উত্তেজিত হিংস্র রোগী নিয়ন্ত্রণ করার উপায়

উত্তেজিত হিংস্র রোগী নিয়ন্ত্রণ করার উপায়
১.
৫০ বছর বয়স্ক হাসান সাহেব অফিস থেকে ফিরে হঠাৎ তীব্র বুকে ব্যথা অনুভব করলেন, সঙ্গে বমি আর ঘাম। খুব দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে গেল পরিবারের সবাই মিলে। ডাক্তার দ্রুতই লক্ষণ শুনে ইসিজি, রক্তের পরীক্ষা করে ভর্তি করে চিকিৎসা দিলেন, মায়োকার্ডিয়াল ইনফারকশন নামক রোগ নির্ণয় হলো। কিছুদিন পর সুস্থ হয়ে বাসায় এসে হাসান সাহেব সব নিয়ম কানুন পালন করছেন। হৃৎপিন্ডের রক্ত সঞ্চালন যেন ঠিক থাকে সে জন্য ওষধ নিয়মিত খাওয়া, খাওয়া-দাওয়ার নিয়ম পালন করা এসব ছুটির কাগজে যা লেখা তা অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলছেন। পরিবারের সবার প্রতি  ‍কৃতজ্ঞতা জানাতে ভুল করেন না একদিনও, তাদের কারণেই জীবন ফেরত পেয়েছেন-এরকম বারবারই বলেন।
২.
২০ বছরের নওশিন গত দুইমাস ধরে একা একা কথা বলে, ঘরে সব জানালা দরজা আটকে রেখে থাকে, ঘুমায় না একেবারেই, পড়ালেখা করতেই পারে না, যেন সব ভুলে গেছে। বাবা মায়ের কাছে এই লক্ষণগুলো প্রথমে মনে হলো, প্রেমঘটিত বিষয়। মা এই বিষয়ক অনেক খোঁজখবর করে বিফল হলেন। এরপর শুরু হলো ঝাড়ফুঁক। খুব নামকরা কবিরাজ তাবিজ আর ঘরবন্ধ দিলেন বেয়াদব জ্বীন তাড়াতে। কিন্তু অবস্থা কেবল খারাপ হতে লাগল।শেষে একজন আত্মীয়র পরামর্শে নিয়ে গেলেন একজন ‘নিউরো’ চিকিৎসকের কাছে। সেই চিকিৎসক মনোরোগ বিশেষজ্ঞর কাছে পাঠালেন। বাবা-মা নিমরাজি হয়েই নিয়ে গেলেন, ওষুধে কিছুটা উন্নতি হলো। কিন্তু একবার ভালো হওয়ার পর আর ফলোআপে গেলেন না। অন্য আত্মীয়রা বোঝালেন যে, ‘একবার পাগলের ডাক্তারের কাছে গেছ, এবার মেয়ের তাড়াতাড়ি বিয়ে দাও।’ বাবা মা তড়িঘড়ি বিয়ে দিলেন। বিয়ের এক মাস যেতে না যেতেই আগের চেয়েও তীব্র অবস্থা নিয়ে হাসপাতালে যেতে হলো মেয়েটাকে। চিকিৎসক ইতিহাস নিতে গিয়ে বিপদে পড়লেন কারণ এক পক্ষ আরেক পক্ষকে দোষারোপ ছাড়া আর তেমন কিছু পাওয়া গেল না। লক্ষণ দেখে প্রাথমিকভাবে কিছু ইঞ্জেকশন দিলেন এইবার দইপক্ষই একমত হয়ে বারবার একটা কথা বলতে থাকলেন যে ইঞ্জেকশন দিয়ে আরো ব্রেইন খারাপ হয়ে যাবে নাকি।
৩.
