কোভিড-১৯ মহামারীটি বিশ্বজুড়ে একটি সর্বনাশা প্রভাব ফেলছে। করোনাভাইরাসকে প্রতিহত করার প্রচেষ্টা বিশ্বের জনসংখ্যার স্বাস্থ্যের জন্য অত্যাবশ্যক, তবে এগুলো শিশুদের মধ্যে অসচারণ, লিঙ্গ-ভিত্তিক সহিংসতা এবং যৌন শোষণ সহ বিভিন্ন সহিংসতার ঝুঁকি বাড়িয়ে দিচ্ছে। শিশুদের বিরুদ্ধে সহিংসতা অবসানের জন্য সকল সংস্থার নেতারা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, এর পরিপ্রেক্ষিতে আমরা গভীর উদ্বেগ জানাতে, পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানাতে এবং একত্রিত হয়ে শিশুদেরকে সহিংসতা থেকে রক্ষা করতে এবং আমাদের দেশে এবং অন্যান্য সম্প্রদায়ের শিশুদের উপর কোভিড-১৯ এর প্রভাব হ্রাস করার জন্য আমাদের সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছি।
বিশ্ব জনসংখ্যার এক তৃতীয়াংশ কোভিড-১৯ এর জন্য লকডাউনে রয়েছে এবং স্কুল বন্ধের ফলে ১.৫ মিলিয়নেরও বেশি শিশু প্রভাবিত হয়েছে। চলাচলে বিধিনিষেধ, নিম্ন আয়, বিচ্ছিন্নতা, উপচে পড়া ভিড় এবং উচ্চ স্তরের মানসিক চাপ এবং উদ্বেগের কারণে বাচ্চাদের ঘরে বসে থাকার ফলে শারীরিক, মানসিক এবং যৌন নির্যাতনের অভিজ্ঞতা এবং পর্যবেক্ষণের সম্ভাবনা বাড়িয়ে দিচ্ছে – বিশেষত যেসব বাচ্চারা ইতিমধ্যে হিংস্র বা কর্মহীন পারিবারিক পরিস্থিতিতে জীবনযাপন করছে। বিভিন্ন অনলাইন ভিত্তিক মাধ্যমগুলো অনেক শিশুর শেখা, সহায়তা করা এবং খেলার জন্য অন্যতম হয়ে উঠেছে ,এর ফলে সাইবার বুলিং, ঝুঁকিপূর্ণ অনলাইন আচরণ এবং যৌন শোষণের সম্ভাবনাকে বাড়িয়ে তুলছে। স্কুল বন্ধ থাকার জন্য শিশুদের স্কুলের বন্ধু, শিক্ষক, সমাজকর্মীর সাথে দূরুত্ব এবং স্কুলে থাকার সময় যে নিরাপত্তা এবং পরিষেবা সরবরাহ করা হতো তার অভাবে পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। সবচেয়ে দুর্বল শিশুরা অর্থাৎ শরণার্থী, অভিবাসী এবং অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত, স্বাতন্ত্র্য বঞ্চিত, পিতামাতার যত্ন ব্যতীত জীবনযাপনরত, রাস্তায় এবং শহুরে বস্তিতে বসবাসরত, প্রতিবন্ধী এবং সংঘাত-আঞ্চলিক অঞ্চলে বসবাস করা শিশুরা – বিশেষ উদ্বেগের বিষয় ।
অনেকের কাছে ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক দুর্বলতা শিশুশ্রম, বাল্য বিবাহ এবং শিশু পাচারের হুমকি বাড়িয়ে তুলবে। আমাদের এখনই কাজ শুরু করা উচিত। আমরা একসাথে সরকার, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এবং প্রতিটি সেক্টরের নেতাদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি যে, কভিড -১৯ এর বিস্তৃত প্রতিরোধ প্রতিক্রিয়ার অংশ হিসাবে শিশুদেরকে সহিংসতা, শোষণ ও অপব্যবহারের তীব্র ঝুঁকি থেকে বাঁচানোর জন্য ঐক্যবদ্ধ হয়ে জরুরীভাবে সাড়া প্রদানের জন্য। সরকারকে প্রধান ভূমিকা পালন করতে হবে। তাদের অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে যে কোভিড-১৯ প্রতিরোধ এবং প্রতিক্রিয়া পরিকল্পনার অংশ হিসেবে সমস্ত শিশুকে সহিংসতা, অবহেলা ও অপব্যবহার থেকে রক্ষা করার জন্য বয়সের উপযুক্ত এবং লিঙ্গ অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। শিশু সুরক্ষা পরিষেবা এবং