মোস্তফা কামাল
শিক্ষক ও ভেষজবীদ
আমরা যে খাদ্য গ্রহণ করি, তা থেকেই আমাদের শরীর গঠিত হয়। বিরামহীনভাবে শরীরের তন্তু ভাংচুর হচ্ছে; প্রতিটা অঙ্গ প্রত্যঙ্গের চালনায় ক্ষয় থাকে এবং এই ক্ষয় আমাদের খাদ্য থেকে পূরণ হয়। শরীরের প্রতিটি অঙ্গ প্রত্যঙ্গের পুষ্টির সহভাগ প্রয়োজন। মগজকে অবশ্যই এর অংশ দিতে হবে; হাড়, মাংশপেশী এবং শিরা উপশিরা ও পুষ্টির দাবি রাখে। এটা একটা চমৎকার প্রক্রিয়া যা খাদ্যকে রক্তের মধ্যে স্থানান্তর করে, এবং শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ প্রত্যঙ্গ গঠন করে; কিন্তু এই পদ্ধতি বিরামহীনভাবে কাজ করে যাচ্ছে; প্রতিটি শিরা উপশিরা, মাংশপেশী, এবং তন্ত্রকে জীবন এবং শক্তির জোগান দিচ্ছে।
খাদ্য মনোনয়ন
এমন এমন খাদ্য বাছাই করতে হবে যেগুলো শরীর গঠনে সর্বোত্তম বস্তুর জোগান দেবে। এই মনোনয়নের মধ্যে ক্ষুধা একটা নিরাপদ পরিচালক নয়। আহার গ্রহণের মন্দ অভ্যাসের মাধ্যমে ক্ষুধা বিকৃতি ঘটে। প্রায়ই এটা সেই সব খাবারের দাবি করে যেগুলো স্বাস্থ্যের ক্ষতিসাধন করে এবং শক্তি না যোগিয়ে বরং শরীরকে দুর্বল করে। আমরা সমাজের রীতিনীতি দ্বারা নিরাপদজনকভাবে পরিচালিত হতে পারি না। ব্যাধিপীড়া এবং দুঃখ কষ্ট যা সর্বস্থানে বিরাজমান, যা খাদ্য মনোনয়নে প্রচলিত ভ্রান্তিসমূহের কারণে এসে থাকে।
সর্বোৎকৃষ্ট খাদ্য কি তা জানতে হলে, আমাদের অবশ্যই মানুষের খাদ্য সম্পর্কে সৃষ্টিকর্তার আদি পরিকল্পনা অধ্যয়ন করতে হবে। যিনি মনুষ্যকে সৃষ্টি করেছেন, এবং যিনি তার চাহিদা সমূহ জানেন, তিনি খাদ্যের বিষয় আদমকে দায়িত্ব দিয়েছেন।আমাদের সৃষ্টিকর্তা কর্তৃক মনোনীত খাদ্য শস্য, ফল, বাদাম, এবং শাক-সব্জি। এসব খাদ্য যদি সম্ভাব্য সাদাসিধে এবং প্রাকৃতিক উপায়ে প্রস্তুত করা যায়, তবে তা অতিশয় স্বাস্থ্যকর এবং পুষ্টিসম্মত খাদ্যরূপে গণ্য হয়। ঐ সব খাদ্য এমন একটা শক্তি, একটা সহ্যশক্তি, এবং বুদ্ধির এক প্রাণশক্তি প্রদান করবে, যা আরো অধিক যৌগিক এবং উত্তেজক খাদ্য দ্বারা সরবরাহ হতে পারে না।
কিন্তু সব উন্নতি সাধক বা স্বাস্থ্যকর খাদ্য সর্বক্ষেত্রে সমভাবে উপযুক্ত নয়। খাদ্য মনোনয়নে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। আমাদের খাদ্য হতে হবে কাল বা সময়োপযোগি, হতে হবে এমন জলবায়ুতে যেখানে আমরা বসবাস করি, এবং যে পেশা আমরা অনুসরণ করি। এক প্রকার খাদ্য এক প্রকার জলবায়ুতে উপযুক্ত যা অন্য জলবায়ুতে উপযুক্ত নয়। সুতরাং বিভিন্ন খাদ্য বিভিন্ন পেশাধারীর জন্য উপযুক্ত বা উপকারী। কোন কোন খাদ্য কঠিন শারীরিক পরিস্থিতির ব্যক্তির পক্ষে উপকারী যা গভীর মানসিক পরিশ্রমী ব্যক্তির পক্ষে উপকারী হবে না। সৃষ্টিকর্তা আমাদের জন্য বিভিন্ন প্রকার স্বাস্থ্যকর খাদ্য দিয়েছেন, এবং প্রত্যেক ব্যক্তিকে তার অভিজ্ঞতা এবং বিচারবুদ্ধি বিবেচনা অনুসারে খাবার বেছে নিতে হবে যা তার পক্ষে উপকারী এবং আবশ্যক।
প্রকৃতির মাঝে প্রচুর ফল, বাদাম, এবং শস্য রয়েছে, এবং বছর বছর সব দেশের উৎপন্ন দ্রব্য সাধারণভাবে বিতড়িত হয়ে থাকে। ফলে অনেক অনেক দ্রব্য যা ছিল আমাদের সৌখিন এবং দুষ্প্রাপ্য তা আজ নিত্য ব্যবহার্য দ্রব্যরূপে হাতের নাগালে রয়েছে। এগুলো হচ্ছে বিশেষ করে শুষ্ক এবং টিনজাত খাদ্য।
