সোশ্যাল মিডিয়া নেশাদ্রব্য সাপ্লাইকে সহজ করছে

0
7
সোশ্যাল মিডিয়া নেশাদ্রব্য সাপ্লাইকে সহজ করছে

ডা. দিল মোহাম্মদ সাজ্জাদুল কবির সবুজ
রেজিস্টার, মনোরোগবিদ্যা বিভাগ, ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল।

২০২৪ সালের এপ্রিল মাসের একটি রিপোর্ট অনুযায়ী বর্তমানে পৃথিবীতে ৫.৪৪ বিলিয়ন মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করে, যার মধ্যে ৬২.৬ শতাংশ লোক সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারী। জনপ্রিয় সোশ্যাল মিডিয়ার মধ্যে ফেইসবুক, ইউটিউব, হোয়াটসঅ্যাপ, টিকটক, ইন্সটাগ্রাম এবং স্ন্যাপচ্যাট ইত্যাদি উল্লেখ্য। সোশ্যাল মিডিয়াতে মানুষ নিজেদের দৈনন্দিন অভিজ্ঞতা, যেমন ভ্রমণ করা, মাছ ধরা, খেলাধুলা ইত্যাদির ছবি এবং ভিডিও অন্যদের সাথে শেয়ার করে। সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে সারা পৃথিবীতে আমরা সবাই একে অপেরের সাথে জড়িয়ে আছি। এটি আমাদের দৈনন্দিন জীবনে প্রতিনিয়তই প্রভাব ফেলছে। আমরা সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করি ঠিকই কিন্তু এটি আমাদের ওপর যেসব নেতিবাচক প্রভাব ফেলে সে সম্পর্কে আমরা খুব কম সচেতন। সাধারণভাবে সোশ্যাল মিডিয়া একটি ক্ষতিবিহীন বিনোদন এবং বাস্তব জীবন থেকে ভিন্ন জায়গা মনে হলেও এর সাথে মাদক সেবনের একটি সম্পর্ক রয়েছে। গবেষণায় দেখা গেছে যে, সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার যত বাড়ছে মাদকদ্রব্য তত বেশি তরুণ সমাজের কাছে সহজলভ্য হচ্ছে। বিভিন্নভাবে সোশ্যাল মিডিয়া নেশাদ্রব্য সাপ্লাইয়ে সহায়ক ভ‚মিকা পালন করে থাকে। নিচে কয়েকটি উপায় সম্পর্কে আলোকপাত করা হলো:

সেলিব্রেটিদের অনুকরণ:

যুব সমাজ সাধারণত তাদের বড়োদের, বিশেষ করে শিক্ষক, পিতা-মাতা এবং সেলিব্রিটিদের অনুসরণ করে। যদি এ সকল মানুষ নেশাদ্রব্য গ্রহণ করে তবে তারাও এটাকে গ্রহণযোগ্য মনে করে। সেলিব্রিটিরা একদিকে যেমন মাদক নিরোধে সচেতনতা তৈরি করতে পারেন তেমনি নেশাদ্রব্য গ্রহণেও বিপুলসংখ্যক মানুষকে অনুপ্রাণিত করতে পারেন। বিভিন্ন সেলিব্রেটি এবং বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ নেশাদ্রব্য গ্রহণকে জাঁকজমকপূর্ণ জীবনযাপনের একটি ধরন হিসেবে মানুষের কাছে উপস্থাপন করেন এবং যোগাযোগ মাধ্যমে প্রায়ই মাদক নেওয়া এবং উপভোগ করার ছবি, ভিডিও ইত্যাদি শেয়ার করেন। যেহেতু তাদের লক্ষ লক্ষ ফলোয়ার রয়েছে তাই এসব নিউজ মুহূর্তেই সবার মাঝে ছড়িয়ে যায়। এসব পোস্ট এবং স্টোরিগুলো মানুষের মনে এমন ধারণা তৈরি করে যে এগুলো খুব স্বাভাবিক ব্যাপার এবং ক্ষতিকারক নয়। এভাবে মানুষ সহজেই তাদের আইডল দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে নেশা দ্রব্য গ্রহণ শুরু করে।Magazine site ads

সঙ্গী সাথীদের প্রভাব :

কিশোররা সাধারণত তাদের সঙ্গী সাথী দ্বারা ব্যাপকভাবে প্রভাবিত হয় এবং একে অপরকে অনুসরণ করে। বন্ধুদের সাথে নিজেকে মানিয়ে চলা এবং বন্ধুদের মধ্যে নিজের গ্রহণযোগ্যতাকে সামাজিক মাধ্যমে অনেক গুরুত্বের সাথে দেখা হয়। সোশ্যাল মিডিয়ার বিভিন্ন স্ট্যাটাসে লাইক, হার্ট এবং শেয়ার পাওয়ার আশায় অনেকেই ব্যতিক্রমধর্মী আনন্দ-উদ্দীপনা করে থাকে যা দেখে মানুষ অনুপ্রাণিত হয়। উদাহরণস্বরূপ যখন কেউ তাদের বন্ধুদের নেশা গ্রহণ করে আনন্দ উল্লাস করতে দেখে তখন তারাও সেটা অনুসরণ করে জনপ্রিয় হবার চেষ্টা করে এবং বন্ধুদের মাঝে গ্রহণযোগ্যতা পাবার চেষ্টা করে। এভাবেই তাদের মধ্যে মাদক গ্রহণের প্রবণতা প্রবণতা বৃদ্ধি পায়।

