এডিএইচডি বাচ্চাদের জন্য প্যারেন্টিং টিপস

এডিএইচডি বাচ্চাদের জন্য প্যারেন্টিং টিপস
এডিএইচডি বাচ্চাদের জন্য প্যারেন্টিং টিপস

অতি চঞ্চল ও অমোনোযগী শিশুর সাথে জীবন অনেক হতাশাজনক হতে পারে । তবে পিতা বা মাতা হিসবে লক্ষণগুলি নিয়ন্ত্রণ করতে এবং হ্রাস করতে আপনি অনেক কিছুই করতে পারেন । মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে, এডিএইচডিযুক্ত শিশুটি আপনাকে ইচ্ছাকৃতভাবে উপেক্ষা, বিরক্ত বা বিব্রত করছে না । তারা সঠিক কাজটি করার জন্য খুব চেষ্টা করতে পারে কিন্তু তাদের আত্মনিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা অন্যদের মত নয় বলে তারা সেটি পারে না । আপনি আপনার শশিুকে প্রতিদিনের চ্যালেঞ্জগুলি কাটিয়ে তার শক্তিটিকে ইতিবাচক দিকে পরিচালনা করতে সহয়তা করতে পারেন । যত আগে আপনার সন্তানের সমস্যাগুলি সনাক্ত করবেন জীবনের সফল্যের জন্য তত বেশি। এডিএইচডি শিশুকে বুঝতে হলে এ রোগ এবং এর প্রভাব সর্ম্পকে জানা প্রয়োজন । দূর্ভাগ্যক্রমে এডিএইচডি আক্রান্ত শিশুর পিতা মাতার জন্য কোন ও যাদুকরী সমাধান নেই ।

এডিএইচডি সন্তানের সাথে পিত-মাতার করণীয়ঃ

  • পারিবারিক ঝগড়া বা দাম্পত্য কলহ,নির্যাতন এগুলো বাচ্চদের করা যাবে না ।
  • সন্তানের ছোট ছোট ভুলে অধৈর্য হওয়া চলবে না ।
  • শাস্তি হিসেবে শারীরিক শাস্তি পরিহার  করাই শ্রেয় বরং বাচ্চাকে বুঝিয়ে বলে কিংবা তাকে সাময়িক সুবিধা থেকে বঞ্চিত করেও শান্তি প্রদান করা যেতে পারে ।
  • অতিরিক্ত সমাচলোচনা বাচ্চার আত্মবিশ্বাস কমিয়ে দেয় ।
  • তুচ্ছজ্ঞান করবেন না ।
  • চাওয়া মাত্রই বা সন্তান জেদ করলেই কোন জিনিস তাকে দেওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। প্রয়োজনে পূর্বে আলোচনা করে একই সিব্দান্ত নিতে হবে ।
  • সারাক্ষণ শুধু পড়া পড়া করবেন না ।
  • বাচ্চাদের কারণে “না’’ কে  “ হ্যাঁ” করা যাবে না ।
  • বাচ্চার অযাচিত আচরণ এর প্রতি অতিরিক্ত মনোযোগ দেয়া যাবে না ।
  • সন্তানের উপর জোর করে কোন সিদ্বান্ত চাপিয়ে দিবেন না।
  • বাচ্চার প্রতি কোন ব্যাপারেই অবহেলা বা তাকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে না এমন মনোভাব প্রকাশ করবেন না।

