ডা. রুবাইয়াৎ ফেরদৌস
সহকারী অধ্যাপক, সাইকিয়াট্রি বিভাগ।
ঢাকা সেন্ট্রাল ইন্টারন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল।
মানবজীবনে স্বাস্থ্য ও মানসিক অবস্থার মধ্যে গভীর সম্পর্ক বিদ্যমান। শারীরিক অসুস্থতা এবং মানসিক অস্থিরতা একে অপরের ওপর গভীর প্রভাব ফেলে। এর মধ্যে সিদ্ধান্তহীনতা বা সিদ্ধান্ত নিতে অক্ষমতা একটি সাধারণ মনস্তাত্ত্বিক সমস্যা। তবে এটি কি শারীরিক বা মানসিক অসুস্থতার কারণ, নাকি রোগ থেকেই এর উৎপত্তি হয়—এটি একটি বিতর্কিত বিষয়। এই প্রবন্ধে আমরা উভয় দিক নিয়ে আলোচনা করব এবং বোঝার চেষ্টা করব রোগ ও সিদ্ধান্তহীনতার মধ্যকার জটিল সম্পর্ক।
সিদ্ধান্তহীনতার ধারণা
সিদ্ধান্তহীনতা বলতে বোঝায় এমন একটি মানসিক অবস্থাকে, যেখানে ব্যক্তি নিজের সামনে থাকা বিকল্পগুলোর মধ্যে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে দ্বিধাগ্রস্ত হয়। এটি ছোটখাটো বিষয় থেকে শুরু করে জীবনের গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে দেখা দিতে পারে। যেমন, পোশাক নির্বাচন থেকে শুরু করে ক্যারিয়ার বা সম্পর্কের মতো গুরুতর বিষয়ের ক্ষেত্রেও মানুষ সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগে।
সিদ্ধান্তহীনতার পেছনে বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে। এটি একদিকে ব্যক্তিত্বের বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে জড়িত, আবার অন্যদিকে মানসিক চাপ, উদ্বেগ, এবং শারীরিক অসুস্থতাও এতে ভূমিকা রাখতে পারে।
রোগের কারণে সিদ্ধান্তহীনতা
শারীরিক বা মানসিক অসুস্থতা ব্যক্তির চিন্তাভাবনা এবং কার্যক্ষমতাকে উল্লেখযোগ্যভাবে প্রভাবিত করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ:
১. মানসিক রোগ:
উদ্বেগজনিত ব্যাধি, বিষণ্নতা, এবং সিজোফ্রেনিয়ার মতো মানসিক রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা প্রায়ই সিদ্ধান্ত নিতে অক্ষম হয়ে পড়েন। এই রোগগুলোতে মস্তিষ্কে কেমিক্যাল ভারসাম্যের অভাব দেখা দেয়, যা ব্যক্তির চিন্তাভাবনা এবং সমস্যা সমাধানের দক্ষতাকে দুর্বল করে।যেমন –
# বিষণ্নতা বা ডিপ্রেশন:
বিষণ্নতা এমন একটি অবস্থা, যেখানে ব্যক্তির চিন্তার গতি কমে যায়। বিষণ্ন মানুষরা প্রায়ই সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগেন, কারণ তাদের মস্তিষ্কে সেরোটোনিনের মাত্রা কমে যায়।
# উদ্বেগজনিত ব্যাধি (Anxiety Disorders):
উদ্বিগ্ন ব্যক্তিরা সব সময় খারাপ ফলাফলের আশঙ্কায় ভোগেন। এই নেতিবাচক চিন্তাধারা তাদের কার্যক্ষমতাকে বাধাগ্রস্ত করে।
# আত্মবিশ্বাসহীনতা এবং সামাজিক ফোবিয়া (Social Anxiety Disorder)
যাদের সামাজিক পরিস্থিতিতে মানসিক চাপ বেশি হয়, তারা সহজ সিদ্ধান্ত নিতেও অসুবিধায় পড়েন।
যেমন: কীভাবে কথা বলবেন, কার সঙ্গে যোগাযোগ করবেন—এসব নিয়ে অতিরিক্ত ভাবনায় তারা সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগেন।
