মহামারিতে মন সুস্থ রাখতে করণীয়

মহামারিতে মন সুস্থ রাখতে করণীয়

করোনা মহামারি শুরুর দিকে আমরা সবাই খানিকটা কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়েছিলাম। সবার সাজানো-গোছানো দৈনন্দিন জীবনে হঠাৎ যেন এক ছন্দপতন। অফিস বন্ধ, ব্যবসা বন্ধ, বাচ্চাদের স্কুল নেই, আত্মীয়-বন্ধু কারো সঙ্গে আড্ডা নেই, আমি কারো বাড়ি যেতে পারব না, কেউ আমার বাড়ি আসতে পারবে না। ভবিষ্যতের সব পরিকল্পনা এক নিমিষেই হয়ে পড়েছে অর্থহীন।

উচ্চবিত্ত থেকে নিম্নবিত্ত, বড়ো থেকে ছোটো সকলেরই একই দশা। এ যেন বিনা অপরাধে এক অনির্দিষ্টকালের বন্দি জীবন। করোনা যখন দেশের কেবল গুটিকয়েক মানুষের শরীরে আঘাত করেছে তখনও আঘাত করেছে দেশের কোটি মানুষের মনে।

যত দিন গড়িয়েছে তত বেড়েছে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা আর তারচেয়ে বেশি বেড়েছে আমাদের মনের শঙ্কা। সুস্থ থাকতে হলে ঘরে থাকতে হবে আবার বেঁচে থাকার প্রয়োজনে জীবিকার জন্য ঘর থেকে বের হতে হবে। কত দিন চলবে এই অবস্থা কেউ সঠিক জানে না। কী করা উচিত আর কী করা উচিত না-এইসব নানাবিধ ভাবনায় অনেকেই আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়ছেন।

আর তাই শুধু আমাদের দেশেই নয়, বরং সারা বিশ্বের প্রায় সব দেশেই করোনা মহামারি শুরুর পর থেকে মনোরোগ বিশেষজ্ঞদের কাছে দুশ্চিন্তা, আতঙ্কগ্রস্ততা আর বিষণ্ণতা নিয়ে অনেক নতুন রোগী যেমন আসছেন  তেমনি যাদের আগে থেকেই এই সমস্যাগুলো ছিল তারাও আসছেন ‘তাদের সমস্যা বাড়ছে’ এই অভিযোগ নিয়ে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং জাতিসংঘ ইতিমধ্যেই করোনা মহামারির পর সারা বিশ্বে মানসিক স্বাস্থ্য বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছে।

অতীতে যে মহামারিগুলো হয়েছিল সেগুলোর পরবর্তী সময়ের ইতিহাসও প্রায় একইরকম। আর তাই শরীরকে রক্ষা করা যতটকু জরুরি ঠিক ততটকু ই জরুরি নিজের মনকে মহামারির আঘাত থেকে রক্ষা করা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা মহামারিকালে মনের যত্নের জন্য বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক নির্দেশনা দিয়েছে। আসুন সেগুলো সংক্ষেপে জেনে নিই-

  •  কেবল নির্ভযোগ্য উৎস থেকে মহামারি সংক্রান্ত তথ্য গ্রহণ করুন।
  • সবসময় মহামারি বা করোনা সংক্রান্ত খবর দেখবেন না।
  • নিজের দৈনন্দিন জীবনের একটা বিকল্প রুটিন তৈরি করুন যেই রুটিনে আপনার ঘুম, খাওয়া, ঘরে বসে অফিসের কাজ, পরিবারকে সময় দেয়া, সন্তানকে সময় দেয়া, ফোনে আত্মীয়-বন্ধর খবর নেয়া, হালকা শারীরিক ব্যায়াম, ধর্মকর্ম, বই পড়া কিংবা গানবাজনা করা, ঘরের কাজ ইত্যাদি সবকিছুই যথাযথভাবে থাকবে।
  • সোশ্যাল মিডিয়া, ইন্টারনেট ব্যবহারে সতর্ক থাকন। ভূল তথ্য বা গুজব নিজেও ছড়াবেন না, অন্যেরটাও বিশ্বাস করবেন না।
  •  একনাগাড়ে ২০-৩০ মিনিটের বেশি মোবাইল, ট্যাব, ল্যাপটপ ইত্যাদি ব্যবহার করবেন না। যদি অফিসের কাজ বা অন্য কোনো জরুরি প্রয়োজনে করতেই হয় সেক্ষেত্রে নির্দিষ্ট সময় পর পর বিরতি নিন।
  • ফোনে বা অনলাইনে আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধুদের খবর নিন, সামাজিক যোগাযোগ বৃদ্ধি করুন।
  • সন্তানকে সময় দিন এবং আপনার মতো করে সন্তানকেও একটি রুটিন অনুযায়ী চলতে সাহায্য করুন। আপনার মতো আপনার সন্তানও যে মহামারি, অনিশ্চয়তা, আপনার অর্থনৈতিক সমস্যা ইত্যাদি নিয়ে চিন্তিত বা আতঙ্কিত হতে পারে সেই বিষয়টি মাথায় রাখন আর তাকে সাহস জোগানোর চেষ্টা করুন।
  • বিভিন্ন মাধ্যমে সরকার কর্তৃক প্রচারিত স্বাস্থ্যবিধিগুলো গুরুত্বের সঙ্গে মেনে চলুন।
  • নিজের সাধ্য অনযায়ী অন্যকে অর্থ বা খাবার দিয়ে কিংবা অন্য কোনো কাজে সাহায্য করুন।
  • নিজে আক্রান্ত হওয়ার ভয়ে অন্যকে প্রয়োজনীয় সাহায্য করা থেকে বিরত থাকবেন না।
  • আশেপাশে কেউ করোনায় আক্রান্ত হলে অথবা আক্রান্ত হতে পারে এমন সন্দেহ হলে তার প্রতি কোনোপ্রকার বিরূপ আচরণ করবেন না।
  • চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রতি শ্রদ্ধা প্রকাশ করুন এবং তাদের মনোবল বাড়াতে সাহায্য করুন।

আতঙ্কিত নয়, বরং আসুন, সবাই সচেতন হয়ে দৃঢ় মনে মহামারি মোকাবেলা করি।

সূত্র: লেখাটি মনের খবর মাসিক ম্যাগাজিনে প্রকাশিত।

স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে প্রাণে

Previous articleসমালোচনার মুখে পড়লে যা করতে পারেন
Next articleবৃদ্ধ বয়সে শ্রবণশক্তি কমলে বিষণ্ণতায় ভোগার ঝুঁকি বাড়ে:গবেষণা
ডা. শাহরিয়ার ফারুক
রেজিস্ট্রার, মনোরোগবিদ্যা বিভাগ, শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, বগুড়া

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here