রসবোধ জীবনের একটা প্রাণশক্তি: শিশির ভট্টাচার্য্য

[int-intro]শিক্ষক, চিত্রকর ও কার্টুনিস্ট তিনি। কার্টুনে তাঁর খ্যাতি দেশজুড়ে। শিক্ষকতা করছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চারুকলা অনুষদে। সমসাময়িক সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটই তাঁর ছবির অন্যতম প্রধান উপজীব্য। তিনি শিশির ভট্টাচার্য্য। মনেরখবর পাঠকের মুখোমুখি হয়ে এবার তিনি জানাচ্ছের তাঁর মনের কথা, স্বপ্নের কথা, ভাবনার কথা, জীবনের কথা। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মুহাম্মদ মামুন। [/int-intro]
[int-qs]চিত্রশিল্পী হলেন কেন?[/int-qs]
[int-ans name=”শিশির ভট্টাচার্য্য”]আমরা ছোটবেলা থেকেই আস্তে আস্তে বুঝতে পারি যে কোন জিনিষটার প্রতি আমাদের আগ্রহ বেশি। আমি এখন বাবা হয়ে বুঝতে পারছি আমার মেয়ের আগ্রহ কোনদিকে। বুঝতে পারার ব্যাপারটি আসলে শুরু হয় অন্যদের প্রতিক্রিয়ার মাধ্যমে। যেমন, আরে সে তো ভালো গান গায়, ভালো ছবি আকে বা ভালো অভিনয় করে ইত্যাদি।[/int-ans]
[int-qs]শিক্ষক, চিত্রশিল্পী এবং কার্টুনিস্ট এর তিনটির মধ্যে কোনটির প্রতি ভালোলাগা বেশি?[/int-qs]
[int-ans name=”শিশির ভট্টাচার্য্য”]শিক্ষকতা এবং নিজের ছবি আঁকা এই দুটো হচ্ছে আমার মূল কাজ। আর কার্টুনটা হচ্ছে অনেকটা বাইপ্রোডাক্টের মত, পারি তাই করি এমন আরকি![/int-ans]
[int-quote]কখনও কখনও খুব কষ্ট হয় যখন মনে হয় এই যে দীর্ঘদিন ধরে ছবি আঁকছি কেন আঁকছি! যার জন্য ছবি আঁকছি, যাদের জন্য ছবি আঁকছি, যে কারণে ছবি আঁকছি সেগুলোতে কোন প্রভাব পড়ছে না। একই ঘটনা বার বার পুনরাবৃত্তি হচ্ছে। তখন নিজের ভেতর একটা ক্রাইসিস তৈরি হয়।[/int-quote]
[int-qs]কার্টুনের কারণে আপনার খ্যাতি ও জনপ্রিয়তা দেশজুড়ে, এটাকে কীভাবে উপভোগ করেন?[/int-qs]
[int-ans name=”শিশির ভট্টাচার্য্য”]কার্টুন নিয়ে পরিচিতির কারণ হলো মিডিয়া। পত্রিকার মাধ্যমে সেগুলো মানুষের হাতে হাতে চলে যায়। এটাকে আমি খ্যাতি বলবো না, এটা এক ধরণের পরিচিতি। অনেকে হয়তো ব্যক্তিগতভাবে চেনে না, চেহারায় চেনে না কিন্তু যখন সিগনেচারটা দেই তখন বলে, আরে আপনি সেই শিশির! আবার আমার কোন ছবির প্রদর্শনী থাকলে সেখানে তুলনামূলক লোক সমাগম বেশি হয়। অনেকে আবার সেখানে আমার আঁকা ছবিগুলো দেখে এবং কার্টুনগুলো না দেখে হতাশ হন। এই পরিচিতির সুবিধা অসুবিধা দুটোই আছে।[/int-ans]
[int-qs]যাদের কার্টুন আঁকেন তাদের কারো সাথে দেখা হলে তাঁরা কেমন অনুভূতি প্রকাশ করেন?[/int-qs]
[int-ans name=”শিশির ভট্টাচার্য্য”]তাঁদের সবার সাথে যে দেখা হয় তা না। কারণ যে সোসাইটি নিয়ে আমি কার্টুন আঁকি তাঁদের কিছুটা এড়িয়ে চলার চেষ্টা করি। ইচ্ছে করেই দূর থেকে দেখার চেষ্টা করি। তবে এরমধ্যেও অনেকের সাথে দেখা হয় কথা হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তাঁদের মন্তব্যগুলো পজিটিভ, তাঁরা আমার কার্টুনগুলো উপভোগ করে।[/int-ans]
[int-qs]এড়িয়ে চলার চেষ্টা কেন?[/int-qs]