মাংসের স্থান পূরণ করার জন্য রয়েছে বাদাম এবং ঐ জাতীয় খাদ্য। বাদামের সঙ্গে কিছু শস্য, ফল-মূল বা শিকড় জাতীয় খাদ্য মিশিয়ে খাদ্যকে আরো বেশী স্বাস্থ্য সম্মত পুষ্টিকর করার জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে। এতদসত্ত্বেও সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে, যেন এসব খাবারে অতিরিক্ত বাদাম ব্যবহার করা না হয়। বাদাম জাতীয় খাবারে খাদ্যের ক্ষতি হয়, তারা পূর্ব সতর্কবাণী গ্রহণ করবেন এটাও মনে রাখতে হবে যে, কোন কোন বাদাম অন্যটার চেয়ে উপকারী নয়। কাগজি (বড় বাদাম), ছোট চিপ বাদামের সঙ্গে ব্যবহার করা যেতে পারে কিন্তু এতে চিনা বাদাম থাকবে অল্প পরিমাণ, যা শস্যের সঙ্গে মিশানো যায়, ফলে এটা পুষ্টিকর হবে এবং সহজে হজম করা যাবে।
যথাযথরূপে প্রস্তুত জলপাই ও বাদামের ন্যায় মাখন এবং মাংসের স্থান পূর্ণ করে। জলপাই তেল, পশুর চর্বি বা তেল অপেক্ষা অধিক গ্রহণযোগ্য। এটা একটা হজমী বা জ্বালানির কাজ করে। এর ব্যবহার ক্ষয় রোগে উপকারী এবং এটা পেটের জ্বালায় নিরাময় দান করে।
যারা অত্যন্ত সমৃদ্ধ এবং উচ্চ-উত্তেজক সৃষ্টিকারী খাদ্য গ্রহণ করে, তারা একটা অস্বাভাবিক স্বাদ পায়, এবং তারা তাৎক্ষণিকভাবে সাধারণ খাদ্য পছন্দ করে না। তাদের কাছে ঐ স্বাদটা স্বাভাবিক হয়ে আসতে সময় লাগবে, এবং পেট যে দুর্ব্যবহার পেয়েছে, তা থেকে উদ্ধার পেতে সময় লাগবে। কিন্তু যারা উৎকৃষ্ট খাবারের ব্যবহারে অটল, তারা এক সময়ে দেখবে এ খাবার সহজেই হজম হয়ে যায়। এর রুচিকর এবং স্বাদযুক্ত সুগন্ধ প্রসংশিত হবে, এবং আনন্দ সহকারে ভক্ষিত হবে যা অসমৃদ্ধ মুখরোচক খাদ্য থেকে আহরণ করা যায় না। আর পেটের সুস্থ অবস্থায়, উত্তেজনাহীন অথবা, অত্যধিক চাপহীনভাবে তার কাজ সম্পন্ন করতে পারবে।
বিভিন্নতা
স্বাস্থ্য টিকিয়ে রাখার জন্য প্রচুর পুষ্টিকর খাদ্যের প্রয়োজন। যদি আমরা বুদ্ধিপূর্বক পরিকল্পনা করি যা স্বাস্থ্যের জন্য অতীব উপকারী, যা বলতে গেলে প্রত্যেক দেশেই পাওয়া যাবে। ধান, গম, ভুট্টা, এবং ওট্স, যা প্রত্যেক স্থানে পাঠান হয়, শিমের বীজ, মটর শুঁটি এবং বিভিন্ন প্রকারের ডাইলও রপ্তানি করা হয়। এসব, দেশীয় এবং রপ্তানীকৃত ফল এবং বিভিন্ন প্রকারের শাক-সব্জি প্রতিটা স্থানে জন্মান হয়, যেগুলো মাংস ব্যবহার না করেও এসব থেকে একটা সম্পূর্ণ পথ্য বা খাদ্য বেছে নেবার সুযোগ থাকে।
যেখানে প্রচুর ফল উৎপন্ন করা সম্ভব, সেখানে শীতকালের জন্য প্রচুর সম্ভার প্রস্তুত ও মজুত রাখা যায়। বোতল এবং টিনে সংরক্ষণ করে, ছোট ছোট ফল, যেমন বীজশূণ্য আঙ্গুর, লোহা জাম, ক্ষুদ্র রসাল ফল (Strawberry, raspberry) (ঈষদন্ত ক্ষুদ্র ফল বিশেষ), এবং কালোজাম, এগুলো জন্মানো যেতে পারে, যা প্রত্যন্ত অঞ্চলে ব্যবহার করা যেতে পারে। যা হচ্ছে না, এবং তার চাষ অবহেলা করা হচ্ছে।
ঘরে টিনের পরিবর্তে ওগুলো কাঁচের পাত্রে সংরক্ষণ করা যেতে পারে, যে স্থানে সম্ভব। এটা বিশেষ করে আবশ্যক যে, ক্যানিং করার ফলগুলোর উৎকৃষ্ট মানের হতে হবে। সামান্য চিনি ব্যবহার করবেন, এবং ফলগুলো কিছুক্ষণ সিদ্ধ করুন সংরক্ষণ করার উপযোগি হল কিনা সে বিষয় লক্ষ্য করবেন। এভাবেই হতে পারে আপনার প্রস্তুতকৃত চমৎকার টাটকা ফলের বিকল্প।
