ছুটির সময়টা আরেকটু দীর্ঘায়িত হল। যদিও ছুটির কোন আমেজ নেই। বলতে গেলে এটা আসলে ছুটিও নয়, লক ডাউন। কোয়ারেন্টাইনের এই গৃহবন্দী সময়টা আমরা করোনার বিরুদ্ধে যুদ্ধের পাশাপাশি গঠন মুলক কাজে ব্যাবহার করতে পারি। সারাদিনই আমাদের ইদুর দৌড়ে শেষ হয়ে যায় তা সে যে পেশাতেই থাকেন না কেন। সাত সকালে উঠে ট্রাফিক জ্যাম ঠেলে অফিসে যাওয়া।অফিস শেষে আবার সেই জ্যাম হাতড়াতে হাতড়াতে বাড়ী ফেরা। রুটি রুজির বাহিরে দরকারি অনেক কাজই করে ওঠার সময় হয়ে ওঠে না। তাই হঠাৎ পাওয়া এই সময়টাকে আমরা কাজে লাগাতে পারি।
যৌনতা আমাদের প্রাত্যহিক জীবনেরই একটা অংশ। তাই বলে বলছি না হাতে পর্যাপ্ত সময় আছে আর আপনি বাড়ীতেই আছেন কাজেই উপর্যুপরি সেক্স করুন। সেটা সম্ভব নয়। কাঙ্খিতও নয়। শোভনীয়ও নয়। তবে প্রয়োজনটাকে কিন্তু অস্বীকার করার বা উপেক্ষা করার উপায় নেই। কিন্তু তারপরেও দেখবেন উপেক্ষিত হচ্ছে। যদি বিয়ের বয়স একটু বেশি হয়ে থাকে এবং ইতোমধ্যে বাবা মা হয়ে থাকেন। শুধু তাই নয় আবেগেও একটা ঢিলেমি ভাব চলে এসেছে। সম্পর্কেও এসেছে নিয়ম তান্ত্রিকতা আর অভ্যাস। কোন কোন দম্পতিকে দেখেছি বলতে ” আর বলবেন না সম্পর্কটা যেন ভাইবোনের মত হয়ে গেছে। হাতে হাত লাগলে কিছু টের পাই না “।
দীর্ঘদিনের দাম্পত্য সম্পর্কে খুটখাট ঝগড়া ঝাটি মনোমালিন্য তো লেগেই আছে। সামান্য সামান্য বিষয়ও অসামান্য ঝগড়ার সৃষ্টি করে। বাথরুমে মগটা কেন জায়গামত থাকবে না সেটাও একটা সকালের অশান্ত হয়ে ওঠার জন্য যথেষ্ট। কোয়ারেন্টাইনের শুরুর দিকে সবাই যখন বাড়ী ফিরলো তখনই সোস্যাল মিডিয়ায় এ ধরনের দাম্পত্য কলহের প্রসঙ্গ এসেছে। অতি উৎসাহী লোকজন ভিডিও ক্লীপ ও ছেড়েছে ফেইসবুকে। করোনার স্ট্রেস কিছুটা হলেও সহনীয় হয়ে উঠেছে। আত্ম প্রত্যয়ও বেড়েছে এতদিনে। এখন এই প্রলম্বিত ছুটিটা করোনা প্রতিরোধের পাশাপাশি যতটুকু কাজে লাগানো যায় সেটাই আমাদের লাভ।
যৌনরোগ যেমন শারীরিক সমস্যার জন্য হয় তেমনি মানসিক সমস্যা থেকেও হয়। আমি মানসিক রোগ বলছি না বলছি সমস্যা। ছোট খাট কিছু সমস্যা যা মানসিক রোগের পর্যায়ে যায়নি কিন্ত যৌন রোগ বা সমস্যা তৈরী করছে। যেমন পারফর্ম্যান্স এ্যাংজাইটি, দাম্পত্য সম্পর্কের সমস্যা, যৌন বিষয়ে ভুল ধারণা ইত্যাদি। এই সব সমস্যাগুলোর প্রতি আমরা এই অবসরে মনোযোগী হতে পারি। এর জন্য কোন বিশেষ ঔষধের প্রয়োজন হবে না। বাসায় বসে একটু খেয়াল করে প্রাকটিস করলে সমস্যাগুলো কাটিয়ে ওঠা সম্ভব। মনে রাখবেন ক্যাজুয়াল সেক্স আর পরিবারের মধ্যে সেক্স এক নয়। আপনি এবং আপনার সঙ্গী দুজনই পরিবারের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। পরিবারের শিশু এবং বয়স্করা আপনাদের উপর নিরর্ভরশীল। কাজেই আপনাদের নিজেদের জন্য সময় বের করার আগেই তাদের ব্যাবস্থা করুন। যেহেতু