মানসিক স্বাস্থ্য ও সম্পর্ক একে অপরের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত। সুস্থ সম্পর্কের অভাবে পেশাগত ও পারিবারিক জীবন ব্যাহত হচ্ছে, যা ব্যক্তিকে মানসিকভাবেও বিপর্যস্ত করছে।
মানসিকভাবে ভালো থাকার ক্ষেত্রে সুস্থ সম্পর্ক একমাত্র কারণ না হলেও এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা ধারক। আমাদের চারপাশের সব মানুষই কোনো না কোনো সম্পর্কে জড়িয়ে আছে। পারস্পরিক এই সম্পর্কই আমাদেরকে ভালো রাখে আবার কখনো খারাপ রাখে। সুতরাং বলা যেতে পারে, সম্পর্ক আমাদের মানসিকভাবে ভালো বা খারাপ রাখার ক্ষেত্রে একটা শক্তিশালী মাপকাঠি হিসেবে কাজ করে।
যেসব ব্যক্তি পরিবার, বন্ধু বা সমাজের বিভিন্ন মানুষের সঙ্গে অনেক বেশি সংযুক্ত, তারা মানসিক ও শারীরিকভাবে অনেকটাই সুস্থ থাকে অন্যদের তুলনায়। তারা একে অপরের সঙ্গে সুখ-দুঃখ শেয়ার করার মাধ্যমে হালকা হতে পারে, আলোচনার মাধ্যমে বাস্তব চিন্তা করতে পারে, আবার অনেক সমস্যার সমাধানও খুঁজে পেতে পারে।
শুধু অনেক বেশি মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ থাকলেই যে ব্যক্তি মানসিকভাবে সুস্থ থাকবে তা নয় বরং কতটা সুস্থ সম্পর্কের মধ্যে আছে সেটা গুরুত্বপূর্ণ। অসুস্থ সম্পর্ক ব্যক্তিকে একা থাকার থেকেও অনেক বেশি একাকী করে দেয় অনেক মানুষের মধ্যে থাকার পরও। সুস্থ সম্পর্ক বেঁচে থাকার পথ দেখায়।
পক্ষান্তরে, অসুস্থ সম্পর্ক অনেক ক্ষেত্রেই বিষণ্নতা তৈরি করে ব্যক্তিকে মৃত্যুর দিকেও ঠেলে দেয়। গবেষণায় দেখা গেছে, সুস্থ ও সুখী জীবনের জন্য সম্পদ নয় বরং সুস্থ সম্পর্কের অবদান রয়েছে। সুস্থ সম্পর্কের মানুষের মধ্যে উদ্বেগ ও বিষণ্নতার মাত্রা কম এবং সহমর্মিতা, বিশ্বস্ততা ও আত্মসম্মানবোধ বেশি দেখা যায়।
অসুস্থ সম্পর্ক দাম্পত্য বিচ্ছেদ ঘটাতে পারে, যা ব্যক্তির পারিবারিক ও সামাজিক জীবনেও নানা রকম মানসিক চাপ সৃষ্টি করতে পারে। অসুস্থ সম্পর্ক শারীরিকভাবেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলে থাকে। যেমন মানসিক চাপের কারণে হার্টের সমস্যা, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিসসহ নানা ধরনের রোগ তৈরি হয়।
এটা অনস্বীকার্য, আন্তব্যক্তিগত সম্পর্ক ব্যক্তির মানসিক ও শারীরিকভাবে সুস্থ থাকা ও সুখী হওয়ার ক্ষেত্রে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। মানসিকভাবে সুস্থ থাকা ছাড়াও সুস্থ সম্পর্ক ব্যক্তির রোগ প্রতিরোধব্যবস্থাকে শক্তিশালী করে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং সুস্থ জীবনযাপনে সহযোগিতা করে।
সুস্থ ও অসুস্থ সম্পর্ক বোঝার উপায়
সুস্থ সম্পর্কের লক্ষণগুলো হলো-
একে অপরের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা, ভালো কাজের প্রশংসা করা, একে অপরের সাফল্যে আনন্দিত হওয়া, পারস্পরিক আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেওয়া, ব্যক্তিকে মানুষ হিসেবে মূল্যায়ন করে তার আচরণ শোধরাতে সহযোগিতা করা, বিচারের দৃষ্টিতে না দেখে নিরপেক্ষ আচরণ করা।
একে অপরের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা, কাউকে হুমকি না দেওয়া, মানসিক বা শারীরিকভাবে অত্যাচার না কর।, দাম্পত্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে পারস্পরিক সম্মতিতে যৌথ কাজ করা, তদন্ত বা খবরদারি করার পরিবর্তে সমবেদনার সঙ্গে কোনো কিছু জানতে চাওয়া ইত্যাদি।
অসুস্থ সম্পর্কের লক্ষণগুলো হলো-
কাউকে অসম্মান প্রদর্শন করা, ভালো কাজের প্রশংসা না করে ভুল কাজের তিরস্কার করা, একে অপরের উন্নতিতে ঈর্ষা করা, নিজের সুবিধামতো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা, জোর করে কারও আচরণ শুধরানোর চেষ্টা করা, একে অপরের প্রতি অবিশ্বাস ও সন্দেহ পোষণ করা।
হুমকি দেওয়া বা ভয় পাওয়া, খবরদারি করা ও মনে আঘাত দেওয়া, দাম্পত্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে জোর করে সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়া, কারও সমস্যা জানার পরিবর্তে অভিযোগ করা, সব সময় অতীতের নেতিবাচক কাজের উদাহরণ টেনে আনা ইত্যাদি।