# ওসিডি (Obsessive-Compulsive Disorder):
ওসিডি-তে আক্রান্ত ব্যক্তিরা সবকিছু নিখুঁত হওয়ার চেষ্টা করেন। এই নিখুঁততাবাদ তাদের সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়াকে জটিল করে তোলে।
উদাহরণস্বরূপ, কোনো কাজের প্রতিটি দিক সঠিক হতে হবে—এই ভয় তাদের সিদ্ধান্তহীনতায় ফেলে।
# সিজোফ্রেনিয়া (Schizophrenia)
সিজোফ্রেনিয়া রোগীরা বাস্তবতা এবং কল্পনার মধ্যে পার্থক্য করতে অসুবিধায় ভোগেন। এই রোগে চিন্তার ধারাবাহিকতা ব্যাহত হয়, ফলে তারা সিদ্ধান্ত নিতে অপারগ হয়ে পড়েন।
২. শারীরিক অসুস্থতা:
যেমন ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ বা হৃদরোগের মতো সমস্যাগুলো ব্যক্তির মানসিক অবস্থাকে প্রভাবিত করতে পারে। এসব ক্ষেত্রে রোগী প্রায়ই ক্লান্তি, অবসাদ এবং মনঃসংযোগের অভাবে ভোগেন, যা সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা কমিয়ে দেয়।
৩.মস্তিষ্কজনিত সমস্যা বা স্নায়ুরোগ : এসমস্ত রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা হ্রাসের কারণে তারা পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করতে অক্ষম হয়ে পড়েন। উদাহরণ:
# স্নায়ুর রোগ:
অ্যালঝাইমার ও ডিমেনশিয়া (Alzheimer’s Disease and Dementia):
স্মৃতিশক্তি দুর্বল হয়ে যাওয়া এবং মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা হ্রাস পাওয়ার ফলে এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেন। তারা দৈনন্দিন সাধারণ কাজগুলোও সঠিকভাবে সম্পন্ন করতে পারেন না।
# পারকিনসন্স ডিজিজ (Parkinson’s Disease):
এটি একটি স্নায়ুতন্ত্রের ব্যাধি, যা মস্তিষ্কের ডোপামিন উৎপাদনে বাধা দেয়। এর ফলে রোগী সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে ধীর এবং অনিশ্চিত হয়ে পড়েন।
# স্ট্রোক:
স্ট্রোকের কারণে মস্তিষ্কের নির্দিষ্ট অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হলে ব্যক্তির চিন্তা-ভাবনা এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা কমে যায়।
# ট্রমাটিক ব্রেন ইনজুরি (Traumatic Brain Injury):
মাথায় আঘাতের ফলে মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা হ্রাস পেলে ব্যক্তিরা তাদের পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করতে এবং সিদ্ধান্ত নিতে সমস্যায় পড়েন।
৪. দীর্ঘমেয়াদি শারীরিক অসুস্থতা:
# ক্রনিক ফ্যাটিগ সিনড্রোম (Chronic Fatigue Syndrome)
দীর্ঘমেয়াদি ক্লান্তি ও শারীরিক দুর্বলতায় আক্রান্ত ব্যক্তি মানসিক শক্তি হারিয়ে ফেলেন। এর ফলে তারা সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে ধীরগতি এবং দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে পড়েন।
# ডায়াবেটিস :
অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিসে রক্তে শর্করার মাত্রা ওঠা-নামা করলে মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা সাময়িকভাবে হ্রাস পায়। এটি সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতাকে প্রভাবিত করে।
