ডা. ফাতেমা তুজ জোহরা জ্যোতি
এম বি বি এস, বি সি এস (স্বাস্থ্য), এম ডি (শিশু ও কিশোর মনরোগ বিশেষজ্ঞ) ,বিএসএমএমইউ।
‘‘আমার সন্তান পড়ালেখা করতে চায় না, অন্য সব কিছুতে মনোযোগ ঠিকই থাকে, পড়তে বসলে আর সে মনোযোগ দিতেই চায় না। কি করলে ও একটু মনোযোগ দিয়ে পড়বে?’’পড়ালেখা সকলের কাছেই আনন্দদায়ক ব্যাপার না। আরা যে কাজ আপনাকে আনন্দ দেয় না সে কাজে মনোযোগ ধরে রাখা কষ্টকর হবে এটাই স্বাভাবিক। প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের জন্যেই অনেক সময় দীর্ঘসময় ধরে মনোযোগ সহকারে পড়ালেখা করা দুরূহ হয়ে পড়ে, সেক্ষেত্রে শিশুদের জন্যে তো এটি বিন্দুমাত্র ব্যতিক্রম নয়।
একটি বিষয় এক্ষেত্রে বলে রাখা ভালো যে, একেক বয়সি শিশুদের মনোযোগ ধরে রাখার ক্ষমতা একেক রকম। ৮ থেকে ১০ বছর বয়সি শিশুর মনোযোগের ক্ষমতা আর ৩ থেকে ৪ বছর বয়সি শিশুর মনোযোগ ক্ষমতা এক নয়। তাই আপনি যখন আপনার শিশুর মনোযোগের কথা ভাবেন অবশ্যই শিশুর বয়সের বিষয়টি মাথায় রাখা জরুরি, কেননা তখন টার্গেট সময় ফিক্স করা যায়। এতে শিশুর উপর অতিরিক্ত চাপ পড়ে না আর মা-বাবাও অল্পতেই আশাহত হন না।
শিশুদের পড়ালেখার প্রতি মনোযোগ বাড়াতে কিছু উপায় বা পদ্ধতি ব্যাবহার করা যেতে পারে:
শিশুর মাঝে যেকোনো কাক্সিক্ষত আচরণ তৈরি করতে চাইলে, সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ যে ব্যাপারটি তা হলো, ভালো কাজের প্রশংসা করা আর অযাচিত কাজে মনোযোগ বা গুরুত্ব না দেয়া। যাকে অন্যভাবে রিইনফোর্সমেন্ট এবং ইগ্নরেন্স বলা যায় যথাক্রমে। শিশু পড়ালেখা করুক মনোযোগ দিয়ে, যেহেতু এটি আমাদের কাক্সিক্ষত আচরণ, সেক্ষেত্রেও আমাদের এই মূলমন্ত্র মাথায় রেখেই কাজ করতে হবে।
এছাড়া যে কৌশলগুলো আমরা অনুসরণ করতে পারি তা হলো:
একটি নির্দিষ্ট রুটিন তৈরি করা:
বাচ্চাদের জীবনে রুটিন খুব গুরুত্বপূর্ণ। তারমানে, পড়ালেখার রুটিন যেমন থাকবে, তেমনই শিশুর দৈনন্দিন অন্যান্য সকল কাজের একটি নির্দিষ্ট রুটিন থাকতে হবে। কখন ঘুম থেকে উঠবে, কখন খাবে, খেলতে যাবে, স্ক্রিনটাইমসহ কখন পড়তে বসবে সেটি নির্দিষ্ট করে দিতে হবে। সেই সাথে, প্রতিদিন দুইবার পড়তে বসার অভ্যাস গড়ে তুলুন এবং সেই রুটিনটা আপনার বাচ্চাকে সাথে নিয়ে তৈরি করুন।
