সামাজিক মনস্তত্ত্বের একটি গুরুত্বপূর্ণ দাবি হল, আমাদের মানসিক অবস্থার উপর চারপাশের পরিবেশের একটি বড় প্রভাব রয়েছে।
বিভিন্ন গবেষণায় এটা প্রমাণিত এবং মনস্তাত্ত্বিক, সামাজিক ও ব্যবহারিক বিভিন্ন তত্ত্ব দ্বারা প্রতিষ্ঠিত যে, চারপাশের পরিবেশ আমাদের মানসিক বিকাশ এবং আচার আচরণ গড়ে তুলতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। তাই মনস্তাত্ত্বিক যে কোন সমস্যা সৃষ্টি এবং একই সাথে সেটি সমাধানেও চারপাশের পরিবেশের ভূমিকা অগ্রগণ্য।
একটি শিশু যখন বড় হয়ে ওঠে, তার জীবন যাপন, আচার আচরণ, চিন্তা ভাবনা সবকিছুই চারপাশের পরিবেশ ও মানুষ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। এক কথায়, সে দেখে দেখেই সবকিছু শেখে। ধীরে ধীরে বড় হয়ে ওঠার পরেও তার মাঝে সেই প্রভাব বিদ্যমান থাকে এবং সে তার পূর্ব গঠিত আবেগ দ্বারা তাড়িত হয়েই সবকিছু বিচার করে এবং সেই অনুসারে আচার আচরণ করে।
আবার চারপাশের পরিবেশ যদি মানসিক অবস্থার উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে, একজন সুস্থ মানসিকতা সম্পন্ন মানুষও ধীরে ধীরে বিভিন্ন মানসিক সমস্যায় আক্রান্ত হয় এবং তার আচার আচরণে পরিবর্তন আসে। পূর্বের কোন প্রভাবের ফলে কিংবা বর্তমানে সৃষ্ট কোন সমস্যার ফলে যদি কারও মানসিক স্বাস্থ্য জটিলতা সৃষ্টি হয়, তাহলে এর সমাধানে মনস্তত্ত্ববিদগণ হাওয়া বদলের পরামর্শ প্রদান করেন। অর্থাৎ চারপাশের পরিবেশ পরিবর্তন করে নতুন পরিবেশে বসবাসের পরামর্শ প্রদান করেন।
যখন কেউ পারিপার্শ্বিক চাপের প্রভাবে কিংবা কোন দুর্ঘটনায় বিপর্যস্ত হয়ে মানসিক অবসাদ, হতাশা, বিষণ্ণতা, জীবনের প্রতি আকর্ষণ হারিয়ে ফেলাসহ এরকম আরও অনেক ধরণের মানসিক সমস্যায় ভোগে, তার এসব মানসিক সমস্যা সমাধানে মূল ভূমিকা রাখে তার চিন্তা ভাবনার পরিবর্তন।
তার মাঝে যদি মনোবল এবং আত্ম বিশ্বাস বৃদ্ধি করা না যায় তাহলে কোনভাবেই তার মনের ব্যাধি সারিয়ে তোলা সম্ভব হয় না। এটা আমরা সবাই জানি যে, যে কোন সুন্দর পরিবেশ আমাদের মনে ইতিবাচক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে।
আর চারপাশে যদি মানসিক চাপ সৃষ্টির মতো মানুষ কিংবা অবস্থা না থাকে, তাহলে সেটিও একজন মানুষকে ধীরে ধীরে ইতিবাচক চিন্তা ভাবনায় প্রেরিত করে।
তাই আপনার কাছের কোন মানুষের যদি মানসিক সমস্যা সমাধানে সহজ কোন উপায়ের প্রয়োজন হয়, তাহলে চিকিৎসা পদ্ধতি হিসেবে তাকে নতুন কোন মনোরম পরিবেশে রাখার ব্যবস্থা করতে পারলে তার মনেও এ ধরণের ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে।
শিশুসহ সকল বয়সী মানুষের জন্যই মনস্তত্ত্ববিদগণ এই পদ্ধতি ব্যবহারের পরামর্শ প্রদান করে থাকেন। হাওয়া বদল বা নতুন পরিবেশ সব বয়সী মানুষের দুশ্চিন্তা, উদ্বিগ্নতা, বিষণ্ণতা, হঠাৎ হঠাৎ মন পরিবর্তন ইত্যাদি মানসিক সমস্যার সমাধান করতে সক্ষম।
চারপাশের অবস্থা বা পরিবেশের বদল যে মানুষের মনস্তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক পরিবর্তনে বিশেষ ভূমিকা পালন করে সেটি দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন গবেষণার মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে। তাছাড়া পরিবেশ আমাদের মনের সাথে সাথে আমাদের সামাজিক সম্পর্ক, অন্যদের প্রতি আমাদের মনোভাব, ক্রোধ, শিক্ষা, রাজনীতি এবং আরও বিভিন্ন দিকের উপর প্রভাব বিস্তার করে।
হাওয়া বদল মানসিক সমস্যা সমাধানের মাধ্যমে আরও বিভিন্ন অমীমাংসিত বিষয় সমাধানের ক্ষমতা রাখে। তাই বলা যায়, মানসিক অবস্থা পরিবর্তনের বা মানসিক সমস্যা সমাধানের প্রচেষ্টা করতে চাইলে হাওয়া বদল অবশ্যই প্রথমে করনীয় কাজ হিসেবে ভূমিকা রাখতে পারে।
অনুবাদ করেছেন: প্রত্যাশা বিশ্বাস প্রজ্ঞা
স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে প্রাণে