বেশিরভাগ সময় মেজাজ খিটখিটে থাকে

সমস্যা:
আমার বয়স ১৭ বছর। দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়ি। আমার মনে সবসময় খুঁতখুঁতে চিন্তা হয়। সবসময় না হলেও বেশিরভাগ সময় মেজাজ খিটখিটে থাকে। ঘরের কোনো কিছু অগোছালো দেখলে আমার খুব রাগ হয়, অস্থির লাগে। সেটা না গোছানো পর্যন্ত আমি স্থির হই না। এমনকি অন্য কেউ গুছিয়ে দিলেও শান্তি পাই না। সবকিছু আমার নিজের করতে হয়। ১০-১২ বছর বয়স থেকেই আমার এ অভ্যাস। এবং এটা দিনদিন ক্রমেই বেড়ে যাচ্ছে। এখন অন্য জায়গায় বেড়াতে গেলেও অগোছালো কোনোকিছু সহ্য করতে পারি না। এটি কি মানসিক রোগ? এ বিষয়ে আমাকে পরামর্শ দিলে খুবই উপকৃত হব।
 
পরামর্শ:
তুমি যে সমস্যায় ভুগছো সেটা অবশ্যই একটি মানসিক রোগ। এ রোগের নাম ‘অবসেসিভ কমপালসিভ ডিজঅর্ডার’। এর দুটি অংশ অবসেশন ও কমপালশন। যেমন- এ রোগের লক্ষণগুলো হচ্ছে একই চিন্তা/কল্পনা/জিদ বারবার মনের মধ্যে ঢুকে পড়ে, রোগী এ চিন্তা/কল্পনাগুলোকে মনে আনতে চায় না, কারণ রোগী মনে করে এসব চিন্তা বা কল্পনাগুলো অপ্রয়োজনীয়, ফালতু, খামাখা মনে আসছে। এ চিন্তা মনে না ঢুকলে রোগী আরামে থাকতো বা সমস্যা হতো না। কিন্তু চিন্তাগুলো খামাখাই মনের মধ্যে ঢুকে টেনশন, কষ্ট, অস্থিরতা বা অস্বস্তি তৈরি করে এবং মনের মধ্যে যন্ত্রণা হয়। রোগীকে এই চিন্তাগুলো বাইরে থেকে কেউ মনে ঢুকিয়ে দেয় তাও না, এসব চিন্তা/কল্পনা রোগীর নিজের মনেই তৈরি হয় আর রোগী নিজেই সেটা পছন্দ করে না, মন থেকে সরিয়ে দিতে চায় কিন্তু পারে না বিধায় কষ্ট হয়। অনেক সময় রোগী এ চিন্তা/কল্পনাগুলো থেকে মনোযোগ সরানোর চেষ্টা করে কিন্তু ব্যর্থ হয়। মনে কষ্ট হয়। যেমন- রোগীর মনে চিন্তা আসে যে, পাশ দিয়ে বা দূর দিয়ে কোনো কুকুর গেলে মনেহয় বোধহয় গায়ে লেগে গেছে এবং নাপাক হয়ে গেছে। রোগী জানে যে গায়ে লাগেনি এমনকি অনেক দূর দিয়ে কুকুরটি চলে গেছে কিন্তু তাঁর মনকে কিছুতেই তা বোঝাতে বা মানাতে পারে না, চিন্তা আসতেই থাকে যে রোগী নাপাক হয়ে গেছে।
কমপালশন হচ্ছে অবসেশনের কারণে (অথবা অবসেশন ছাড়াও) কোনো কাজ বারবার করার জন্য মনের মধ্যে তাগিত তৈরি হওয়া। রোগী জানে যে ঐ কাজটি ঠিকমতো করেছে কিন্তু তারপরও মনের মধ্যে সন্দেহ হয় যে বোধহয় কাজটি ঠিকমতো করা হয়নি। তখন রোগী আবার সে কাজটি করে। কিন্তু তারপরও আবার মনেহয় কাজটি ঠিকমতো হয়নি। তখন মন না চাইলেও বাধ্য হয়েই কাজটি আবারও করে। এভাবে বারবার করে এবং রোগী ক্লান্ত হয়ে পড়ে তারপরও মনের সন্দেহ দূর করার জন্য বারবার করে। এটা খুবই কষ্টকর ও যন্ত্রণাদায়ক! যেমন, কুকুর দূর দিয়ে গেছে কিন্তু মন বলছে যে বোধহয় নাপাক হয়ে গেছে, সেই মনের সন্দেহ দূর করার জন্য বাসায় যাওয়ার সাথে সাথেই পরনের কাপড় ধুতে বাধ্য হয়। আবার ১/২ বার ধোয়ার পরও বারবার ধুতে বাধ্য হয়।
তোমার সমস্যাটাও অনুরূপ। অন্য কেউ গোছালেও তোমার মনে সন্দেহ থেকেই যায় যে বোধহয় ঠিকমতো হলো না। এটা একটি রোগ, এর চিকিৎসা আছে এবং চিকিৎসায় এ রোগ ভালো হয়।
পরামর্শ দিচ্ছেন,
ডা. মহসিন আলী শাহ্‌


দৃষ্টি আকর্ষণ- মনেরখবর.কম এর প্রশ্ন-উত্তর বিভাগে, মানসিক স্বাস্থ্য, যৌন স্বাস্থ্য, মাদকাসক্তি সহ মন সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ে আপনার কোনো জানার থাকলে বা প্রশ্ন থাকলে বা বিশেষজ্ঞ পরামর্শ দরকার হলে question@www.monerkhabor.com এই ইমেলের মাধ্যমে প্রশ্ন পাঠাতে পারেন।

Previous articleআমি আমার আবেগ থেকে ছবি তুলি: আলোকচিত্রী আনোয়ার হোসেন
Next articleবিশ্ব আত্মহত্যা প্রতিরোধ দিবস উপলক্ষ্যে বৈজ্ঞানিক সেমিনার

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here