যেখানে সুলভ মূল্যে শুষ্ক ফল, যেমন কিশমিশ্, শুষ্ক খেজুর, আপেল, নাসপাতি, পিচ, এবং এপ্রিকট্ (apricots) পাওয়া যায়, সেখানে দেখবেন যে, ওগুলো অবাধে স্বল্প মূল্যে ক্রয় করা যায় এবং সেটা সর্বশ্রেণীর লোকের জন্য স্বাস্থ্যকর এবং জীবনীশক্তি সম্পন্ন খাদ্য হবে।
যে কোন খাবারের সময় বহু রকমের খাদ্য সামগ্রী যেন টেবিলে না থাকে, কেননা এতে অতিভোজনে উৎসাহিত করে, এবং অজীর্ণ সৃষ্টি হতে পারে।
একই সময়ে ফল এবং সব্জি ভোজন করা ভাল নয়। যদি দুর্বল হজমের লক্ষণ দেখা যায়, তখন উভয় প্রকার খাদ্য গ্রহণ প্রায়ই চরম দুর্দশা নেমে আসে এবং মানসিক প্রচেষ্টা কার্যে প্রয়োগে অসমর্থ হয়। ভাল হবে যদি আমরা এক বেলা ফল খাই এবং অন্য বেলা শাক-সব্জি খাই।
বিভিন্ন সাজে বিভিন্ন রকমের খাদ্য হবে। দিনের পর দিন একই খাবার একই ভাবে প্রস্তুত খাবার টেবিলে বার বার থাকবে না। যখন খাবার বৈচিত্রময় হয় তখন তা অত্যন্ত স্বাদযুক্ত হয়, এবং শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ উত্তম পুষ্টি লাভ করে।
খাদ্য প্রস্তুতি
কেবলমাত্র ক্ষুধা নিবৃত্তির জন্য খাদ্য গ্রহণ করা কিন্তু ভুল, কিন্তু খাদ্যের গুণাগুণ বা প্রস্তুতি সম্পর্কে উদাসীনতা প্রকাশ করা ভুল। খাদ্য যদি স্বাদযুক্ত বা রুচিসম্মত না হয়, তবে একইরূপে এ থেকে পুষ্টি লাভহবে না। খাদ্য সতর্কতার সঙ্গে মনোনয়ন করতে হবে এবং বুদ্ধি ও দক্ষতার সঙ্গে প্রস্তুত করতে হবে।
পাউরুটি কিংবা রুটি প্রস্তুত করার ক্ষেত্রে অতিচমৎকার সাদা ময়দা সর্বোত্তম নয়। এর ব্যবহার স্বাস্থ্যকরও নয়, মিতাচারিতাও নয়। পরিশোধিত আটা বা ময়দার তৈরী রুটিতে পুষ্টি পদার্থ থাকে না যা সম্পূর্ণ গমের আটার রুটিতে পাওয়া যায়। এটা কোষ্ঠ-কাঠিন্য এবং অন্যান্য অস্বাস্থ্যকর অবস্থার কারণ।
রুটিতে সোডা এবং বেকিং পাউডার ব্যবহার করা ক্ষতিকর এবং নিষ্প্রয়োজন। সোডা পেটে জ্বালা সৃষ্টি করে, এবং প্রায়ই গোটা দৈহিক গঠনতন্ত্রকে বিষাক্ত করে। অনেক গৃহবধু চিন্তা করে যে, তারা সোডা না হলে ভাল রুটি তৈরী করতে পারে না, কিন্তু এটা ভুল কথা কিন্তু তারা যদি একটু কষ্ট করে উত্তম পদ্ধতি শেখে তবে তাদের রুটি অত্যধিক স্বাস্থ্যকর হবে, এবং একটা স্বাভাবিক স্বাদে তা হবে অধিক রুচিকর। ফুলানো বা তাড়িযুক্ত রুটি জলের পরিবর্তে দুধ ব্যবহার করা উচিত নয়। দুধ ব্যবহার অতিরিক্ত খরচ, এবং এটা রুটিকে কম উৎকৃষ্ট করে। দুধ মিশিয়ে তৈরী রুটির মিষ্টতা থাকে না যেমনটা জল মিশিয়ে তৈরী রুটিতে থাকে, আর এটা পেটে গিয়ে আরো তাড়াতাড়ি তাড়িময় হয়ে যায়।
রুটি হবে হালকা এবং মিষ্টি। বিন্দুমাত্র অম্লাস্বাদ থাকবে না। দলাগুলো হবে ছোট, এবং পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে সেঁকতে হবে, এ সময়ের মধ্যে তাড়ির মধ্যেকার জীবানু ধ্বংস হয়ে যাবে। যে কোন প্রকারের উষ্ণ বা নতুন ফুলানো রুটি অসুবিধা হয়। এধরনের রুটি কখনো খাবার টেবিলে স্থান পাবে না। এই নিয়মটি অবশ্য তাড়িশূন্য রুটির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। রুটি প্রস্তুত মেশিনে, তাড়িবিহীন রুটি উপযুক্ত তাপের ওভেনে সেকা হয়, তবে সেগুলো উৎকৃষ্ট এবং রুচিকর হবে।
