কোভিড ১৯: চিকিৎসা সেবা দিতে গিয়ে আমার অভিজ্ঞতা

কোভিড ১৯ এবং আমার ব্যাক্তিগত অভিজ্ঞতা
কোভিড ১৯ এবং আমার ব্যাক্তিগত অভিজ্ঞতা

নভেল করোনা ভাইরাস ( SARS- -CoV -2) দিয়ে যে রোগ তৈরি হয় তাই কোভিড-১৯ নামে পরিচিত। ভাইরাসটি প্রথম আবিষ্কার হয় চীনের উহান প্রদেশে ২০১৯ সালের শেষের দিকে। করোনা ভাইরাসটি চীন, ইউরোপ, যুক্তরাষ্ট্রে মহামারি আকার ধারন করেছে এবং ব্যাপকভাবে বিস্তার লাভ করছে। বাংলাদেশেও এই ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে ২০২০ সালের মার্চ মাস থেকে।

করোনা ভাইরাস সাধারনত হাঁচি, কাশির মাধ্যমে অথবা আক্রান্ত ব্যাক্তির সংস্পর্শে আসলে সংক্রমিত হয়। ভাইরাসটি ওজনে ভারী হওয়ার কারণে বাতাসে বেশিক্ষণ ভেসে থাকতে পারে না। তা মাটিতে, ফ্লোরে, টেবিলে, চেয়ারে পড়ে যায়। আর এসব জায়গায় আমাদের হাত লাগলে আমাদের হাত সংক্রমিত হয়। হাত থেকে আমাদের নাক, মুখ, চোখের মাধ্যমে আমাদের শরীরে প্রবেশ করে এবং কোভিড -১৯ রোগ তৈরি করে থাকে।
আমি চিকিৎসক হিসেবে দীর্ঘ এক মাসের উপর করোনা রোগীদের সেবা দান করে চলেছি। এখানে দীর্ঘ সময় বলার উদ্দেশ্য হলো, প্রতিটি দিন আমরা কাটাচ্ছি একটি চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে। ভাইরাসটি খুবই ছোঁয়াছে। তাই ভাইরাসটি একজন থেকে আরেকজনের যেমন সম্ভাবনা থাকে, তেমনি করোনা রোগীদের থেকে স্বাস্থ্য কর্মীদেরও হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই অন্যান্য রোগী দেখার থেকে করোনা রোগী দেখার সময় একটি বাড়তি মানসিক চাপ কাজ করে।

এই অভিজ্ঞতা শুধুমাত্র যারা সামনে থেকে করোনা রোগীদের দেখছেন তারাই উপলব্ধি করতে পারবেন। কাজ করতে গিয়ে আমার যে অভিজ্ঞতা তা হলো, করোনা মানেই জীবনঘাতী কোন রোগ নয়। করোনা মানেই আতংক নয়। রোগটি নতুন। তাই আমাদের সবারই ভয় একটু বেশি। আশার কথা হলো বেশিরভাগ মানুষের এই রোগটি সাধারণ সমস্যা যেমন জ্বর,সর্দি, শুকনো কাশি, গলা ব্যাথা, মাথা ব্যাথা,শরীর ব্যাথা, খাওয়ার অরুচি নিয়ে প্রকাশ করে। কিছু সংখক রোগীদের নিউমোনিয়া সহ জটিলতা হতে দেখা যায়। যা থেকে রোগীরা শ্বাসকষ্টে ভোগে থাকে। কেউ কেউ একটি জটিল সমস্যায় আক্রান্ত হয় যা মেডিকেলের ভাষায় ARDS নামে পরিচিত। বিশেষ করে বয়স্কদের যাদের উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, ফুসফুসের রোগ, হার্টের রোগ আছে তাদের এই করোনা ভাইরাস জটিলতা তৈরি করে থাকে।

এই জটিলতা থেকে বাঁচার একটিই উপায় তা হলো ঘরে থাকা। প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের না হওয়া। মাস্ক ব্যাবহার করা। সামাজিক দুরত্ব মেনে চলা। বারবার সাবান পানি দিয়ে হাত ধোঁয়া। হাঁচি কাশি দেয়ার সময় রুমাল ব্যাবহার করুন। বয়স্কদের রক্ষা করতে, তরুণরা ঘরে থাকুন।। মনে রাখবেন করোনা রোগটি আপনার বাসায় তখনই আসবে যখন আপনি রোগটি আনতে বাইরে যাবেন। তাই একটি কথাই সবার জন্য বলবো তা হলো আতংকিত হবেন না। সচেতন হোন। নিয়ম মেনে চলুন ও ভালো থাকুন।

Previous articleইতালিতে লকডাউনে মানসিক অসুস্থতা বাড়ছে
Next articleপিতামাতার ধর্মীয় বিশ্বাস সন্তানের আত্মহত্যার ঝুঁকি কমায়
ডা. রাজীব কুমার সাহা
এমবিবিএস, এমসিপিএস (মেডিসিন), এমআরসিপি( ইউকে), এমডি(চেস্ট)। কনসালটেন্ট - মেডিসিন ও বক্ষব্যাধি বিভাগ, আজগর আলী হাসপাতাল।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here