প্রশ্নঃ আমি অনুপ কুমার বিশ্বাস। ২০০৬ সাল থেকে মানসিক সমস্যায় ভুগছি। এরমধ্যে আমি ঝিনাইদহ, ঢাকা, কলকাতা, ব্যাংলোর, ভেল্লোর, চেন্নাই এর ডাক্তারদের সঙ্গে আমার সমস্যাটি শেয়ার করেছি। এতদিন ভুল চিকিৎসা হইছে। গত দুর্গাপূজার সময় যাই চেন্নাই অ্যাপোলো হসপিটালে। সেখানের নিউরোলজি বিভাগ বলে এটি মানসিক সমস্যা। আমার সমস্যা মূলত মুখমণ্ডলে ব্যথা এবং দাঁতে ব্যথা। একটু মানসিক এবং শারীরিক চাপ নিলে গরম লাগে এবং কপাল থেকে ঘাম ঝড়ে, ঘুম হয়না। হাত এবং পায়ে যেখানে চুল আছে সেখানে চুলকায়। এক বছর ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসাধীন থেকে প্রায় সুস্থ হয়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু এখন আবার আগের মতো সমস্যা দেখা দিচ্ছে। মেডিসিনে খুব একটা কাজ হচ্ছেনা। এই এক বছর সেট্রালিন, অমিট, ইনডেভার, ঘুমের ওষুধ খেয়েছি। এখনও চলছে, কিন্তু কাজ হচ্ছে না। বরং আগের মতো বেশি হচ্ছে।
স্যার, আমার ব্যাথা কি কখনো ভালো হবে? গরম লাগা কি বন্ধ হওয়া সম্ভব? স্যার, প্লিজ আমাকে সাহায্য করুন। আমি মরে যাচ্ছি।
ডা. শাহানা পারভীন: অনুপ কুমার, আপনার প্রশ্নের জন্য ধন্যবাদ। এটি আসলেই দুঃখজনক যে আপনি দীর্ঘ বারো বছর যাবৎ এ সমস্যায় ভুগছেন। যা হোক ভালো বিষয় যে, আপনি নিউরলজি বিভাগের শরনাপন্ন হয়েছেন এবং তারা আপনাকে মানসিক চিকিৎসা নেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। আপনার ব্যথা কি সারাক্ষন থাকে অথবা সবসময় একই মাত্রায় হয়? কিসে বাড়ে বা কমে উল্লেখ থাকলে সুবিধা হত। যেহেতু শারীরিক অথবা মানসিক চাপে পড়লে আপনার গরম লাগে, কপাল থেকে ঘাম ঝরে, ঘুম কমে যায় এবং হাত ও পায়ের পশমযুক্ত স্থানে চুলকানো শুরু হয় তা থেকে আমরা ধরে নিতে পারি আপনি খুবই উদ্বেগ প্রবণ একজন মানুষ।
ইতোমধ্যে আপনি কিছু ঔষধ সেবন করেছেন এবং কিছুদিন ভালো ছিলেন বলেও উল্লেখ করেছেন। আপনার বর্ণনা থেকে যেটুকু ধারনা করা যাচ্ছে তা হল আপনি ‘সোমাটিক সিমটম ডিজঅর্ডার উইথ প্রিডমিনেন্ট পেইন’ নামক রোগে ভুগছেন। এর মধ্যে আপনি ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ থেকে যেসব ঔষধ খেয়েছেন তা আপনার অহেতুক উদ্বেগ কমাতে সাহায্য করবে। কিন্তু প্রথম যে বিষয়টি আপনি মেনে নিতে হবে তা হচ্ছে আপনার এ সমস্যাগুলো কোন শারীরিক কারনে হচ্ছেনা। বরং এ লক্ষন গুলো নিয়ে আপনার অহেতুক উদ্বেগ এবং অতিমাত্রায় সচেতনতার কারনে তা বার বার ফিরে আসছে। হ্যাঁ এটি সম্পূর্ন ভালো হয়ে যেতে পারে। জীবনে কোন সুনির্দিষ্ট চাপ থাকলে তা কমানো/সমাধানের পথ খুঁজুন অথবা মেনে নিন। আপনি ঔষধের পাশাপাশি সাইকথেরাপি নিন এবং অসুস্থ্যতা বিষয়ে আপনার দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন আনুন।