একটা উদাহরণ দিয়েই বলা যাক। জমকালো এক পার্টির আয়োজনে ঘরভর্তি মানুষ। হঠাৎ শাড়িতে পা আটকে আপনি পড়েই গেলেন। ব্যাথা সামান্য পেলেও আশেপাশে তাকিয়ে খুবই লজ্জিত হবেন, এবং দ্রুত নিজেকে সামলে নেয়ার চেষ্টা করবেন। আবার ধরুন, অসাবধানতায় আপনার সাথে ধাক্কা লেগে পাশের জনের হাত থেকে পানির গ্লাসটা পরে গেলো। যেহেতু আপনিই অসতর্ক ছিলেন, অবশ্যই এ ঘটনার জন্য অনুতপ্ত হবেন।
এগুলো আমাদের জীবনে ঘটে যাওয়া সাধারণ ঘটনা। আপনাকে এ ধরনের পরিস্থিতির কথা বলতে বলা হলে আপনি অবশ্যই তা স্মরণ করতে চাইবেন না।লজ্জা স্বীকার করা আসলেই কঠিন অনুভূতি, যা এটাকে আরো বিষিয়ে তোলে।
লজ্জিত বোধ আর অপরাধবোধ, দুটোই বিব্রতকর অবস্থা তৈরি করে। তবে ক্ষেত্রবিশেষে আলাদা। অপরাধবোধ কষ্টের বা খারাপ লাগার অনুভূতি, যা ব্যক্তিকে তার কৃত আচরণের জন্য দায়ী করে। আর লজ্জার অনুভূতি নিজের কাছেই নিজেকে অবমূল্যায়িত করে। যেমনঃ অপরাধবোধ আমাদের বলে যে, “আমরা ভুল বা খারাপ কাজ করেছি।” অপরদিকে লজার অনুভূতি এমন যে,“আমি একজন ত্রুটিপূর্ণ মানুষ বা আমিই খারাপ”। এটা শুধু ব্যক্তির আচরণ না, পুরো ব্যক্তিত্বকে প্রশ্নবিদ্ধ করে।
এই বিভ্রান্তি আর অপরাধবোধ আমাদের পরবর্তী আচরণে প্রভাব ফেলে। আমরা বুঝতে পারি, কখন ক্ষমা চাওয়া উচিত আর কখন ক্ষতিপূরণ দেয়া উচিত। লজ্জাবোধ আমাদের কর্মক্ষমতা লোপ করে, পিছিয়ে পরতে বা নিজেকে গুটিয়ে নিতে উৎসাহী করে। লজ্জার অনুভূতিগুলো আমাদের ছোটবেলার অভিজ্ঞতা থেকে শুরু হয়। মা-বাবা বা অভিভাবকের সাথে অভিজ্ঞতাগুলো থেকেই লজ্জাবোধ বা অপরাধবোধের শিক্ষা হয়। মনোবিজ্ঞানী Bernard Golden এর ছোট্ট একটা উদাহরণ দেয়া যেতে পারে, কোনো শিশুর হাত থেকে গ্লাস পরে গেলে একজন অভিভাবক বলবে, “এটা হয়ত নিছক দুর্ঘটনা।তোমার কোনো দোষ নাই।” অন্য অভিভাবক হয়তো বলবে, “নিশ্চয়ই তুমি সাবধান ছিলেনা, তাই গ্লাসটা পরে গেছে।”
আমরা সাধারণত বিব্রতকর অবস্থার মধ্যে পরতে চাই না। দুর্ঘটনাবশত বিব্রতকর অবস্থার মধ্যে পরে গেলেও অনেকসময় অন্যের উপর দোষ চাপাই বা অযথা রাগারাগি করি। কারণ, হয়তো আমরা অন্যদিকে আমাদের মনোযোগ নিয়ে যেতে চেষ্টা করি। অ্যাডিকশন স্পেশিয়ালিস্ট, ‘Shahram Heshmat’ এর মতে, “লজ্জা প্রবণতা অনেক সময় ব্যক্তিকে নেশার(মদ্যপান,সিগারেট) দিকে নিয়ে যায়। আবার ক্ষুধামন্দা অথবা অতিরিক্ত ক্ষুধাপ্রবণতাও তৈরি হতে পারে।”
কীভাবে এগুলো এড়িয়ে যাওয়া যায়:
নিজেকে ভালোভাবে জানুন।নিজের স্বত্বা থেকে নিজেকে আলাদা ভাবুন। নিজের চিন্তাকে প্রশমিত করুন ও পুনরাবৃত্তি সম্পর্কে সজাগ থাকুন।
ঘটনার শুরুটা আবার ভাবুন।আপনার অনুভূতিটা আসলেই কি রাগ না অন্য কিছু? আপনার কি মন খারাপ লাগছে? আপনি কি অপমানিত বোধ করছেন?
অপরকে দোষ দিতে বা খারাপ বলতে কি আপনার সত্যিই আগ্রহ? থামুন, আরেকবার ভাবুন তো, এটা করলে কি আপনি ভাল অনুভব করেন?
নিজের লজ্জাবোধগুলোকে জয় করে নিতে হবে। সৎ থাকুন, অনুভূতিগুলো বুঝতে সময় নিন।
নিজের জন্য যে মানদণ্ড করে রেখেছেন, সেটায় পরিবর্তন আনুন। আপনাকে যে উপযুক্তই হতে হবে এমনটা নয়। বারবার চেষ্টা করেও কার্যকর কিছু না করতে পারার মধ্যে লজ্জার কিছু নেই।
যেগুলোর জন্য আপনি দায়ী না, সেই অনুভূতিগুলো থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখুন। বন্ধু, মা-বাবা, সহকর্মী ও আপনার মাঝে সম্মানজনক রেখা রাখুন।
অন্যদের সাথে কথা বলুন। সহকর্মী, অভিভাবক বা পরিবারের সাথে খোলাখুলি কথা বলুন। ভঙ্গুর মুহূর্তগুলোয় সাহস রাখুন।
নিজেকে ক্ষমা করতে শিখুন। আগে হয়তো ভেবেছেন, আপনি একজন বোকা মানুষ, অসচেতন মানুষ বা খারাপ মানুষ, আপনাকে দিয়ে কোনো কাজ হবে না ইত্যাদি। এরপর আবার যখনই এধরনের চিন্তা আসবে, নিজের কাছে ক্ষমা চেয়ে নেবেন এবং নিজেকে ক্ষমা করে দেবেন। সেখান থেকেই নতুনভাবে শুভ চিন্তা শুরু করুন।
ওয়েলডয়িং ডট অরগ থেকে Alice McGurran এর লেখার ভাষান্তর করেছেন: সাদিয়া শামস্
তথ্যসূত্র: https://welldoing.org/article/why-we-feel-shame-how-to-let-it-go