কর্মীদের অবশ্যই প্রয়োজন অনুসারে মনোনীত করা উচিত । সরকারের সাথে কাজ করা এবং সমর্থন করা, আমাদের সম্মিলিত প্রতিক্রিয়ায় অবশ্যই অন্তর্ভুক্ত থাকতে হবে: মানসিক স্বাস্থ্য এবং মনো-সামাজিক সহায়তা সহ প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য ও সামাজিক কল্যাণ পরিষেবা বজায় রাখা; শিশু সুরক্ষা কেস ম্যানেজমেন্ট এবং জরুরী বিকল্প যত্নের ব্যবস্থা সরবরাহ; সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ শিশু এবং পরিবারের জন্য সামাজিক সুরক্ষা নিশ্চিত করা; প্রতিষ্ঠানগুলিতে বাচ্চাদের যত্ন অব্যাহত রাখাএবং সুরক্ষা; এবং প্রমাণ-ভিত্তিক তথ্য এবং পরামর্শ প্রদানের মাধ্যমে অভিভাবক, সেবাপ্রদানকারী এবং শিশুদের মধ্যে পারস্পরিক যোগাযোগ বজায় রাখা। জাতীয় হেল্পলাইন, স্কুল পরামর্শদাতা এবং অন্যান্য শিশু-বান্ধব প্রতিষ্ঠানগুলোকে সঙ্কটে থাকা শিশুদের সাহায্যের জন্য পৌঁছানোর ব্যবস্থা করতে হবে এবং তাদের অবশ্যই কোভিড-১৯এর জন্য প্রয়োজনীয় প্রতিরোধ ব্যবস্থা থাকতে হবে।
অনলাইনে ক্ষতিকর বিষয়ের তীব্র ঝুঁকির কারণে, বাচ্চাদের অনলাইনে সুরক্ষিত রাখতে প্রযুক্তি সংস্থাগুলো এবং টেলিকম সরবরাহকারীদের যথাসাধ্য চেস্টা করতে হবে এর মধ্যে রয়েছে বিনামূল্যে শিশু হেল্পলাইনগুলোতে, বয়সের উপযুক্ত পরিষেবা এবং নিরাপদ ই-শিক্ষা প্ল্যাটফর্মগুলিতে প্রবেশাধিকার দেওয়া – এবং তাদের প্ল্যাটফর্মগুলোতে শিশুদের অনলাইন সুরক্ষা বিষয়ক পরামর্শ প্রদান করা। তাদেরকে অবশ্যই গ্রুমিং এবং শিশু যৌন নির্যাতনের চিত্র এবং ভিডিও তৈরি ও বিতরণ সহ অনলাইনে বাচ্চাদের বিরুদ্ধে ক্ষতিকারক কার্যকলাপ সনাক্ত ও বন্ধ করতে আরও ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। শিশুদের বিরুদ্ধে সহিংসতা অবসানের লক্ষ্যে বিশ্বব্যাপী যে সংগঠনগুলি কাজ করে যাচ্ছে, আমরা তাদের সাথে কার্যকর শিশু সুরক্ষা সমাধানের ক্ষেত্রে কাজ করব এবং বিনিয়োগ চালিয়ে যাব।
আমরা সম্মিলিতভাবে প্রযুক্তিগত সংস্থান এবং দিকনির্দেশনাগুলো উন্নত করব এবং নীতিনির্ধারক, অনুশীলনকারী, পিতা-মাতা, সেবাপ্রদানকারী এবং বাচ্চাদের মধ্যে বিতরণ করব। এবং আমরা এই প্রতিকূল সময়ে শিশুদের সুরক্ষিত রাখতে চারিদিকে কাজ করে সাহসী স্বাস্থ্যকর্মী, শিশু সুরক্ষাকর্মী এবং মানবিক পেশাদারদের সহায়তা করব। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে, বিশ্ব সম্প্রদায় শিশুদের সহিংসতা থেকে রক্ষায় উল্লেখযোগ্য উন্নতি করেছে। বর্তমানের সংকটময় সময়ে আমাদের অবশ্যই পিছিয়ে পরা যাবে না।বাচ্চাদের এখনই নিরাপদ রাখতে আমাদের যথাসাধ্য চেষ্টা করা উচিত। আমাদের অবশ্যই একসাথে পরিকল্পনা করা উচিত, যাতে এই তাৎক্ষণিক স্বাস্থ্য সঙ্কট শেষ হয়ে গেলে, আমরা শিশুদের অবহেলা ও সব ধরণের নির্যাতন সমাপ্তির লক্ষ্যে ফিরে যেতে পারি।
সূত্র: https://www.who.int/news-room/detail/08-04-2020-joint-leader-s-statement—violence-against-children-a-hidden-crisis-of-the-covid-19-pandemic
Home করোনায় মনের সুরক্ষা বিশ্ব পরিস্থিতি কোভিড-১৯: শিশুদের বিরুদ্ধে সহিংসতায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বিবৃতি