[int-ans name=”শিশির ভট্টাচার্য্য”]কারণ বেশি ঘনিষ্ঠ হয়ে গেলে বা তাঁদের সাথে ঘনঘন যোগাযোগ হলে যে পরিচয়ে আমরা তাঁদের চিনি সেটার চাইতে ব্যক্তি মানুষের পরিচয়টা বেশি হয়ে গেলে তখন সেটা একটু অন্যরকম। এই যেমন এখন রবীন্দ্রনাথ যদি আমার সামনে চলে আসেন কথা বলেন আড্ডা দেন তাহলে রবীন্দ্রনাথ আমাদের মধ্যে যেভাবে আছে সেটি কিছুটা হলেও পরিবর্তিত হবে। যাদের নিয়ে কার্টুন আঁকি সমালোচনা করি তাঁদের সাথে বেশি ঘনিষ্ঠ হয়ে গেলে হয়তো সেটি সেখানেও প্রভাব ফেলবে যার কারণেই কিছুটা এড়িয়ে চলার চেষ্টা।[/int-ans]
[int-qs]রসবোধের সাথে চিত্রকলার সম্পর্ক কোথায়?[/int-qs]
[int-ans name=”শিশির ভট্টাচার্য্য”]আমি মনে করি রসবোধ জীবনের একটা প্রাণশক্তি। এবং এই প্রাণশক্তিটা না থাকলে বেঁচে থাকাটা খুব একঘেয়ে হয়ে যেত। মানুষ যদি হাসতে না জানে তাহলে হয় না, যে হাসতে জানে সে হাসাতেও জানে। আর বাঙ্গালীর চারিত্রিক বৈশিষ্ঠ্যের দুটো প্রধান দিক হলো বিদ্রূপ আর হাস্যরস। বাঙ্গালীরা যত বিদ্রূপ আর হাস্যরস করতে পারে পৃথিবীর অনেক জাতিই তা পারে না।[/int-ans]
[int-qs]যেমন?[/int-qs]
[int-ans name=”শিশির ভট্টাচার্য্য”]অনেক কঠিন অবস্থাতেও বাঙ্গালীর বিদ্রূপ বা হাস্যরস করতে পারে সহজাতভাবে। হয়তো অনেক গরমে একজন কষ্ট পাচ্ছে বা দরদর করে ঘামছে সে অবস্থাতেও গরম নিয়ে এমন একটা কথা বলে ফেললো চারদিকে সেটা নিয়ে হাস্যরস তৈরি হল। আবার এখন যেমন জলাবদ্ধতা। এই জলাবদ্ধতা নিয়ে মানুষ কষ্ট পাচ্ছে একই সাথে এটা নিয়ে হাস্যরসও করছে।[/int-ans]
[int-qs]মন খারাপ হয়?[/int-qs]
[int-ans name=”শিশির ভট্টাচার্য্য”]হয়।[/int-ans]
[int-qs]মন খারাপ আপনার ছবি আঁকাকে কীভাবে প্রভাবিত করে?[/int-qs]
[int-ans name=”শিশির ভট্টাচার্য্য”]আমার কাজগুলোতে মূলত সামাজিক রাজনৈতিক বিষয়গুলোই নানাভাবে ঘুরেফিরে আসে আর এখানে মন খারাপের বিষয় অনেক। সোশ্যাল ক্রাইসিসের কিছু কিছু ঘটনা রক্ত ঠাণ্ডা করে দেয়ার মতো। এবং এটার প্রতিকারের জন্য আমরা কিছু করতে পারি না। দেখা যায় একই ঘটনা বারবার ঘটছে কিন্তু আমরা কিছুই করতে পারছি না। ইস্যুগুলো কি কি এগুলো আমরা সবাই জানি। এসবের কারণে নিজের ভেতরে নিরুপায় বা অসহায়বোধটা কাজ করে।[/int-ans]
[int-qs]অর্থাৎ আমাদের সামাজিক প্রেক্ষাপটের দুর্দশা শিল্প সাহিত্যকেও প্রভাবিত করছে?[/int-qs]
[int-ans name=”শিশির ভট্টাচার্য্য”]এটা করবেই। সামাজিক প্রেক্ষাপটের আলোকেই শিল্প সাহিত্য প্রভাবিত হয়। কবি তাঁর কবিতার মাধ্যমে সমসাময়িক বিষয়গুলো লিপিবদ্ধ করেন, সাহিত্যিক সাহিত্যকর্মে, চিত্রকর তাঁর ছবির মাধ্যমে। একজন চিত্রকর হিসেবে বলতে পারি আমরা কখনও বিশ্বাস করি না যে ছবি মানেই শুধু নান্দনিক কিছু হবে। নান্দনিকতা তো থাকবেই কিন্তু তার সাথে একজন সচেতন নাগরিকের সমাজ নিয়ে যে চিন্তা সেটিও প্রতিফলিত হবে।[/int-ans]
[int-qs]ব্যক্তিগত প্রসঙ্গে আসি। রাগ হয়?[/int-qs]
[int-ans name=”শিশির ভট্টাচার্য্য”]রাগ তো হয়ই।[/int-ans]