# হৃদরোগ (Heart Disease):
হৃদরোগে ভোগা ব্যক্তিদের মধ্যে উদ্বেগ এবং বিষণ্নতা সাধারণ। এটি তাদের সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়াকে জটিল করে তোলে।
# ক্যানসার:
ক্যানসারের মতো গুরুতর রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা মানসিক চাপ এবং অনিশ্চয়তায় ভোগেন। এর ফলে তারা সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে ব্যর্থ হন।
৫.হরমোনাল ইমব্যালান্স:
যেখানে শরীরের হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট হয়, মানুষকে মানসিকভাবে দুর্বল করে তোলে। এটি ব্যক্তির চিন্তা-ভাবনার ক্ষমতাকে প্রভাবিত করে। যেমন:
# হরমোনজনিত সমস্যা:
থাইরয়েডের সমস্যা (Hyperthyroidism বা Hypothyroidism):
থাইরয়েড হরমোনের ভারসাম্যহীনতা মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতাকে প্রভাবিত করে।
যেমন, হাইপারথাইরয়েডিজমে উদ্বেগ বাড়ে এবং হাইপোথাইরয়েডিজমে ক্লান্তি এবং মনোযোগহীনতা দেখা দেয়, যা সিদ্ধান্ত নেওয়ায় বাধা সৃষ্টি করে।
# পিসিওএস (PCOS – Polycystic Ovary Syndrome)
হরমোনজনিত এই সমস্যায় ভোগা নারীদের মধ্যে মেজাজের পরিবর্তন এবং মানসিক চাপ বেশি হয়। এটি তাদের সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
৬. ড্রাগ আসক্তি ও মাদক ব্যবহার:
মাদকাসক্তি (Substance Use Disorder):
ড্রাগ বা অ্যালকোহলের প্রভাব মস্তিষ্কের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতাকে ব্যাহত করে।দীর্ঘদিনের মাদকাসক্তি ব্যক্তির চিন্তাভাবনা এবং স্মৃতিশক্তিকে দুর্বল করে, ফলে তারা কার্যকরী সিদ্ধান্ত নিতে অক্ষম হয়ে পড়েন।
৬. অন্যান্য মানসিক অবস্থা:
# পোস্ট-ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিজঅর্ডার (PTSD):
অতীতে কোনো ভয়াবহ ঘটনার অভিজ্ঞতা ব্যক্তি মনোভাব এবং মস্তিষ্কের কার্যক্রমে দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলে। এটি তাদের দুশ্চিন্তা বাড়ায় এবং সিদ্ধান্ত নেওয়া কঠিন করে তোলে।
# বর্ডারলাইন পারসোনালিটি ডিসঅর্ডার (BPD):
এই অবস্থায় ব্যক্তিরা আবেগপ্রবণ হন এবং যুক্তিসঙ্গতভাবে চিন্তা করতে অক্ষম হয়ে পড়েন। এর ফলে তারা সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগেন।
সিদ্ধান্তহীনতার কারণে রোগ:
অন্যদিকে,সিদ্ধান্তহীনতা দীর্ঘস্থায়ী হলে এটি মানসিক ও শারীরিক বিভিন্ন রোগের কারণ হতে পারে। সিদ্ধান্তহীনতা মানসিক চাপ এবং উদ্বেগ বাড়িয়ে তোলে, যা ধীরে ধীরে শরীর ও মনের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। নিচে কিছু রোগের তালিকা দেওয়া হলো, যেগুলো সিদ্ধান্তহীনতার দীর্ঘমেয়াদি প্রভাবের কারণে হতে পারে:
১. মানসিক রোগ:
# উদ্বেগজনিত ব্যাধি (Anxiety Disorders):
দীর্ঘমেয়াদি সিদ্ধান্তহীনতা মানসিক চাপ তৈরি করে, যা উদ্বেগজনিত রোগের দিকে নিয়ে যেতে পারে।
উদ্বিগ্ন ব্যক্তি প্রায়শই ভবিষ্যতের ফলাফল নিয়ে ভীত থাকেন, যা তাদের মানসিক শান্তি নষ্ট করে।
