সঙ্গীর মৃত্যুতে বার্ধক্যে অসহায়ত্ব

0
8
সঙ্গীর মৃত্যুতে বার্ধক্যে অসহায়ত্ব

ডা. মৃত্যুঞ্জয় কুমার সরদার
রেসিডেন্ট, ফেজ বি,
মনোরোগবিদ্যাবিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়।

জীবনের এক অনিবার্য বাস্তবতা হলো মৃত্যু।মৃত্যু স্রষ্টার অমোঘ বিধান।  কিন্তু যখন সঙ্গীর মৃত্যু ঘটে, বিশেষ করে বার্ধক্যে, তখন এটি গভীরভাবে অনুভূত হয়। বার্ধক্যের এই পর্যায়ে সঙ্গীর মৃত্যু শুধুমাত্র একটি শারীরিক ক্ষতি নয়, বরং এটি মানসিক ও সামাজিকভাবে বড় বিপর্যয় নিয়ে আসে।

প্রথমেই, বার্ধক্যের অসহায়ত্বের একটি প্রধান দিক হলো শারীরিক মানসিক নির্ভরতা। বয়স বাড়ার সাথে সাথে মানুষ সাধারণত বেশি নির্ভরশীল হয়ে ওঠে। অনেক বৃদ্ধ-ব্যক্তি তাদের সঙ্গীর উপর শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্ভরশীল থাকে। সঙ্গীর মৃত্যু হলে, তাদের জীবনে যে শূন্যতা তৈরি হয়, তা শুধুমাত্র একাকীত্বের অনুভূতি নয়, বরং শারীরিক যত্ন ও দৈনন্দিন জীবনযাপনের ক্ষেত্রে এক বিশাল কষ্ট নিয়ে আসে।

দ্বিতীয়ত, সামাজিক একাকীত্ব একটি গুরুতর সমস্যা। বার্ধক্যে অনেক সময়ই সম্পর্কের সীমাবদ্ধতা থাকে, নতুন বন্ধু তৈরি করা কঠিন হয় এবং সামাজিক সংযোগগুলি কমে যায়। সঙ্গীর মৃত্যু পরবর্তী সময়ে একাকীত্বের অনুভূতি আরও তীব্র হয়ে ওঠে। এই সামাজিক বিচ্ছিন্নতা বার্ধক্যের মানুষকে আরও অসহায় করে তোলে।

তৃতীয়ত, মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যাগুলি গুরুতর হতে পারে। সঙ্গীর মৃত্যু পরবর্তী সময়ে, হতাশা, উদ্বেগ এবং দুঃখের অনুভূতি প্রকট হতে পারে। এই মানসিক চাপ বার্ধক্যের মানুষকে আরও দুর্বল ও অসহায় করে তোলে। অনেকেই এই অবস্থার সাথে মানিয়ে নিতে হিমশিম খান এবং জীবনযাত্রার মান অবনমিত হতে পারে।

চতুর্থত, অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জও গুরুত্বপূর্ণ। বার্ধক্যের সঙ্গীর মৃত্যু অনেক সময় অর্থনৈতিক চাপ নিয়ে আসে। যদি সঙ্গী আর্থিকভাবে অবদান রাখতেন, তবে তাদের মৃত্যু পরবর্তী সময়ে আর্থিক নিরাপত্তাহীনতা অনুভূত হতে পারে। পেনশন, সঞ্চয় বা অন্যান্য অর্থনৈতিক সাপোর্টের অভাব একজন বৃদ্ধকে আরও অসহায় করে তোলে।

Magazine site ads

সঙ্গীর মৃত্যু বার্ধক্যে একটি বিশাল চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়। এটি শারীরিক, মানসিক, সামাজিক এবং অর্থনৈতিকভাবে অসহায়ত্বের অনুভূতি তৈরি করে। তবে, সামাজিক সাপোর্ট সিস্টেম, পরিবারের সহানুভূতি এবং মানসিক স্বাস্থ্য সেবা এই অসহায়ত্বের মোকাবিলা করতে সাহায্য করতে পারে। সঠিক সাপোর্ট ও যত্নের মাধ্যমে, বার্ধক্যের মানুষদের জীবনে কিছুটা স্বস্তি ও স্বাভাবিকতা ফিরিয়ে আনা সম্ভব।

