ডা. অনন্যা কর
ফেইজ-বি রেসিডেন্ট,বিএসএমএমএউ
মাইগ্রেন একটি দীর্ঘমেয়াদি নিউরোলজিক্যাল অসুখ, যা সাধারণ মাথাব্যথার চেয়ে ভিন্ন এবং অনেক বেশি তীব্র। এটি শুধু মাথাব্যথার সীমাবদ্ধ নয়; বরং আরও অনেক উপসর্গ নিয়ে আসতে পারে, যেমন বমি বমি ভাব, আলোর প্রতি সংবেদনশীলতা, এবং শব্দে অস্বস্তি। মাইগ্রেনের আক্রমণ সাধারণত কয়েক ঘণ্টা থেকে কয়েক দিন পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে।
মাইগ্রেন সঠিকভাবে কেন হয় তা পুরোপুরি জানা না গেলেও কিছু সম্ভাব্য কারণ এবং ট্রিগার চিহ্নিত করা হয়েছে:
জিনগত প্রভাব: পরিবারে মাইগ্রেনের ইতিহাস থাকলে এর ঝুঁকি বাড়ে।
হরমোনের পরিবর্তন: বিশেষত নারীদের ক্ষেত্রে, মাসিক চক্র বা গর্ভাবস্থায় মাইগ্রেন বেড়ে যেতে পারে।
মানসিক চাপ: অতিরিক্ত স্ট্রেস বা উদ্বেগ মাইগ্রেনের প্রধান ট্রিগার।
খাদ্য: বিশেষ কিছু খাবার (যেমন চকলেট, ক্যাফেইন, অ্যালকোহল) এবং খাবার এড়িয়ে চলা মাইগ্রেন বাড়াতে পারে।
পরিবেশগত কারণ: আবহাওয়ার পরিবর্তন, উজ্জ্বল আলো, এবং উচ্চ শব্দ মাইগ্রেন ট্রিগার করতে পারে।
মাইগ্রেনের ধরণ :
মাইগ্রেনের প্রধান দুটি ধরণ রয়েছে:
অরা সহ মাইগ্রেন (Migraine with Aura):
মাথাব্যথার আগে বিভিন্ন লক্ষণ দেখা যায়, যেমন দৃষ্টিবিভ্রাট, ঝাপসা দেখা, বা শরীরের কোনো অংশে অস্বাভাবিক অনুভূতি।
অরা ছাড়া মাইগ্রেন (Migraine without Aura):
কোনো পূর্বলক্ষণ ছাড়াই হঠাৎ মাথাব্যথা শুরু হয়।
মাইগ্রেন শুধু একটি শারীরিক সমস্যা নয়, এটি ব্যক্তির মানসিক ও সামাজিক জীবনে বিরাট প্রভাব ফেলতে পারে।
- কাজের দক্ষতা কমে যায়।
- পরিবারের সঙ্গে সময় কাটাতে অসুবিধা হয়।
- দীর্ঘমেয়াদি মাইগ্রেন ডিপ্রেশন বা উদ্বেগ বাড়াতে পারে।
মাইগ্রেন নিয়ন্ত্রণে রাখা কিছু সহজ কৌশল নিচে দেওয়া হলো। এগুলো অনুসরণ করলে মাইগ্রেনের তীব্রতা ও ফ্রিকোয়েন্সি কমানো সম্ভব:
১. নিয়মিত জীবনধারা বজায় রাখা
প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমানো ও ঘুম থেকে ওঠা।
পর্যাপ্ত ও গভীর ঘুম নিশ্চিত করা।
অতিরিক্ত বা কম ঘুমানো এড়িয়ে চলা।
২. খাদ্যাভ্যাসে সতর্কতা
মাইগ্রেন ট্রিগার করতে পারে এমন খাবার (যেমন চকলেট, কফি, প্রক্রিয়াজাত খাবার) এড়িয়ে চলুন।
নিয়মিত সময়ে খাবার খান এবং খালি পেটে বেশি সময় না থাকার চেষ্টা করুন।
পানি পান করুন পর্যাপ্ত পরিমাণে।
৩. স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট
মেডিটেশন, যোগব্যায়াম বা শ্বাস-প্রশ্বাসের অনুশীলন করুন।
দৈনন্দিন জীবনের চাপ কমানোর জন্য সময়মতো কাজ শেষ করার অভ্যাস গড়ে তুলুন।
৪. শরীরচর্চা ও শারীরিক সক্রিয়তা
প্রতিদিন হালকা ব্যায়াম বা হাঁটা।
ভারী শারীরিক পরিশ্রম মাইগ্রেন ট্রিগার করতে পারে, তাই এর মাত্রা ঠিক রাখা জরুরি।
৫. পর্যাপ্ত আলো ও শব্দ নিয়ন্ত্রণ
অতিরিক্ত উজ্জ্বল আলো ও উচ্চ শব্দ এড়িয়ে চলুন।
কাজ করার জায়গায় নরম ও আরামদায়ক পরিবেশ তৈরি করুন।
৬. ওষুধ বা চিকিৎসা গ্রহণ
মাইগ্রেনের তীব্র আক্রমণের ক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী নির্ধারিত ওষুধ গ্রহণ করুন।
দীর্ঘমেয়াদী মাইগ্রেন হলে চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে প্রতিরোধমূলক ওষুধ শুরু করা যেতে পারে।
৭. মাইগ্রেন ট্রিগার ডায়েরি রাখা
কোন পরিস্থিতি, খাবার বা অভ্যাস মাইগ্রেন শুরু করে তা লিখে রাখুন।
এই ডায়েরি মাইগ্রেনের কারণ চিহ্নিত করতে সাহায্য করবে।
নিয়মিত এ অভ্যাসগুলো মেনে চললে মাইগ্রেন নিয়ন্ত্রণ সহজতর হবে। তবে সমস্যা যদি দীর্ঘমেয়াদি বা গুরুতর হয়, অবশ্যই একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। মাইগ্রেন নিয়ে হতাশ না হয়ে সঠিক জীবনযাত্রা এবং চিকিৎসা পদ্ধতি মেনে চললে এটি নিয়ন্ত্রণ সম্ভব। ব্যক্তিগত অভ্যাসের পরিবর্তন এবং সময়মতো চিকিৎসা নেওয়া মাইগ্রেনে আক্রান্তদের জীবন সহজ ও সুন্দর করতে পারে। মাইগ্রেনকে একটি চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়ে এটি মোকাবিলা করতে মানসিকভাবে শক্ত থাকা অত্যন্ত জরুরি।
আরও পড়ুন-