পুডিং বা পরিজ, তৈরী করতে যে শস্য ব্যবহৃত হয়, তা রান্না করতে কয়েক ঘণ্টা সময় প্রয়োজন। কিন্তু নরম বা তরল খাদ্য শুষ্ক খাদ্য থেকে কম পুষ্টিকর, যা পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে চিবাতে হবে। দু’বার সেঁকা রুটি অধিক সহজে হজম হয় এবং অতীব রুচিসম্মত খাবার। সাধারণ ব্রেড স্লাইস করে কেটে বেশ উত্তপ্ত ওভেনে ভাল করে শুকাতে হবে যেন ঈষৎ সিক্ত না থাকে। তারপর ওটাকে একটু বাদামী রং এর করে নিতে হবে।
একটা শুষ্ক স্থানে বা পাত্রে রেখে দিন, দেখবেন সাধারণ ব্রেড অপেক্ষা অনেক দিন থাকবে এবং টাটকা থাকবে।
সাধারণ খাবারে খুব বেশী পরিমাণ চিনি ব্যবহৃত হয়। কেক, মিষ্টি, পুডিং, পেস্ট্রি, জেলী, জ্যাম, এসব অজীর্ণের সক্রিয় কারণ। বিশেষ করে ক্ষতিকারক হচ্ছে ডিমের পায়েস এবং পুডিং যার মধ্যে দুধ, ডিম, এবং চিনি এগুলো প্রধান সামগ্রী। দুধ এবং চিনি একসঙ্গে অবাধ ব্যবহার বর্জন করা উচিত।
পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে পাস্তুরিত দুধ ব্যবহার করতে হবে; এই পূর্ব সতর্কবাণী পালনের দ্বারা এর ব্যবহারে বিপদের সম্ভাবনা কম। বাটার রান্নায় ব্যবহার না করে যদি ঠান্ডা রুটিতে লাগিয়ে খাওয়া যায়, তবে তা কম ক্ষতিকর হবে, কিন্তু নিয়ম অনুসারে এটা একদম বর্জন করাই ভাল। তথাপি চিজ আরো আপত্তিকর; এটা সম্পূর্ণরূপে খাবারের অযোগ্য।
টায়টোয়, মন্দভাবে রান্না করা খাবার রক্ত প্রস্তুতকারী ইন্দ্রিয়কে দুর্বল করে, রক্তকে কলুষিত করে। অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সমূহকে যন্ত্রণাদায়ক নার্ভের সহগমন এবং বদহজম দ্বারা বিকৃত করে এবং ব্যাধিপীড়া আনয়ন করে। সহস্র সহস্র এবং লক্ষ লক্ষ লোক দুর্বল রন্ধনবিদ্যার শিকার রয়েছে। অনেক কবরের ওপর হয়তো এরকম লেখা আছে, “ত্রুটিপূর্ণ রান্নার কারণে মৃত্যুবরণ করেছে,” “পেটুকতার কারণে মৃত্যু বরণ করেছে।”
যারা রান্না করে, তাদের কাছে রান্না শিক্ষা করা একটা পবিত্র কাজ। ত্রুটিপূর্ণ রন্ধনবিদ্যার কারণে অনেক আত্মা হারিয়ে গেছে। উত্তম খাদ্য প্রস্তুত করতে হলে চিন্তা এবং যত্নশীলতার প্রয়োজন; কিন্তু অনেকে যেমন মনে করে তদপেক্ষা অধিক ধর্ম রয়েছে এক মুষ্টি উত্তম খাবারের মধ্যে। বাস্তবিক পক্ষে কম সংখ্যক পাচক পাচিকা রয়েছে। যুবতী স্ত্রী লোকেরা মনে করে যে, রান্না করা অন্যান্য ঘরের কাজ করা এসব চাকর বাকরের কাজ; এবং একারণে অনেক বিবাহিত’ মেয়েরা পরিবারের দেখাশুনা করে, তাদের একজন স্ত্রী এবং মা হয়ে কর্তব্য পালন করার খুব অল্পই ধারণা রয়েছে।
রন্ধনকার্য সামান্য বিজ্ঞান নয়, এবং এটা বাস্তব জীবনের একটা অতীব অপরিহার্য বিষয়। একটা বিজ্ঞান যা সকল স্ত্রীলোকের শিক্ষা করা উচিত এবং এটা এমনভাবে শিক্ষা করা উচিত যাতে দরিদ্র শ্রেণীর লোকেরাও উপকৃত হতে পারে। ক্ষুধার আকাঙ্খা উদ্রেককারী খাবার এবং একই সময় অনাড়ম্বর এবং পুষ্টিকর খাদ্য প্রস্তুত করায় দক্ষতা প্রয়োজন; কিন্তু এটা করা যেতে পারে। পাচক-পাচিকাদের জানা উচিত কিভাবে সাধারণ অথচ স্বাস্থ্যকর উপায়ে খাবার প্রস্তুত করতে হয়, এবং এটা যেন রুচিকর এবং উৎকৃষ্ট হয়।