৩০ বছরের লিনার গত দই মাস ধরেই মাঝরাতে ঘুম ভেঙে যায়, আর ঘুম আসে না, জীবনটাকে নিরর্থক মনে হয়, সকালে উঠে প্রচন্ড কান্না পায়, কোনো কাজ করতে ভালো লাগে না। প্রায়ই মনে হয় তার জীবনটা অন্য সবার কাছে বোঝা। একই অবস্থা তার মায়েরও একবার হয়েছিল এবং সেটা মাথায় রেখে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে চলে আসলেন তিনি। চিকিৎসক ইতিহাস শুনে একটা ওষুধ দিলেন, যেটাকে বলা হয় অ্যান্টিডিপ্রেসান্ট। কিছু পরীক্ষাও করতে বললেন, তবে ওষুধ আগেই খাওয়া শুরু করতে হবে এটাও বলেদিলেন। ওষুধ শুরুর পর লিনা ভালো বোধ করলেন।
ওপরের তিনটি চিত্র তিনরকমের রোগের চিকিৎসা এবং সার্বিক ব্যবস্থাপনা নিয়ে সামান্য আলোকপাত।
প্রথম ক্ষেত্রে, একটি শারীরিক রোগ জরুরি অবস্থা নিয়ে হাসপাতালে আসার পর জরুরিভাবে চিকিৎসা করা হলো। ইতিহাস, শারীরিক পরীক্ষা, রক্তের এবং অন্যান্য ল্যাব পরীক্ষা এখানে রোগ নির্ণয়ে খুব গুরুত্বপূর্ণ, এগুলোর ওপর ভিত্তি করে চিকিৎসার ক্ষেত্রেও  ‍খুব নির্দিষ্টভাবে ওষুধ বা অন্যান্য চিকিৎসা দেয়া যায়। যেমন ইসিজি দেখে অভিজ্ঞ চিকিৎসক বুঝতে পারেন হৃৎপিন্ডের রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে হৃদপেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কিনা এবং কোন জায়গায় হয়েছে তখন চিকিৎসক দ্রুতই সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেন। আবার দেখা গেল কারো জ্বর আছে, তখন রক্তের কালচার পরীক্ষা করে দায়ী নির্দিষ্ট জীবাণুটি নির্ণয় করা যায়। এরপর জীবাণু অনুযায়ী অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগ করে রোগমুক্তি ঘটে। এরকম বেশির ভাগ শারীরিক রোগেই নির্দিষ্ট করা যায় শরীরের কোন স্থানে সমস্যা এবং কীভাবে রোগটি হচ্ছে (যাকে বিজ্ঞানের ভাষায় বলা হয় প্যাথলজি)।
এবার ২য় উদাহরণটি খেয়াল করলে দেখা যাবে এখানে লক্ষণগুলো আচরণে স্পষ্ট। কিন্তু শারীরিক পরীক্ষা করলে কোনো সমস্যা পাওয়া যাবে না। এমনকি আমাদের আচরণ নিয়ন্ত্রণ করে যেই মস্তিষ্ক সেই মস্তিষ্কের সরাসরি ছবি তুললেও সেরকম নির্দিষ্ট কোনো প্যাথলজি দেখা যাবে না। কিছু পরিবর্তন মস্তিষ্কে দেখা যাবে  ‍খুব উন্নত কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষার সাহায্যে কিন্তু সেগুলো একদম নির্দিষ্ট করে এই রোগকে নির্দেশ করবে এমন নয়। এরকম ক্ষেত্রে লক্ষণ শুনে রোগটি ধারণা করা হয় এবং চিকিৎসা দেওয়া হয় এবং মানসিক রোগের ক্ষেত্রে শুধু শারীরিক কারণ নয়, আর্থ সামাজিক অবস্থাও রোগটিকে তৈরি করা/ লক্ষণ বাড়িয়ে দেয়ায়  ‍ভূমিকা ‚ রাখে। যেমন ২য়  ‍দৃশ্যপটে রোগী যদি ঠিকমতো চিকিৎসাটা চালিয়ে যেতে পারত এবং সহায়ক পরিবেশ পেত তাহলে চিত্রটা অন্যরকম হতো।
এবার ৩য় দৃশ্যপটে যদি রোগীর পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য অপেক্ষা করা হতো তাহলে অবস্থা আরো খারাপ হতো এবং সেই ক্ষেত্রে রোগীর কষ্ট আরো বাড়ত। যদিও শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজন আছে এরকম ক্ষেত্রেও কিন্তু সেটার জন্য কষ্ট লাঘবের ব্যবস্থা নিতে দেরি করাটা অযৌক্তিক।
