ক্যান্সারের চিকিৎসা ও মনোরোগবিদ্যাকে ইংরেজীতে বা চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় Psycho-Oncology বলে। এটা আচার আচরণের ওপর ক্যান্সারের ভূমিকা এবং মানসিক চিকিৎসা বা যত্নের সঙ্গে ক্যান্সারের ঝুঁকি বা বেঁচে থাকার সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা বা গবেষণা করে। ক্যান্সার রোগীদের মানসিক চিকিৎসার আওতায় এনে দেখা গেছে যে, এটা বেঁচে থাকার সময়কালকে দারুণভাবে প্রভাবিত করে। খুবই গুরুত্বপূর্ণ এক গবেষণা করে David Spiegel দেখিয়েছেন যে ছড়িয়ে যাওয়া স্তন ক্যান্সার রোগীদের মানসিক চিকিৎসা সেবার আওতায় এনে, অন্যান্য স্তন ক্যান্সার রোগীদের তুলনায় (যারা সাধারণ চিকিৎসা সেবার আওতায় ছিল কিন্তু মানসিক চিকিৎসা সেবার বাইরে ছিল) প্রায় দেড় বছর বেশি বাঁচে। অন্য একটা গবেষণায় দেখা গেছে malignant melanoma নামক ক্যান্সারে আক্রান্ত যারা দলগত মানসিক চিকিৎসা সেবার আওতায় এসেছিলেন তাদের জীবন মান যারা ওই সেবার আওতায় ছিলেন না তাদের থেকে ভালো। আর একটা গবেষণায় দেখা গেছে ক্যান্সার আক্রান্ত যারা আচরণগত পরিচর্যায় (relaxation, guided imagery, and biofeedback training) অংশগ্রহণ করেছেন তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা যারা আচরণগত পরিচর্যায় অংশগ্রহণ করেননি তাদের থেকে ভালো।
বিজ্ঞানের উন্নতির সাথে সাথে অনেক ক্যান্সার এখন নিরাময় সম্ভব বা ক্যান্সার নির্ণয় পরবর্তী জীবনকাল আগের থেকে এখন অনেক বেড়েছে। আমেরিকাতে এখন প্রায় ৩০ লাখ লোক আছেন যাদের আগে ক্যান্সার ছিল কিন্তু এখন আর নেই। প্রায় ৫০ ভাগ ক্যান্সার রোগী এখন ক্যান্সার নির্ণয় পরবর্তী ৫ বছর বেঁচে থাকেন।
প্রায় ৫০ ভাগ ক্যান্সার রোগী মানসিক রোগে ভোগেন। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি adjustment disorder (৬৮ শতাংশ), বিষণ্ণতা সহ আরও কিছু মানসিক রোগ দেখা যায় বলে গবেষণায় দেখা গেছে। একজন মানুষ যখন জানতে পারেন তার রোগটা ক্যান্সার, তখন তাঁর মধ্যে ক্রমাগত বিভিন্ন মানসিক ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া চলতে থাকে যা তাঁর ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক সহ সকল স্তরের ভারসাম্যতাকে হুমকির মুখে ফেলে।
সুতরাং শারীরিক চিকিৎসার পাশাপাশি মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞগণের সহায়তায় মানসিক এবং সর্বোপরি সার্বিক সেবা নিশ্চিত করা এখন সময়ের দাবি মাত্র এবং উন্নত বিশ্বে ক্যান্সার সেবার সাথে মানসিক সেবা অঙ্গাঙ্গীভাবে যুক্ত রয়েছে।
প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব। মনের খবরের সম্পাদকীয় নীতি বা মতের সঙ্গে লেখকের মতামতের অমিল থাকতেই পারে। তাই মনের খবরে প্রকাশিত কলামের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় নেবে না কর্তৃপক্ষ।