বার্ধক্যে সঙ্গীর মৃত্যু শুধু শারীরিক নয়, বরং গভীরভাবে মানসিক প্রভাব ফেলে। এই সময়ে সঙ্গী হারানো এক বিশাল মানসিক আঘাত, যা একজন বৃদ্ধের জীবনকে অন্ধকার করে দিতে পারে। মানসিক সমর্থন ও সহযোগিতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পরিবারের সদস্যরা, বন্ধু-বান্ধব এবং কমিউনিটি গ্রুপগুলির সমর্থন বৃদ্ধদের মানসিকভাবে স্থিতিশীল রাখতে সহায়ক হতে পারে। বিশেষ করে, প্রবীণ এই মানুষটা কোন মানসিক রোগে ভুগছেন কিনা তা যানা অত্যন্ত জরুরী, মনোরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা গ্রহন একটি কার্যকরী উপায় হতে পারে, যা তাকে একটি নতুন জীবনযাত্রার পথে সহায়ক হতে পারে।

সঙ্গীর মৃত্যু অনেক সময় আর্থিক সংকটের জন্ম দেয়। বার্ধক্যে অনেকেই তাদের সঞ্চয় ও পেনশনের উপর নির্ভরশীল থাকেন। যদি সঙ্গী এই আর্থিক দিক থেকে সাহায্য করে থাকেন, তবে তাদের মৃত্যু পরবর্তীতে একটি আর্থিক শূন্যতা তৈরি হতে পারে। এই সংকট মোকাবিলা করার জন্য সরকারী সাহায্য, বীমা সুবিধা এবং সামাজিক কল্যাণ প্রকল্পগুলি সহায়ক হতে পারে। অবসরপ্রাপ্ত জীবনযাপনকে আরও স্বচ্ছল ও নিরাপদ করতে সরকারী সাহায্য ও বিভিন্ন তহবিল ব্যবস্থাপনাও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

সঙ্গীর মৃত্যু পরবর্তী সময়ে সামাজিক সংযোগ এবং সম্পর্ক বজায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একজন বৃদ্ধ ব্যক্তির সামাজিক সংযোগ যদি সীমিত থাকে, তবে এটি তাদের একাকীত্ব আরও বাড়িয়ে দেয়। সমাজের সাথে যুক্ত থাকা, বিভিন্ন সামাজিক ও ধর্মীয় কার্যকলাপে অংশগ্রহণ এবং আধ্যাত্মিকতা ,সঙ্গীত, শিল্পকলা, বা অন্যান্য কার্যক্রমের মাধ্যমে সম্পর্ক গড়ার চেষ্টা করা উচিত। সামাজিক সংযোগ বৃদ্ধির মাধ্যমে একাকীত্ব কমানো এবং মানসিক সুস্থতা বজায় রাখা সম্ভব।

বার্ধক্যে সঙ্গীর মৃত্যু পরবর্তীতে একটি নতুন জীবনযাত্রার পরিকল্পনা করা অত্যন্ত জরুরি। এটি দৈনন্দিন জীবনের রুটিন, শখ-আহ্লাদ এবং স্বাস্থ্যকর অভ্যাস গড়ে তোলার মাধ্যমে করা যেতে পারে। নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম, সুষম খাদ্য এবং মানসিক প্রশান্তি বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করা উচিত। এটি বৃদ্ধদের শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা বজায় রাখতে সহায়তা করবে।

পরিশেষে , সঙ্গীর মৃত্যু বার্ধক্যে একটি কঠিন বাস্তবতা, যা শারীরিক, মানসিক, সামাজিক এবং আর্থিক চ্যালেঞ্জ নিয়ে আসে। এই চ্যালেঞ্জগুলির মোকাবিলা করতে সমর্থন, সহানুভূতি এবং সঠিক সেবা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পরিবারের সদস্যদের সহানুভূতি, সামাজিক সংযোগ বজায় রাখা, এবং মানসিক ও আর্থিক সহায়তা বৃদ্ধদের জীবনে শক্তি ও শান্তি ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করতে পারে। এইভাবে, বার্ধক্যের এই কঠিন সময়েও একটি সুন্দর জীবন যাপন সম্ভব হতে পারে।

 

Previous articleআমার স্ত্রী যথেষ্ট সুন্দরী , কিন্তু তার প্রতি আমি কোনো আকর্ষণবোধ করি না
Next articleঢাকা আহ্ছানিয়া মিশনে রিল্যাপ্স প্রতিরোধে পারিবারিক সভা অনুষ্ঠিত

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here