নেশাদ্রব্য ক্রয় বিক্রির সহজ মাধ্যম :

অনলাইনে মাদক ব্যবসা বর্তমানে মাদক নিয়ন্ত্রণের জন্য একটি নতুন চ্যালেঞ্জ। সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটগুলো মাদক বিষয়ে বিভিন্ন তথ্য জানার ক্ষেত্রে সহজ প্ল্যাটফর্মে পরিণত হয়েছে। বিগত পাঁচ বছরে অনলাইনে মাদক ব্যবসা অনেক বেড়ে গেছে। গার্ডিয়ান পত্রিকার প্রতিবেদন অনুযায়ী বর্তমানে ইনস্টাগ্রাম এবং স্ন্যাপচ্যাট ব্যবহার করে মাদক কেনাবেচার পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। সাধারণত ফেসবুক এবং ইনস্টাগ্রামে মাদক বিষয়ে অন্বেষণ করলে খুব একটা তথ্য পাওয়া যায় না কারণ এখানে মডারেশন করা থাকে। তবে বিভিন্ন সিক্রেট গ্রপে মাদক কেনা-বেচা হয়। তুলনামূলকভাবে কম নিয়ন্ত্রিত থাকার কারণে স্ন্যাপচ্যাট খুব সহজেই মাদক বিক্রির মাধ্যম হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এখানে মাদক কারবারিদের বিভিন্ন প্রোফাইলে মাদকের ধরন অনুযায়ী বিভিন্ন সংকেত থাকে যাতে সহজেই মাদকের ধরন বোঝা যায়। মাদক ব্যবসায়ীরা মাদককে সহজলভ্য করার জন্য নতুন নতুন উপায় উদ্ভাবন করে। ড্রাগ ডিলারগণ বিভিন্ন নামে-বেনামে অ্যাকাউন্ট করে ঝুঁকিতে থাকা অপ্রাপ্তবয়স্ক মানুষের কাছে হ্যাশট্যাগ এবং ইমোজি ব্যবহার করে সহজেই পৌঁছাতে পারেন। বিভিন্ন প্রকার মেসেজ আদান-প্রদান করার মাধ্যমে ডিলার এবং ক্রেতার মাঝে যোগাযোগ করা হয়। সাংকেতিক ভাষা ব্যবহার করার কারণে কর্তৃপক্ষের জন্য এসব মনিটরিং এবং নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে পড়ে। তাছাড়া তারা বিকল্প যোগাযোগের মাধ্যম ব্যবহার করে যার মাধ্যমে ক্রেতাদের সাথে লেনদেন সম্পন্ন হয়। ফেসবুকের বিভিন্ন ফ্রেন্ড এবং প্রোফাইল সাজেশনেও মাদক ব্যবসায়ী থাকে যেখানে তাদের প্রোফাইলে মাদকের ধরন অনুযায়ী বিভিন্ন ছবি এবং সংকেত থাকে।

নেশাদ্রব্যের বিজ্ঞাপন:

অ্যালকোহল কোম্পানিগুলো বর্তমানে ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের উপর প্রচুর বিনিয়োগ করছে। বিশেষ করে ফেসবুক এবং টুইটারে তাদের বরাদ্দ এবং বিজ্ঞাপন দুটোই অনেক বেড়েছে যা বর্তমান প্রজন্মকে সহজে নেশাদ্রব্য গ্রহণে উৎসাহী করে তুলতে পারে।

নেশাদ্রব্য গ্রহণকারীদের মিডিয়া শেয়ারিং :

সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারীগণ বিজ্ঞাপন ছাড়াও অন্যান্য উপায়ে নেশাদ্রব্যের প্রচার করে থাকেন। বন্ধুরা মিলে ফেসবুকসহ বিভিন্ন মিডিয়াতে নেশাদ্রব্য গ্রহণের ইভেন্ট আয়োজন করে এবং পরবর্তিতে এসবের ছবি এবং ভিডিও শেয়ার করে যা মানুষকে মাদক সেবনে উদ্দীপ্ত করে। বিভিন্ন মাদক সেবন ক্লোজ গ্রপও রয়েছে যেখানে গ্রপ মেম্বারগণ গোপনে নেশাদ্রব্য বিষয়ে কথাবার্তা এবং তথ্য শেয়ার করে থাকেন।

  • এপোয়েন্টমেন্ট নিতে যোগাযোগ করুন-Prof. Dr. Shalahuddin Qusar Biplob
  • চেম্বার – MK4C -মনের খবর ফর কেয়ার
    মগবাজার রেইল গেইট।
    নাভানা বারেক কারমেলা, লিফটের ৩,
    (ইনসাফ কারাকাহ হাসপাতালের বিপরীতে)।
    চেম্বার সিরিয়াল – ০১৮৫৮৭২৭০৩০
  • আরো পড়ুন- নেশার চিন্তা থেকে মুক্তির উপায়
Previous articleশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যৌন হয়রানি
Next articleকর্পোরেট সাইকোলজিতে টেলিসাইকিয়াট্রি

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here