বিষণ্ণতা রোগে যা যা করবেন না

0
169
বিষণ্ণতা

নানা কারণে মন খারাপ হতেই পারে। সুস্থ মানুষের জীবনে দুঃখবোধ হওয়া এবং মন খারাপ থাকা স্বাভাবিক ঘটনা। কিন্তু বিষণ্ণতা বা ডিপ্রেশন মন খারাপের চেয়েও একটু বিশেষ কিছু।

বিষণ্ণতা একটি আবেগজনিত মানসিক সমস্যা। দুঃখবোধের মতো সাধারণ আবেগ যখন অযৌক্তিক, তীব্র ও দীর্ঘসময়ব্যাপী কোনো ব্যক্তিকে ঘিরে থেকে তার স্বাভাবিক জীবনযাপন, কর্মতৎপরতা ও পারস্পরিক সম্পর্ককে বাধাগ্রস্ত করে, তখন সেটাকে বলা হয় বিষণ্ণতা।

সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও এই রোগ বর্তমানে বেড়েই চলছে । বিষণ্ণতা বিজ্ঞানভিত্তিক চিকিৎসা রয়েছে। বিষণ্ণতা পরিপূর্ণ চিকিৎসার জন্য প্রয়োজন ‘বায়ো-সাইকোসোশ্যাল’ মডেলধর্মী চিকিৎসা। অর্থাৎ, রোগীকে ওষুধ খাওয়াতে হবে, সাইকোথেরাপি দিতে হবে আর পারিবারিক ও সামাজিক সহায়তা দিতে হবে।

বিষণ্ণতা রোগে যা করতে নেই সে সম্পর্কে নিচে কিছু টিপস দেয়া হলে-

১. বিষণ্ণতাকে কখনো উড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করবেন না। অনেকের ধারণা বিষণ্ণতা কোনো অসুখই না; নিজে থেকেই এটা ভালো হয়ে যাবে। তাই ঘরে বসেই এই রোগ দরূ করতে চান। কখনো ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়াকে তেমন গুরুত্ব দেন না।

২. বিষণ্ণতা রোগের চিকিৎসায় অধৈর্য হওয়া যাবে না। মনে রাখতে হবে বিষণ্ণতা দূর করা কঠিন বিষয় নয় তবে ধৈর্য ধরে চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলতে হবে। চিকিৎসককে পর্যাপ্ত সময় দিতে হবে এবং তার পরামর্শ মেনে চলতে হবে; তবেই আসবে সফলতা।

৩. বিষণ্ণতা রোগে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কখনই নিজে নিজে ওষুধ খাওয়া বন্ধ করবেন না। এমনকি ঔষধের মাত্রা পরিবর্তন এবং নতুন ঔষধ যোগ করবেন না।

৪. নিজের ভেতরকার নেতিবাচক চিন্তাগুলোকে প্রশ্রয় দেবেন না। ডিপ্রেশন রোগে মানুষের মনে বিভিন্ন রকম নেতিবাচক চিন্তা ঘুরপাক খেতে থাকে। যেমন: আমিই বুঝি সবচেয়ে খারাপ, আমার মতো দুঃখ কারো নেই, আমি সবার চেয়ে অসুস্থ, আমি ব্যর্থ একজন মানুষ-এই ধরনের চিন্তাগুলো সুস্থ হওয়ার পথে সবচেয়ে বড় বাধা। তাই, এইনেতিবাচক চিন্তাগুলোকে মনে স্থান দেয়া যাবে না।

৫. আশাহত হওয়া যাবে না কোনভাবেই। নিজের কাছে খুব বেশি কিছু আশা করবেন না। নিজের কাছে খুব বেশি আশা করলে আশাভঙ্গের বেদনায় আরও বেশি বিষাদগ্রস্ত হবেন। মনে রাখবেন আস্তে আস্তে আপনি সবই করতে পারবেন। নিজেকে সময় দিন।

৬. বিষণ্ণ রোগীকে ডাক্তারের কাছে না নিয়ে শুধুমাত্র আনন্দদায়ক পরিবেশে রাখা বা বেড়াতে নিয়ে গেলেই হবে না। অনেকে মনে করেন শুধুমাত্র হাসিখুশি পরিবেশে থাকলেই বিষণ্ণতা ভালো হয়ে যাবে। এ ধারণা করা ভুল। ভিন্ন পরিবেশে সাময়িকভাবে বিষণ্ণতা কিছটুা কাটলেও রোগী সুস্থ হন না।

৭. বিষণ্ণ অবস্থায় জীবনের কোনো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিবেন না। যেমন : বিয়ে করা বা না করা, বিবাহবিচ্ছেদ ঘটানো, নতুন চাকরি নেওয়া বা চাকরি ছেড়ে দেওয়া ইত্যাদি কাজ থেকে বিরত থাকুন।

৮. বিষণ্ণতায় আক্রান্ত রোগীর মধ্যে মৃত্যুচিন্তা আর আত্মহত্যার প্রবণতা থাকলে তাকে একা রাখা যাবে না। চেষ্টা করুন সব সময় স্বজন ও বন্ধুদের সঙ্গে থাকতে। মৃত্যুর কারণ ঘটাতে পারে এমন জিনিস যেমন ছুরি, বটি, ওষুধ, দড়ি ইত্যাদি জিনিস সামনে রাখা যাবে না।

৯. আজকাল সবাই ভার্চুয়াল জগত নিয়েই ব্যস্ত থাকি। ইন্টারনেটের এই যুগে, স্ক্রিনের আড়ালে বসে গল্প করে সময় পার করি। কিন্তু এতে কোনো লাভ তো হয়-ই না বরং ক্ষতি হয় বেশি। আর বিষণ্ণ ব্যক্তির এই ভার্চুয়াল জগতের পিছনে সময় কাটানো যাবে না। মনের কথাগুলো মনে না রেখে বরং মানুষের সাথে সামনা-সামনি কথা বলার চেষ্টা করতে হবে। নিজেকে ব্যস্ত রাখতে হবে বিভিন্ন সামাজিক কাজে।

জীবন অনেক মূল্যবান। শুধুমাত্র বিষণœতার মতো অসুস্থতার কারণে আমরা হারিয়ে ফেলি আমাদের কাছের মানুষদের। সম্প্রতি দেশে টিনেজদের আত্মহত্যার পরিমাণ বেড়েছে। এজন্য বিশেষজ্ঞরা বিষণ্ণতাকেই দায়ী করছেন। তাই আমাদের উচিত এখনই সচেতন হওয়া এবং সচেতন করা চারপাশের সকলকেই।

মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে চিকিৎসকের সরাসরি পরামর্শ পেতে দেখুন: মনের খবর ব্লগ
করোনায় মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক টেলিসেবা পেতে দেখুন: সার্বক্ষণিক যোগাযোগ
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
করোনায় সচেতনতা বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও বার্তা দেখুন: সুস্থ থাকুন সর্তক থাকুন

Previous articleমেন্টাল হেলথ ফিল্ম প্রাইজ: আপনার ভোট প্রদানের শেষ দিন ২৫ সেপ্টেম্বর
Next articleমায়ের মানসিক অবসাদ বোঝা যায় সন্তানের হার্টবিটে: গবেষণা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here