ডা. নাসিম জাহান
সহযোগী অধ্যাপক
সাইকিয়াট্রি বিভাগ, বারডেম জেনারেল হাসপাতাল, ঢাকা।
আমরা ডিভাইসের অপব্যবহার নিয়ে সবাই যেন এক মহামারীর মতো বিপদে আছি। সমস্যাটার শুরু মূলত কোভিড মহামারীর সময় থেকেই । অসহায় চেহারা নিয়ে মা—বাবারা আসছেন, ‘ডাক্তার সাহেব বড়ই বিপদে আছি, আমার এত ভালো ছেলেটা সারাদিন মোবাইল নিয়ে বসে থাকছে, রাতে ঘুমাচ্ছে না, ঠিক মতো খায় না, পড়াশোনার তো ধারে কাছেও নাই, কিছু বলতে গেলেই যেন তেড়ে আসছে, ও কি পাগল হয়ে যাচ্ছে?’ ডাক্তার সাহেব মনে মনে ভাবেন এটাতো এখন জাতীয় সমস্যা! সত্যিই তাই, ইয়াবার নেশার মতোই যেন এই মোবাইলের নেশা পেয়ে বসেছে আমাদের নতুন প্রজন্মকে। এটা তো গেলো একটা সমস্যা মাত্র। ডিভাইসের অপব্যবহার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে অনেক রোগেরও । তাই বলে এই ডিজিটাল যুগে আমরা সব ডিভাইসের ব্যবহার বন্ধ করে দিতে তো আর পারি না ! সব কিছুরই ভালো দিক খারাপ দিক আছে, ভালোটা গ্রহণ করে খারাপটা থেকে দূরে থাকা, নিজে শেখা এবং অপরকে জানানোটাই হচ্ছে জরুরি আসলে। অতএব প্রথমেই জানতে হবে অপব্যবহারের সংজ্ঞা। ডিভাইসের অপব্যবহার হবে তখনই যখন
১. যতটা সময় এটাতে কাটাবে ভেবে কেউ বসেছিল তার চেয়ে বেশি সময় এটাতে ব্যয় করে
২. চাইলেও ব্যবহার সীমিত রাখতে পারে না
৩. বারবার ব্যবহার করার তীব্র ইচ্ছা জন্মায়
৪. অনেক বেশি সময় ডিভাইস যোগাড় করা এবং এটিকে আয়ত্তে রাখার কৌশলে ব্যয় করে
৫. এটির ব্যবহারের কারণে পড়াশোনা, কর্মক্ষেত্র বা যেকোনো দায়িত্ব পালনে অপারগ হয়
৬. এর ব্যবহারের কারণে বিভিন্ন সামাজিক এবং আনন্দদায়ক কাজ বাদ দিয়ে দিতে শুরু করে
৭. বিভিন্ন সামাজিক এবং ব্যক্তিগত সম্পর্ক নষ্ট হতে থাকে
৮. বিভিন্ন শারীরিক এবং মানসিক ক্ষতির কথা জানা সত্ত্বেও এটির ব্যবহার চালাতে থাকে
৯. অল্প ব্যবহারে মন ভরে না
১০. ব্যবহার না করতে পারলে চরম অস্বস্তি হয়
কথায় আছে যে জিনিসকে আমরা সময় বেশি দিবো সেটাই আমাদের জন্য সহজলভ্য হয়ে যাবে, অন্য সব হয়ে যাবে অধরা! এ ক্ষেত্রেও তাই, যে ডিভাইসকে দিনের বেশি সময় দিচ্ছে তার জন্য অন্য কাজ এবং সম্পর্ক হয়ে যায় দূরের, কাজেই এর পরবর্তীতে বিভিন্ন মানসিক সমস্যা আর রোগ দেখা দিবে সেটাই স্বাভাবিক। দিনের পর দিন ডিভাইসে ডুবে থাকলে দেখা দেয় হীনম্মন্যতা, আত্মবিশ্বাসের অভাব, খিটখিটে মেজাজ, ঘুমের সমস্যা, হজমের সমস্যা, স্ট্রেসের সব লক্ষণ যেমন: হাত—পা কাঁপা, বুক ধড়ফড় করা, মনোযোগের অভাব ইত্যাদি। প্রকারান্তরে এইসব সমস্যা সরাসরি না হলেও হয়ে ওঠে বিষণ্নতা, অ্যাংজাইটি, ওসিডি, নেশাগ্রস্থতার মতো অনেক মানসিক রোগের অন্যতম কারণ।