# বিষণ্নতা (Depression):
বারবার সিদ্ধান্ত নিতে ব্যর্থ হলে হতাশা তৈরি হয়। এটি ধীরে ধীরে বিষণ্নতায় রূপ নিতে পারে।
বিষণ্নতার ফলে ব্যক্তির জীবন সম্পর্কে আগ্রহ কমে যায় এবং আত্মবিশ্বাস তলানিতে গিয়ে ঠেকে।
# ওসিডি (Obsessive-Compulsive Disorder):
সিদ্ধান্তহীনতার কারণে মানুষ নিখুঁততাবাদী হয়ে উঠতে পারে। অতিরিক্ত চিন্তা বা সংশয়ের কারণে ওসিডি হতে পারে।
# সামাজিক ফোবিয়া (Social Anxiety Disorder):
সিদ্ধান্ত নিতে না পারার ভীতি বা অন্যের প্রতিক্রিয়া নিয়ে চিন্তা করতে করতে সামাজিক মঞ্চে কথা বলার বা কাজ করার ফোবিয়া তৈরি হতে পারে।
২. শারীরিক রোগ:
# উচ্চ রক্তচাপ (Hypertension):
দীর্ঘদিন ধরে মানসিক চাপ এবং দুশ্চিন্তা রক্তচাপ বাড়ায়। এটি হৃদরোগের ঝুঁকি বৃদ্ধি করে।
# হৃদরোগ (Heart Disease):
সিদ্ধান্ত নিতে না পারা এবং ক্রমাগত মানসিক চাপের ফলে কর্টিসল হরমোনের মাত্রা বেড়ে যায়, যা হৃদরোগের কারণ হতে পারে।
# গ্যাস্ট্রিক বা আলসার:
মানসিক চাপ এবং উদ্বেগের কারণে হজম প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়। এটি গ্যাস্ট্রিক এবং পেপটিক আলসারের ঝুঁকি বাড়ায়।
# অনিদ্রা (Insomnia):
সিদ্ধান্তহীনতা মানসিক অস্থিরতা বাড়িয়ে তোলে, যা অনিদ্রার কারণ হতে পারে।অনিদ্রার ফলে আরও শারীরিক ও মানসিক সমস্যা দেখা দিতে পারে।
৩. স্নায়ুবিক রোগ:
# মাইগ্রেন:
সিদ্ধান্ত নিতে না পারার কারণে মানসিক চাপ মাইগ্রেনের ঝুঁকি বাড়ায়।মাইগ্রেনে আক্রান্ত ব্যক্তি দীর্ঘমেয়াদি মাথাব্যথায় ভোগেন।
# স্নায়বিক দুর্বলতা (Nerve Weakness):
ক্রমাগত মানসিক চাপ স্নায়ুতন্ত্রকে দুর্বল করে তোলে, যা দীর্ঘমেয়াদি ক্লান্তি এবং মানসিক ভারসাম্যহীনতার দিকে নিয়ে যায়।
৪. জীবনধারা-সংক্রান্ত সমস্যা:
# আলস্য ও স্থবিরতা:
সিদ্ধান্তহীনতার ফলে ব্যক্তি প্রোডাকটিভ কাজ থেকে দূরে সরে যান। এটি অলসতা এবং শারীরিক অস্বাস্থ্য তৈরির কারণ হয়।
# ওজন বৃদ্ধি বা হ্রাস:
মানসিক চাপের কারণে কেউ কেউ অতিরিক্ত খাওয়া শুরু করেন (কমফোর্ট ইটিং), আবার কেউ খাবারের প্রতি অনীহা অনুভব করেন। এর ফলে ওজন বৃদ্ধি বা হ্রাস ঘটে।
৫. সম্পর্কের অবনতি:
# একাকিত্ব ও হতাশা:
বারবার সিদ্ধান্ত নিতে ব্যর্থ হওয়া ব্যক্তিকে একসময় সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দিতে পারে। এটি একাকিত্ব এবং হতাশার জন্ম দেয়।
# আত্মবিশ্বাসের অভাব:
সিদ্ধান্তহীনতা ব্যক্তিকে নিজের প্রতি আস্থা হারাতে বাধ্য করে। এটি আরও বড় মানসিক ও সামাজিক সমস্যার দিকে নিয়ে যায়।
৬. আচরণগত সমস্যা:
# মাদকাসক্তি বা ড্রাগ ডিপেন্ডেন্স:
সিদ্ধান্ত নিতে না পারার হতাশা থেকে মুক্তি পেতে কেউ কেউ মাদক বা অ্যালকোহলের আশ্রয় নেন। এটি তাদের জীবন আরও জটিল করে তোলে।
# আচরণগত সমস্যা (Behavioral Disorders):
সিদ্ধান্তহীনতা দীর্ঘস্থায়ী হলে ব্যক্তি আবেগ নিয়ন্ত্রণে অক্ষম হয়ে পড়েন। এটি তাদের আচরণে আক্রমণাত্মকতা বা হতাশা নিয়ে আসে।
এই সমস্যার সমাধান:
