মাথার ভেতর সবসময় নানা দুশ্চিন্তা ঘুরে বেড়ায়

আমার নাম অংকুর। বয়স ২৬ বছর। আমি ঘুমের মধ্যে অনেক সময় অদ্ভুত ও উল্টোপাল্টা জিনিস দেখি। ঘুম ভেঙে গেলে মনে হয় হৃদস্পন্দন বেড়ে গেছে, বুক ধড়ফড় করে। মাথার পেছনের পাশে যেন একটা অজানা চাপ বা অস্বস্তি কাজ করে। হঠাৎ মন অন্যদিকে সরে গেলেই এক ধরনের অস্থিরতা তৈরি হয়। তখন মনে হয়, কানে কিছু শুনতে পাচ্ছি না ঠিকমতো, মনোযোগও থাকে না কোনো কাজে। এই অবস্থায় অনেক সময় টেনশন হয়, খুব ভয়ও লাগে। ভয়টা এতটাই তীব্র হয় যে, শরীরেও সেটা অনুভব করি—মন-মস্তিষ্ক সব এলোমেলো লাগে। আমি চাকরি করি ঠিকই, কিন্তু মন টিকে না। মনে হয় বেশিদিন এখানে থাকব না, কারণ কর্মস্থলের পরিবেশ আর মানুষের ব্যবহার খুব একটা ভালো নয়। বিদেশ যাওয়ার ইচ্ছে আছে, সেই আশায় দুলাভাইয়ের কাছ থেকে ধার নিয়ে অনেক টাকা খরচ করেছি। এখন যদি বিদেশ যাওয়া না হয়, তাহলে এই ঋণের পুরোটা আমাকে একাই শোধ করতে হবে। মাথার ভেতর সবসময় নানা দুশ্চিন্তা ঘুরে বেড়ায়। প্রায়ই আমার এক্সের কথা মনে পড়ে, তবে ফিরে যেতে চাই না আর। নতুন কাউকে পেলেও তাকে ধরে রাখতে পারি না—আবার সেই পুরোনো সম্পর্কটাই বারবার মনে পড়ে। এসব থেকে নিজেকে দূরে রাখতে চাইলেও পারি না। বিয়ে করতে চাই, বিয়ে করার জন্য টাকাও জমাতে পারছি না—যেভাবেই হোক টাকা কোথাও না কোথাও চলে যাচ্ছে। সাইকেল চালিয়ে যাতায়াত করি অফিসে, গাড়িভাড়া বাঁচাই—তবু কোনোভাবেই যেন হিসেব মেলানো যায় না। শুধু শরীরটাই কষ্ট পাচ্ছে এই কষ্টের বোঝা টানতে টানতে। যেখানে কাজ করি, সেখানেও কয়েকদিন পরপর কেউ না কেউ এসে শুধু টাকা ধার দেয়ার জন্য চাপ দেয়,তখন না দিয়েও পারিনা। সেই টাকা কেও ফেরতও দেয়না ঠিক মতো। আবার ভয় হয়, যদি দুলাভাই প্রতারণা করে আমার বোনকে ছেড়ে দেয়, তাহলে তো ১১ লাখ টাকার ঋণের পুরোটা আমার কাঁধেই এসে পড়বে। তখন বোনকেও সামলাতে হবে আমাকেই। সত্যি বলতে কি, এখন দুলাভাইয়ের ওপর কোনো বিশ্বাসই আমার নেই। আমার নিজের গয়না, পিসি, আইডি—সব বিক্রি করে সেই টাকা দিয়েছি। এমনকি মায়ের বিয়ের সময় পাওয়া সোনার গয়নাও বন্ধক দিয়েছি। যা-ই কামাই করেছি, সব একে একে শেষ হয়ে গেছে। কবে এই সব টাকা আবার ফেরত পাব, জানি না। আমার মামি কালো জাদু করে সবাইকে তা শুনেছি, আমারও মাঝে মাঝে মনে হয়, আমার মামি আমাকে নিয়ে কালো জাদু করে, তাই আমার জীবনে কোনো উন্নতি হচ্ছেনা, কোনো মেয়েও আমার পাশে টিকছে না।

আপনার সমস্যাগুলোর মাত্রা ভিন্ন হলেও, এসবের উৎস মনে হয় একই জায়গা থেকে আসছে। প্রথমত, আপনার একটু খারাপ লাগলেও বলতেই হয় — আপনার সংগঠনের (organizing) দক্ষতা তুলনামূলকভাবে কম। তবে এ ধরনের দক্ষতা একদিনে হঠাৎ করে অর্জন করা সম্ভব নয়। পাশাপাশি আপনার চিন্তাভাবনায়ও বেশ কিছু ত্রুটি বা ভুল রয়েছে। দুটি দিকেই আপনাকে মনোযোগ দিয়ে কাজ করতে হবে।

ইতোমধ্যে কিছু সমস্যাও তৈরি হয়েছে — যেমন ঘুমের সমস্যা, কাজে মনোযোগ দিতে না পারা, অতিরিক্ত ভয় পাওয়া, সারাক্ষণ দুশ্চিন্তায় থাকা এবং অগোছালো চিন্তা। এসব লক্ষণ থেকে অনুমান করা যায় আপনি বর্তমানে বিষণ্নতা বা ডিপ্রেশনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন। এসব বিষয় একসাথেই সমাধান করতে হবে। সম্ভব হলে দ্রুত কোনো মনোরোগ বিশেষজ্ঞের সঙ্গে সরাসরি দেখা করুন। আপনার কাছাকাছি কোনো মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যোগাযোগ করে এই চিকিৎসা নিতে পারেন।

প্রাথমিকভাবে আপনি ট্যাবলেট ‘ইসিটা ৫ মিগ্রা’ সকালে একটি করে খাওয়া শুরু করতে পারেন। এছাড়াও আপনার চিন্তার ভুলগুলো (cognitive errors) ঠিক করতে আপনাকে দু’টি ছোট পরামর্শ দিচ্ছি। তবে মনে রাখবেন, এগুলো পুরোপুরি বোঝার জন্য একজন বিশেষজ্ঞের সঙ্গে বসে বিস্তারিত আলোচনা করা প্রয়োজন।

আপনার জন্য কিছু প্রাথমিক করণীয়:

• আপনার সমস্যাগুলো নিজে হাতে লিখে একটি তালিকা তৈরি করুন।
• সেগুলো থেকে এক এক করে যেটা সহজ মনে হয়, তা বেছে নিন।
• প্রতিটির জন্য একটি করে পদক্ষেপ নিন — হয় সেটি পরিবর্তন, সমাধান বা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত।

মনে রাখবেন, একসাথে সব সমাধান করার চেষ্টা না করে ধাপে ধাপে এগোতে হবে। একটি বিষয়ে যখন সিদ্ধান্ত নেবেন, ভালোভাবে চিন্তা করে নিন যেন তা আবার বদলাতে না হয়। বারবার সিদ্ধান্ত বদলানো আত্মবিশ্বাস কমিয়ে দেয়। শুরুতে ভুল হতে পারে, কিন্তু এই চর্চাই আপনাকে ধীরে ধীরে সাহসী ও দক্ষ করে তুলবে। এখনই উপরের বিষয়গুলো শুরু করুন। প্রয়োজনে আমাদের সঙ্গে অনলাইনেও চিকিৎসা নিতে পারেন।

• জানেন কি,প্রতিদিন কত ধরনের চিন্তা আপনি করেন? আপনার ৭৫% চিন্তা নেগেটিভ!