প্রত্যেক স্ত্রীলোক যারা পরিবারের অধিকর্তারূপে রয়েছেন, তথাপি তিনি স্বাস্থ্যসম্মত রন্ধন বিদ্যা অবগত নন, তাদের শিক্ষা লাভকরতে দৃঢ়সংকল্প হতে হবে যে, এটা তার পরিজনবর্গের জন্য অপরিহার্য। অনেক স্থানে স্বাস্থ্যসম্মত রান্নার স্কুল রয়েছে যেগুলোতে এ সকল ক্ষেত্রের শিক্ষা লাভের সুযোগ রয়েছে। যার এরূপ সুযোগ সুবিধা লাভের উপায় নেই তাকে উত্তম রন্ধন কার্যের শিক্ষা গ্রহণ করা উচিত এবং তার মধ্যে উন্নতি সাধনের প্রচেষ্টা সংরক্ষণ করে রাখতে হবে যে পর্যন্ত না তিনি রন্ধন বিদ্যার শিক্ষিকারূপে গণ্য হতে পারেন।
আহারে নিয়মানুবর্তিতা
নিয়মিত আহার অতিব গুরুত্বপূর্ণ। প্রতি আহারের জন্য একটা নির্দ্ধারিত সময় থাকবে। এই সময় প্রত্যেকে শরীরের প্রয়োজন মত আহার গ্রহণ করবে, এবং পরবর্তী আহারের পূর্বে আর কিছুই খাওয়া যাবে না। অনেকে আছেন, যারা শরীরের প্রয়োজন না হলেও কিছু খাবার খায়। অসময়ে এবং দুই আহারের মাঝে, যেহেতু এই নিদারুণ ইচ্ছা দমন করবার তাদের যথেষ্ট শক্তি নেই। যাত্রাপথে, তাদের কাছে কোন খাবার থাকলে বা সামনে কিছু পেলে অবিরত কুটকুট্ করে কামড়াতে ব্যস্ত থাকে। এটা অত্যন্ত ক্ষতিকর। ভ্রমনকারীর। যদি নিয়মিত সাদাসিধে এবং পুষ্টিকর খাবার খায়, তবে তারা এত বড় ক্লান্তি বোধ করত না, অথবা এত বেশী অসুখে ভুগত না।
আরো একটা অতীব মারাত্মক ক্ষতিকর অভ্যাস, রাতে ঘুমোতে যাবার কেবলই আগে খাওয়া। নিয়মিত আহার হয়ত গ্রহণ করা হয়েছে; কিন্তু যেহেতু একটু দুর্বলতা বোধ হচ্ছে, তাই আর খাবার গ্রহণ করা হল। এই ভুল অভ্যাস চরিতার্থ করায় একটা স্বভাবে পরিণত হয়, এবং পরে এটা দৃঢ় অভ্যাসে রূপ নেয় যে, মনে হয় না খেয়ে ঘুমোনেই অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়। বিকেলের খাবার দেরী করে খাওয়ার ফলে, ঘুমোনোর সময় হজম ক্রিয়া পদ্ধতির কাজ চালু রাখতে হয়। কিন্তু যদিও বা পাকস্থলি অবিরত কাজ করে, তথাপি এর কাজ যথাযথভাবে সম্পন্ন হয় না। প্রায়ই অশুভ স্বপ্ন দেখে ঘুম নষ্ট হয়, এবং সকালের খাবারের প্রতি সামান্য রুচিও থাকে না। যখন আমরা বিশ্রামের জন্য শুয়ে পড়ি, তখন ত পাকস্থলির সব কাজ শেষ হয়ে যাবার কথা, অর্থাৎ যেন শরীরের অন্যান্য অঙ্গ প্রত্যঙ্গও বিশ্রাম উপভোগ করতে পারে। কাজের সময় বড় বেশী বসে থাকার অভ্যস্থ লোকের পক্ষে, দেরীতে সন্ধ্যের আহার গ্রহণ করা ক্ষতিকর। তাদের যে ব্যাঘাত সৃষ্টি হয় তা প্রায়ই ব্যাধিপীড়ার সূচনা হয় যার পরিণাম মৃত্যু।
অনেক ক্ষেত্রে দুর্বলতা যা খাবার ইচ্ছে এনে দেয়, যেহেতু হজম ইন্দ্রিয়ের ওপর দিনের বেলা অত্যধিক চাপ পড়েছিল। এক সাজ খাবার পরে হজম ইন্দ্রিয়ের বিশ্রাম প্রয়োজন। দুই আহারের মাঝে পাঁচ বা ছয় ঘণ্টা সময় বিরতি থাকবে; এবং অধিকাংশ লোক যারা একবার পরীক্ষা করে, তারা লক্ষ্য করবে যে, দিনে তিন বারের চেয়ে দু’বার খাওয়া ভাল।
খাবারের ভুল পরিস্থিতি
