সিজোফ্রেনিয়া রোগীদের শুশ্রুষাকারীদের বিষণ্ণতা

সিজোফ্রেনিয়া রোগীদের
পৃথিবীতে যতগুলো Stigmatized বা কলঙ্কিত এবং দুর্বিষহ অসুস্থতা রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম হলো সিজোফ্রেনিয়া। সারা বিশ্বে প্রায় ১ শতাংশ মানুষ সিজোফ্রেনিয়া রোগে আক্রান্ত এবং বাংলাদেশে সিজোফ্রেনিয়া রোগীদের হার প্রায় ০.৬ শতাংশ এবং ০.৭ শতাংশ (যথাক্রমে ২০০৬ ও ২০১৮ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী)।

অন্য আরেকটি গবেষণায় দেখা যায় বাংলাদেশে সিজোফ্রেনিয়া রোগীদের সংখ্যা প্রায় ১২ লক্ষ। কোনো একটি পরিবারে একজন সিজোফ্রেনিয়ার রোগী থাকলে সে পরিবারের অন্যসব সদস্যের জন্য বোঝা হয়ে পড়ে, বিশেষ করে পরিবারের যে বা যারা প্রত্যক্ষভাবে সিজোফ্রেনিয়া রোগীদের দেখাশুনা করেন তাদের জন্য এ কাজ রীতিমতো ভয়ংকর এক কষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। ইংরেজিতে এই সেবা শুশ্রুষাকারীদের বলা হয় কেয়ারগিভার (Caregiver)।

বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, কেয়ারগিভারদের এই বোঝা মূলত প্রধাণ কয়েকটি ফ্যাক্টর দ্বরা প্রভাবিত হয় যেমন : ফ্যাক্টর (১): কতটুকু সময় রোগীর পেছনে ব্যয় করা হচ্ছে গবেষণায় দেখা গেছে সময় ব্যয়ের সাথে কেয়ার গিভারদের দুর্দশার একটা সমানুপাতিক সম্পর্ক আছে। অর্থাৎ কেয়ারগিভার যত বেশি সময় রোগীর সেবা শুশ্রুষায় ব্যয় করবেন, তার নিজের জন্য প্রয়োজনীয় সময় ততই কম পাবেন এবং সেটি তার ব্যক্তিগত জীবনে তত বেশি প্রভাব ফেলবে।

ফ্যাক্টর (২): নারী ও পুরুষ উভয়ই সিজোফ্রেনিয়া রোগীদের প্রাইমারি (Primary) বা প্রধান কেয়ারগিভার হতে পারেন যেমন, বাবা বা মা সিজোফ্রেনিয়া রোগী হলে তাঁদের সন্তানদের মধ্যে থেকে যিনি সব থেকে বেশি সময় সেবা-শুশ্রুষার দায়িত্ব নেবেন তিনিই হবেন এক্ষেত্রে প্রাইমারি কেয়ারগিভার। একজন সিজোফ্রেনিয়া রোগীর ক্ষেত্রে প্রাইমারি কেয়ারগিভার সাধারণত একজনই হন। যদিও নারী-পুরুষ উভয়ই প্রাইমারি কেয়ারগিভার হতে পারেন, কিন্তু প্রায় সব গবেষণাতেই দেখা গেছে-নারীরাই বেশিরভাগ ক্ষেত্রে প্রাইমারি কেয়ারগিভারের ভূমিকা পালন করেন। এই ব্যাপারটা আমাদের দেশের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্যে। আমরা যে সমস্ত সিজোফ্রেনিয়ার রোগী পাই, তাদের যত্নের ক্ষেত্রে বেশিরভাগই দেখা যায়-হয় স্ত্রী, মা অথবা মেয়ে দেখাশোনা করার ক্ষেত্রে প্রধান ভূমিকা পালন করেন। সঙ্গত কারণেই নারী কেয়ারগিভারদের মধ্যে বিষণ্ণতার হারও পুরুষদের তুলনায় বেশি হয়।

ফ্যাক্টর (৩): সিজোফ্রেনিয়া রোগ সম্বন্ধে ধারণা তথা শিক্ষাগত যোগ্যতাও এক্ষেত্রে একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে শিক্ষাগত যোগ্যতা এবং কেয়ারগিভারের বিষণ্ণতা বা ডিপ্রেশনেরর মধ্যে একটা বিপরীত সম্পর্ক আছে। অর্থাৎ একটা বাড়লে অন্যটি কমবে। এর একটি গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা রয়েছে। শিক্ষাগত যোগ্যতা বেশি থাকলে মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থাও স্বচ্ছল হয়, যার ফলে রোগীর চিকিৎসা থেকে শুরু করে যাবতীয় ব্যয়ভার বহন সহজতর হয়। পাশাপাশি শিক্ষিত ব্যক্তি রোগটা সম্পর্কে বুঝতে পারেন এবং এর জন্য যা করণীয় তা করতেও পারেন। ফলে শিক্ষিত পরিবারের সবাই এই কঠিন সমস্যার সাথে তুলনামূলকভাবে সহজে মানিয়ে নিতে পারেন।

ফ্যাক্টর (৪): সোশাল সাপোর্ট আর একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তাইওয়ানের একদল মনোরোগ বিশেষজ্ঞগণ তাঁদের গবেষণায় এটা প্রমাণ করেন যে, সোশ্যাল সাপোর্ট কেয়ারগিভারদের কষ্ট অনেকাংশ কমিয়ে আনতে পারে।
কেয়ারগিভারদের বিষণ্ণতা বিশ্বের বিভিন্ন গবেষণা থেকে এটা স্পষ্টভাবে প্রমাণিত যে, সিজোফ্রেনিয়া রোগীর কেয়ারগিভারদের বিষণ্ণতার হার সাধারণত সুস্থ মানুষের তুলনায় অনেক বেশি। আর এক্ষেত্রে পুরুষের তুলনায় নারী কেয়ারগিভারগণ বেশি বিষণ্ণতায় ভুগে থাকেন। তাই আমাদের সকলেরই উচিত সিজোফ্রেনিয়া রোগীদের পাশাপাশি তাদের যারা দেখাশোনা করছেন তাদেরও শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতি বিশেষভাবে খেয়াল রাখা এবং এ বিষয়টি নিয়ে সমাজের সকলের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধি করা, যাতে করে সেবা-শুশ্রুষাকারী ব্যক্তিগণ এই নিদারুণ কষ্ট থেকে কিছুটা হলেও মুক্তি পেতে পারেন।

সূত্র: লেখাটি মনের খবর মাসিক ম্যাগাজিনে প্রকাশিত।

করোনায় স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি

করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে প্রাণে

 

Previous articleঅনেক মানসিক রোগের ডাক্তারও দেখিয়েছি
Next articleস্মৃতিভ্রমের লক্ষণ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here