বিশ্ব ঘুম দিবস ২০২৫ উপলক্ষে ঢাকা মেডিকেল কলেজের মিলন অডিটোরিয়ামে একটি বিশেষ সেমিনারের আয়োজন করেন বাংলাদেশ স্লিপ সোসাইটি। এই অনুষ্ঠানে ঘুম ও ঘুমের বিভিন্ন ব্যাধি নিয়ে বিশেষজ্ঞরা প্রেজেন্টেশন উপস্থাপন করেন। এই বছরের বিশ্ব ঘুম দিবসের প্রতিপাদ্য ছিল: “Make sleep health priority”। অনুষ্ঠানে ঘুমের ব্যাধি ও তার বহুমাত্রিক প্রভাব নিয়ে আলোচনা হয়, যার মধ্যে ছিল নারকোলেপসি, শিশুদের ঘুমজনিত সমস্যা, কার্ডিওভাসকুলার লক্ষণ, শ্বাসপ্রশ্বাস সম্পর্কিত ব্যাধি, অপারেশনজনিত সমাধান, মানসিক স্বাস্থ্য এবং বাংলাদেশে এই বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তা। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ২৯ এপ্রিল মঙ্গলবার এই অনুষ্ঠানটি আয়োজন করা হয়।
ঘুমকে স্বাস্থ্য সচেতনতার একটি প্রধান অঙ্গ হিসেবে গুরুত্ব দেওয়া, ঘুমের ব্যাধি নিয়ে জনসচেতনতা বৃদ্ধি এবং বিভিন্ন চিকিৎসা পদ্ধতি ও গবেষণার অগ্রগতি তুলে ধরাই ছিলো এই অনুষ্ঠানের মূল উদ্দেশ্য এবং ঘুমের সমস্যাগুলো হৃদরোগ, মানসিক স্বাস্থ্য, শিশুদের বিকাশসহ নানা ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলে—এই বার্তা ছড়িয়ে দেওয়া ছিল এই আয়োজনের অন্যতম লক্ষ্য।
সেমিনারে অংশগ্রহণকারী বিশেষজ্ঞগণ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের ওপর প্রেজেন্টেশন উপস্থাপন করেন। অনুষ্ঠানে নারকোলেপসি নিয়ে প্রেজেন্টেশন করেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগে সহকারী অধ্যাপক ডা. মুসতাফা কামাল খান। শিশুদের ঘুমের ব্যাধি নিয়ে প্রেজেন্টেশন করেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. লুতফান নেসা। ঘুমের ব্যাধির কার্ডিওভাসকুলার প্রকাশ নিয়ে প্রেজেন্টেশন করেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের হৃদরোগ বিভাগের বিভাগীয় প্রধান সহযোগী অধ্যাপক ডা. কাজী নজরুল ইসলাম। ঘুম সম্পর্কিত শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যাধি নিয়ে প্রেজেন্টেশন করেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের রেসিপিরেটরী মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. তৌহিদুজ্জামান। অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপনিয়ায় অস্ত্রোপচারের ভূমিকা নিয়ে প্রেজেন্টেশন করেন ডা. আব্দুল্লা আল মামুন। ঘুমের ব্যাধি: মানসিক দৃষ্টিকোণ নিয়ে প্রেজেন্টেশন করেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মনোরোগ বিভাগের বিভাগীয় প্রধান সহযোগী অধ্যাপক ডা. নূর অহমেদ গিয়াসউদ্দিন। ঘুমের ব্যাধির বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী আন্দোলন এবং বাংলাদেশ নিয়ে প্রেজেন্টেশন করেন হলি ফ্যমিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজের পরিচালক অধ্যাপক এস. এম. খোরশেদ আলম মজুমদার।

ঘুম আমাদের জীবনে একটি গুরুত্বপূর্ন উপাদান উলেখ করে বক্তব্য দেন অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি অধ্যাপক ফারুক আহম্মদ। স্বাস্থ্যকর ঘুমের প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করে অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ঢাকা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. কামরুল আলম বলেন, ‘’ঘুম ভালো না হলে অনেক শারীরিক সমস্যা হতে পারে। তাই আমাদের কোয়ালিটি স্লিপ খুবই প্রয়োজন ভালো কাজের আউটপুটের জন্য’’ এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ঘুমের সমস্যা বিষয়ে চিকিৎসকদের জ্ঞান বিনিময় ও সাধারণ মানুষের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধির সুযোগ তৈরি হয়।প্রতি বছর বিশ্ব ঘুম দিবস পালন করার মাধ্যমে চিকিৎসক, চিকিৎসা শিক্ষার্থী, জনসাধারণ এবং রোগীদের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধির কথায় গুরুত্বারোপ করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মনোরোগ বিভাগের বিভাগীয় প্রধান সহযোগী অধ্যাপক ডা. নূর অহমেদ গিয়াসউদ্দিন বলেন, ”মেডিকেল কলেজের পাঠ্যক্রমে সাইকিয়াট্রি বিষয়ের মধ্যে পাঠ্য হিসেবে ঘুমের রোগগুলো রয়েছে। তবে বিশেষায়িত অন্যান্য বিভাগও ঘুমের বিভিন্ন রোগের যথাযথ চিকিৎসার জন্য দরকারি। বিভিন্ন বিভাগের সমন্বয়ে একটি জাতীয় স্লিপ সেন্টার করা যেতে পারে যেখানে এই রোগগুলো নিয়ে গবেষণা, চিকিৎসা এবং শিক্ষা কার্যক্রম চলবে। তাহলে একটি সমন্বিত চিকিৎসা সম্ভব হবে।” অংশগ্রহণকারীরা ঘুমজনিত রোগের কারিগরি দিক, আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতি এবং মনস্তাত্ত্বিক প্রভাব সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানতে পারেন। স্বাস্থ্যখাতে ইন্টিগ্রেটেড এপ্রোচ বা সম্মিলিত দৃষ্টিভঙ্গি গঠনেরও পথ খুলে যায়।
অনুষ্ঠানটি একটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ যা ঘুমকে একটি গুরুত্বপূর্ন জনস্বাস্থ্য ইস্যু হিসেবে তুলে ধরেছে। ঘুম শুধু বিশ্রামের বিষয় নয়, বরং তা মানসিক, শারীরিক এবং সামাজিক স্বাস্থ্যকে গভীরভাবে প্রভাবিত করে—এমন বার্তা এই সেমিনারের মাধ্যমে স্পষ্টভাবে উপস্থাপিত হয়েছে। বিভিন্ন বিশেষজ্ঞদের একত্রে অংশগ্রহণ এই আয়োজনকে বহুমাত্রিক ও বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণে সমৃদ্ধ করেছে। বিশ্ব ঘুম দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এই সেমিনারটি ঘুমকে একটি স্বাস্থ্য অধিকার ও সচেতনতা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে একটি কার্যকর পদক্ষেপ। বাংলাদেশের স্বাস্থ্যনীতি এবং জনগণের জীবনমান উন্নয়নে ঘুমকে গুরুত্ব দেওয়া এখন সময়ের দাবি।
আরও পড়ুন-