আমি নিলয়, ঢাকা থেকে। বয়স ১৯। আমার কিছু সমস্যা আছে। আমি ৬ বছর ধরে স্মৃতিশক্তি হ্রাসের মতো কিছু স্নায়বিক সমস্যায় ভুগছি। আমি পাঁচবার ডাক্তারদের (সাইকিয়াট্রিস্ট) অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিয়েছি। তারা আমাকে কিছু ওষুধ যেমন বিষণ্ণতাবিরোধী (এসএসআরআই—এর মতো) ওষুধ দিয়েছেন। এগুলো নিয়েছি, কিন্তু ভালো হইনি। আমার স্মৃতিশক্তি মারাত্মকভাবে খারাপ হয়েছে। অত্যন্ত দুর্বল ও বিশৃঙ্খল হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে মুখস্থ করার ক্ষমতা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অনেক সময় নিয়ে ভালো করে পড়ার পরেও নানা উপকরণ— পাঠ্য, মুখস্থ অংশ, গণিত অংশ ইত্যাদি ভুলে যাই। পরে হাজারবার চেষ্টা করার পরেও আমি এই সব মনে করতে পারি না। মনে মনে এই সব বস্তুগত দৃশ্য কল্পনা করতে পারি না। খুব অল্প সময়ে সব ভুলে যাই। কোথাও মনোযোগ দিতে অনেক বাধা পাই। বেশিক্ষণ মনোযোগ ধরে রাখতে পারি না। আসলে পড়াশুনা—সহ যেকোনো কাজে মনোযোগ দেওয়া আমার পক্ষে খুবই কঠিন। কোনো কাজই পূর্ণ মনোযোগ ও একাগ্রতা নিয়ে করতে পারি না। খুব অল্প সময়ের মধ্যে মনোযোগ নষ্ট হয়ে যায়। কথা বলার সময় সঠিক এবং প্রয়োজনীয় শব্দগুলি মনে রাখতে পারি না। সমস্ত প্রয়োজনীয় তথ্য, অভ্যাস, বিভিন্ন কাজের পদ্ধতি, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ইত্যাদি ভুলে যাই। মাঝে মাঝে প্রচন্ড মাথা ব্যথা হয়। বেশিরভাগ সময় মাথায় অনেক চাপ অনুভব করি। মাথা খুব গরম হয়ে যায় তখন। দয়া করে, আমাকে সাহায্য করুন এবং আমাকে পরামর্শ দিন, আমি কি করতে পারি?
অধ্যাপক ডা. সালেমির হোসাইন চৌধুরী : স্নেহের নিলয়, ধন্যবাদ তোমার প্রশ্নের জন্য। আমি তোমার সমস্যাগুলো ভালো করে দেখলাম। তোমার বয়স এখন ১৯ বছর, কিন্তু তোমার রোগের বর্ণনাগুলো সঠিকভাবে বিবৃত করতে পারোনি। তোমার সমস্যাগুলো আসলে স্নায়বিক নয়, পুরোপুরিভাবে মানসিক সমস্যা, যা দীর্ঘদিন যাবত তোমার মতো রোগীদের মাঝে বিদ্যমান থাকে। তোমার স্মৃতিশক্তি আসলে মোটেও খারাপ হয়নি বা লোপ পায়নি। তোমার বর্ণনা অনুযায়ী আমার মতে, তুমি chronic anxiety disorder নামক একপ্রকার মানসিক রোগে ভুগছো। এই ধরনের রোগে সর্বদা মনের মধ্যে অস্থিরতা ও হতাশা কাজ করে। যার কারণে লেখাপড়া ও অন্যান্য কাজে সঠিকভাবে মনোনিবেশ করা সম্ভব হয় না। এই কারণে পড়াশোনা ও অন্যান্য কাজে স্মৃতিশক্তির ব্যাঘাত ঘটে। সেই সাথে কিছু কিছু শারীরিক সমস্যা যেমন মাথা চাপ অথবা মাথা ব্যথা, ঘাড় ব্যথা, খাবারে অরুচি, শরীর বা মাথা গরম হয়ে যাওয়া, অনিদ্রা এবং প্রয়োজনীয় কাজের প্রতি অনীহা তৈরি হয়। এটি কোনো গুরুতর মানসিক রোগ নয়। সেহেতু এই রোগ নিয়ে তুমি কখনই মন খারাপ করে বসে থাকবে না। যখনই মন খারাপ লাগবে, তখন তুমি অন্য কারো সাথে গল্প করবে, টেলিভিশনে বিভিন্ন প্রোগ্রাম দেখবে যেন তোমার মনের অস্থিরতা ও হতাশা দূর হয়ে যায়। পড়াশোনার ফাঁকে ফাঁকে পারিবারিক বিভিন্ন কাজে সময় দিবে। নিকটবর্তী ভালো সহযোগীদের সাথে গল্পে কিছু সময় কাটাবে। তাহলে তুমি লক্ষ্য করবে তোমার মানসিক অস্থিরতা ও হতাশা কমে আসছে। এছাড়াও এই সমস্যার জন্য তোমাকে নিকটবর্তী কোনো মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ অনুযায়ী সাইকোথেরাপি ও উপযুক্ত ঔষধ সেবন করা প্রয়োজন ও নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ফলোআপে থাকা প্রয়োজন। আমি তোমার সুস্থতা কামনা করি। তোমাকে অনেক ধন্যবাদ।