অতি উষ্ণ বা অতি ঠান্ডা খাবার খাওয়া উচিত নয়। খাবার ঠান্ডা হলে, পাকস্থলির জীবনী শক্তির চাহিদা বৃদ্ধি পায়, এবং হজম ক্রিয়া আরম্ভ হবার পূর্বে পাকস্থলীকে উষ্ণতা পেতে হয়। ঠান্ডা পানীয় ঐ একই কারণে ক্ষতিকর। প্রকৃত পক্ষে, খাবার সঙ্গে যতবেশী তরল পদার্থ গ্রহণ করা হয়, খাবার হজম করা তত কঠিন হয়; কেননা হজম ক্রিয়া আরম্ভ হবার আগে ভাগে তরল বস্তু শোধিত হওয়া বাঞ্ছনীয়। অত্যধিক লবণ খাবেন না, আচার এবং মশলা জাতীয় খাবার এড়িয়ে চলুন, প্রচুর ফল খান, তাতে খাবার সময় অত্যধিক পানীয়ের কারণে যে জ্বালা পোড়া হয় তা বিশেষভাবে দূর হয়ে যায়।
ধীরে ধীরে খাবার খেতে হবে, এবং পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে চিবিয়ে খেতে হবে। এটা আবশ্যক, যাতে করে খাবারের সঙ্গে লালা ভাল করে মিশে হজম ক্রিয়ার তরল পদার্থের কাজ শুরু হয়ে যায়।
অন্য আরেকটা মারাত্মক মন্দ অভ্যাস হলো অসময়ে খাওয়া, অতিরিক্ত ব্যায়ামের পর খাবার খাওয়া ভীষণ খারাপ, কারণ তখন ব্যায়ামে শরীর উত্তপ্ত থাকে। খাবার কেবলই পরে স্নায়ুবিক শক্তিসমূহের ওপরে চাপ পড়ে; এবং যখন মন অথবা শরীর আহারের কেবল পূর্বে বা পরে চাপের মধ্যে পড়ে, তখন হজম ক্রিয়ায় বাধা সৃষ্টি হয়। যখন একটা সক্রিয় হয়ে ওঠে, উদ্বিগ্ন হয়, অথবা ব্যস্ত হয়ে পড়ে, সেহেতু একটু বিশ্রাম করে খেতে হবে।
পাকস্থলির সঙ্গে মস্তিষ্কের ঘনিষ্ট সম্পর্ক রয়েছে; এবং যখন পেটের পীড়া হয়ে বসে, মস্তিষ্ক থেকে স্নায়ু শক্তিকে আহ্বান করা হয় দুর্বল হজম-ইন্দ্রিয়কে সাহায্য করার জন্য। বার বার যখন এই দাবি আসে, তখন মস্তিষ্কের অত্যধিক চাপ পড়ে। যখন মস্তিষ্কের ওপরে অবিরত চাপ পড়ে, এবং শারীরিক ব্যায়ামের ঘাটতি দেখা যায়, এমন কি তখন সাদাসিধে, আতিশস্যবিহীন খাবার খেতে হবে। খাবার সময়, চিন্তা ভাবনা ত্যাগ করতে হবে। ব্যস্ত হতে হবে না, কিন্তু আনন্দসহকারে ধীরে ধীরে খেতে হবে, আপনার অন্তঃকরণ সৃষ্টিকর্তার আশীর্বাদের জন্য তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করতে হবে।
অতিভোজন
অনেকে যারা মাংস এবং অন্যান্য বিলাসবহুল খাবার এবং ক্ষতিকারক বস্তু বর্জন করে তারা মনে করে, যেহেতু তাদের খাদ্য সাদাসিধে এবং স্বাস্থ্যকর, তারা বিনা বাধায় ক্ষুধা চরিতার্থ করতে পারে, এবং তারা অত্যধিক ভোজন করে কখনো কখনো অত্যধিক পেটুক হয়ে থাকে। এটা ভুল। হজম ইন্দ্রিয়গুলোকে অত্যধিক পরিমাণ এবং গুণগত খাবার দ্বারা ভারপ্রাপ্ত করা উচিত নয় যা অঙ্গপ্রত্যঙ্গগুলোর ওপরে চাপ সৃষ্টি করবে।
অনেকের মতে প্রথা রয়েছে যে, খাবার টেবিলে কিছু বিরতির পরে মাঝে মধ্যে খাবার রাখতে হবে। পরে কি খাবার আছে তা না জেনে, একজন হয়ত পর্যাপ্ত খাবার খেয়ে নিল, যা হয়ত তার সঙ্গে ভাল খাপ খাবে না। যখন শেষ বারের মত নতুন খাবার আনা হয়, সে প্রায়ই সীমা ছাড়িয়ে যায়, এবং প্রলোভন সৃষ্টিকারী মিষ্টি খাদ্য গ্রহণ করে, যা কোন ভাল কিছুই প্রমাণ করে না। যদি খাবার উদ্দেশে সব ধরনের খাবার শুরুতেই টেবিলে আনা হয়, তা হলে একজনের পক্ষে সর্বোত্তমটি বেছে নেবার সুযোগ হয়।
কখনো কখনো অতিভোজনের পরিণাম তাৎক্ষণিকভাবে উপলব্ধি করা যায়। অন্যান্য ব্যাপারে কোন ব্যথা অনুভূত হয় না; কিন্তু পরিপাক যন্ত্রগুলো তাদের জীবনী শক্তি হারিয়ে ফেলে, এবং শারীরিক শক্তির ভিত দুর্বল হয়ে যায়।