তাকে জিজ্ঞেস করুন দিনের কোন কোন সময় তার পড়তে ভালো লাগে। যথাসম্ভব, তার পছন্দের সময় অনুসারে রুটিন করার চেষ্টা করুন। যদি আপনি আপনার সময়মতো তাকে পড়ান তাহলে ওই সময়টায় তার পড়তে ভালো নাও লাগতে পারে। এতে তার পড়াশোনায় মনোযোগ কমে যাবে। এই রুটিন প্রতিদিন অনুসরণ করলে এটি অভ্যাসে পরিণত হবে। তখন শিশুকে জোড় করে পড়তে বসাতে হবে না।
সহজ বিষয় দিয়ে পড়া শুরু করুন:
সহজ কোনো বিষয় অথবা আপনার সন্তানের পছন্দমতো টপিক দিয়ে পড়া শুরু করুন। এতে প্রথম প্রথম পড়তে বসার সময়ে সে একঘেয়ে অনুভব করবে না।
অল্প অর্জনে উৎসাহ ও প্রশংসা করা:
উৎসাহ ও প্রশংসা পেলে যে কারোরই কাজে আগ্রহ বহুগুণ বেড়ে ওঠে। শিশুর বেলায়ও তার ব্যতিক্রম নয়। তাই আপনার সন্তান প্রথম প্রথম অল্প কিছু যদি আয়ত্ত করতে সক্ষম হয়, তাহলে প্রশংসা করুন, উৎসাহ দিন। এতে তার পড়ালেখায় মনোযোগ আরও বহুগুণে বেড়ে যাবে।
শিক্ষা শুধু বইয়ের মধ্যে আবদ্ধ না রাখা:
বাচ্চাদের কোনো কিছু শিখাতে হলে শুধু বইয়ের মধ্যে নয়, বইয়ের বাইরেও শিখানো জরুরি; যেমন-পশুপাখি চেনার জন্য তেমন পশুপাখির টয় অথবা পুতুল আনা যেতে পারে। অথবা, চিড়িয়াখানায় নিয়ে গিয়ে বাস্তবভাবে তাদের শেখানো যেতে পারে এদের নাম ও বর্ণনা।
পড়া শেষে বাচ্চাকে পছন্দের কাজ করতে দিন:
বাচ্চাকে পড়তে বসানোর সময় তার সাথে আলাপ করে জেনে নিন সে পড়া শেষ করে কি করতে চায়। তাকে অপশন দিন, যেমন-সে খেলতে চায়, স্ক্রিনটাইম চায়, নাকি কিছু মজার খেতে চায়। সে অনুযায়ী পড়া শেষে তাকে সেটি দিন। এভাবে প্রতিদিন তাকে তার পছন্দের কিছু দিয়ে পড়ালেখায় মনোযোগ বৃদ্ধি করা যায়।
পড়ার জন্যে ভেঙে ভেঙে নির্দিষ্ট কিন্তু অল্প সময় নির্ধারণ করুন:
বাচ্চাদের একাধারে অনেকক্ষণ পড়তে বসিয়ে রাখা উচিত নয়। একাধারে অনেকক্ষণ পড়তে বসিয়ে রাখলে একঘেয়েমি ও অনীহা চলে আসে। তাই পড়ালেখা একটি নির্দিষ্ট সময় এবং অল্প সময় ধরে করা উচিত। এভাবে বার বার ভেঙ্গে রেস্ট দিয়ে শিশুকে পড়তে বসাতে হবে। এতে একঘেয়ে হয়ে যাবে না শিশু, বরং পড়া শেষ হলেই সে কাক্সিক্ষত কাজটি করতে পারবে বলে সে দ্রæতই পড়া মনোযোগ দিয়ে শেষ করতে আগ্রহী হয়ে ওঠে।
পড়ার শেষে খেলার সময় দিন:
বাচ্চাদের অবশ্যই খেলার সময় দিতে হবে এবং তাকে যদি টার্গেট দিয়ে দেয়া হয় যে কতটুকু পড়া শেষ করলে সে খেলতে যেতে পারবে, তাহলে সেটি তাকে পড়া শেষ করতে উৎসাহ দেয়। সম্ভব হলে, খোলা আকাশের নিচে অথবা পার্কে নিয়ে যাওয়া যেতে পারেন বিনোদনের জন্যে। এতে বাচ্চাদের মনোসংযোগ বাড়ে এবং আপনি পড়ার সময়টা যেভাবে আপনার সন্তানকে মনে করিয়ে দেন, ঠিক সেইভাবে খেলার সময়টাও ওকে মনে করিয়ে দিবেন, তাহলে সেও এটিকে একটা রুটিন হিসেবে নিবে। খেলার সময়ের জন্য সে যেমন অপেক্ষা করে তেমনই পড়ার সময়ের জন্যও অপেক্ষা করবে।
নিজে বাচ্চার পাশে বসে বই পড়ার অভ্যেস গড়ে তুলুন:
বাচ্চার পাশে বসে বই পড়ুন। অনেক বাবা-মাকে দেখা যায় বাচ্চাকে পড়তে বসিয়ে পাশে বসে মোবাইল ব্যবহার করছেন। এতে বাচ্চাদের পড়াশোনায় ব্যাঘাত ঘটে, তাদের মনোযোগ থাকে মোবাইলে। তাই বাচ্চাকে পড়তে বসিয়ে নিজে একটা বই নিয়ে পাশে বসবেন। যখন বাচ্চা দেখবে তার বাবা-মা পড়াশোনা করছে তখন তারও পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ বাড়বে।
পরিবারের সকলের একই আচরণ করা:
বেশিরভাগ পরিবারে দেখা যায় বাচ্চাদের মা-ই পড়াশোনার বিষয়টা খেয়াল রাখে। এতে করে বাচ্চাদের একঘেয়েমি লাগে এবং মায়েরাও বিরক্ত হয়। তাই পরিবারে যারা থাকে সবাই একটু একটু করে বাচ্চার পড়ার দায়িত্ব নিলে বাচ্চারও ভালো লাগে এবং বাচ্চাদের মায়েদেরও একটু রেস্ট হয়। সে সাথে বাচ্চা পড়ালেখা না করলে তাকে ইগনোর করা, পছন্দের জিনিস তুলে নেয়া, কাক্সিক্ষত বস্তু না দেয়ার ব্যাপারেও পরিবারের সবাইকে একই আচরণ করতে হবে শিশুর সাথে। তাহলে শিশুর মাঝে ভালো গুণগুলোকে আরও বাড়িয়ে তোলা সম্ভব।
সবশেষে বলতে চাই যে, সকল শিশুর জন্যে যেমন একই নিয়ম কার্যকরী নয়, তেমনই সকল শিশু একই নিয়মে একইভাবে রিঅ্যাক্ট করবে তাও আশা করা ঠিক নয়। কিছু শিশু ডিফিকাল্ট থাকে, কিছু শিশু ইজি গোয়িং থাকে। শিশু অনুযায়ী প্রতিটি নিয়মকে মডিফাই করতে হবে। প্রয়োজনে একজন শিশু ও কিশোর মনোরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে, কেননা অনেক মানসিক রোগের কারণেও সন্তানের পড়ালেখায় মনোযোগে ব্যাঘাত ঘটতে পারে। তা সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে সারিয়ে তোলা যেতে পারে।
শিশুর মানসিক বিকাশ হচ্ছে কি? আমাদের করণীয়-
- এপোয়েন্টমেন্ট নিতে যোগাযোগ করুন-Prof. Dr. Shalahuddin Qusar Biplob
- চেম্বার – MK4C -মনের খবর ফর কেয়ার
মগবাজার রেইল গেইট।
নাভানা বারেক কারমেলা, লিফটের ৩,
(ইনসাফ কারাকাহ হাসপাতালের বিপরীতে)।
চেম্বার সিরিয়াল – ০১৮৫৮৭২৭০৩০ - আরো পড়ুন- ডিভাইসের অপব্যবহার মানসিক রোগের কারণ?