পৃথিবী আগের তুলনায় অনেক বেশি উষ্ণ হয়ে গেছে। যার কারণে প্রতিদিনের সংবাদ মাধ্যমে চোখ বোলালে আবহাওয়া কর্ণারে রোদের দাবদাহের সংবাদ পাই। প্রচণ্ড রোদে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে ওঠেছে ক্রমশই। সেই সাথে যোগ হয়েছে বিদ্যুতে লোডশেডিং। ফলে প্রচণ্ড গরমে বাড়ছে শারীরিক ও মানসিক অসুস্থতা। অফিস ফিরে কর্মব্যস্ত মানুষের শরীর ও মন প্রতিদিনই ক্লান্ত হয়ে উঠছে।
অতিরিক্ত গরম আর কাজের চাপে মেজাজ খিটখিটে হওয়া, সামান্য বিষয়ে নিয়ন্ত্রণহীনভাবে রেগে যাওয়া নিত্যকার সমস্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। ধারাবাহিকভাবে এই সমস্য চলতে থাকলে মনোস্বাস্থ্যের ওপর মারাত্মক খারাপ প্রভাব পড়ে। মানসিকভাবে অসুস্থও হয়ে যেতে পারে যে কেউ।
কর্মস্থলে সারাদিনের ব্যস্ততার ক্লান্তি আর সেই সাথে তীব্র তাপপ্রবাহ শরীর ও মনে ভিষণরকম প্রভাব ফেলছে। অসুস্থ করে তুলছে আমাদের।
সুতরাং এই গরমে সুস্থ থাকার জন্য আমাদের দরকার বাড়তি যত্ন ও সচেতনতা। বিশেষ করে ব্যস্ততা ও ক্লান্তির মাঝে সুস্থ থাকতে চাই মানসিক প্রশান্তি। কেননা, শরীর সুস্থ থাকা মানসিক সুস্থতার অন্যতম পূর্ব শর্ত। আসুন জেনে নেই এই গরমে আমরা কীভাবে সুস্থ থাকতে পারি:-
পরিমিত ঘুম : নিয়মিতভাবে পরিমিত ঘুম স্বাস্থ্যের জন্য অপরিহার্য। রাতে প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমোতে হবে। অফিস ফিরে কোনোভাবেই সময় নষ্ট করা যাবে না। ঘুমের সময় মোবাইল সহ যাবতীয় ইলেক্ট্রনিক্স ডিভাইস থেকে দূরে থাকতে হবে। এসব ডিভাইসে মগ্ন হয়ে ঘুমোতে দেরি করা যাবে না। রাতেই পর্যাপ্ত সময় ঘুমিয়ে সকাল সকাল উঠতে হবে। সকালের সূর্য গরম হওয়ার আগেই ফ্রেশ হয়ে নিতে হবে। যথেষ্ঠ সময় নিয়ে অফিসের প্রস্তুতি নিয়ে বের হতে হবে। রিলাক্স মুডে অফিসে গেলে কাজে ভালো মনোযোগ এবং মানসিক প্রশান্তি পাওয়া যাবে।
গোসল : সকালে অফিসের উদ্দেশ্যে বের হওয়ার আগেই গোসল করে নিতে হবে। অফিস থেকে ফিরে গোসল করা যেতে পারে। তবে এক্ষেত্রে তাড়াহুড়ো করা যাবে না। প্রথমে ঘামযুক্ত ভারি ও অতিরিক্ত কাপড় ছেড়ে কিছুক্ষণ বসে বিশ্রাম করতে হবে। শরীর ঠান্ডা হওয়ার পরই গোসল করতে হবে। নতুবা জ্বর-সর্দি লেগে যাওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যাবে।
পোশাক : গরমে পোশাক নির্বাচনে সচেতন হতে হবে। অতিরিক্ত ভারী কাপড় পরা যাবে না। হালকা-পাতলা কাপড় পরিধান করতে হবে। গরমে সবথেকে বেশি আরামদায়ক সুতি কাপড়। সুতিকাপড় বাতাস চলাচলে বিশেষ সহায়ক। এছাড়া জর্জেট, সিল্ক, লিনেন, শিফন ও ভালো মানের নেটের কাপড়ও পরা যেতে পারে। তবে কাপড় যেন অতিরিক্ত ভারী না হয়। যতটুকু সম্ভব পাতলা কাপড় পরতে হবে।
শরীর ঠান্ডা রাখা : যথাসম্ভব শরীর ঠান্ডা রাখতে হবে। অতিরিক্ত গরমে থাকা যাবে না। মাঠে কাজ করলে ছায়ার ব্যবস্থা রাখতে হবে। ঘামে ভেজা কাপড় বেশিক্ষণ গায়ে না রেখে পরিবর্তন কিংবা বাতাসে শুকিয়ে নিতে হবে।
