‘সুখী হোন বিবাহিত জীবনে’ শিরোনামের গত লেখায় বিবাহিত জীবনে সুখী হওয়ার কিছু উপায় নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। যেসব উপায় আলোচিত হয়েছে সেগুলো হলো- ভালবাসার উপাদানসমূহ, মানসিক বন্ধন, সংসারের সংস্কৃতি, অংশগ্রহণ ও সিন্ধান্ত নেওয়া, আলাপ আলোচনা করা ও প্রশংসার সংস্কৃতি গড়ে তোলা। আজকের লেখায় আরো কিছু উপায় আলোচনা করা হলো যা স্বামী-স্ত্রীর বন্ধনকে সূদৃঢ় ও সুন্দর করবে।
● সর্ম্পক ভালো রাখার একটি অন্যতম উপায় হলো পরস্পরকে ক্ষমা করে দেওয়া। অনেক বিষয় নিয়েই স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া বা মনোমালিন্য হতে পারে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আমরা সে বিষয়গুলো নিয়ে বারবার ভাবতে থাকি। আসল ঘটনা থেকে যতটুকু কষ্ট হয়েছিল বারবার ভাবার কারণে কষ্ট আরও গভীর হয়। এই গভীর কষ্ট মনের মধ্যে চেপে বসে এবং পরবর্তীতে সময় সুযোগ পেলে আবার উঠে আসে। যেমন-আরেকবার ঝগড়ার সময় পুরানো কথা মনে পরে যায় যা পরবর্তী ঝগড়াকে বাড়িয়ে দেয়।
এ সমস্যা থেকে উঠে আসার ভালো সমাধান হলো একজন আরেকজনকে নেতিবাচক আচরণের জন্য ক্ষমা করে দেওয়া। ক্ষমা করলে মনের ভার কমে যায় ও মন হাল্কা হয়।
● স্বামী-স্ত্রীর সর্ম্পক ভালো রাখার আরেকটি দিক হলো যৌন জীবনকে স্বাভাবিক রাখা। যৌন সর্ম্পকের সমস্যার জন্য অনেক সংসারে অশান্তি নেমে আসে এবং বিবাহ বিচ্ছেদ পর্যন্ত ঘটে।
অনেক দম্পতির জীবনে বিয়ের সময় থেকেই যৌন জীবনে সমস্যা দেখা দেয়। আবার কোনো কোনো সংসারে বিয়ের প্রথম দিকে সর্ম্পক ঠিকই থাকে তবে কয়েকবছর পর সমস্যা নেমে আসে।
অনেক পরিবার এ ধরনের সমস্যার সমাধান না খুঁজে সমস্যা নিয়েই জীবন কাটাতে থাকে। এ অবস্থা পরস্পরের প্রতি শারীরিক ও মানসিক আকর্ষনকে নষ্ট করে দেয়। তাই যৌন সমস্যা দেখা দিলে খুব তাড়াতাড়ি চিকিৎসার সাহায্য নিতে হবে।
● স্ত্রী-স্বামী একজন আরেকজনের মন ভালো রাখাতে ও আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর জন্য পরস্পর পরস্পরকে প্রশংসা করা খুবই জরুরি। সংসারে একটা প্রশংসার সংস্কৃতি গড়ে তোলা প্রয়োজন। পরস্পর পরস্পরকে নানা কাজের জন্য প্রশংসা করতে পারেন। যেমন- রান্নার কাজ, ঘর গোছানো, সৃজনশীল কোনো কাজে উৎসাহ দেওয়া, বাজার করার কাজ, মেহমানদারি করা, শিশু লালন-পালনের কাজ, পরিপাটি হওয়ার কাজ ইত্যাদি। প্রশংসা শুনলে আমাদের মন ভালো হয়, যে কাজের জন্য প্রশংসিত হয়েছি তা বার বার করার ইচ্ছা জাগে এবং আত্মবিশ্বাস বেড়ে যায়।
● শ্বশুর বাড়ির আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক রাখা স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ককে ভালো রাখতে সাহায্য করে। অনেক স্ত্রী শ্বশুর বাড়ির সঙ্গে ভালো সম্পর্ক গড়ে তোলার চেষ্টা করেন না। ভাবেন স্বামীর সঙ্গে ঠিকভাবে থাকলেই চলবে। আবার অনেক স্বামীই ভাবেন শ্বশুর বাড়ির সঙ্গে সম্পর্ক রাখার কি দরকার। কিন্তু আসল কথা হলো স্বামী-স্ত্রী কেউ সংসার বিচ্ছিন্ন নন। দুজনেরই ভিত্তি হলো তাদের পরিবার। তাই স্বামী-স্ত্রীর ভেতর ভালো সম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য পরস্পরের পরিবারের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক তৈরি করতে হবে, তাদের আপন করে নিতে হবে।
● স্বামী-স্ত্রী দুজনকেই দুজনের বন্ধু-বান্ধবীর সঙ্গে মিশতে হবে। অনেক পরিবারে দেখা যায় বিয়ের পর স্বামীর বন্ধুদের সঙ্গে বেশি মেলা-মেশা হয় কিন্তু স্ত্রী তার নিজের বন্ধুর সঙ্গে তেমনভাবে মেশার সুযোগ পান না। কিন্তু মন ভালো রাখার জন্য এবং নিজের পরিচিতিকে বহাল রাখার জন্য দুজনকে দুজনের বন্ধুদের গুরুত্ব দিতে হবে ও তাদের সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে হবে।
চলবে…
ফরিদা আকতার
মনোচিকিৎসক