হস্তমৈথুন নিয়ে প্রচলিত ভুল ধারণা

যৌন অভিজ্ঞতার প্রথম পর্বটি অনেকেরই শুরু হয় হস্তমৈথুনের মধ্য দিয়ে। একটা ভালোলাগা থেকে নিজেকে স্পর্শ করতে করতেই পথ চলাটা শুরু হয়। একটা ঘোরের মধ্যেই কাটতে থাকে সময়গুলো । তারপর ঘোর কিছুটা কমে এলে খোঁজ খবর নেওয়া শুরু হয় ।

যৌন অভিজ্ঞতাটা স্বাস্থ্যগত দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ । কারণ এই সময়ই হস্তমৈথুন সম্পর্কে প্রচলিত কিছু কথা বা বিশ্বাস মনোজগতে ঢুকে পড়ে। যা পরবর্তিতে তার যৌনজীবনকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। সেই বিশ্বাসগুলোর কয়েকটি এখানে তুলে ধরছি।

১. হস্তমৈথুনে যৌনক্ষমতা কমে যায়। যারা হস্তমৈথুন করে তারা পরবর্তী জীবনে দ্রুত বীর্যপাত এবং ধ্বজভঙ্গ রোগে ভোগে।
২. ধাতু ক্ষয় হয়।
৩. বীর্য পাতলা হয়ে যায়।
৪. চোখের জ্যোতি কমে যায়।
৫. স্মৃতিশক্তি কমে যায়।
৬. যে হাত দিয়ে হস্তমৈথুন করা হয় সেই হাতের বা শরীরের সেই পার্শ্বের জোর কমে যায়।
৭. যে হাত দিয়ে হস্তমৈথুন করা হয় সেই হাতের তালুতে পশম গজায়।
৮. প্রতি ৭০ বা ৮০ ফোটা রক্ত থেকে বীর্য তৈরি হয়। হস্তমৈথুনের ফলে সেই বীর্যের অপচয় হয়।
৯. শরীরের শক্তি কমে যায়।
১০. পুরুষাঙ্গের রগ ঢিলা হয়ে যায়।
১১. পুরুষাঙ্গ বাঁকা হয়ে যায়।
১২. গাল ভেঙে যায় , চোয়াল বের হয়ে আসে , চোখ কোটরে বসে যায়।

ঘুরে ফিরে বারবার এ প্রশ্নগুলোরই মুখোমুখি হতে হয় আমাদের। আমরা যারা যৌন স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করি তারা এ প্রশ্নগুলোর উত্তর দেই। বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা দেই কিন্তু তাতেও সবার যে দুশ্চিন্তা কমে এমন নয়। মূলত তাদের শারীরিক সমস্যাগুলো দুশ্চিন্তার জন্যই হয়। কারণ হস্তমৈথুনে উপরোল্লিখিত সমস্যাগুলো হয় না। অন্ততঃ গবেষণায় তেমন কিছু পাওয়া যায়নি। গবেষণা মানেই হল পর্যবেক্ষণ। তাও আবার যেমন খুশি তেমন নয়। একটি বিশেষ পদ্ধতিতে এমন ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হয় যেন চাইলে অন্য কেউ ঐভাবে পর্যবেক্ষণ করতে পারবে এবং পর্যবেক্ষণ করলে সেও ঐ ফলাফলই পাবে। তাই গবেষণা মানে খেয়াল খুশি মতো চিন্তা করা নয় বরং দেখতে দেখতে সত্যটাকে খুঁজে বের করা। তাও আবার একজন মানুষকে নয় হাজারটা মানুষকে দেখা। সেধরনের পর্যবেক্ষণেই দেখা গেছে হস্তমৈথুন উপরোল্লিখত সমস্যাগুলো করে না। তবে মানুষ বছরের পর বছর ধরে এ ধরনের আশঙ্কাই করে আসছে। আর আশঙ্কাগুলো প্রচলিত বিশ্বাস হয়ে সমাজে টিকে আছে ভুতের ভয়ের মত।

এবার বৈজ্ঞানিক গবেষণায় প্রমাণিত হস্তমৈথুনের কিছু ইতিবাচক দিক তুলে ধরছি-

প্রোস্ট্রেট গ্ল্যান্ড থেকে বীর্য তৈরি হয়। বীর্যের প্রায় ৭০% প্রোস্ট্রেটিক ফ্লুইড দিয়ে গঠিত। এই ফ্লুইড ভিতরে জমে থাকলে প্রোস্ট্রেট ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। যারা হস্তমৈথুন করে তাদের এ ধরনের ক্যান্সার হওয়ার ঝুকি কমে যায়।

হস্তমৈথুনের ফলে যৌনতার শারীরিক এবং মানসিক চাপ কমে। তবে এটা কখনই যৌন মিলনের সমতুল্য নয়। যৌনমিলনে মানুষ অনেক বেশি যৌন আনন্দ পায়। সম্প্রতি গবেষণায় দেখা গেছে যৌনমিলনের পর প্রোল্যাক্টিনের মাত্রা হস্তমৈথুনের তুলনায় বেশি। যা প্রমান করে যৌনমিলনে আনন্দ বেশি। তবে নিরাপদ যৌনতার কথা বিবেচনা করলে অনিরাপদ যৌন সম্পর্কের চেয়ে হস্তমৈথুন অনেক বেশি স্বাস্থ্যকর। আর একারণেই মে মাসকে হস্তমৈথুনের মাস হিসাবে উদযাপন করা হয়।

হস্তমৈথুন যৌন পারদর্শিতা বাড়াতে সাহায্য করে। কারণ যারা হস্তমৈথুন করে তারা তাদের শরীরের যৌন প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে ভালো জানে। তাদের পেলভিক মাসলও সুগঠিত হয়।

হস্তমৈথুনে পুরুষাঙ্গে রক্ত চলাচল বাড়ে ফলে অক্সিজেন সরবরাহ বেশি হয়। এই অক্সিজেন কোষকলাকে সজীব রাখে যা লিঙ্গের আকার বড় রাখতে সাহায্য করে।
হস্তমৈথুন সম্পর্কে বিভিন্ন ধর্মের দৃস্টি ভঙ্গী বিভিন্ন রকম। কোনো ধর্মে এটাকে ইতিবাচক ভাবে দেখে আবার কোনো ধর্ম নেতিবাচক ভাবে দেখে। শুধুমাত্র স্বাস্থ্যগত দিকটাই এখানে তুলে ধরা হলো।


প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব। মনের খবরের সম্পাদকীয় নীতি বা মতের সঙ্গে লেখকের মতামতের অমিল থাকতেই পারে। তাই মনের খবরে প্রকাশিত কলামের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় নেবে না কর্তৃপক্ষ।

Previous articleবিশ্বায়নের যুগে মানসিক স্বাস্থ্য; বাড়ছে মানসিক টানাপোড়েন মুক্তির উপায়
Next articleশিশুর শীতকালীন অসুখের ব্যাপারে সচেতন থাকুন
ডা. এস এম আতিকুর রহমান
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, মনোরোগবিদ্যা বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়

1 COMMENT

  1. হস্থমৈথুন যে আসলে লাভ না ক্ষতি তা আজও বুজতে পারলাম না।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here