ডিমেনশিয়া: ভুলে যাওয়া রোগ

ডিমেনশিয়া এক ধরনের ভুলে যাওয়া রোগ। এ রোগে মানসিক সক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায়। অনেক সময় ডিমেনশিয়া এত তীব্র আকার ধারণ করে যে রোগী তার স্বাভাবিক জীবন-যাপনে ব্যর্থ হয়। ডিমেনশিয়া সাধারণত ষাট বছর বয়সে বা এরপর হয়। ক্ষেত্রবিশেষে ৩০, ৪০ বা ৫০ বছর বয়সেও হতে পারে। সঠিক সময়ে রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা শুরু করলে ডিমেনশিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তির জীবন-যাত্রায় সঠিক পরিবর্তন আনা সম্ভব।
ডিমেনশিয়ার কারণ সমূহ:
-ব্রেইন কোষের মৃত্যু
-স্ট্রোক
-ব্রেইন ক্যান্সার
এছাড়াও ঔষধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া, থাইরয়েড সমস্যা, ভিটামিনের ঘাটতি এবং বিষণ্ণতার কারণেও ডিমেনশিয়া হতে পারে যা চিকিৎসার মাধ্যমে সম্পূর্ণরূপে নিরাময় সম্ভব।
যাদের ডিমেনশিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার  ‍ঝুঁকি রয়েছে :
-বয়স ৬০ বছর বা এর বেশি
-ডায়বেটিস আক্রান্ত ব্যক্তি
-উচ্চ রক্তচাপ বা কোলেস্টরল রয়েছে যাদের
-স্ট্রোক হয়েছে যাদের
-ব্রেইন ইনজুরি, ইনফেকশন বা ক্যান্সার আক্রান্ত হলে
-হার্টে সমস্যা আছে যাদের
-ধূমপায়ী ব্যক্তি
-নিয়মিত শরীরচর্চা থেকে বিরত থাকা ব্যক্তি
ডিমেনশিয়ার লক্ষণসমূহ :
-পরিচিতজনকে চিনতে না পারা
-কোনো কাজ করে ভুলে যাওয়া
-কথা বলতে বা বঝতে সমস্যা হওয়া
-কথা বলার সময় সঠিক শব্দ খুঁজে না পাওয়া
-ব্যক্তিত্বের পরিবর্তন হওয়া
-মনোযোগ দিয়ে কোনো কাজ করতে না পারা
-এক কথা বা এক কাজ বারবার করা
-আবেগের পরিবর্তন হওয়া
-সামাজিক যোগাযোগে ব্যর্থ হওয়া
-চিন্তাশক্তি দূর্বল হয়ে যাওয়া
-কোনো গুরুত্বপূর্ণ কাজে সিদ্ধান্ত দিতে ব্যর্থ হওয়া
ডিমেনশিয়া তীব্র আকার ধারণ করলে নিম্নলিখিত মানসিক ও আচরণগত সমস্যা দেখা দেয়:
-বিষণ্ণতা
-অহেতুক সন্দেহ করা
-সবসময় মনে করা যে, আশেপাশের মানুষ তাকে নিয়ে কথা বলছে
-অস্থিরতা
-হঠাৎ রেগে যাওয়া
-কাউকে কিছু না বলে বাইরে চলে যাওয়া
-ক্ষুধা কমে যাওয়া বা বেড়ে যাওয়া
-ঘুম কমে যাওয়া বা বেড়ে যাওয়া
-পরিচর্যাকারীকে যত্ন নিতে বাধা দেয়া
কীভাবে এ রোগের ঝুঁকি কমানো যায় :
-নিয়মিত ব্যায়াম ও সুষমখাদ্য গ্রহণ করলে ধূমপান বন্ধ রাখলে
-ডায়বেটিস, ব্লাড প্রেসার এবং কোলেস্টরল নির্দিষ্ট মাত্রায় রাখলে
কখন মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হবেন :
-কোনো কাজ করে অল্প সময়ের ব্যবধানে ভুলে যাওয়া আরম্ভ করলে
-পরিচিতজনকে চিনতে বা জানা কাজ করতে ব্যর্থ হলে
পরিচর্যাকারীর করণীয় :
-ডিমেনশিয়া রোগ ও এর পরিণতি সম্পর্কে বুঝতে চেষ্টা করা
-রোগের লক্ষণ দেখা দিলে মানসিক রোগ বিভাগে যোগাযোগ করা
-ডাক্তারের পরামর্শমতো ঔষধ খাওয়ানো
-রোগীকে আশ্বাস দেয়া
-রোগীর সামনে সবসময় নিজেকে ভালোভাবে উপস্থাপন করা এবং নিজের পরিচয় রোগীর সামনে দেয়া
-সর্বক্ষণ কেউ একজন রোগীর পাশে থাকা
-পুরাতন স্মৃতি মনে করিয়ে দেয়া
-জটিল প্রশ্ন না করা
-সহজ প্রশ্ন করা যার উত্তর হ্যাঁ অথবা না-তে দেয়া সম্ভব
-রোগীকে নির্দিষ্ট সময় পর পর একই জায়গায় খাবার খাওয়ানো
-নির্দিষ্ট সময় পর পর বাথরুমে নিয়ে যাওয়া নিয়মিত শাকসব্জি খাওয়ানো ও পানি পান করানো
-রোগীকে দিন ও রাতের পার্থক্য বুঝতে সহায়তা করা
-রোগীকে তার চেনা জায়গা থেকে না সরানো ধারালো জিনিসপত্র সরিয়ে রাখা
-বাথরুম ও বাইরে যাওয়ার দরজায় নির্দিষ্ট চিহ্ন দিয়ে রাখা
-রোগীর নাম, ঠিকানা ও ফোন নম্বর লেখা একটি কাগজ রোগীর সাথে সবসময় রাখা
-রোগীর দায়িত্ব নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নেয়া যাতে একজন পরিচর্যাকারীর খুব বেশি কষ্ট না হয়।
অনেক সময় অবহেলার কারণে এ রোগ লোকচক্ষুর আড়ালে থেকে যায় যা পরবর্তীতে রোগী ও তার পরিবারের জন্য অনেক কষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। সঠিক সময় রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা ডিমেনশিয়ায় আক্রান্ত রোগীর জন্য অত্যন্ত জরুরি। চিকিৎসকের পরামর্শমতো চললে ও ঠিকমতো পরিচর্যা করলে ডিমেনশিয়া আক্রান্ত ব্যক্তির জীবনযাত্রার মানে অনেকখানি পরিবর্তন আনা সম্ভব।

Previous articleমানসিক সমস্যা মহামারি আকারে: ফিলিপাইনে বিনামূল্যে চিকিৎসা করবে সরকার
Next articleদ্রুত বীর্যপাত ও প্রচলিত কথা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here