নারীরা পুরুষদের তুলনায় উদার- আচরণগত পরীক্ষার মাধ্যমে এমনটিই দেখা গেছে। শুধু তাই নয়, বর্তমানে গবেষকরা এটাও বের করতে সমর্থ হয়েছেন যে, সামাজিক ও স্বার্থপর আচরণের ক্ষেত্রে নারী ও পুরুষের মস্তিষ্ক ভিন্ন প্রতিক্রিয়া প্রদর্শন করে।
নারীদের ক্ষেত্রে সামাজিক আচরণগুলো যেখানে অধিকতর শক্তিশালী সংকেত দেয় সেখানে পুরুষ মস্তিষ্ক স্বার্থপর আচরণের ক্ষেত্রে অধিকতর প্রতিক্রিয়া দেখায়। আচরণগত পরীক্ষায় দেখা গেছে নারীরা কিছু পরিমাণ অর্থ পুরুষদের তুলনায় উদারভাবে অন্যদের সঙ্গে ভাগাভাগি করে নিতে পারে।
এই আচরণের বিষয়টি আরো গভীরভাবে বোঝার জন্য যুরিখ বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের স্নায়ুবিজ্ঞানীরা, এ ধরণের সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় মস্তিষ্কের যে অংশ সক্রিয় থাকে তা লক্ষ করেন। তারাই প্রথম দেখাতে পেরেছেন যে সামাজিক এবং স্বার্থপর আচরণের ক্ষেত্রে নারী ও পুরুষের মস্তিষ্ক আলাদাভাবে প্রতিক্রিয়া প্রদর্শন করে।
স্বার্থপর আচরণ পুরুষদের মস্তিষ্কে রিওয়ার্ড সিস্টেম অথবা প্রেষণা প্রদানকারী অন্ত্রকে অধিকতর সক্রিয় করে-
মস্তিষ্কের মাঝামাঝি আছে স্ট্রিয়াটাম। কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে লাভ-ক্ষতির হিসাব করে এই স্ট্রিয়াটাম। গবেষণায় দেখা যায় যে, নারীদের মস্তিষ্কের স্ট্রিয়াটাম কোনো সামাজিক বা ইতিবাচক সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে বেশি সক্রিয় থাকে। অপরদিকে যখন কোনো স্বার্থপর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় তখন পুরুষদের মস্তিষ্কের স্ট্রিয়াটাম বেশি সক্রিয় থাকে।
ডিসরাপটেড রিওয়ার্ড সিস্টেম অথবা অস্থির প্রেষণা প্রদানকারী অন্ত্র নারীদের মধ্যে স্বার্থপর আচরণ বৃদ্ধি করে-
দ্বিতীয় গবেষণার জন্য অংশগ্রহণকারীদের ওষুধ প্রয়োগের মাধ্যমে প্রেষণা প্রদানকারী অন্ত্রকে অস্থির করা হয়। এ অবস্থায় দেখা যায় যে নারীরা স্বার্থপর আচরণ বেশি করছে যখন পুরুষদের আচরণ ছিলো আরো বেশি সামাজিক/ইতিবাচক। শেষ ফলাফলটি গবেষকদের বিষ্মিত করে।
এ বিষয়ে অর্থনীতিবিদ আলেক্সান্ডার সউত্চেক বলেন, এ পরীক্ষাগুলো প্রমাণ করে,ফার্মাকোলজিকাল স্তরে নারী ও পুরুষের মস্তিষ্ক উদারতার ক্ষেত্রে ভিন্ন ভাবে প্রতিক্রিয়া করে। ভবিষ্যতের জন্য এ গবেষণাগুলো আরো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলেই মনে করেন এ অর্থনীতিবিদ। সেই সঙ্গে ভবিষ্যতের গবেষণায় লিঙ্গগত পার্থক্যকে আরো গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।
সংস্কৃতির সাথে জড়িত আচরণ অবধারিত এবং নিশ্চিত-
যদিও এই পার্থক্যগুলো জৈবিক পর্যায়ে দৃশ্যমান তথাপি সাউত্চেক সচেতন করে দিয়েছেন যেন এই পার্থক্যকে কোনো সহজাত অথবা বিবর্তনমূলক পার্থক্য হিসেবে ধারণা করা না হয়। তিনি বলেন, আমাদের মস্তিষ্কের রিওয়ার্ড সিস্টেম এবং শিখন ব্যবস্থা নিবিড় সহযোগিতার মাধ্যমে কাজ করে। ইম্পিরিক্যাল গবেষণায় দেখা যায় যে মেয়েদের কোনো গঠনমূলক কাজের জন্য প্রশংসা করা হয়, এর ফলে তাদের রিওয়ার্ড সিস্টেম স্বার্থপর আচরণের পরিবর্তে সামাজিক আচরণে রিওয়ার্ড পাওয়ার প্রত্যাশা করতে শেখে। এই কথা মনে রাখলে,আমরা গবেষণায় যে জেনডার বৈষম্য দেখতে পেয়েছি তার দায় পুরুষ ও নারীর ওপর আরোপিত ভিন্ন ভিন্ন সাংস্কৃতিক প্রত্যাশার ওপর চাপানো যায়। ভিন্ন ভিন্ন সংস্কৃতিতে রিওয়ার্ড সিস্টেমের সংবেদনশীলতার পার্থক্য এই ব্যাখ্যাকে সমর্থন করে।
তথ্যসূত্র-
https://www.sciencedaily.com/releases/2017/10/171009123213.htm
কাজী কামরুন নাহার, আন্তর্জাতিক ডেস্ক
মনেরখবর.কম