অতিরিক্ত খাদ্য অঙ্গ প্রত্যঙ্গ গঠন তন্ত্রের ওপরে চাপ সৃষ্টি করে এবং রোগের লক্ষণ সৃষ্টি করে এবং জ্বরভাবগ্রস্ত সৃষ্টি করে। এটা পাকস্থলিকে অত্যধিক পরিমাণে রক্তের দাবি জানায়, এবং খুব তাড়াতাড়ি হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসে। এটা পরিপাক যন্ত্রে একটা ভারি চাপ আনয়ন করে, এবং এই যন্ত্রসমূহের কাজ সম্পন্ন হবার পরে শরীর খুব দুর্বল হয়ে আসে। সময় সময় মস্তিষ্ক অসাড় হয়ে পড়ে ফলে মানসিক বা শারীরিক প্রচেষ্টা দুর্বল হয়ে আসে।
এই অপ্রীতিকর লক্ষণাবলী অনুভূত হয় কেননা প্রকৃতি জীবনী শক্তির এক নিষ্প্রয়োজনীয় ব্যাসের মাধ্যমে তার কার্য শেষ করেছে, এবং পুরোদস্তর নিঃশেষ হয়ে গেছে। পেট বলছে, “আমাকে বিশ্রাম দেও।” কিন্তু অনেকে দুর্বলতার কারণে একথা বলতে চায়, তাদের আরো খাদ্য প্রয়োজন; সুতরাং উদরকে বিশ্রাম না দিয়ে বরং তার ওপর আরো বোঝা চাপিয়ে দেয়া হল। ফলে পরিপাক যন্ত্র প্রায়ই নিঃশেষ হয়ে যায় যখন তাদের উত্তম কাজ করতে সমর্থ হবার কথা।
বিশ্রাম দিনের আহার
“বিশ্রাম দিনের খাদ্যোপকরণ অন্য দিন অপেক্ষা অধিকতর প্রচুর ও নানা প্রকারের না হয়ে বরং অধিকতর সাদাসিধে হওয়া ও আধ্যাত্মিক বিষয় সমূহ বুঝিবার জন্য মন যেন বিশুদ্ধ ও তেজস্কর থাকে, তন্নিমিত্তে অল্প আহার করা কর্তব্য।” একটা ভারাক্রান্ত উদর অর্থ একটা ভারাক্রান্ত মস্তিষ্ক। অতীব মূল্যবান বাক্য শুনেও তা আমাদের ভাল লাগবে না, কারণ একটা অনুপযুক্ত খাবারের মাধ্যমে মন বিভ্রান্ত হয়ে পড়ে।
বিশ্রামদিনে অতিরিক্ত আহার গ্রহণের ফলে অনেকে, মনে করে তারা চিন্তার অতীত কাজ করতে পারে, কিন্তু তারা পবিত্র সুযোগ সুবিধা লাভের অনুপযুক্ত হয়ে পড়ে।
বিশ্রামবারে রান্না বর্জন করতে হবে; কিন্তু তাই বলে ঠান্ডা ভক্ষণের আবশ্যকতা নেই। শীতকালে পূর্বদিনে প্রস্তুত খাদ্য বিশ্রাম বারে গরম করে নেয়া যেতে পারে। ভোজ্য খাদ্য যতই সাদাসিধে হোক না কেন, তা সুস্বাদু ও নয়নের তৃপ্তকর হওয়া আবশ্যক। বিশেষতঃ যে সব পরিবারে বালকবালিকা আছে, সেই সব পরিবারে বিশ্রামবারে এমন খাদ্যের আয়োজন করতে হবে, যা একটা ভোজ বলে গৃহীত হবে ও যা পরিবারস্থ সকলে অন্য দিনে খায় না।
খাদ্যে সংস্কার
যাদের আহারের মন্দ অভ্যাস জন্মেছে, তাদের অবিলম্বে তা সংশোধন করা কর্তব্য। পাকস্থলীর অপব্যবহারে যাদের অজীর্ণ রোগ জন্মেছে, তাদের কর্তব্য পাকস্থলীর প্রত্যেক অতিরিক্ত খাটুনির ভার অপসারিত করে প্রধান শক্তির অবশিষ্ট বল সযত্নে রক্ষা করবার চেষ্টা করা। বহুদিন পর্যন্ত অপব্যবহারের পর, পাকস্থলী হয়ত কখনো তার পূর্ণ স্বাস্থ্য লাভ করতে না-ও পেতে পারে; কিন্তু যথোপযুক্ত আহারের ফলে আর অধিক দুর্বলতা আসে না, এবং অনেকে অল্প বিস্তর সুস্থ হয়ে ওঠে।
পানাহার ও ভোগ বিলাসে মিতাচারের পুরস্কার মানসিক এবং নৈতিক শক্তি; এটা মত্ততা নিয়ন্ত্রণেও সাহায্য করে। যারা মিতাচারে আলস্যপরায়ন, তাদের পক্ষে অতিভোজন বিশেষভাবে ক্ষতিকর, এই সকল লোকদের আহারে আতিশয্য বিমুখ হওয়া উচিত; এবং অনেক শারীরিক ব্যায়াম করা উচিত। অনেক নর-নারী রয়েছেন, অত্যুৎকৃষ্ট স্বাভাবিক দক্ষতা রয়েছে যারা যা করতে পারত তার অর্দ্ধেকও করে না, তারা যদি ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণে আত্ম-সংযম অভ্যাস করত।