রোগ এবং সিদ্ধান্তহীনতার মধ্যে এই চক্রটি ভাঙতে হলে কিছু কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে:
১. চিকিৎসা:
শারীরিক বা মানসিক অসুস্থতার লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। মানসিক রোগের ক্ষেত্রে সাইকোথেরাপি এবং কাউন্সেলিং কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।
২. আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি:
সিদ্ধান্তহীনতা কাটিয়ে উঠতে আত্মবিশ্বাস তৈরি করা প্রয়োজন। ছোটখাটো বিষয় থেকে শুরু করে ধীরে ধীরে বড় সিদ্ধান্ত নেওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।
৩. জীবনধারার পরিবর্তন:
নিয়মিত ব্যায়াম, সঠিক খাদ্যাভ্যাস এবং পর্যাপ্ত ঘুম মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে। এর ফলে ব্যক্তি ভালো সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম হয়।
৪. সমর্থন ব্যবস্থা:
পরিবার, বন্ধু বা সহকর্মীদের কাছ থেকে মানসিক সমর্থন পাওয়া ব্যক্তি সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে সহায়ক হতে পারে।
৫. চিন্তাভাবনার পরিসর বৃদ্ধি:
সিদ্ধান্তহীনতার পেছনে অনেক সময় তথ্যের অভাব বা বিকল্প বিশ্লেষণের অক্ষমতা কাজ করে। তাই প্রতিটি বিকল্পের ভালো-মন্দ বিশ্লেষণ করতে অভ্যস্ত হতে হবে।
৬. ছোট লক্ষ্য নির্ধারণ:
বড় সমস্যাগুলোকে ছোট ছোট অংশে ভাগ করুন। এতে প্রতিটি ধাপে সিদ্ধান্ত নেওয়া সহজ হয়ে যাবে।
৭. তথ্য সংগ্রহ:
সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে যথেষ্ট তথ্য সংগ্রহ করুন। এটি আত্মবিশ্বাস বাড়াতে সাহায্য করে।
৮. আত্মচর্চা ও মেডিটেশন:
মেডিটেশন বা মননচর্চা মানসিক চাপ কমায় এবং মনোযোগ বৃদ্ধি করে। এটি সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রক্রিয়াকে সহজ করে তোলে।
৯. পরামর্শ গ্রহণ:
যদি সিদ্ধান্ত নিতে অসুবিধা হয়, তবে নির্ভরযোগ্য কারও (যেমন: পরিবার, বন্ধু, বা পেশাদার কাউন্সেলর) পরামর্শ নিন।
১০. সীমিত বিকল্প নির্বাচন:
অতিরিক্ত বিকল্প থেকে বেছে নেওয়া কঠিন হয়। তাই সীমিত বিকল্পের মধ্য থেকে সেরা সিদ্ধান্ত নেওয়ার চেষ্টা করুন।
১১. পরীক্ষামূলক সিদ্ধান্ত:
সব সিদ্ধান্তই যে চূড়ান্ত হতে হবে, তা নয়। পরীক্ষামূলকভাবে একটি বিকল্পে কাজ শুরু করুন এবং প্রয়োজন হলে সংশোধন করুন।
উপসংহার
রোগ এবং সিদ্ধান্তহীনতা একে অপরের সঙ্গে নিবিড়ভাবে সম্পর্কিত। এটি একটি চক্রের মতো কাজ করে—যেখানে রোগ সিদ্ধান্তহীনতার সৃষ্টি করে, আবার সিদ্ধান্তহীনতা নতুন রোগের জন্ম দেয়। তবে সচেতনতা, মানসিক দৃঢ়তা, এবং সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে এই চক্র থেকে বের হওয়া সম্ভব।
মানুষের জীবনে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা একটি গুরুত্বপূর্ণ দক্ষতা। এটি স্বাস্থ্য, সম্পর্ক, এবং পেশাগত জীবনে সফলতা আনতে সহায়তা করে। সুতরাং, সময়মতো পদক্ষেপ গ্রহণ এবং নিজেকে মানসিক ও শারীরিকভাবে সুস্থ রাখার প্রতি গুরুত্ব দেওয়া জরুরি।
আরও পড়ুন-