এডিএইচডি বাচ্চাদের জন্য প্যারেন্টিং টিপস

  • পরিবারের সকল সদস্যের সাথে আলোচনা করে সমস্যার লিখিত তালিকা তৈরী করবেন; কেননা সমস্যগুলো খেলা না থাকলে বাচ্চার ধারাবাহিক উন্নতির ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্টভাবে এগিয়ে যাওয়া বাধাগ্রস্ত হয় এবং একই কাজ বারবার।
  •  প্রধান সমস্যাসমূহ চিহ্নিত করবেন।
  • বাচ্চার সবল ও দুর্বল দিকগুলো লিখবেন ; সবল দিকগুলো ক্রমান্বয়ে আরও সবল করার চেষ্টা চালিয়ে যাবেন।
  • শারীরিক সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য শরীর চর্চা করাবেন ( যেমন- দৌঁড়ানো,সাতার কাঁটা ,বল খেলা ,ব্যাডমিন্টন খেলা ,সাইকেল চালানো ইত্যাদি )।
  • সমালোচনা না করে তাকে উৎসাহিত করবেন ও যে বিষয়গুলি সে পারে তা তুলে ধরবেন যাতে সে নতুন বিষয়ের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠে।
  • বাচ্চাকে প্রথমে প্রশ্ন করতে শিখাবেন; তারপর কিভাবে উত্তর দিতে হয়  তা শিখাবেন।
  • প্রতিটি বিষয়ের বিকল্প/তুলনা/পক্ষে বা বিপক্ষে কি কি কথা থকতে পারে তা শিখাবেন।
  • চিন্তা ও কল্পনা শক্তি বৃদ্বি করা: হাতে-কলমে কাজ শিখাবেন ( যেমন-কাগজ দিয়ে কোন কিছু তৈরী করা , কোন জিনিস এলোমেলো করে দিলে তারপর আবার সেটা ঠিক করতে পারা , বিভিন্ন ধাঁধা  মিলানো, গল্পের বই পড়া এবং শোনানো, ছবি আঁকা ইত্যাদি)।
  • আপনার বাচ্চা কোন পদ্বতিতে শিখতে স্বাচ্ছন্দবোধ করতে তা খুঁজে বের করুন ( যেমন – ছবি আঁকা, সংকেতায়ন ,শুনে শুনে পড়া, জোরে জোরে শব্দ করে পড়া , সুরের তালে তালে পড়া প্রভৃতি )।
  • পড়ার সময় তাকে সব ধরনের যন্ত্রপাতি থেকে দূরে রাখুন বা সেগুলো অন্য ঘরে সরিয়ে রাখুন।
  • বাচ্চার পড়ার ঘরটি যেন নিরিবিলি এবং ঝুট ঝামেলাহীন হয় । বাচ্চার পড়ার জিনিসপত্র যেন তার হাতের নাগালের মধ্যে থাকে। খেলার মাধ্যমে তাকে শিখানোর চেষ্টা করা যেতে পারে ; কারণ বাচ্চারা অনন্দের মধ্যে থাকলে ভালো শিখে।
  • বাহিরের খাবারের পরিবর্তে ঘরের খাবার এবং শাক –সব্জি,ফলমূল জাতীয় স্বাস্ব্যকর খাবার খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তোলার চেষ্টা করুন।
  • কেমিক্যাল যুক্ত খাবার বর্জন করুন।
  • বাবা-মা যেন অকারণে বাচ্চাকে মারধর না করেন।
  • সময় মেনে চলার অভ্যাস করা বেশ ফলদায়ক। সুনির্দিষ্ট সময়ে সুনির্দিষ্ট কাজ করার চেষ্টা করা যেতে পারে।
  • বাচ্চার পর্যাপ্ত ঘুম এবং বিশ্রামের সময় দেয়া জরুরী ।
  • শিশুটিকে পরিবারের একজন মূলবান সদস্য বোধ করাতে সহায়তা করুন।
  • যে কোন কাজ ছোট ছোট ভাগে ভাগ করে দিন তাতে এডিএইচটি বাচ্চা দ্রুত সেটি আয়ত্ত্ব করতে পারবে।
  • বাবা –মা পারিবারিক যেকোন সিদ্ধান্তের ব্যাপারে সন্তানের পছন্দের অগ্রাধিকার দিবেন।
  • সন্তান যদি পিতা- মাতার মতামতের দ্বিমত প্রকাশ করে তাহলে সন্তানকে তার মনোভাব প্রকাশে উৎসাহ দিবেন।
  • সন্তানের সাথে ধৈর্যশীল থাকুন।
  • সন্তানের সাথে খেলাধুলা করবেন ও মজা করবেন।
  • সন্তানের মতামত প্রকাশ করতে উৎসাহ দিন এবং  যথেষ্ট সন্মান দেখান।
Previous articleকিভাবে একজন ভালো মনোরোগ বিশেষজ্ঞ খুঁজে নিবেন
Next articleঢাকা মেডিক্যালে অ্যাংজাইটি ম্যানেজমেন্ট বিষয়ে সিএমই অনুষ্ঠিত
প্রফেসর ডা. নাহিদ মাহজাবিন মোরশেদ
চাইল্ড অ্যান্ড অ্যাডোলেসেন্ট সাইকিয়াট্রিস্ট। অধ্যাপক, মনোরোগবিদ্যা বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here