ফ্যান চালনা : বিদ্যুতচালিত ফ্যানের বাতাস অনেক সময় গরম হয়ে যায় এজন্য মাঝে মাঝে গামছা বা তোয়ালে ভিজিয়ে ফ্যান মুছে নেয়া যেতে পারে। কিছু সময় ফ্যান বন্ধ রেখে বিশ্রাম দেয়া যেতে পারে। সব থেকে ভালো হবে (সম্ভব হলে) প্রাকৃতিক বাতাস উপভোগ করা।
ছাতা : বাহিরে বের হওয়ার সময় নিজের জন্য ছাতা রাখা বাধ্যতামূলক করে নিতে হবে। সরাসরি সূর্যের আলো ত্বকের জন্য ক্ষতিকর। এছাড়া অতিরিক্ত তাপের কারণে যেকোনো সময় হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে। সব সময় ছায়ায় থাকার চেষ্টা করতে হবে।
পানি : গরমে সতেজ থাকতে প্রচুর পরিমাণে পানি পান করতে হবে। তবে খেয়াল রাখতে হবে পানি যেন অতিরিক্ত ঠান্ডা না হয়। কারণ, অতিরিক্ত ঠান্ডা পানি পান করলে কাঁশি বা সর্দি লেগে যেতে পারে। সর্বপ্রকার কোমল পানীয় এড়িয়ে যেতে হবে। বাজারলভ্য ট্যাং ও জুস পরিহার করতে হবে। এক্ষেত্রে ঘরে তৈরী জুস নিরাপদ এবং অধিক স্বাস্থকর। লেবু, বেল ও আমের শরবত এবং ডাবের পানি খাওয়া উপকারী হবে। বাহিরে বের হলে বোতলে করে পানি রাখা যেতে পারে।
ফলমূল : কথায় আছে ‘বারো মাসে বারো ফল না খেলে যায় রসাতল’। এই সীজনে আমাদের দেশে প্রচুর পরিমাণে বিভিন্ন প্রকার মৌসুমী ফল পাওয়া যায়। আম, জাম, কলা, লিচু, আঙ্গুর, আপেল, কমলা, মাল্টা , আনাড়, তরমুজ, তরমুজের জুস বা এজাতীয় ফল খেতে হবে। যেটা সবথেকে সহজলভ্য হয় প্রয়োজনে সেটাই বেশি বেশি খেতে হবে।
শাক-সবজি : প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় শাক-সবজি রাখতে হবে। বিশেষভাবে চিহ্নিত; কারো কারো স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হয় (যেমন এলার্জির জন্য বেগুন) এমন সবজি ছাড়া সবধরণের শাক-সবজি বেশি বেশি খেতে হবে। পুঁইশাক মাথা ঠান্ডা রাখতে বিশেষভাবে কার্যকর। ডায়বেটিস রোগীদের জন্য পুঁইশাক বিশেষ উপকারী। সহজলভ্য হিসেবে পুঁইশাক নিয়মিত রাখা যেতে পারে খাদ্য তালিকায়।
শসা : গরমে শসার বিশেষ উপকারীতা হয়েছে। শসা কিনে ভালো করে ধুয়ে ফ্রিজে রেখে দিতে পারেন। ঠান্ডা শসা গরমে স্বস্তির পাশাপাশি গরমে অতিরিক্ত ঘামের কারণে সৃষ্ট পানিশূন্যতা পূরণে সাহায্য করবে। এতে শরীরের অতিরিক্ত মেদও কমবে।
পরিমিত ও স্বাস্থ্যকর খাবার : খাবারে অত্যন্ত সচেতন থাকতে হবে। গরমের কারণে এমনিতেই আমরা প্রতিনিয়ত হাঁপিয়ে উঠছি। এরমধ্যে অতিরিক্ত খাবার খেলে অস্বস্তি বেড়ে যাবে আরো কয়েকগুণ। মাংস জাতীয় খাবার যথাসম্ভব কম খেতে হবে। কাঠাল, মধু বা এ জাতীয় যেসব খাবার খেলে গরম বেড়ে যায় সেসব এড়িয়ে চলতে হবে।
ব্যায়াম : প্রতিদিন কিছু সময় অন্তত হালকা ব্যায়াম করতে হবে। হাঁটাহাঁটি, সামান্য দৌঁড়াদৌঁড়ি, যোগ ব্যায়াম বা শ্বাসের ব্যায়াম করা যেতে পারে। সারাদিনের ব্যস্ততার ফাঁকে কিছু সময় অন্তত প্রকৃতির আলো বাতাস গ্রহণ করতে হবে। বিশেষ করে সকালের সূর্য গরম হওয়ার আগে কিছু সময় বাইরে হাঁটাহাঁটি করতে হবে। খুব ভালো হবে ফজরের পর ভোরবেলায় হাঁটাহাঁটি করা।
শাহনূর শাহীন, লেখক ও সাংবাদিক
স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে প্রাণে
/এসএস