সমস্যা :
আমি একটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে এমবিএ পড়ছি। ছোটবেলা থেকেই আমি নিজের কাজ নিজে করতে পছন্দ করি। যেমন-আমার বিছানা করা, কাপড় ধোয়া, কাপড় চোপড় গুছিয়ে রাখা, পড়ার টেবিল গোছানো ইত্যাদি। ঢাকাতে আমাকে মেসে থেকে পড়াশুনা করতে হয়। এজন্য অনেকের সাথে রুম শেয়ার করতে হয়। কিন্তু সমস্যা হলো আমার রুমমেটরা খুব অগোছালো। ইদানিং আমার বিছানায় কেউ বসলে আমার অস্বস্তি লাগে। বিছানার চাদর না ধোয়া পর্যন্ত আমার খুঁতখুঁতে ভাব যায় না। এমনকি আমার থালা-বাসন, কাপড়-চোপড়ও বার বার ধুতে হয়। গোসল করতেও অনেক সময় লাগে। এসব করতে করতে আমার অনেক সময় লেগে যায়। এজন্য আমার ক্লাসে যেতে, পরীক্ষার সময় হলে যেতে অনেক দেরি হয়। এতে করে আমার পড়াশুনা, কাজকর্মেরও অনেক ক্ষতি হচ্ছে। আমি এখন কি করতে পারি সমাধান দিবেন।
পরামর্শ :
আপনার বেশি বেশি ধোয়া, বেশি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকার খুঁতখুঁতে স্বভাব আছে। এ স্বভাবের কারণে কাজ করতে সময় বেশি লেগে যায়। স্বাভাবিকের তুলনায় প্রত্যেকটি কাজে আপনার সময় বেশি লাগে। এটি এখন অসুস্থতার পর্যায়ে চলে গেছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে সমস্যা ক্রমশ আরো বাড়তে থাকবে। তাই আপনার এই পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার স্বভাবটা দূর করার জন্য বা সূচীবায়ু রোগটা কমিয়ে আনার জন্য আপনাকে প্রথমত: একটা সিডিউল বা চার্ট তৈরি করতে হবে। এর মাধ্যমে আপনি প্রতিদিন আপনার ধোয়ার অভ্যাসটা কমাবেন। তাহলে আপনার সময় কম লাগবে এবং আপনার মনের ভিতরে যে অস্বস্তি আছে সেটা কমবে।
দ্বিতীয়ত: বন্ধু-বান্ধব বা রুমমেটরা আপনার বিছানায় বসলে আপনার অস্বস্তি লাগে। যদিও যে কেউ কারো বিছানায় বসা ঠিক না, কিন্তু কেউ আপনার বিছানায় বসলে সেটা আপনার জন্য সুবিধা হবে। অর্থাৎ কেউ আপনার বিছানায় বসলে আপনি সেই চাদর পরিষ্কার না করে সেখানেই থাকার চেষ্টা করবেন। তাই বলে চাদর ময়লা হলে ধুঁতে পারবেন না এমন নয়। কিন্তু আপনার বিছানায় কেউ একজন বসল আর আপনি চাদরটা উঠিয়ে ধোঁয়ে ফেললেন এতে আপনার রোগ প্রশমন না হয়ে বরং আরো বাড়তে থাকবে। কাজেই কেউ যদি আপনার বিছানায় বসে তাহলে সাথে সাথে সেই চাদরটা তুলে ফেলা বা ধুয়ে ফেলার কোনো দরকার নেই বা সেটা উচিৎ হবে না। বরং সেখানেই আপনি থাকার অভ্যাস করুন। এটা বিহেভিয়ার থেরাপীর মতো কাজ করবে এবং আস্তে আস্তে আপনার বেশি ধোয়ার অভ্যাস বা খুঁতখুঁতে স্বভাব বা বেশি পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার স্বভাব সেটা কমাবে।
অতএব আপনার প্রতি পরামর্শ হলো যে যে বিষয়গুলো আপনাকে কষ্ট দেয় আপনি সেটার একটা তালিকা করেন এবং সবচেয়ে বেশি যে সমস্যাটা হয় সেটা আস্তে আস্তে কমিয়ে আনার চেষ্টা করুন। এভাবে সবগুলো কমানোর চেষ্টা করুন। প্রথমে এই কাজগুলো করতে একটু অসুবিধা হবে কিন্তু আস্তে আস্তে আপনি উপকার পাবেন। সবচেয়ে ভাল হয় একজন মনোরোগ বিশেষজ্ঞকে দেখান অথবা যারা বিহেভিয়ার থেরাপী দিয়ে থাকে তাদের পরামর্শ গ্রহণ করুন।
পরামর্শ দিচ্ছেন,
প্রফেসর ডা. গোলাম রব্বানী
দৃষ্টি আকর্ষণ- মনেরখবর.কম এর প্রশ্ন-উত্তর বিভাগে, মানসিক স্বাস্থ্য, যৌন স্বাস্থ্য, মাদকাসক্তি সহ মন সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ে আপনার কোনো জানার থাকলে বা প্রশ্ন থাকলে বা বিশেষজ্ঞ পরামর্শ দরকার হলে question@www.monerkhabor.com এই ইমেলের মাধ্যমে প্রশ্ন পাঠাতে পারেন।