[int-qs]রাগ হলে কি করেন?[/int-qs]
[int-ans name=”শিশির ভট্টাচার্য্য”]রাগ হলে ধ্বংসাত্মক কিছু করি না এবং রাগটা বেশিক্ষণ স্থায়ী থাকে না।[/int-ans]
[int-qs]রাগ নিয়ন্ত্রণ করেন কীভাবে?[/int-qs]
[int-ans name=”শিশির ভট্টাচার্য্য”]চুপ হয়ে যাই।[/int-ans]
[int-qs]চিত্রকর না হলে কি হতেন?[/int-qs]
[int-ans name=”শিশির ভট্টাচার্য্য”]বলা মুশকিল। তবে যে দিকেই যাই শিক্ষকতার সাথেই থাকতে চাইতাম।[/int-ans]
[int-qs]স্বপ্ন দেখেন?[/int-qs]
[int-ans name=”শিশির ভট্টাচার্য্য”]দেখি। বিচিত্র সব স্বপ্ন দেখি, সেসব স্বপ্নের কিছু কিছু আমার ছবিতেও ফুটে উঠে।[/int-ans]
[int-img name=””]https://monerkhabor.com/wp-content/uploads/2017/08/shishir-2.jpg[/int-img]
[int-qs]ব্যক্তি শিশিরের জীবন দর্শন কি?[/int-qs]
[int-ans name=”শিশির ভট্টাচার্য্য”]শিক্ষক হিসেবে এক ধরণের দর্শন কাজ করে যে, যতটুকু জানি সেটা আমার ছাত্র ছাত্রীদের মাঝে দেয়া এবং তাদের থেকে পাওয়া। আর ব্যক্তি মানুষ হিসেবে, আমার যতটুকু জ্ঞান বুদ্ধি ও বিবেচনা তার অর্ধেকও যদি আমার মাধ্যমে প্রয়োগ করতে পারি এটাই স্বপ্ন।[/int-ans]
[int-qs]শিক্ষকতা এবং ছবি আঁকা বাদে অন্য কিছু করতে বলা হলে কোনটা করতে চাইবেন?[/int-qs]
[int-ans name=”শিশির ভট্টাচার্য্য”]পুরোপুরি বন্ধ হয়তো করতে পারবো না। যে বলবে তার সামনে ছবি না আঁকলেও দেখা যাবে মনে মনে ঠিকই ছবি আঁকা চলছে।[/int-ans]
[int-qs]লেখকদের যেমন ‘রাইটার্স ব্লক’ হয় চিত্রশিল্পীদের এমন কিছু হয় কি?[/int-qs]
[int-ans name=”শিশির ভট্টাচার্য্য”]হ্যাঁ হয়। এটা খুব কষ্টকর একটা সময়, মনে হয় সবকিছু কেমন স্থবির হয়ে আছে।[/int-ans]
[int-qs]নিজের কাজ নিয়ে প্রত্যাশা এবং প্রাপ্তির দূরত্ব কতটুকু?[/int-qs]
[int-ans name=”শিশির ভট্টাচার্য্য”]কখনও কখনও খুব কষ্ট হয় যখন মনে হয় এই যে দীর্ঘদিন ধরে ছবি আঁকছি কেন আঁকছি! যার জন্য ছবি আঁকছি, যাদের জন্য ছবি আঁকছি, যে কারণে ছবি আঁকছি সেগুলোতে কোন প্রভাব পড়ছে না। একই ঘটনা বার বার পুনরাবৃত্তি হচ্ছে। তখন নিজের ভেতর একটা ক্রাইসিস তৈরি হয়।[/int-ans]
[int-qs]এমনটা কি মনে হয় যে আমাদের সমাজটা একটা অচলায়তনের মাঝে আছে?[/int-qs]
[int-ans name=”শিশির ভট্টাচার্য্য”]মনে হওয়ার কিছু নেই, অচলায়তনের মাঝেই আছে। কেউ হয়তো লজ্জায় প্রকাশ করে না, কেউ হয়তো ভয়ে প্রকাশ করে না, কেউ হয়তো স্বার্থের কারণে প্রকাশ করে না। কিন্তু একই ঘটনা বারবার ঘটাই আমাদের অচলায়তনে অবস্থানের প্রমাণ দেয়।[/int-ans]
[int-qs]অনেক ধন্যবাদ স্যার আপনাকে মনের খবের সময় দেয়ার জন্য।[/int-qs]
[int-ans name=”শিশির ভট্টাচার্য্য”]ধন্যবাদ মনের খবরকেও[/int-ans]

Previous articleলন্ডনে মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক জরিপ
Next articleবাংলাদেশ মনোবিজ্ঞান সমিতির উদ্যোগে সেমিনার অনুষ্ঠিত

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here