হই, আমি চাইতাম পাইলট হতে। পাইলট হওয়ার জন্য কিছুদূর এগিয়েও ছিলাম। কিন্তু সে সময় এয়ার চিফ বাশার প্লেন ক্রাশ করে মারা যান। যা দেখে আমি ও আমার পরিবার বেশ ভয় পেয়ে যাই এবং পাইলট হওয়র পথ থেকে পিছিয়ে আসি।[/int-ans]
[int-qs]এই মুহুর্তে মনে পড়া ফটোগ্রাফির একটি স্মৃতি বলুন?[/int-qs]
[int-ans name=”পাভেল রহমান”]এই মুহুর্তে মনে পড়ছে বঙ্গবন্ধুর লুঙ্গি গেঞ্জি পড়া ছবিটি তোলার কথা।[/int-ans]
[int-qs]এই ছবি তোলার পেছনের কাহিনী বলবেন কী?[/int-qs]
[int-ans name=”পাভেল রহমান”] আপনারা জানেন বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর আগে কিছু পারিবারিক আনন্দের উপলক্ষ্য ছিলো। সেদিন ছিলো কামাল ভাইয়ের গায়ের হলুদের অনুষ্ঠান। আমি বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে তিনতলায় উঠছি। হঠাৎ আমার নাকে এরিনমোর তামাকের গন্ধ আসলো, যেটি বঙ্গবন্ধু খেতেন। আমি আবার এই গন্ধটি ভালো চিনতাম কারণে আমার বাবাও এই তামাকটিই খেতেন। আমি ভাবলাম তাহলে বঙ্গবন্ধু কি ছাদে? তারপর দেখি বঙ্গবন্ধু আবাহনীর হারুন ভাইয়ের সাথে কথা বলছেন। এ অবস্থায় আমি বঙ্গবন্ধুর এই ছবিটি তুলে ফেলি। ক্যামেরার ফ্ল্যাশ দেখে ভারী গলায় বঙ্গবন্ধু বলে উঠেন, এই কে আমার ছবি তুলে? হারুন ভাই বললেন, ও পাভেল। বঙ্গবন্ধু আবার আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘আমি কে তুই জানিস? আমি বললাম, ‘আমি জানি আপনি বঙ্গবন্ধু।’ বঙ্গবন্ধু বললেন, আমি শুধু বঙ্গবন্ধু না, আমি দেশের প্রেসিডেন্ট, দেশের প্রেসিডেন্টের লুঙ্গি গেঞ্জি পড়া ছবি তোলা নিষেধ। তুই ছবি তুলেছিস তোর শাস্তি হবে। তোরা কেউ আমার শার্ট নিয়ে আয়।’ আমি বেশ ভয় পেয়ে গেলাম, তখন আমার বয়স মাত্র ষোল। আমি ভাবতে লাগলাম দেশের প্রেসিডেন্টরা কেমন পোষাক পড়ে ছবি তোলে। এ সময় কেউ একজন বঙ্গবন্ধুর শার্ট নিয়ে আসলো, বঙ্গবন্ধু সেটি গায়ে চাপাতে চাপাতে বললেন, তোর শাস্তি হলো এবার আমার শার্ট পড়া ছবি তোল।” এই ছিলেন বঙ্গবন্ধু।[/int-ans]
[int-qs]ফটোসাংবাদিক হিসেবে অনেক পুরষ্কার ও সম্মাননা আপনি পেয়েছেন। এরমধ্যে আপনার কাছে সেরা পুরষ্কার কোনটি?[/int-qs]
[int-ans name=”পাভেল রহমান”]পুরষ্কারের জন্য আমি কখনও ছবি তুলিনি। এপিতে যখন কাজ করতাম তখন তারা বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে সেরা ছবিগুলো প্রতিযোগিতায় পাঠাতো। আর আমার সেরা পুরষ্কার যদি বলা হয় তাহলে বলবো, আমার ছবির কারণে চিকিৎসাহীনতায় থাকা মানুষ চিকিৎসা পেয়েছে, দীর্ঘদিনের ভাঙ্গা চলাচলের অনুপযোগী রাস্তায় রাতারাতি কাজ শুরু হয়েছে। দূর্যোগ কবলিত অঞ্চলের ছবি প্রকাশ হওয়ার পর সেখানে ত্রাণ নিয়ে হেলিকপ্টার ছুটে গেছে। এমন অনেক অনেক পুরষ্কার রয়েছে যেগুলোকে আমি আমার জীবনের সেরা পুরষ্কার মনে করি। এরপর প্রাতিষ্ঠানিক পুরষ্কারের কথা যদি বলা হয় তাহলে বলবো, এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের সময় তোলা নূর হোসেনের পিঠে ‘গণতন্ত্র মুক্তি পাক’ লেখা সম্বলিত ছবিটির জন্য আমি পুরষ্কার আশা করেছিলাম। সে হিসবে বলবো আমি আমার প্রত্যাশিত পুরষ্কারটি এখনও পাইনি।[/int-ans]
[int-qs]ফটোসাংবাদিকতায় যারা আসতে চায় বা নতুন এসেছে তাদের উদ্যেশ্যে কিছু বলুন।[/int-qs]
[int-ans name=”পাভেল রহমান”]তাদের উদ্দেশ্যে আমি বলবো আগের চাইতে ফটো সাংবাদিক অনেক বেড়েছে কিন্তু সে হিসেবে ফটোগ্রাফির মানের তেমন উন্নতি হয়নি। ফটোসাংবাদিকতা আর সব ফটোগ্রাফির মতো কোন ফ্যাশন নয়, এটিকে একটি ধ্যানের মধ্যে নিয়ে আসতে হবে।[/int-ans]