এই মুহুর্তে ঘরের বাহিরে যাওয়া সম্ভব নয় তাদেরকে ঘরে রেখেই নিজেদের জন্য সুযোগমত সময় বের করুন। চাইলে এই বয়সে পুরোনো প্রেমটা আবার জাগিয়ে তুলতে পারেন। সবার চোখ ফাকি দিয়ে একটু আধটু যোগাযোগ তৈরী করতে পারেন। যেমন ধরুন খাবার টেবিলে পায়ে পা স্পর্শ করা যাকে বলে ফুটসি। অথবা সকালে ঘুম ভাঙতেই বিশেষ স্পর্শ। শিশুদের ঘুম ভাঙার আগেই সুযোগটা নিয়ে নিতে পারেন। অভ্যস্ত দাম্পত্য জীবনের এক ঘেয়েমী কাটিয়ে উঠতে এসব কিন্তু মন্দ নয়। হয়ত এতে ভাই বোন ভাবটা কেটেও যেতে পারে।
ফ্লার্টিং করতে পারেন। একটা খেলুড়ে পনা প্রেম প্রেম ভাব করুন না। যদি প্রেমের বিয়ে নাও হয়ে থাকে, তাতে কি! মজা করুন। সম্পর্কের মধ্যে জমে থাকা তুচ্ছ তুচ্ছ অভিমান ক্ষোভ কেটে যাবে। আর যদি তাও না পারেন জোকস বলুন। এতে করোনার স্ট্রেসও কমবে আবার সম্পর্কেও নতুন মাত্রা যোগ হবে। কথা বলুন দীর্ঘদিনের জমানো কথা যা বলবেন বলবেন করেও বলা হচ্ছে না। জমানো রাগ জমানো ব্যথা ধুয়ে ফেলুন। মনোযোগ দিয়ে শুনুন। একদম খোলা মনে। সঙ্গীকে জানার চেষ্টা করুন। বোঝাবুঝির ব্যাপারে অন্তত একধাপ এগিয়ে যান। যতটুকু বুঝতে পারলেন শেয়ার করুন। দেখবেন অনেক জটিলতা কমে গেছে। সম্পর্কের সমস্যার কারণে যে যৌন সমস্যা তা এভাবেই কেটে যাবে। স্ট্রেস দুশ্চিন্তা আমাদের শরীরে কর্টিসোল নামে একটি হরমোন বাড়িয়ে দেয় যা আমাদের যৌন ইচ্ছাকে কমিয়ে দেয়।শুধু তাই নয় এ্যাংজািটিতে আমাদের শরীরে রক্ত চলাচলে একটা পরিবর্তন হয়। রক্ত প্রান্তীয় নালিতে কম পরিবাহিত হয়। ফলে যৌন উত্তেজনার সময় রক্ত যৌনাঙ্গ এবং এর পাশে পাশের অঞ্চলে কম সঞ্চালিত হয়। এই কম রক্ত সঞ্চালনের কারনে পর্যাপ্ত উত্তেজনা হয় না। সহজ বাংলায় বললে বলা যায় যথেষ্ঠ সেক্স ওঠে না। ফলে যৌন মিলন অসমাপ্ত বা অর্ধ সমাপ্ত থেকে যায়। যৌন মিলনে সম্পূর্ণ সন্তুষ্টি আসে না। যৌন কার্যে সক্ষম হবো কি হবো না,সঙ্গীকে সুখী করতে পারবো কি পারবো না এসব চিন্তা আসাই হলো যৌন দুশ্চিন্তা। কাজে চিন্তা মুক্ত হয়েই বিছানায় যান।
যৌনতাকে উপভোগ করুন। এটা কোন জয় পরাজয়ের খেলা নয়। মনে রাখবে দুজন মানুষের কোন কিছুই এক সাথে হয় না । এমন কি খেতে বসলেও কারো এক সাথে খাওয়া শেষ হয় না । ঘুমটাও স্বামী স্ত্রীর আগে পরে ভাঙে। চরম পুলক তাহলে কেন এক সাথে হবে? প্রচলিত কিছু জ্ঞান কিছু ধারণা আপনাকে হয়ত এভাবে ভাবাচ্ছে। সেই ধারণা গুলোকে চিহ্নিত করুন। সময়টাকে কাজে লাগান। সেক্স এডুকেশন তো আমাদের দেশে পাঠ্যসূচিতে নেই। তাই এ বিষয়ে আপনি যা জানেন তা কোন নির্ভরশীল সূত্র থেকে আসে নি। নির্ভরশীল সূত্র থেকে জানার চেষ্টা করুন। মনের খবরের যৌন স্বাস্থ্য ও সম্পর্ক বিভাগে এ বিষয়ে নিয়মিত লেখা হয় সেগুলো পড়ুন। আত্মবিশ্বাস গড়ে তুলুন। এই করোনাক্রান্তিকালে ভাল থাকুন, সাহস ধরে রাখুন।