শারীরিক বা মানসিক যেকোনো অসুস্থতায় আমরা ওষুধ খাই। মানসিক রোগের ওষুধের ভূমিকা অন্যান্য ওষুধ থেকে একটু ভিন্ন। এই ওষুধগুলোর কাজ শুরু হতে একটু সময় নেয়। সুতরাং আজকে ওষুধ খেলেই যে কাল থেকে ভাল অনুভব করব এই ধারণা করে খুব বেশি লাভবান হওয়া যায় না, হয়ও না। মুসকিলটা আরও বেশি দেখা যায় যখন ওষুধ কাজ করে নাই বলে ডাক্তার পরিবর্তন করা হয়, ভেবে নেয়া হয় যে আমার রোগটা হয়তো ঠিকমতো নির্ণয় হয়নি এবং ভেবে আরো ব্যস্ত হয়ে পড়ে অথবা অন্যদের ব্যতিব্যস্ত করা শুরু করে দেয়। এগুলো করলে রোগীর ও রোগীর স্বজনদের ভোগান্তি বাড়ে বৈকি কমে না।
বেশ কিছুদিন ওষুধ খাওয়ার পর রোগী মনে করতে থাকেন এখন তো ভালই আছি ওষুধ খাওয়ার কি দরকার? আস্তে আস্তে একটা দুইটা করে বাদ দিতে থাকেন। যেহেতু ওষুধ কাজ করতে একটু সময় নেয়, বন্ধ করার পর এর প্রভাব একেবারে যেতেও সময় লাগে। সুতরাং বাদ দেয়ার সাথে সাথে অসুবিধা দেখা যায় না। ফলে রোগীরা বিষয়টি এত গুরুত্ব না দিয়ে ওষুধ বন্ধ করার দিকে ক্রমান্নয়ে ধাবিত হন। এরপর কিছুদিনের মধ্যেই আগের লক্ষণ দেখা দিতে থাকে, তাতে সুস্থ অবস্থায় ফিরতে আবার বেশ সময় ধরে ভুগতে হয়। একটু আশ্চর্য হই আবার যখন দেখি ওই রোগী একইভাবে আবার ওষুধ বন্ধ করে আবার অসুখ নিয়ে ভর্তি হতে আসেন।
যেসব মানসিক রোগে লম্বা সময় ধরে ওষুধ খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়ে থাকে, ওই রোগ ফিরে আসার অন্যতম প্রধান কারণ হলো ডাক্তারের বিনা পরামর্শে ওষুধ বন্ধ করে দেয়া। হঠাৎ করে ওষুধ বন্ধ করাটা রোগ আরো বাড়িয়ে দিতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে আমরা দেখে থাকি দুই তিনটা ওষুধের মধ্যে রোগীরা নিজের পছন্দমতো প্রয়োজনীয় ওষুধটি বন্ধ করে দিয়ে তুলনামূলক কম গুরুত্বপূর্ণ ওষুধ যেমন ঘুমের ওষুধটিই চালিয়ে যান।
অনেককে দেখা যায় বেশি বেশি ওষুধ খেতে চান। ডাক্তার নিষেধ করার পরেও কোনোভাবে তাদেরকে ওষুধ খাওয়া থেকে বিরত করা কঠিন হয়ে পড়ে। তারা মনে করেন ওষুধই সকল রোগের সমাধান এবং রোগ যেমন আছে ওই প্রতিটি রোগের ওষুধও আছে। সুতরাং ওষুধ খেতেই হবে। এই সমস্যার রোগীরা নতুন নতুন ওষুধ খেয়ে মানসিকভাবে আরাম বোধ করেন কিন্তু পারতপক্ষে রোগের কোনো উপকার হয় না।
আমার মাঝে মাঝে মনে হয় বিচিত্র এই মানব জীবন, বিচিত্র এই মন। কাউকে ওষুধ খাইতে উপদেশ দেই আবার কাউকে সেই ওষুধ খাওয়া থেকে বিরত থাকার জন্য ব্যবস্থা করি।
প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব। মনের খবরের সম্পাদকীয় নীতি বা মতের সঙ্গে লেখকের মতামতের অমিল থাকতেই পারে। তাই মনের খবরে প্রকাশিত কলামের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় নেবে না কর্তৃপক্ষ।