আত্মহত্যা কমাতে মানসিক স্বাস্থ্যে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর গুরুত্বারোপ

0
9

হতাশা, আত্মহত্যার মতো দূর্ঘটনা কমাতে মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতি গুরুত্বারোপ করেছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক স্বপন।

জাহিদ মালেক বলেন, দেশে তরুণরা হতাশাগ্রস্ত হয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছেন এ জন্য অভিভাবক, পরিবার, সমাজ সবাইকে সচেতন হতে হবে।

রাজধানীর লা মেরিডিয়ান হোটেলে ৭ নভেম্বর রোববার সন্ধ্যায় মানসিক স্বাস্থ্যবিষয়ক সংগঠন ‘লেটস টক মেন্টাল হেলথ’-এর তৃতীয় বার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। এসময় দেশে করোনা আক্রান্তে মৃত্যুর সংখ্যা শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনার প্রত্যয়ও ব্যক্ত করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী।

জাহিদ মালেক বলেন, ‘সভ্যতার শুরুতে মানুষ সংক্রামক ব্যাধিতে আক্রান্ত হতো। ওষুধ, টিকায় সেগুলো নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। এরপর অসংক্রামক রোগে আক্রান্ত হওয়া শুরু হয়। হার্ট অ্যাটাক, ডায়াবেটিস বাড়তে শুরু করে। এখন মনোরোগ জরুরি বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।’

মন্ত্রী বলেন, ‘দেশে ছেলেদের তুলনায় মেয়েরা বেশি আত্মহত্যা করে। সারা বিশ্বে বয়স্করা আত্মহত্যায় এগিয়ে থাকলেও আমাদের দেশে তরুণরাই বেশি আত্মহত্যা করে। অন্যান্য দেশে আত্মহত্যায় ছেলেরা এগিয়ে থাকলেও আমাদের দেশে মেয়েরা বেশি এগিয়ে। এর যেসব কারণ আমরা দেখে থাকি, তার মধ্যে মূল কারণ হিসেবে মাদকের ব্যবহারকেই দেখি।’

মন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের দেশে আত্মহত্যার হার এত না হলেও প্রতিবছর ১০ থেকে ১৫ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়। অন্যান্য দেশে আরো বেশি। বিশ্বে ১ দশমিক ৪ শতাংশ মানুষ আত্মহত্যা করে। জাপানসহ আরো কয়েকটি দেশে এর হার ৫ শতাংশ।’

জাহিদ মালেক বলেন, ‘একটা ছেলে বা মেয়ে স্কুলে চান্স পেল না, ভার্সিটিতে ভর্তি হতে পারল না, সে হতাশায় আত্মহত্যা করে বসল। এমনটাই আমরা দেখতে পাই। এ ছাড়া আরেকটা বড় কারণ দেখি ড্রাগসের ব্যবহারকে। তরুণ-তরুণীরা হতাশা থেকে মাদক সেবন করে।’

মন্ত্রী আরো বলেন, ‘দেশে পর্যাপ্ত সাইকিয়াট্রিস্ট ও সাইকোলোজিস্ট নেই। আমাদের দেশে মানসিক স্বাস্থ্যবিষয়ক প্রতিষ্ঠানও কম। জনসংখ্যা বিচারে প্রয়োজনের তুলনায় মানসিক স্বাস্থ্যবিষয়ক চিকিৎসকের সংখ্যা অনেক কম।’

বিষয়টি সরকার গুরুত্ব দিয়ে দেখছে বলে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘মানসিক স্বাস্থ্য খুব জরুরি বিষয়। কিন্তু আমরা ইগনোর করে আসছি। এটাতে আমাদের গুরুত্ব দিতে হবে।’

এসময় মানুষ অনেক চাপে থাকে বলে টিভিতে বিনোদনমূলক অনুষ্ঠান প্রচারের আহ্বান জানান তিনি।

সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, ‘বেঁচে থাকলে স্যাডনেস, ড্রিপ্রেশন সব কেটে যাবে। কিন্তু বেঁচে না থাকলেই কিছুই নেই। তাই সবাইকে যথাযথভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। যত দ্রুত সম্ভব সবাইকে টিকা নিয়ে নিতে হবে।’

বিশেষ বক্তা হিসেবে কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অফ বাংলাদেশের বোর্ড অফ ট্রাস্টিজ চৌধুরী রাহিব সাফওয়ান মানসিক স্বাস্থ্যসেবার নানা দিক তুলে বলেন, ‘আমি তরুণদের দৃষ্টিকোণ থেকে কথা বলতে চাই। আপনাদের বলতে চাই যে, আপনার সন্তান কিংবা আপনার ছোট ভাই-বোনেরা সম্ভবত যে চিন্তা ভাবনার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে বা ভবিষ্যতে যেতে চায়, তা নিয়ে আপনাদের সঙ্গে কথা বলতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে না। কারণ সংকটের কথা তারা খোলাখুলি বলতে পারে না। মনের কথা বলতে তখন তারা বেছে নেয়, সমবয়সী কাউকে।’

শিশু-কিশোররা যাতে পরিবারের বড়দের সঙ্গে মন খুলে কথা বলতে পারে সেই পরিবেশ তৈরির আহ্বান জানান রাহিব।

তিনি বলেন, ‘বর্তমানে ২০ বছরের কম বয়সী পুরুষদের মৃত্যুর দ্বিতীয় প্রধান কারণ হিসেবে আত্মহত্যাকে চিহ্নিত করা হয়েছে। আমরা বর্তমানে একটি মারাত্মক পথের দিকে যাচ্ছি। মাত্র এক দশকে তরুণদের আত্মহত্যার হার ৬০ শতাংশ বেড়েছে।’

করোনাকালে বাংলাদেশে আত্মহত্যা বেড়েছে জানিয়ে রাহিব বলেন, ‘আপনি ভাবতে পারেন- আপনার সন্তানকে আপনি চেনেন, জানেন। তারা এ ধরনের কাজ কখনও করবে না। কিন্তু আমি বলতে চাই, কেউই এর বাইরে নয়। বিষণ্নতা বা উদ্বেগ বা আত্মহত্যার চিন্তার বিরুদ্ধে কোনও ভ্যাকসিন নেই। বাবা-মায়েরা যদি সন্তানের কথাগুলো মনোযোগ দিয়ে শোনেন তাহলে আত্মহত্যার প্রবণতা অনেকটা কমে আসবে।’

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ‘লেটস টক মেন্টাল হেলথ’-এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা আনুশা চৌধুরী। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করে মেহতাব খানম।

আরো পড়ুন…
ওসিডি হলে করণীয় কী? : (চতুর্থ ও শেষ পর্ব)

স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে প্রাণে 

“মনের খবর” ম্যাগাজিন পেতে কল করুন ০১৮ ৬৫ ৪৬ ৬৫ ৯৪

/এসএস

Previous articleমহাকালের যাত্রী হলেন ডঃ অ্যারন বেক
Next articleসিলেটে `Case Based Learning Exercise in Psychiatry’ বই বিতরণ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here