এই তিনটি দৃশ্যপটে একটা বিষয় তুলে ধরতে চেয়েছি সেটা হচ্ছে মানসিক রোগের চিকিৎসার সাথে শারীরিক রোগের চিকিৎসার পার্থক্য। সারসংক্ষেপে-
সব রকমের চিকিৎসার ক্ষেত্রেই প্রথম ধাপটি হচ্ছে রোগ নির্ণয়, রোগ নির্ণয়ের প্রথম ধাপে প্রয়োজন হয় ইতিহাস নেয়ার। মানসিক রোগের ক্ষেত্রে এটা শুধু একটা রোগ না বরং সমস্যা হিসেবে দেখা হয়। এখানে একটা নির্দিষ্ট জীবাণু বা শরীরের কোন রক্তনালীতে রক্ত জমাট বাঁধা বা ইনসুলিন তৈরি হচ্ছে না-এরকম সোজাসাপ্টাভাবে ব্যাখ্যা সম্ভব হয় না। যেমন একই বয়সের, একই শ্রেণির  ‍দুইজন ছাত্র, দেখা গেল পরীক্ষায় ফেল করে একজন খুব হাসিখুশিভাবেই ঘুরে বেড়াচ্ছে, পরেরবারের জন্য পড়ছে; আর আরেকজন গভীর বিষণ্ণতায় ডুবে যাচ্ছে। এই পার্থক্যের পেছনে দুইজনের নিজস্ব বৈশিষ্ট্য, পারিবারিক পরিবেশ, পরিবারের সদস্যদের প্রতিক্রিয়া এগুলো  ভূমিকা রাখে। এই কারণে একজন ব্যক্তির মানসিক কোনো সমস্যাকে  ‍বুঝতে হলে তার সার্বিক প্রেক্ষাপট বুঝতে পারাটা খুব প্রয়োজন। এইজন্য মানসিক রোগের ক্ষেত্রে  ‍তুলনামূলকভাবে বিস্তারিত ইতিহাস নিতে হয়, যেটা শারীরিক রোগে প্রয়োজন হয় না।
মানসিক রোগের ইতিহাস নেয়ার ক্ষেত্রে অনেক সময়ই রোগীর পরিবারের সদস্য/নিকটাত্মীয়, বন্ধুবান্ধব, সহকর্মী/সহধর্মী এরকম কারো কাছ থেকে ইতিহাস নিতে হয়।
মানসিক রোগে ইতিহাস নেয়ার পাশাপাশি রোগীকে কথা বলতে দেয়াটা কিছুটা চিকিৎসার কাজ করে।অনেক দিন ধরেই সমস্যা শেয়ার করতে না পারা মানুষটি দেখা যায় নির্ভরযোগ্য স্থানে কথা বলতে পেরে অনেকখানি হালকা বোধ করেন।
মানসিক রোগের রোগ নির্ণয়ের মতো চিকিৎসার ক্ষেত্রেও রোগীর পারিবারিক এবং আর্থসামাজিক অবস্থান অনেক গুরুত্ব বহন করে এবং সেই অনুযায়ী চিকিৎসার ধাপ ভিন্ন হয়। যেখানে শারীরিক রোগে অনেকটা ধরা-বাঁধা চিকিৎসা বহুজনের ক্ষেত্রে প্রয়োগ সম্ভব হয়।
মানসিক রোগে রোগ নির্ণয়ের ক্ষেত্রে প্রথম বারে সেটা সম্ভব নাও হতে পারে। পরপর  ‍দুই তিনবারে ইতিহাস নিয়ে সমস্যার প্রকত ইতিহাস পাওয়া যায়-এরকম প্রায়ই ঘটে। উল্টোদিকে বেশিরভাগ শারীরিক রোগ প্রথমবারেই নির্ণয় সম্ভব।
মানসিক রোগে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার উদ্দেশ্য থাকে শারীরিক রোগ নেই এটা নিশ্চিত করা। কোনো নির্দিষ্ট শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে মানসিক রোগ নিশ্চিত করা এখন পর্যন্ত সম্ভব না। যেমন একজন ব্যক্তি বিষণ্ণতার লক্ষণ নিয়ে আসলেন, পরীক্ষা করে দেখা গেল তার থাইরয়েড হরমোনের অভাব আছে। আবার আরেক বিষণ্ণতায় আক্রান্ত রোগীর ক্ষেত্রে সব পরীক্ষার রিপোর্ট স্বাভাবিক পাওয়া গেল। আবার মাথার সিটি স্ক্যান, এমআরআই করে সেটা দেখে নিশ্চিত বলার কোনো চিহ্ন নেই যে রোগীর সিজোফ্রেনিয়া হয়েছে।