অনেক লেখক এবং বক্তা এখানে ব্যর্থ হন। মনোযোগ এবং আন্তরিকভাবে আহার গ্রহণ করার পর তারা বসে থাকা পেশায় নিয়োজিত হয়, যেমন বই পড়া, অধ্যয়ন, বা লেখার কাজ, তাদের ব্যায়াম করার সময় হয় না। ফলে, চিন্তা এবং বাক্যের প্রবাহে বাধা সৃষ্টি হয়। তারা লোকদের হৃদয় স্পর্শ করার জন্য ক্ষমতার সঙ্গে কথা বলতে পারে না; তাদের চেষ্টা নিস্তেজ এবং নিষ্ফল।
যাদের ওপর গুরুদায়িত্ব অর্পিত, তারা, সর্বোপরি, যারা আত্মিক সম্পর্কের অভিভাবক, তারা হবেন সূক্ষ্ম অনুভূতি এবং ত্বরিত উপলব্ধির মানুষ। অন্যদের অপেক্ষা আহারে তাদের অধিক মিতাচারী হতে হবে।দামী এবং বিলাসবহুল কোন খাদ্য তাদের টেবিলে স্থান পাবে না।
প্রতিদিন পদস্থ এবং দায়িত্বপূর্ণ লোকদের অনেক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হয় যার ওপর মহাগুরুত্বপূর্ণ পরিণতি নির্ভর করে। তাদের প্রায়ই অতিদ্রুত চিন্তা ভাবনা করতে হয়, এবং এটা কেবলমাত্র যারা কঠোর মিতাচার অভ্যাস করে, তাদের ও মানসিক শক্তি সমূহের সঠিক চিকিৎসার ফলে মন শক্তিশালী হয়। চাপ যদি বেশী প্রবল না হয়, তবে প্রতিটি চাপ প্রয়োগে নতুন শক্তি আসে। কিন্তু প্রায়ই, যাদের বিবেচনার জন্য গুরুত্বপূর্ণ পরিকল্পনা রয়েছে, এবং গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার কাজ রয়েছে তা অনুপযুক্ত খাদ্যের ফলে মন্দের জন্য প্রভাবান্বিত হয়। একটা অসুস্থ পাকস্থলী মনের একটা অনিশ্চিত অবস্থার সৃষ্টি করে। এটা প্রায়ই খিটখিটে ভাব, কর্কশ ভাব, বা অবিচার সৃষ্টি করে। বহু পরিকল্পনা যা জগতের নিকটে আশীর্বাদ স্বরূপ তা এক পার্শ্বে রেখে দেয়া হয়েছে, অনেক অন্যায্য, পীড়নকর, এমন কি নিষ্ঠুর আচরণ করা হয়েছে যা খাবারের ভুল অভ্যাস হেতু অসুস্থ অবস্থার পরিণাম।
যারা বসা কাজ, বিশেষ করে প্রধানত মানসিক কাজ করেন, তাদের সকলের প্রতি এই পরামর্শ যাদের যথেষ্ট নৈতিক সাহস ও আত্মনিয়ন্ত্রণ রয়েছে, তারা এটা চেষ্টা করুক: প্রতি আহারের সময়ে দুই বা তিন প্রকার সাদাসিধে খাবার গ্রহণ করুন, এবং ক্ষুধা নিবৃত্তির জন্য যা খাওয়া প্রয়োজন তার অতিরিক্ত খাবেন না। প্রতিদিন সক্রিয় ব্যায়াম করুন, এবং আপনি উপকার পান কি-না তা লক্ষ্য করুন।
যে সকল বলবান ব্যক্তি শারীরিক পরিশ্রমে তৎপর, অলস স্বভাবের লোকদের কিম্বা উপবেশনকারী কর্মীর খাদ্যের পরিমাণ বা খাদ্যের প্রকারভেদের বিষয় তাদের তত সতর্ক হওয়া প্রয়োজন হয় না; কিন্তু খাদ্য ও পানীয়ে তারা যদি আত্ম সংযম করতে অভ্যস্ত হত, তাহলে এমন কি তারাও অধিকতর উত্তম খাদ্য লাভ করতে পারত।
কেউ কেউ চায় যেন, তাদের আহার্য দ্রব্য সম্বন্ধে একটা বাঁধা নিয়ম করে দেয়া হয়। একজন অন্য একজনের জন্য কোন নির্দিষ্ট নিয়ম করে দিতে পারে না। প্রত্যেককেই বুদ্ধি বিবেচনা পূর্বক চলা এবং আত্মসংযমী হওয়া ও নীতি অনুযায়ী কাজ করা উচিত।
আমাদের দেহ হচ্ছে সৃষ্টিকর্তার দান, আর এ দিয়ে আমরা যাচ্ছে তাই কাজ করতে পারি না। যারা স্বাস্থ্যনীতি অবগত আছেন, তাদের উচিত যেন তারা এই নীতিমালা পালন করেন, যা স্রষ্টা আদিতে স্থাপন করেছিলেন। স্বাস্থ্য নীতি পালন করা হবে একটা ব্যক্তিগত ব্যাপার। নিয়ম লঙ্ঘন হেতু আমাদের কষ্ট পেতে হবে। আমাদের অভ্যাস এবং অনুশীলন হেতু আমাদের ব্যক্তিগতভাবে সৃষ্টিকর্তার কাছে জবাবদিহি হতে হবে।
আরও পড়ুন-