অনেক সময় মানসিক রোগের চিকিৎসার প্রথম ধাপটি থাকে অস্থিরতা, আগ্রাসন কমানো। কারণ মানসিক রোগের মধ্যে কিছু রোগে (যেমন সিজোফ্রেনিয়া, ম্যানিয়া, মাদকাসক্তি, কিছু শারীরিক কারণ যেমন লিভার, কিডনির কার্যক্ষমতা নষ্ট হওয়া, মস্তিষ্কে আঘাত ইত্যাদি) ভাঙচুর, মারামারি, নিজের অথবা অন্যের ক্ষতি এগুলো প্রকট থাকে। সেইসব ক্ষেত্রে প্রথম ধাপ হচ্ছে আগ্রাসন কমানো। আগ্রাসন কমানোর জন্য কয়েকটি বিষয় খেয়াল রাখতে হয়-
আমাদের দেশে মানসিক রোগীর ক্ষেত্রে কোনো আগ্রাসী আচরণ থাকলে তাকে গামছা, শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা; কটু মন্তব্য করা; ‘পাগল’ বলতে থাকা; শারীরিক নির্যাতন করা এসব সাধারণভাবে করা হয়। এগুলো বন্ধ রাখতে হবে। যত বেশিপালটা মন্তব্য, মারামারি করা হয় তত আগ্রাসী আচরণ বাড়ে। সতরাং যতটা পারা যায় চুপচাপ পরিবেশ রাখতে হবে, তার কথা অযৌক্তিক শোনালেও সাময়িক সময়ের জন্য সেটাতে তাল মিলিয়ে কথা বলে যেতে হবে।
রোগী নিজের জন্য এবং অপরের জন্য ক্ষতির কারণ হয় এরকম কিছু করতে থাকলে তাকে চিকিৎসা না করা পর্যন্ত আলাদা রুমে রেখে দেখাশোনা করতে হবে। ধারালো কোনো জিনিস যেমন ছুরি, কাঁচি, কাঁচের সামগ্রী, ভারী কোনো শোপিস/বাসন, দেশলাই, লাইটার এসব রোগীর নাগালের বাইরে রাখতে হবে।
কিছু নির্দিষ্ট পরিস্থিতি, ব্যক্তি এসব অনেক ক্ষেত্রে উদ্দীপক হিসেবে কাজ করে আগ্রাসী আচরণের।পরিবারের কেউ এই উদ্দীপকগুলো চিহ্নিত করতে পারলে রোগীর থেকে এগুলো  ‍দূরে রাখবেন। যেমন একজন সিজোফ্রেনিয়ার রোগীর ক্ষেত্রে দেখা গেল তার ভাইদের প্রতি প্রবল সন্দেহ। ভাইদেরকে ‍দূরে রেখে শুধু বাবা-মা তার যত্ন করা শুরু করতেই রোগী ওষধ খাওয়া শুরু করলেন এবং কিছুদিন ওষুধ খাওয়ার পর ভাইদের প্রতি এরকম হওয়া বন্ধ হলো। এই অবস্থায় যদি ভাইরা বারবার সামনে এসে বা তার সঙ্গে কথা বলে জোর করতেন তাহলে আগ্রাসী আচরণ আরো বেড়ে যেত।
হাসপাতালে বা চিকিৎসকের কাছে আসলে চিকিৎসক এবং স্টাফরাও রোগীকে আগে উত্তেজনাকর পরিবেশ থেকে সরিয়ে নিয়ে, কথা বলে উত্তেজনা/আগ্রাসন কমিয়ে নিয়ে আসার চেষ্টা করেন। এগুলোতে কাজ না হলে, অথবা ক্ষতির আশঙ্কা থাকলে ওষুধ প্রয়োগের মাধ্যমে আগ্রাসন কমাতে হয়। দক্ষ ব্যক্তির দ্বারা কৌশলে বলপ্রয়োগ, নরম চওড়া ব্যান্ড দিয়ে সাময়িকভাবে বেঁধে রাখার প্রয়োজনও হয়। অবশ্যই একটা নিয়ম মানতে হয় যাতে রোগীর যেন কোনো ক্ষতি না হয়।
মানসিক রোগের বৈজ্ঞানিক চিকিৎসা নিয়ে অনেক  ‍ভুল ধারণা বিদ্যমান। শারীরিক রোগের সঙ্গে তুলনায় অনেক ক্ষেত্রেই দেখার মতো উন্নতি আসতে দেরি হয়, রোগ নির্ণয়ে সময় লাগে-এই বিষয়গুলোকে বিজ্ঞানভিত্তিকভাবে জানলে  ‍ভুল ধারণাগুলো দূর করা সম্ভব।

সূত্র: লেখাটি মনের খবর মাসিক ম্যাগাজিনে প্রকাশিত।

স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে প্রাণে

Previous articleসাফল্য নিয়ে দুশ্চিন্তা সফলতার পথে বড় বাঁধা
Next articleসাধারণ বিষণ্ণতা নাকি মানসিক রোগ? বুঝবেন যে সব উপায়ে
ডা. সৃজনী আহমেদ
মনোরোগ বিশেষজ্ঞ, সহকারী অধ্যাপক, ঢাকা কমিউনিটি হাসপাতাল, মগবাজার

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here